somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ভাটির দেশের নাইয়া

০৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০১২ দুপুর ১২:২৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

স্মরণ: শিল্পী আব্দুল আলীম (২৭ জুলাই, ১৯৩১- ৫ সেপ্টেম্বর, ১৯৭৪)


অগ্রজ অনেকেই অভিযোগ করেন বর্তমান শিল্পীরা নাকি গান গায় গলা দিয়ে। তারা বলেন গান গাইতে হয় হৃদয় দিয়ে। হৃদয়ের আবেগ উজাড় করে দিয়ে যে গান গাওয়া হয় সেটাই তো সঙ্গীত হয়ে ওঠে, হয়ে ওঠে সাধনা। বর্তমান প্রজন্মের একজন হিসেবে আব্দুল আলীমের গান শুনলে মনে হয় তারা ঠিকই বলেছেন। কী অসাধারণ গেয়েছেন তিনি! মানুষের মনের সঙ্গে 'হলুদিয়া পাখি'র কী চমৎকার তুলনা! আব্দুল আলীম যেন সারাটা জীবন গানের মধ্য দিয়ে মানুষ, মন ও প্রকৃতিকেই খুঁজেছেন। বিশেষ করে নদী। আমরা দেখেছি, নদীকে উপজীব্য করে তার গানে বারবারই এসেছে মাঝির কথা. নৌকার কথা, ঘাটের কথা। তিনি গেয়েছেন রূপালি নদী রে... গেয়েছেন কলকল ছলছল নদী করে টলমল... কিংবা মেঘনার কূলে ঘর বান্ধিলাম...।
এক প্রমত্তা পদ্মা দেখেছেন আব্দুল আলীম, গেয়েছেন গলা ছেড়ে_ 'সর্বনাশা পদ্মা নদী...'। এখন পদ্মার আর সেই রূপ নেই, প্রবাহ নেই; নেই আব্দুল আলীমও। সেও ৩৮ বছর; ১৯৭৪ সালের ঠিক আজকের দিনটায় তিনি পাড়ি দেন পরপারে। কিন্তু তার গান এখনও তাঁকে জীবন্ত রেখেছে। এখনও মানুষ তাকে স্মরণ করে শ্রদ্ধাভরে। সঙ্গীতের জগতে এক জীবন্ত কিংবদন্তি তিনি। তার গান মানুষের মুখে মুখে। তিনি পল্লীগীতি, লোকসংস্কৃতি, ভাটিয়ালি সব গেয়েছেন। মারফতি আর মুর্শিদির সুরে তিনি গেয়েছেন। গান দিয়ে তিনি জয় করে নিয়েছেন সাধারণ মানুষের অন্তর।
আব্দুল আলীমের গানের বিষয় যেমন ছিল নদী, তেমনি তার গানগুলোও ছিল নদীর মতো বহমান। নদীর সঙ্গে সঙ্গে তিনি এনেছেন পরিবেশ-প্রকৃতিকে। তার গানে ফুটে উঠেছে আল্লাহ-নবীর কথা, মুর্শিদের কথা। গেয়েছেন নবী মোর পরশমণি... কিংবা মুর্শিদ পথের দিশা দাও। আব্দুল আলীম মানুষের বন্ধুত্ব, প্রেম-ভালোবাসা, সংসার নিয়েও গেয়েছেন অজস্র গান। তার সব সখিরে পার করিতে নিবো আনা আনা.. জনমুখে প্রচলিত এক বিখ্যাত গান। একই সঙ্গে গেয়েছেন বহু দিনের পিরিত গো বন্ধু... বা বন্ধুর বাড়ি মধুপুর। এসব কিছুর মাঝেও যেন আব্দুল আলীম অন্য কিছু খুঁজেছেন। তার শ্রোতাদের নিয়ে গেছেন অন্য কোনো খানে; নদীর ওপারের এক ভিন্ন জগতে। পরের জায়গা পরের জমি... আর সেই পারে তোর বসত বাড়ি... কিংবা চিরদিন পুষলাম এক অচিন পাখী... তা-ই বলছে।
১৯৩১ সালে ভারতের মুর্শিদাবাদে জন্ম নেওয়া আব্দুল আলীম ছোটবেলা সঙ্গীতের প্রতি বিশেষ আকৃষ্ট ছিলেন। আজকের দিনের মতো গান শুনবার কিংবা শিখবার এরকম সাজ-সরঞ্জাম তখনকার সময় না থাকলেও তিনি গ্রামোফোন রেকর্ড শুনতেন। তিনি ঢাকায় আসেন ১৯৪৭-এর দেশ বিভাগের পর। ঢাকায় এসে সঙ্গীতের তালিম নেন মমতাজ আলী খান ও মোহাম্মদ হোসেন খসরুর মতো সঙ্গীতবোদ্ধাদের কাছে। এ সময়ই তিনি কবি জসীম উদ্দীন, বেদার উদ্দিন আহমেদ. আবদুল লতিফ প্রমুখ বিশিষ্ট ব্যক্তিত্বের সানি্নধ্যে আসেন। কবি নজরুলের সঙ্গে আগ থেকেই তার পরিচয়। তারও আগে শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হক তো তার গানে মোহিত হয়ে তাকে বিশেষ পুরস্কার দেন। তার রেকর্ড করা গানের সংখ্যা পাঁচ শতাধিক। এ ছাড়া তার গান রয়েছে বেতার স্টুডিওতে। তিনি গান করেছেন পাকিস্তানের প্রথম ছবি মুখ ও মুখোশসহ টেলিভিশন ও অসংখ্য ছায়াছবিতে। আব্দুল আলীমের ঝুলিতে পুরস্কারেরও কমতি নেই, জীবদ্দশায় তো বটেই এরপরও পেয়েছেন অনেক পুরস্কার। উল্লেখযোগ্য কয়েকটি হলো একুশে পদক, জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার, স্বাধীনতা পুরস্কার, বাচসাস চলচ্চিত্র পুরস্কার ইত্যাদি।
মাটি আর মানুষের ভালোবাসায় সিক্ত আব্দুল আলীম বরাবরই বলেছেন ভাটির দেশের কথা। তার গান মানুষকে নিয়ে যায় গ্রামে, সুন্দর বহমান নদীর ধারে, ছলাৎ ছলাৎ চলমান কী সুন্দর সে নদী!

