somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গল্প -মাটি । পর্ব - ১

২০ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৪ রাত ১০:০৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমার পুত্র আছে, আমার ধন আছে, মূর্খেরা এভাবে চিন্তা করে যন্ত্রণা ভোগ করে! যখন আপনি-ই আপনার নয়, তখন পুত্র কিংবা ধন কিভাবে আপনার হবে?
- ত্রিপিটক


ভালই ছিল কাজী বাশার। চাকরি, বাসা - অফিস,বন্ধের দিন হাওয়াই শার্ট পরে বন্ধুদের সাথে এদিক - ওদিক। একটা চমৎকার উপভোগি জীবনসার্কেল হাওয়ায় হেলেদুলে দিন রাত পার। এভাবেই যাচ্ছিল। হঠাৎ একরাতে নিহা সব ভেস্তে দেয়।

- তুমি সোহানের ভবিষ্যতের কথা ভাবছ ?

ভবিষ্যৎ! কাজী বাশার অবাক হয়ে তাকায়। মাত্র বছর চারেক হয় হয় - এই মেয়ে তার সাথে বিছানায় শোয়। এরি মাঝে সংসারের হার্টে হাত চালিয়ে দিল!

- ছেলে বড় হচ্ছে। কোথাও প্লট - ফ্ল্যাট দেখ । এইভাবে আর কতদিন !

- টাকা ?
- লোন নাও। আমিও দেখি কিছু আনতে পারি কিনা ।
হুম। কাজী বাশার চিন্তায় ঝাপ দেয়। ছেলে বড় হচ্ছে। কাজী সোহানের মোটে দুই। ভদ্রলোক হতে ঢের দেরি । কিন্তু বীজ বুনতে হবে এখনই।


অথচ কাজী বাশার জমি ভয় পায়। তার বাবাও ভয় পেতেন। তিনি বলতেন - জমির দিকে একবার নজর গেলে দেখবি -চোখ
ফেরাতে পারবি না। যেদিকেই যাবি ড্যাব ড্যাব করে তাকাবে। বুকে হ্যাচকো টান মারবে। বাবা দিয়ে কাজী বাশার হাড়ে হাড়ে বুঝেছে। এটা। শেষমেষ এই লোক কিনা - বাশারের ভবিষ্যৎ কিনতে গিয়ে সাড়ে তিন হাত মাটিতে ফিট হয়ে গেল ।

মরার আগের দিনও লোকটা জমি জমি জপছিল। মাত্র মাস দুয়েক আগে এক লোকের জমি মৌখিকভাবে কিছু টাকা দিয়ে ফাইনাল। পরে লোকটা টলে যায়।(চিন্তিত) বাবা বলল- আচ্ছা লোকটা এমন করছে কেন? পরের সকালে বাবা কবরে আটা।

ঐ লোক পরে বলল - টাকা ফেরত নাও, আরেক জায়গায় বেশি পাচ্ছি। আমার ছেলের টাকা খুব দরকার! বাশার লোকটার দিকে তাকিয়ে দেখল - বাবার চেয়ে বছর বিশেক বেশি ত হবেই।বয়েসটা। হাত মেলাল বাশার,ওই লোকের হাত কাঁপছে। পাও।কানের লতি ভাঙ্গার দিকে।বাশার বুঝল -আর দেরি নাই। তারে মাটি ডাকে, আয় আয় আয়! বাশার বলল - চাচা! আমার বাপকে জমি খেয়ে ফেলেছে,আপনাকেও খাবে। বেশিদিন নাই!
আমার লাগবে না কিছু। তখন প্রচন্ড গরম হাওয়া নেই তবু লোকটা বাঁশঝাড়ের মত কাপলো,পায়ের নখ মাটিতে ডেবে দিল। সেই থেকে বাশার মাটি দেখে না। এসব নিহাকে কে বোঝাবে!

কিন্তু নিহার কথাও আমলে নিতে হয়। জন্ম দিছ - এবার ভবিষ্যত টানো। সামলাও!

