somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

তোমায় অনেক ভালবাসি মা...

১২ ই মে, ২০১৩ রাত ১২:১৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


জানো,সবাই আমাকে বড্ড সেকেলে বলে।কারন আর কিছুই নয়... মানিব্যাগে তোমার ছবি রাখি বলে।মনটা খারাপ হয়ে গেলে...খুব হতাশ হয়ে গেলে... তোমার ওই ছবিটাই আমার শেষ ভরসা।তুমি হয়তো অন্যদের চোখে সুন্দরী নও কিন্তু আমার চোখে তুমিই পৃথিবীর সবচেয়ে সেরা সুন্দরী।তুমিই আমার জীবনে প্রথম নারী যে আমাকে হাতে-কলমে ভালবাসতে শিখিয়েছে।তোমার কি মনে আছে আমার স্কুল বেলার কথা?দুজন হাতে-হাত রেখে স্কুলে যেতাম।আমার ব্যাগটা তোমার হাতে দিয়ে নেমে যেতাম ক্রিকেট খেলতে।আমার বাবা উচ্চপদস্ত সরকারি কর্মকর্তা হওয়ায় প্রতিবেশী কারো সাথে তেমন মিশতে পারতাম না।তুমিই ছিলে আমার শত্রু তুমিই আমার বন্ধু।আচ্ছা তোমার গালে আমার সেই আঁচড়ের দাগটা কি আছে? ওইযে সাপ খেলায় হেরে গিয়ে গালে তোমার গালে খামছে দিয়েছিলাম।

তোমার কি মনে আছে ক্লাস ফাইভে থাকতে একবার আমার যে প্রচণ্ড জ্বর হল।সারাটা দিন তুমি আমার হাত ধরে বসে থাকতে।মেডিকাল কলেজের প্রফেসরের সামনে তোমার সেই কান্না এখনও আমার কানে বাজে।তোমার সাথে প্রায়ই অকারনে খারাপ ব্যবহার করতাম।তুমি মুখ বুঝে সহ্য করতে।কিন্তু ওই জ্বরের পরে টের পেয়েছি তুমি আমায় কতোটা ভালবাস।সেইদিনই প্রতিজ্ঞা করেছি আর কোনদিন তোমার সাথে খারাপ ব্যবহার করবো না।তোমার কি মনে আছে ক্লাস এইটের বৃত্তি পরীক্ষার রেজাল্টের দিনের কথা?তুমি আর আমি একসাথে রেজাল্ট আনতে গিয়েছিলাম।তুমি টেনশনে আমার হাত আঁকড়ে ধরে বসেছিলে।ভিড়ের মাঝে কিছুতেই আমি রেজাল্ট খুজে পাচ্ছিলাম না।শেষপর্যন্ত তুমিই খুজে পেলে আমার রেজাল্ট।এরপর তুমি যা করলে তা ভাবলে আমি এখনও শিহরিত হই।আমার সব বন্ধুদের মাঝে আমাকে জড়িয়ে ধরে চুমু খেলে।

তুমিই যে আমার প্রথম ভালবাসা এটা বুঝানোর জন্য আসলে এতোকিছু বলার দরকার ছিল না।তোমার কাছে আমি কোন কিছুই লুকোতাম না।যে স্কুলে ছিলাম তা ছিল শুধু ছেলেদের।তাই কলেজ লাইফের প্রথম দিনে এতোগুলো সুন্দরী মেয়ে দেখে রোমাঞ্চিত হয়ে গিয়েছিলাম।তোমার কাছে কাকে কেমন লাগলো সব খুলে বললাম।ভেবেছিলাম তুমি আমার কথা শুনে অনেক কষ্ট পাবে।আমার কথা তুমি হাসিমুখে মনোযোগ দিয়ে শুনলে।তোমার প্রতি আমার মুগ্ধতা,ভাললাগা,ভালবাসা আরও বেড়ে গেল।যে মানুষটা আমাকে এতো বিশ্বাস করে তার বিশ্বাসের অমর্যাদা করি কি করে।

