জানো কত্ত কষ্ট করে বাসার সবাইকে ম্যানেজ করতে হয়েছিলো আমার??? বলা নেই কওয়া নেই হঠাৎ ভ্যালেনটাইন দিনে কোনো বাবা মা বের হতে দেখলে, সোজা চোখে দেখে বলো?উফফ এখনও ভাবতেই আমার হাত পা ভয়ে একদম ......ম! কাল কতবার যে স্মরণ করেছি............
শুনো আমি তো বসন্তদিনে এত বড় দিগ্বীজয় করে এসেই মহাউল্লসিত ছিলাম।পরেরদিন ভ্যালেনটাইন ডে তে ভালোমানুষ সেজে বাসায় বসে থাকবো ভেবেছিলাম।আর সেই আমাকেই একশো এক মিথ্যে কথা বলে বিকাল থেকে প্ল্যান করে বের হতে হলো।
তুমি তো খুব বলেই খালাস যেমন করে পারো বের হও, আমি কি করি? কি পরি? কিভাবেই বা বাসার সবাইকে ম্যানেজ করি??? এই সময় আমার বেদের মেয়ে জোসনা সিনেমার গানটাও মনে পড়ছিলো জানো? বিশেষ করে "আমি যখন রানতে বসি বন্ধু বাজাও বাশী , রান্না বান্না ছেড়ে আমি কেমন করে আসি??" এই দুই লাইন!!!!
একটা জিনিস খেয়াল করলাম জানো? আগে কখনও ভাবিনি কখন কি পরি না পরি , কেমন দেখাচ্ছে আমাকে এইসব নিয়ে।শুধু তোমার সামনে যাবো ভাবতেই জামা কাপড় সাজসজ্জা নিয়ে এক গাদা চিন্তা মাথায় হুড়মুড় করে ঢুকে পড়ে????এটা আবার কি বিপদ হোলো????
যখন কনফার্ম হলাম আমি বের হতে পারছি, তখন আবার আরেক চিন্তা, হায় হায় কি পরি? একটা জামা আয়রন করা নেই, কিচ্ছু নেই কোনোমতে তাড়াতাড়ি করে একটা জামা আয়রন করতে যাবো ঠিক তখুনি কারেন্ট গেলো জানো?????????????? বিপদে পড়লে সবাই শত্রুতা করে । তারপর কি আর করা তুমি বলেছিলে আমার যত শাড়ী জামার ছবি দেখেছো সবচাইতে সুন্দর বসন্তদিনের শাড়ীটাই । তাই ঠিক করলাম সেটাই পরে ফেলি কারণ সময় তখন বহিয়া যায় নদীর মতন হায়। এইদিকে দেখি চুলও ভেজা। শুকায়নি তখনও !!!!!!!!!!
আবার তোমাকে বলেছি ৬ টার মধ্যে বের হবো। হুড়োহুড়িতে কি যে সব আজব আজব সমস্যার সৃষ্টি হতে লাগলো। যাইহোক উল্টা পাল্টা সব কান্ড ঘটিয়ে বের হলাম শেষ পর্যন্ত।একটা ম্যাচিং দুল ও খুঁজে পেলাম না। এতদিনে বুজলাম অগোছালো হলে কি হয় মানুষের শাস্তি!!!:# যাইহোক মনকে সান্তনা দিলাম, কি বলে জানো? এই(তুমি) চার চোখ, কানা কি আর বুঝবে ম্যাচিং ট্যাচিং ?????? হাহাহহাহাহাহাহাহাহা
তারপর হুড়মুড় করে বাসা থেকে বের হলাম দেখি গলা শুকিয়ে কাঠ আর হাত দুটো ঠান্ডা বরফ, আর দুই পায়ের কাঁপাকাঁপি তো থামাতেই পারিনা। দুই হাত দিয়ে চেপে ধরেও দেখি কাঁপাকাঁপি থামছে না। কিযে একটা অবস্থা!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!
তারপর আবার রাস্তায় প্রচন্ড জ্যাম। সাড়ে ছটার মধ্যে আড়ং এ পৌছানোর কথা ছিলো। সেখানে গুলশান ২ এ ই সাড়ে ৬ টা বেজে গেলো। কিযে টেনশন লাগছিলো বাবুসোনা!!!!!!!!!!!! শেষমেশ আড়ং এর সামনে যখন পৌছাই দেখি ৭:০৩।
যদিও জানতাম আমার যত দেরী হোক, আড়ং বন্ধ করে না দেওয়া পর্যন্ত তুমি চলে যাবেনা। কারণ আগের দিন কি বলেছিলে মনে আছে?আমি জানতে চেয়েছিলাম কতক্ষণ অপেক্ষা করবে, যদি আমার দেরী হয় পৌছুতে? তুমি বলেছিলে "৪ টা থেকে অনন্তকাল!!! "
মাঝে মাঝে এমন করে তুমি বলো বাবুসোনা , আমার ভেতরটা একদম ভেঙেচুরে একাকার হয়ে যায়।
কথা ছিলো তুমি ক্যাফেটেরিয়ার সামনে থাকবে কিন্তু কোথায় তুমি ?????????????? একটা লম্বুও আশেপাশে ত্রিসীমানার মধ্যে ছিলোনা, একটাও নাএখন কি করি? ভেতরে ঢুকলাম । আছো কিনা দেখতে। দেখি সেখানেও নেই। কিযে রাগটা লাগছিলোনা???????????একদম আস্ত চিবিয়ে কড় মড় করে খেয়ে ফেলতে পারতাম আরকি। তবে ভালো হলো রাগের কারণে দেখি হাত পা কাঁপাকাঁপি থেমে গেছে। এমন সময় সবার মাথার উপর দিয়ে একটা তালগাছ এক পায়ে, নানা দুইপায়ে দাড়িয়ে , সবগাছ ছাড়িয়ে উকি মারে আকাশে। হে হে করে আবার তালগাছটা দেখি হাসছে। আবার দেখি তালগাছটা উল্টা আমাকেই বকা দেয়???? এত দেরী করলাম কেনো?? কত্ত সাহস!!!!!!!!!!!!!!!!!!