কিছুদিনের ভেতর জোগাড়যন্ত করে একটা ডেভেলপমেন্ট কোম্পানির ২ কাঠা ভবিষ্যৎ ( ধানক্ষেত ) কিস্তিতে নিল বাশার।
ওরা বলল, আপনি লাকি! আগে আগেই এসেছেন। দুয়েক বছর যাক -তারপর দেখুন মজা। কত লোকে হিমশিম খাবে!
কাজি বাশার মুচকি হাসল। তার সময় আছে। সোহানের বয়স পাকতে ঢের দেরি।

বছর না যেতেই হইচই শুরু। টাউনের মুখ নাকি ওদিকে ঘুরবে। ফিউচার কেনার জন্য সবার হাইজাম্প লংজাম্প। হাওয়া খেতে
খেতে এত বাড়ল জমির ধানগুলো, জানলই না। কলিগ বলল - লাকি ম্যান! ১ বছরে ৩ গুণ! বলি কি বেচে দিন! বেচে আরেক জায়গায় কিনুন। আবার বেচুন। টাকা বাড়ান!

কিন্তু কই কিনব কই বেচব? আরেক জায়গায় ভাল পাব ত ?
কলিগ হাসেন- ব্রাদার! এখনো ফিডার খাওয়া বয়সে পড়ে আছেন। যা করার দালাল করবে, লাগলে বলুন ভাল দালাল ধরে দেই........ সুবিধা মনে করলে আমাদের সাথে আসুন, সবাই মিলে ঝুলে কামাই।

তারপর কলিগের ঝাকে ভিড়ে দশে মিলে চলে কাজ। সি এস, আর এস, পি এস, বি এস ,দলিল , রেজিস্ট্রেশন অফিস। বেচা - কেনা , ঝামেলা , নেতা , মাস্তান , পুলিশ , মামলা কোর্ট কাচারির ঝোলাটা গ্রাম- শহরের এ মাথা - ও মাথা ঘুরে চোলাই হয়ে টাকা।বছর কয়েকে সব গুছিয়েও বাল্কি মানি ব্যাঙ্কে খাবি খায়। ফাঁকতালে সিন্ডিকেট গুড়া - গুড়া। কিন্তু এর মাঝেই দক্ষতা টা ,মজাটা , নেশাটা দাঁড়িয়ে গেছে। নিজে নিজে করতে গিয়ে সেটা মগডালে উঠলো।

কাজি বাশার জানত না পৃথিবীর ভেতর জমির দুনিয়া নামে কোন পৃথিবী আছে। তার ভেতর পৃথিবীর খাটিগন্ধ আছে। এই মাটি সব ধরে রাখে। এখনো লোকেরা মাটি খুড়ে খুড়ে তেল গ্যাস কয়লা ইতিহাস বের করে আনছে। বাশার এখন জানে
গোটা পৃথিবীর মানুষ ২ প্রকার। জমি ওলা মানুষ,জমি ছাড়া মানুষ। এখন মানুষ দেখলেই বাশারের জানতে ইচ্ছে হয়- হেই ম্যান! তোমার কি বিএস আছে? জমির ভেতর দিয়ে মানুষ একদম ঠায়ে ঠায়ে চেনা যায়। এ জায়গায় কারো অভিনয় টেকে না। ত্যাগ, লোভ, লালসা , ভণিতা হিংস্রতা সব হাত মুখ উগড়ে বেরিয়ে পড়ে। মানুষ চেনার জন্য কত মানুষকে এই বাশার নিজে - জমির সাথে আঠা দিয়ে মেরে দিল। প্রত্যেক পুরুষের কিছু না কিছু নেশা থাকে -বাশারের টা জমি। নেশার রাজা! জমিরাও
বাশারকে চিনে গেছে। দেখলে খিলখিল। না কিনলে গোসসা। এই নেশার কাছে জগতের সব তুচ্ছ হয়ে গেছে। বাশার বুঝে গেছে - এই কেনাবেচার জন্যই তার জন্ম হয়েছে। এখন শুক্র - শনি
ঈদের ছুটি জমি খায়। এসব করতে করতে আত্মীয় বন্ধু -বান্ধব
কখন ঝরে গেছে। তা নিয়ে বাশারের আফসোস নেই।

কারণ জমিই এখন বাশারের বন্ধু। জমির চেয়ে বড় সুহৃদ কে আছে। একদম আত্মার দোস্ত! এই কারণে ই গরীব - অসহায়েরা জায়গা বেচা কি উচ্ছেদে হাউমাউ করে কাঁদে। ওই যে দলিলে লেখা - চিরতরে সত্ত্ব ত্যাগ করিলাম! জানে ওতেই শেকড় বাকড়। নিরাপত্তা ওটাই। মাটির দিকে ভালভাবে তাকানো শিখলে
কেউ আর কোনদিন সুস্থির থাকতে পারবে না। তার মূল তাকে অস্থির করে দেবে। মানুষ এই কারণেই জমি পাগলা। কেনার জন্য সবকিছু তোলপাড় করে ছাড়ে। বাশার এখন সবই জানে।

