somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ক্ষুদে গল্প - ট্রেন

০১ লা জুন, ২০১২ সকাল ১০:১১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ক্ষেতের আইল ধরে মফিজ মিয়া দৌড় হাটা দেয়। রাত বারোটার মেইল ট্রেইন আসতে আর মাত্র ১৫ মিনিট বাকি।
রাত বারোটার মেইল ট্রেইন আর তার জীবন যেন একই সুত্রে বাধা হয়ে গেছে। রেললাইনের দুই পাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা ভিটেগুলোর একটিতে মফিজের বাস। দিনে কিংবা রাতে যখনই ট্রেইনগুলো দৌড়ায় ঘরবাড়িগুলোর মাঝখান দিয়ে কাপিয়ে দিয়ে যায় আশেপাশের ঘরবাড়ি আর মানুষগুলোকেও।
বছর তিনেক আগে একমাত্র মেয়েটির বিয়ে দেয় মফিজ মিয়া। দুইমাইল দুরের সবচাইতে কাছের স্টেশনটিতে মেইল ট্রেইনগুলোই কেবল যাত্রা বিরতি দেয়। রাতের বারোটার মেইল ট্রেইনে বরযাত্রি সহ মেয়েকে তুলে দিতে গিয়ে অঝোরে কেদেছিল মফিজ মিয়া। মেয়েকে বিয়ে দিতে গিয়ে ধার করজ করে নিকট আত্মিয় করিমের কাছ থেকে। করিম থাকে দশমাইল দুরের জেলা শহরে। প্রতি মাসের শেষের দিকে মফিজের কাছে আসে সুদের টাকা নিতে। আসে রাত বারোটার ট্রেইনে। সুদের টাকা আদায় করে পরের দিন সকালে রওয়ানা দেয় নিজ ঠিকানায়। প্রতিবারই ট্রেন যখন তার বাড়ি পাড়ি দিয়ে উজানের স্টেশনের দিকে দৌড়ায়, মফিজ মিয়া শংকিত মনে প্রহর গুনে করিমের। সুদের টাকা গুনতে গিয়ে এ কয় বছরে জমিজমাসহ সবই হারিয়েছে মফিজ মিয়া পৈত্রিক ভিটেটা শুধু বাকি। গতকয় কিস্তির সুদের টাকা পরিশোধ হয়নি।
করিমের গঞ্জনায় অতিষ্ঠ হয়ে বৌ বেড়ানোর অজুহাত দেখিয়ে পালিয়েছে মেয়ের আশ্রয়ে। সবমিলিয়ে হাপিয়ে উঠেছে মফিজ মিয়া। আজ আবার করিম আসবে সুদের টাকার তাগিদ দিতে। সেই রাত বারোটার মেইল ট্রেইনে।
সন্ধ্যা থেকেই অসহনীয় এই মনের জ্বালা থেকে পরিত্রানের ঊপায় খুজে বেরাচ্ছিল মফিজ মিয়া। করিমের কাছে তার অসহায় অবস্থানের অনুভুতিটি ক্রমেই চেপে বসেছিল তার মাথায়। কারো কাছ থেকে একটুখানি সাহায্যের আশায় মনটা তার বেপড়োয়া হয়ে উঠেছিল ক্রমশঃই। যতই সময় গড়াতে থাকে ততই মরিয়া হয়ে উঠে মফিজ মিয়া। একসয় আবার হতাশায় নেতিয়ে পড়ে, অবসাদে ভেংগে আসে দেহমন।
রাত বারোটার দিকে উঠোনের এককোনায় এসে বসে। তাকায় রাতের আকাশের দিকে। তারা ঝলমল আকাশের দিকে তাকিয়ে অনেক কিছু মনে পড়ে মফিজ মিয়ার। মা কিংবা বাবার কোলে বসে এমনি কাটিয়ে দেয়া রাতের অনেক প্রহরের কথা।
রাত বারোটার মেইল ট্রেইন আসতে যখন আর খুব একটা দেরি নেই, তখনই সিদ্ধান্ত নেয় মফিজ মিয়া। পরিত্রানের উপায় খুজে পায়।
দৌড়াতে দৌড়াতে রেলের ব্রিজের গোড়ায় এসে পৌছায় মফিজ মিয়া।
তারপর অপেক্ষার প্রহর গুনে ট্রেন আসার।
ঘন্টা পেরোয় ট্রেন আসেনা। মফিজ ভাবে ট্রেন লেট। কিন্তু দুঘন্টাতেও তিন ঘন্টাতেও ট্রেন আসেনা। অপেক্ষার প্রহর গুনতে গুনতে ঘুমে চোখ বুজে আসতে তার। তবুও নিজের সিদ্ধান্তে অটল থেকে ট্রেনের অপেক্ষায় থাকে মফিজ মিয়া। কিন্তু সেই রাতে আর আসা হয়না রাত বারোটার মেইল ট্রেইনের।
একসময় ভোরের আজানে ধরফরিয়ে জেগে উঠে মফিজ মিয়া।
ভোরের সতেজ আলো বাতাসে মফিজ মিয়ার দেহমনও শুদ্ধ হতে থাকে।
সিদ্ধান্ত পালটায় সে। হাটা ধরে নিজের ভিটের দিকে।
এর পরের দিনে সারা এলাকায় রাস্ট্র হয়ে যায় রাত বারোটার মেইল ট্রেইন তিন চার মাইল ভাটিতে এক ভয়াবহ দুরঘটনার সম্মুখীন হয়েছে। মানুষও মরেছে ম্যালা। মফিজ মিয়া তখনো জানেনা, মারা পড়া মানুষদের মধ্যে করিম মিয়াও একজন
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জীবন চলবেই ... কারো জন্য থেমে থাকবে না