যাইহোক, শুনো তালগাছ, তালগাছটার উপরে রাগ করে থাকা যাবেনা আবার আশেপাশের মানুষগুলোও সব ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে ছিলো, তাই তাড়াতাড়ি ঢুকে পড়লাম ক্যাফের ভিতরে। কিন্তু বসতেই আবার পা কাঁপাকাঁপি শুরু হোলো। উফফফ পায়ে যে কি হয়েছিলো কাল আমার!!!!!
প্রতিফলন তোমাকে যে বাবুসোনা বলে ডাকি, কে বলবে তুমি যে সত্যিই দেখতে বাবু বাবু!!! পহেলা ফাল্গুনে তো তোমার মুখের দিকে ভালো করে তাকাতেই পারিনি। কাল তো ছিলাম দুজনে মুখোমুখি গভীর দুখে দুখী তাই খুব ভালো করে দেখলাম তোমার মুখটা।
প্রতিফলন , এই মুখের ছবিটা বুকের মধ্যে গেঁথে নিলাম চিরতরে। এখন থেকে চোখ বুঝলেই দেখতে পাবো তোমাকে। একটা বাবু বাবু চেহারার মুখ। মায়াময়, কোমল....
আমার স্বপন পারের রাজকুমার!!!
কিন্তু রাজকুমার, আমাকে যে বললে একটা গান শুনাতে, কি গান শুনাতে ইচ্ছে হচ্ছিলো জানো , "স্বপনপারের ডাক শুনেছি। জেগে তাইতো ভাবি কেউ কখনও খুঁজে কি পাই স্বপ্ন লোকের চাবি? জেগে তাইতো ভাবি" স্বপ্ন লোকের চাবি খুঁজে পাওয়া হবেনা হয়তো আমার। শুধু কালকের বিকেলটা স্বপ্নলোকের বিকেল হয়ে জেগে রইবে আমার বুকের গভীরে। কতকিছু বলতে ইচ্ছে হচ্ছিলো। কিন্তু বুকের মধ্যে ড্রামের বাড়ি।গান তো দুরের কথা , একটা শব্দও বের হচ্ছিলোনা গলা দিয়ে, সেশুধু ঠান্ডা লেগে গলা বসে থাকার জন্যও নয়। হাহাহাহা মাঝে মাঝে ভাবছি এত বীর নারী আমি অকুতোভয় সাহসী যোদ্ধা ভাবি নিজেকে। হঠাৎ কাল যে কি হয়েছিলো আমার!!!!
এই তাবৎ পৃথিবীটার উপরে অকারণ অভিমান আর নিজেরই উপরে একটা চাপা রাগ থেকে কখনও তোমার সামনে যাবোনা আমি, এমনি পরতিগ্গা ছিলো আমার। কোথায় গেলো যে আমার সেসব শপথ!!!
ভালোই হলো, সব না পাওয়ার জগৎ থেকেও এ এক পরম পাওয়া। তোমার মুখটা বাবুসোনা। আজীবন মনের দর্পণে একে নিলাম। কোথাও হারাবোনা আর কখনও এই মুখ।
যাক, শেষ পর্যন্ত একটা অন্তত গভীর ভালোলাগার স্মৃতি রয়ে গেলো!!!!!! এ জীবনের সব দুঃখই ভুলে যেতে পারি শুধু এই একটি দিনের কথা ভেবেই।
আর একটা কথা, প্রতিফলন, ব্যর্থতা নিশ্চিৎ জেনেও যেই ভালোবাসায় ভেসেছিলাম আমরা সেই ভালোবাসাটা ব্যর্থ ভালোবাসা বলে কিছুতেই মানিনা আমি। আমার ধারণা বা আমি এমনটাই ফিল করি যে আমরাই শুধু জেনেছিলাম ভালোবাসা কারে কয়?
আমরা দুজনা স্বর্গখেলনা গড়িবোনা ধরণীতে....
মুগ্ধ ললিত অশ্রু গলিত গীতে।
প্রতিফলন এই ভুবনের ওপারেও যদি কোনো ভুবনের অস্তিত্ত থেকে থাকে। সেই ভুবনেও ভালোবাসা জেগে থাকুক। জন্মজন্মান্তরের পরেও শুধু তোমাকেই ভালোবাসি।
চলে যায় বসন্তের দিন.........
অনেক ভালো থেকো বাবুসোনা।
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই আগস্ট, ২০১৪ সকাল ৮:৩৩