অনেকে বলে তোমার সাথে নাকি আমার চেহারার অদ্ভুত মিল।তোমার হাসির সাথে নাকি আমার হাসির অনেক মিল।আমাদের পাড়ার অনেকেই বলতো আমি নাকি দেখতে মডেল নোবেলের মতো।আমি নোবেলের মতো হতে চাই না...আমি হতে চাই শুধু তোমার মতো।তোমার সাথে বোধহয় একসাথে কখনই খাওয়া হয়নি।আমাকে সামনে বসিয়ে নিজহাতে আমায় বেড়ে খাওয়াতে।বসে বসে পরম মমতা নিয়ে দেখতে আমি কিভাবে খাই।রোজার ঈদের শপিং এর কথা মনে পরে?আমি নীল রঙ পছন্দ করি বলে তুমি সবসময় নীল রঙের জামা কিনতে।বুয়েট ও মেডিক্যাল দুটোতেই চান্স পেলেও তোমার মনের ইচ্ছাটাই গুরুত্ত দিলাম।যেদিন মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি হবার জন্য ঢাকা চলে আসি,সেদিনই টের পেলাম তোমাকে আমি কতোটা ভালবাসি।তুমি কি জানো,ঢাকায় এসে প্রতিটা ক্ষনে আমার চোখ তোমায় খুজে বেড়াতো।আর তোমার কথা কি বলব?প্রতিটা দিন ফোন করে কাঁদতে।আচ্ছা তুমি আমাকে এতো ভালবাসো কেন বলতো?তুমি কি তোমার ভালবাসার সাগরে আমায় ডুবিয়ে দিতে চাও?

মেডিক্যালের কষ্টের দিনগুলোতে তোমাকে খুব বেশী মনে পরতো।মন খারাপ হলেই তোমার সাথে গল্প জুড়ে দিতাম।তুমি বুঝতে আমি তোমার কাছে কি আশা করি ।আর তাইতো প্রতিদিনকার প্রতিটি ঘটনা খুব মনযোগ দিয়ে শুনতে।তুমি জানতে আমি আলসেমি করে রাতের বেলা মশারী না টানিয়ে কাঁথা মুড়ি দিয়ে ঘুমাই।আর তাইতো নিজ হাতে একটা কাঁথা সিলিয়ে দিলে।মাঝে মাঝে ভাবি...যেই আমি তোমাকে একদিন না দেখলেই উন্মাদ হয়ে যেতাম সেই আমি ২-৩ মাসেও তোমার দেখা পাইনা।এই ডিজিটাল যুগেও প্রতি সপ্তাহে তুমি আমাকে একটা করে চিঠি লিখ।এতো ব্যস্ততার মাঝে হয়তো তোমার প্রত্যেক চিঠির উত্তর দেয়া হয় না... কিন্তু মাঝে মাঝে যখন মনটা খুব খারাপ হয়ে যায়,তখন চিঠিগুলো খুলে পড়তে শুরু করি।তোমার চিঠির লেখাগুলি স্পর্শ করে দেখি...যেখানে লুকিয়ে আছে তোমারই হাতের ছোঁয়া।তারপর যখন তোমার নিজ হাতের বোনা কাঁথা মুড়ি দিয়ে শুয়ে পরি,তখন মনে হয় তুমি আমায় পরম মমতা নিয়ে জড়িয়ে ধরে আছো।

তোমাকে কখনই শাড়ি পরতে না।একবার কোন একটা বিয়ের অনুষ্ঠানে তোমাকে প্রথম শাড়ি পরতে দেখি।শাড়ি পরলে যে তোমাকে এতো অপরূপা লাগে তা আগে কখনই টের পাইনি।তোমার কি মনে আছে ইন্টার্নীর প্রথম বেতন পেয়ে আমি নিজেই পছন্দ করে তোমাকে একটা শাড়ি কিনে দিলাম।তোমাকে কিনে দেবার পর বুঝতে পারলাম শাড়ির রঙটা কতই না খেত ছিল।অথচ তুমি তোমার বান্ধবীদের গর্বভরে আমার দেয়া শাড়িটা তাদের দেখালে।