লিখেছেন অপু তানভীর, ০২ রা মে, ২০২৪ সকাল ১০:০৪



নাইমদের বাসার ঠিক সামনেই ছিল দোকানটা । দোকানের মাথার উপরে একটা সাইনবোর্ডে লেখা থাকতও ওয়ান টু নাইন্টি নাইন সপ ! তবে মূলত সেটা ছিল একটা ডিপার্টমেন্টাল স্টোর। প্রায়ই... ...বাকিটুকু পড়ুন

যুক্তরাষ্ট্রে বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ ঠেকাতে পুলিশি নির্মমতা

লিখেছেন এমজেডএফ, ০২ রা মে, ২০২৪ দুপুর ১:১১



সমগ্র যুক্তরাষ্ট্র জুড়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসগুলোতে বিক্ষোভের ঝড় বইছে। যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ কর্মসূচী অব্যাহত রয়েছে। একাধিক বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বিক্ষোভ দমনের প্রচেষ্টা চালালেও তেমন সফল... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ ০১

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ৯:৫৫



নতুন নতুন শহরে এলে মনে হয় প্রতি টি ছেলেরি এক টা প্রেম করতে ইচ্ছে হয় । এর পেছনের কারন যা আমার মনে হয় তা হলো, বাড়িতে মা, বোনের আদরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

হিটস্ট্রোক - লক্ষণ ও তাৎক্ষণিক করণীয়

লিখেছেন ঢাকার লোক, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:০৭

সাধারণত গরমে পরিশ্রম করার ফলে হিটস্ট্রোক হতে পারে। এতে দেহের তাপমাত্রা অতি দ্রুত বেড়ে ১০৪ ডিগ্রী ফারেনহাইট বা তারও বেশি হয়ে যেতে পারে।

হিটস্ট্রোক জরুরি চিকিৎসা প্রয়োজন। চিকিৎসা... ...বাকিটুকু পড়ুন

আল্লাহকে অবিশ্বাস করার সংগত কোন কারণ নাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৩



সব কিছু এমনি এমনি হতে পারলে আল্লাহ এমনি এমনি হতে সমস্যা নাই। বীগ ব্যাং এ সব কিছু হতে পারলে আল্লাহও হতে পারেন। সব কিছুর প্রথম ঈশ্বর কণা হতে পারলে আল্লাহও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×