আজকাল কাজী বাশার নিজের ভেতর মাটিত্ব টের পায় । রক্তের ভেতর চাক চাক দলা দলা। অন্তরে অজানা এক কষ্ট বল্কায়। কোন জায়গার মাটি দিয়ে তার বডি বিল্ডিং হয়েছে কে জানে!খালের জমি ,বিলের জমি , ধানি জমি, আবাসিকের জমি কে এ প্রশ্নটা প্রায়ই জিজ্ঞেস করে বাশার। নিশীথে নির্জনে মাটিতে একাকী কান পাতে -উত্তর নেই। এক সীমাহীন ধু ধু শুন্যতা তাকে ব্যঙ্গ করে। তাহলে এই সব জমি রক্তে বাজে কেন টানে কেন?টানেইবা যদি নিরুত্তর কেন? তাকে নিয়ে জমির এ কোন খেলা কেমন খেলা!

অথচ মস্করা করতে ছাড় নেই । খোঁচা দেবে - ওই !

- কি !
- তুই ক্যারে ?
- আমি তোর মালিক !
- ক্যামনে ?
- দলিল মতে ।
- তার আগে?
- বায়া দলিল মতে।
- দলিলের আগে ?
- দলিলের আগে কার জায়গা ছিল তা কাজি বাশার কিভাবে বলবে?!এক জায়গা কত হাতে যায়। সময়ে সময়ে । অথচ মাটি ঠিকই থাকে।

মাটি অট্টহাসি হাসে।
বাশারের ভয় লাগে।
- কিরে হাসিস ক্যানে ?
- তোদের বোকামি দেখে।


তোদের মানে মানুষের। বাশার জানে মানুষ মাত্রই মাটিকে ভয় পায়। জানে সে কিছুতেই মাটিকে ছাড়াতে পারবে না। মাটির কি সীমাহীন বিশালত্ব! তখন সে মাটিকে ভয় , হিংসা,ঘৃণা করতে শুরু করে। মাটির দিকে আর তাকায় ই না! জানে তাকালেই নিজের তুচ্ছতা ধরা পড়ে যাবে। অথচ মাটিতে ভর করে আকাশ ছোয়ার প্রচেষ্টার অন্ত নেই। এ প্রয়াসে উঁচা উঁচা দালান বানায়।হাইয়াই গাড়িতে মেঘ ছোঁয়। কিন্তু জেতে কই ?



শেষমেশ এই আমার কাছে! - মাটি হাসে ।
কথা সত্যি। এই মাটি বজ্জাত বেশ্যা। সবসময় পুরনো খদ্দের
খসিয়ে নতুন নতুন আনবে। রঙ চং মাখবে। রঙ ডং করবে ।
মাঝে মাঝে এমন ভয় পায়! তখন বউকে ঝাপটাতে ইচ্ছে হয়। বাশারের।

এই নিহা বিয়ের দিনের মত এখনো ছিপছাপ। এখনো বাচ্চা মেয়ের মত কোলে নিয়ে বিছানায় ছুড়ে ফেলা যায়। দুহাতে কোমর ধরে যৌবন পিষে ফেলা যায়। অথচ কাজী সোহান চৌদ্দ
হয়ে গেছে । কিন্তু ভয় কাটানো হয়না। ব্লাউজ খুললেই খাল - বিল- আবাসিক এলাকার জমি। জমির সাথে সাথে দালাল, এমপি,মন্ত্রী , সচিব,কোর্ট - কাছারি - বিচারক।
জমির বুকে লাশ -টাশ। রক্ত!