২০১১ সালের জানুয়ারিতে প্রথম চান্সেই একটা ভাল সরকারি চাকরী পেয়ে গেলাম।আমি যখন নিয়োগপত্র পেলাম তখন তুমি আমার চেয়ে অনেক দুরে।তখন খুব ইচ্ছা করছিল তোমাকে জড়িয়ে ধরে তোমার টোল পরা গালটায় অনেকগুলো চুমু খাই।মাগো...আগে হয়তো তোমার সমান লম্বা ছিলাম না,তাই তোমার গালের নাগাল পেতাম না।এখন আমি অনেক লম্বা হয়েছিগো মা...এখন তুমিই আমার গালের নাগাল পাবে না।মাগো...আজ আমি তোমার কাছ থেকে কতো দূরে...যেই আমি ক্লাস নাইন পর্যন্ত তোমার বুকে মুখ গুজে ঘুমিয়েছি...সেই আমি আজ কোলবালিশের মাঝে তোমায় খুজে ফিরি...খুজে খুজে ফিরি তোমার বুকের সেই অদ্ভুত সেই মিষ্টি গন্ধটা।মাগো...তোমার ছেলে এখন আর জ্বর হলে প্রলাপের মাঝে মাঝে তোমাকে খুজে না...চুপটি করে শান্ত ছেলের মতো শুয়ে থাকে।তোমার ছেলে এখন ঠিক ঠিক মশারি টানিয়ে ঘুমায়...সে জানে,না টাঙ্গিয়ে ঘুমালে কেউ তার মশারি গুজে দেবে না।

মাগো...আজ হয়তো পেশাগত কারনে অনেক ব্যস্ত থাকি...কিন্তু তোমাকে প্রতিটা মুহূর্তে অনেক মিস করি।মাগো... তোমার কি মনে আছে,আমি ঘুমিয়ে গেলে তুমি আমার চোখে পাপ্পি খেতে..কতদিন ঘুমের ভান করেছি তোমার পাপ্পি খাবো বলে।আজ তোমার সেই পাপ্পির কথা ভাবলে দুচোখ ভিজে উঠে।এখন এখানে সেখানে কতোজায়গায় দাওয়াত খাই। কিন্তু তোমার রান্নার সেই অমৃতের স্বাদ কোথাও খুজে পাই না।মাগো...আমি আবার সেই দিন-গুলোতে ফিরে যেতে চাই যেদিন তুমি নিজে ভাত মাখিয়ে আমাকে খাইয়ে দিতে।মাগো...আমি কি অনেক বড় হয়ে গেছি?তুমিইতো বলো আমার মুখে নাকি এখনও তোমার দুধের গন্ধ রয়ে গেছে।মাগো...আমি সারাজীবন তোমার কাছে সেই ছোট্ট খোকাটি হয়েই থাকতে চাই।মাগো এবার আমি আমার ভালবাসার সাগরে তোমায় ডোবাতে চাই।মাগো...ও মা.....তোমায় অনেক ভালবাসি...অনেক...অনেক...

(উৎসর্গ- আমার মা...পৃথিবীর সকল মা...)
৪টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হার জিত চ্যাপ্টার ৩০

লিখেছেন স্প্যানকড, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



তোমার হুটহাট
চলে আসার অপেক্ষায় থাকি
কি যে এক ছটফটানি
তোমার ফিরে আসা
যেন প্রিয় কারো সনে
কোথাও ঘুরতে যাবার মতো আনন্দ
বারবার ঘড়ি দেখা
বারবার অস্থির হতে হতে
ঘুম ছুটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবনাস্ত

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৪৪



ভোরবেলা তুমি নিশ্চুপ হয়ে গেলে একদম,
তোমার বাম হাত আমার গলায় পেঁচিয়ে নেই,
ভাবলাম,তুমি অতিনিদ্রায় আচ্ছন্ন ,
কিন্তু এমন তো কখনো হয়নি
তুমি বরফ জমা নিথর হয়ে আছ ,
আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দাদার দাদা।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৫৫

বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী।

আমার দাদার জন্মসাল আনুমানিক ১৯৫৮ সাল। যদি তার জন্মতারিখ ০১-০১-১৯৫৮ সাল হয় তাহলে আজ তার বয়স... ...বাকিটুকু পড়ুন

জেনে নিন আপনি স্বাভাবিক মানুষ নাকি সাইকো?

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:১৮


আপনার কি কারো ভালো সহ্য হয়না? আপনার পোস্ট কেউ পড়েনা কিন্তু আরিফ আর হুসাইন এর পোস্ট সবাই পড়ে তাই বলে আরিফ ভাইকে হিংসা হয়?কেউ একজন মানুষকে হাসাতে পারে, মানুষ তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×