somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পৃথিবী যখন একটি ক্ষুদ্রগ্রাম

২৩ শে এপ্রিল, ২০১০ রাত ৮:৪৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


৬০০ কোটিরও অধিক জনসংখ্যার এই পৃথিবীতে নানান জাতি, নানান বর্ন, নানান ধর্ম, হাজারো বৈষম্য, নানা ধরনের ব্যবস্থা সব মিলিয়ে বিশাল এক আয়োজন। এই বিশাল জনসংখ্যার বহরকে একটি আনুপাতিক হারে অতিক্ষুদ্র একটি গ্রামের রুপ দিলে চিত্রটি কি দাড়ায় তা এখানে তুলে ধরছি।

যদি সমগ্র পৃথিবীর জনসংখ্যাকে সংকুচিত করে মাত্র ১০০ জনে নামিয়ে আনা হয় তাহলে দেখা যাবে, এই একশত জনের মধ্যে ৫৭ জন এশিয়ান, ২১ জন ইউরোপীয়ান, ১৪ জন পশ্চিমাগোলার্ধের, ৮ জন আফ্রিকান। ১০০ জনে : ৫২ জন নারী ৪৮ জন পুরুষ, ৭০জন নানান বর্নের ৩০ জন ককেশীয় সাদা, ৭০ জন অ-খ্রিষ্টিয়ান ৩০ জন খ্রিষ্টিয়ান। এই ১০০ জনের মধ্যে মাত্র ৬ জনের হাতে সমগ্র পৃথিবীর ৫৯% সম্পদ কুক্ষিগত এবং এই ৬ জনই খোদ উত্তর আমেরিকা থেকে। এবার বাসস্থান প্রসঙ্গ – ১০০ জনের মধ্যে ৮০ জন বাস করে নিম্নমানের হাউজিং বা বাসস্থানে। ৭০ জন লোক পড়তে পারে না, ৫০ জন পুষ্টিহীনতায় ভুগছে, একজন মৃত্যুমুখে পতিত আর ১ টি শিশুর জন্ম হচ্ছে প্রতি মুহূর্তে। ১০০ জনের মধ্যে ১ জনের মাত্র কলেজ পর্যায়ে পড়াশোনার যোগ্যতা রয়েছে আর মাত্র ১ জনের রয়েছে কম্পিউটর।

উপরের এই সংখ্যাগুলোর দিকে তাকিয়ে যদি একবার নিজের অবস্থানের দিকে তাকানো হয়, তাহলে যে কোন সুস্থ মস্তিষ্কের মানুষ বুঝতে পারবেন তার অবস্থান। যদি আপনার ফ্রিজে খাবার থাকে, পরনে কাপড়, মাথার উপর একটি ছাদ ও একটু ঘুমানোর জায়গা তাহলে আপনি গোটা বিশ্বের ৭৫% জনগনের চেয়ে ধনী। রোজ সকালে ঘুম থেকে উঠে যদি দেখেন নিজেকে সুস্থ দেহে এর অর্থ হলো আপনি প্রায় ১০ কোটি লোকের চেয়ে অনেক ভাগ্যবান, কারন এদের অনেকেই হয়তো এই সপ্তাহে দেহত্যাগ করবে রোগগ্রস্থ অবস্থায়। আরো যদি দেখেন আপনার ব্যাংক একাউন্টে আছে টাকা, মানিব্যাগে টাকা আর বাড়ীর কোন পুরোনো কৌটায় তোলা খুচরা পয়সা – এর অর্থ আপনি বিশ্বের সেই ৮% সম্পদশালীদের একজন। আপনি আরো পাচ্ছেন প্রতি সপ্তাহে আপনার পছন্দের ধর্মীয় চর্চা কেন্দ্র যেমন : মসজিদ, মন্দির, গির্জায় যেতে পারার সুযোগ একেবারে নিশ্চিন্তে, যেখানে যেতে হলে আপনাকে মুখোমখি হতে হয় না কোন মৃত্যু ভয়, গ্রেফতারী পরোয়ানা কিংবা অন্য কোন অত্যাচার – এর অর্থ আপনি গোটা বিশ্বের প্রায় ৩০০ কোটি লোকের চেয়ে অধিক ভাগ্যবান। এদের কেউ নিশ্চিন্তে নিজ ধর্মচর্চা চালিয়ে যেতে পারে না। আরো বলতে হয় যখন আপনি কোন যুদ্ধ দেখেননি, কখনো বিনাদোষে গ্রেপ্তার হয়নি, মুখোমুখি হননি কোন শারীরিক ও মানসিক অত্যাচারের, নির্জন কারাবাস আপনি সত্যিই অতি ভাগ্যবান সেই ৫০ কোটি বিশ্ববাসীর চেয়ে যারা প্রতিমুহূর্তে গোলাবারুদ এবং যুদ্ধের ডামাডোলে বেচে রয়েছে।

