নিঃসন্দেহে এই মুহূর্তে পৃথিবীর সবচেয়ে জনপ্রিয় খেলা ক্রিকেট। বাংলাদেশও যেহেতু পৃথিবীতেই অবস্থিত, সেহেতু বাংলাদেশিদেরও অনেক অনেক প্রিয় এই খেলা। পুরো দেশজুড়েই তাই ক্রিকেটের প্রতি, ক্রিকেটারদের প্রতি মানুষের ভালোবাসার শেষ নেই। কিন্তু খুবই দুঃখ-ক্ষোভ এবং যন্ত্রণা নিয়ে আমি বলছি, ক্রিকেটের প্রতি দেশ ও দেশের মানুষের ভালোবাসা থাকলেও, দেশ ও মানুষের প্রতি ক্রিকেটের কোনো ভালোবাসা নেই! শাহবাগ আন্দোলনের শুরু থেকেই এটা আমার মনে হচ্ছিলো, এবং বিপুলসংখ্যক মানুষের ক্রিকেট-অন্ধতার প্রতি করুণা করে আমি ১২ দিন পর্যন্ত মুখ বন্ধ রেখেছিলাম। কিন্তু চলমান এই দুর্বার আন্দোলনের ১৩তম দিনে আমাকে মুখ খুলতেই হলো।
ক্রিকেট নিঃসন্দেহে একটি খেলা; কিন্তু শাহবাগের আন্দোলন কোনো খেলা নয়। এটা এমন এক আন্দোলন, যা পুরো বাংলাদেশ, বাঙালি এবং আন্তর্জাতিক রাজনীতির বর্তমান-ভবিষ্যতের জন্যও মহাগুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। এই মহাগুরুত্বপূর্ণ ঘটনার সময় প্রতিটি মুহূর্তই খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যারা স্বাধীন বাংলাদেশের প্রগতিশীল চেতনায় বিশ্বাসী নাগরিক--এই মুহূর্তে, আমাদের সবাইকে, প্রতিটি মুহূর্তকেই গুরুত্বের সঙ্গে, রণাঙ্গনের যুদ্ধরত যোদ্ধার মতো করে, বোদ্ধার মতো করে বিবেচনা করা উচিত।
আমার প্রশ্ন, স্বাধীন বাংলাদেশের সরকার বা ক্রিকেটাঙ্গন শাহবাগ আন্দোলনকে কী এখনও খেলা মনে করছে? যদি তা না হয়, তবে কেন কেমন করে এই যুদ্ধ অবস্থায় বিপিএল-এর মতো খেলা চলতেই থাকে? কেন জাতীয় জীবনের এই বিশেষ সময়ে বিপিএল চলছে? কেন এত দিনেও এটা একদিনের জন্যও স্থগিত করা হলো না?
রোম যখন পুড়ছিল, নিরো তখন বাঁশি বাজাচ্ছিলো'র মতো ইতিহাস বলবে, শাহবাগ যখন শেষ লড়াই লড়ছিলো তখন ক্রিকেটাররা খেলছিলো!
হায়রে আমার মাথামোটা ক্রিকেট আর ক্রিকেটার! হায়রে খেলা! টাকার খেলা!
আমার সাধারণ জ্ঞান আমাকে বাধ্য করছে এই কথা বলতে যে, ধর্ম যেমন গণমানুষের আফিম, ক্রিকেটও তেমন। ক্রিকেট মানুষকে রাজনীতিবিমুখ ফাঁপাচিত্তসুখে সুখি ব্যক্তিকেন্দ্রিক যন্ত্রমানুষে পরিণত করার এক শক্তিশালী হাতিয়ার। অলস আয়েসি সময়কাটানোর উপায়হীন অভিজাত বুড়ো মানুষদের এই খেলা সব মানুষকে আরও অনেক জরুরি খেলা থেকে, কাজ থেকে, দায়িত্ব-কর্তব্য থেকে, ভুলিয়ে রাখে, গুলিয়ে রাখে, ঝুলিয়ে রাখে, দূরে রাখে, ছুঁড়ে রাখে, বিক্ষিপ্ত বিচ্ছিন্ন করে রাখে।
কিন্তু এখন, এই মুহূর্তের বাংলাদেশে; বিক্ষিপ্ত বিচ্ছিন্নতা নয়, চিত্তবিনোদনেরও সময়ও এখন নয়, এখন সময় যুদ্ধের। বাংলাদেশের ক্ষমতাসীন নির্বোধ সরকার বা ক্রিকেটাঙ্গন এটা যত দেরি করে বুঝবে, এ যুদ্ধে ততই জানমালের ক্ষয়ক্ষতি, এমনকি, তথাকথিত স্বাধীনতাও বেহাত হওয়ার আশংকা ততই প্রবল হয়ে উঠবে। আমরা, বিক্ষিপ্ত বিচ্ছিন্নভাবে যা ভাবতেই পারছি না, শত্রুরা তা সংগঠিত এবং সুপরিকল্পিতভাবেই একের পর এক বাস্তবায়ন করে চলেছে। ওরা রীতিমতো যুদ্ধ করছে, আর আমরা এখনো খেলা করছি!
কিন্তু আমি ব্যক্তিগতভাবে আর কোনো খেলা চাই না! আমি চাই, এবার মেলা! মিলনমেলা! মানুষের মেলা!
আমি চাই এই মুহূর্তেই মানুষ ঐক্যবদ্ধ হোক; মানুষ নতুন যুদ্ধনীতি জানুক; ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তুলুক; এবং সেই আহ্বান আসুক মানুষকে ইতোমধ্যেই হতাশ করা নতজানু ক্ষমতাকাঠামোর মধ্য থেকেই, এবং সেই যুদ্ধে ব্যাট-বল ছুঁড়ে মাঠে নামুক আমাদের বীর ক্রিকেটাররা!

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