প্রকাশিত
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০১২ দুপুর ১২:৩০
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

মেহেদী নামের এই ছেলেটিকে কি আমরা সহযোগীতা করতে পারি?

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১০:০৪


আজ সন্ধ্যায় ইফতার শেষ করে অফিসের কাজ নিয়ে বসেছি। হঠাৎ করেই গিন্নি আমার রুমে এসে একটি ভিডিও দেখালো। খুলনার একটি পরিবার, ভ্যান চালক বাবা তার সন্তানের চিকিৎসা করাতে গিয়ে হিমশিম... ...বাকিটুকু পড়ুন

দ্য অরিজিনস অফ পলিটিক্যাল জোকস

লিখেছেন শেরজা তপন, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১১:১৯


রাজনৈতিক আলোচনা - এমন কিছু যা অনেকেই আন্তরিকভাবে ঘৃণা করেন বা এবং কিছু মানুষ এই ব্যাপারে একেবারেই উদাসীন। ধর্ম, যৌন, পড়াশুনা, যুদ্ধ, রোগ বালাই, বাজার দর থেকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভালোবাসা নয় খাবার চাই ------

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৯ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:০৬


ভালোবাসা নয় স্নেহ নয় আদর নয় একটু খাবার চাই । এত ক্ষুধা পেটে যে কাঁদতেও কষ্ট হচ্ছে , ইফতারিতে যে খাবার ফেলে দেবে তাই ই দাও , ওতেই হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জাতীয় ইউনিভার্সিটি শেষ করার পর, ৮০ ভাগই চাকুরী পায় না।

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৯ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৭



জাতীয় ইউনিভার্সিটি থেকে পড়ালেখা শেষ করে, ২/৩ বছর গড়াগড়ি দিয়ে শতকরা ২০/৩০ ভাগ চাকুরী পেয়ে থাকেন; এরা পরিচিত লোকদের মাধ্যমে কিংবা ঘুষ দিয়ে চাকুরী পেয়ে থাকেন। এই... ...বাকিটুকু পড়ুন

×