আজ যখন আমার লেখাটি আপনি পড়ছেন ও বুঝতে চেষ্টা করছেন এর অর্থ হলো আপনি বিশ্বের ২০০ কোটি হতভাগ্য শিক্ষার আলোকহীন মানুষের চেয়ে অনেক এগিয়ে। সবকিছুর পর শুধু এটুকু জানুন এবং নিজেকে সন্তুষ্ট রাখুন এই বলে যে, আপনি এই বিশ্বের অসংখ্য নিপীড়িত, নির্যাতিত বঞ্চিত মানুষের চেয়ে অনেক ভাগ্যবান, সুখী, সম্পদশালী, শিক্ষিত ও সুবিধাজনক অবস্থানে আছেন। মনে কোন কষ্ট না রেখে নিজের অবস্থানকে এক অনবদ্য আশীর্বাদ হিসেবেই দেখুন।

একটি ঘোড়ার খামারে অনেক ঘোড়ার মধ্যে একটি ছিল অন্ধঘোড়া। খামারের মালিক অন্ধ ঘোড়াকে অন্যদের চেয়ে আলাদা করে দেখতে চাননি। তাই অন্ধঘোড়র সঙ্গে রাখলেন এক সুস্থ সবল ঘোড়াকে এবং সুস্থ ঘোড়ার গলায় বাধলেন একটি ঘন্টা। রোজ সকালে অন্য ঘোড়ার সঙ্গে দল বেধে অন্ধঘোড়াও বেরিয়ে পড়ে, তাকে পথ চিনিয়ে নিয়ে যায় সেই ঘন্টাওয়ালা ঘোড়াটি। রোজ তাকে অনুসরণ করে অন্ধঘোড়া। সন্ধ্যাবেলা মাঠ থেকে ঘোড়ার দল আস্তাবলে ফেরে। ঘন্টাওয়ালা ঘোড়ার ঘাড় ঘুরিয়ে একটিবার দেখে নেয় তার অন্ধ সাথীটি ঠিকমত ফিরলো কিনা। প্রকৃতি মাতা আমাদের এইভাবেই শিখিয়ে দেন এই অবোধ প্রানীদের নৈমিত্তিক আচরণ দিয়েই অসহায় দুঃখী বন্ধুকে ফেলে যেওনা। এদেরকে নিতে হবে সাথে, দিতে হবে অধিকার। হাইতি, ভূজ, আইলা, নার্গিস, সুনামি, দাবানল, অগ্ন্যৎপাত, পাহাড়ধ্বস যতো নামই দেইনা কেন সেই অন্ধকার অসহায় বন্ধুকে যেন আমরা না ভুলি।
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে এপ্রিল, ২০১০ রাত ৮:৪৩
৬টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

নারী একা কেন হবে চরিত্রহীন।পুরুষ তুমি কেন নিবি না এই বোজার ঋন।

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ১২:৫৪



আমাদের সমাজে সারাজীবন ধরে মেয়েদেরকেই কেনও ভালো মেয়ে হিসাবে প্রমান করতে হবে! মেয়ে বোলে কি ? নাকি মেয়েরা এই সমাজে অন্য কোন গ্রহ থেকে ভাড়া এসেছে । সব... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুসলিম কি সাহাবায়ে কেরামের (রা.) অনুরূপ মতভেদে লিপ্ত হয়ে পরস্পর যুদ্ধ করবে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪৯




সূরাঃ ৩ আলে-ইমরান, ১০৫ নং আয়াতের অনুবাদ-
১০৫। তোমরা তাদের মত হবে না যারা তাদের নিকট সুস্পষ্ট প্রমাণ আসার পর বিচ্ছিন্ন হয়েছে ও নিজেদের মাঝে মতভেদ সৃষ্টি করেছে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদে মসজিদে মোল্লা,ও কমিটি নতুন আইনে চালাচ্ছে সমাজ.

লিখেছেন এম ডি মুসা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সকাল ১০:২৩

গত সপ্তাহে ভোলার জাহানপুর ইউনিয়নের চরফ্যাশন ওমরাবাজ গ্রামের এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। লোকটি নিয়মিত মসজিদে যেত না, মসজিদে গিয়ে নামাজ পড়েনি, জানা গেল সে আল্লাহর প্রতি বিশ্বাসী ছিল, স্বীকারোক্তিতে সে... ...বাকিটুকু পড়ুন

=সকল বিষাদ পিছনে রেখে হাঁটো পথ=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৮



©কাজী ফাতেমা ছবি

বিতৃষ্ণায় যদি মন ছেয়ে যায় তোমার কখনো
অথবা রোদ্দুর পুড়া সময়ের আক্রমণে তুমি নাজেহাল
বিষাদ মনে পুষো কখনো অথবা,
বাস্তবতার পেরেশানী মাথায় নিয়ে কখনো পথ চলো,
কিংবা বিরহ ব্যথায় কাতর তুমি, চুপসে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগে বিরোধী মতের কাউকে নীতি মালায় নিলে কি সত্যি আনন্দ পাওয়া যায়।

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১৮

ব্লগ এমন এক স্থান, যেখানে মতের অমিলের কারণে, চকলেটের কারণে, ভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শের কারণে অনেক তর্কাতর্কি বিতর্ক কাটা কাটি মারামারি মন্তব্যে প্রতিমন্তব্যে আঘাত এগুলো যেনো নিত্য নৈমিত্তিক বিষয়। ব্লগটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×