উলটো নিহাই ভয় পায়। তুমি দিন দিন কেমন হয়ে যাচ্ছ।শরীরের দিকে তাকাও! হাহাহা! এত বছর পর নাকি তাকাবে! ডায়াবেটিস ,প্রেশার ঝুলিয়ে নেবার পর।

- এবার একটু থাম। অনেক ত হল!
- সব সোহানের জন্য করছি । ভবিষ্যৎ !
-আল্লাহ আমাদের যথেষ্ট দিয়েছেন। আমাদের একটাই ত সন্তান!
- আচ্ছা যা জুড়িয়েছি তাতে ওর হবে ত ?
-এসব কি বলছ!
- এখন এত ভয় করে! তুমি জাননা রাস্তায় বেরুলেই সবাই খিদেয় এমন হা -
নদী - নালা বিল্ডিং সব মুখে এটে নিতে পারবে।
- তোমার কথা দিন দিন কেমন যেন হয়ে যাচ্ছে।
- জানো যত হচ্ছে - তত দেখি সব পলকা। তাসের ঘর। এক ফুয়ে ফুট্টুস হতে দেরি করবে না। তাহলে সিকিউরিটি কই ?
অথচ জমির চাকতি ঘুরলেই টাকা আসছে। মোটা বান্ডিলটা আরেক জমিতে ঠিকই লটকে যাচ্ছে। ভাবলে - অনেক অস্থির লাগে।মাঝে মাঝে ভাবি,ওর কি গোটা বাংলাদেশে কুলাবে ?তোমার কি মনে হয়?

কাজী বাশারের চোখে চোখ রাখে নিহা। বলে -ডাক্তার দেখাও!

ডাক্তার! কোন ডায়াগনস্টিক সেন্টারেই এই রোগ ধরা পড়বে না । ডাক্তার দাওয়াই দেবে কিভাবে ?
নিহাকে আসল কথাটাই বলা হয়নি। কারণ মূল কথাটা কাজী
বাশার নিজেই জানে না। অথচ জিজ্ঞেস করলে অনেক কিছুই বলা যায়। বাশার বলেও।



কোথাও নিরাপত্তা , কোথাও ছেলে । কোথাও ভবিষ্যৎ , কোথাও বাপ - স্বামী হিসেবে কর্তব্য । লোকে বলে - লোভ , টাকার কুত্তা শালা!
অথচ অন্ধ অদম্য আবেগে জমির পিছনে ঠিকই দৌড়ানো হচ্ছে
।এর পেছনে লোভ নাকি প্রেম নাকি জেতার আনন্দ কি আবিস্কার অনুসন্ধান জানতে পারল না। সবার ''কেন '' আর বাশারের ''কেন'' র অনুধাবন বোঝা ও উপলব্ধিতে অনেক ফারাক।এই সবার ভেতর নিহাও আছে।




নিহার রাতে কত চিন্তা। অথচ দিনে ড্যাব ড্যাব খুশি। ফোনে ফোনে আলাপ। এই পাড়া ডিসগাস্টিং আপা। বিল্ডিং হয়ে গেলেই চলে যাচ্ছি। টাকা বল্কানোর সাথে সাথে কাজী সোহানের ব্যস্ততাও বেড়ে যাচ্ছে। বন্ধু বান্ধবে চইমই , পড়ালেখায় হৈ হই। মাঝে মাঝে কাজী বাশার ভাবে - এই বউ,এই ছেলে আমার ত ?
অথচ রড - বালি সিমেন্ট প্রাসাদে কাজি বাশারের কত স্বপ্ন- রক্ত -ঘাম ফিট করা। এই বিল্ডিং এ কয়দিন ই বা থাকা হবে তার!
কাজি সোহানই বা কয়দিন থাকবে? সম্পদ বাড়ুক কি কমুক দুক্ষেত্রেই পুত্রধন এই বিল্ডিং এর একটা গতি করে দেবে। তাহলে কার জন্য কি করা হচ্ছে!


যে কাজী সোহানের জন্য জীবনটা এভাবে মিছমার করে দিল বাশার , সে তাদের জন্য কি করবে! বুড়ো - বুড়ি মরলে ৪ দিন ৪০ দিন বছরি দেবে। মোল্লা ফকির মিস্কিন কে টাকা ছিটে দেবে। ফটো করে দেয়ালে লটকে রাখবে। এই ত!


আর বলবে - বাবার জায়গায় থাকলে আমি বিল গেটস হয়ে যেতাম। বাবা বড্ড বোকা ছিলেন! ( সম্পদ)রেখে না গেলে বন্ধু বান্ধব,আত্মীয় - স্বজনের কাছে গালমন্দ করবে। পথে বসিয়ে দিয়ে গেছে। এই ত হবে কাজী সোহান! নিহাকে ধন্যবাদ। একটাই হারামি পেটে ধরেছে! এই নিহাই জমিতে উস্কে দিয়েছে। নিহা না হলে আজ তার মাটিদর্শন জানা হত না।

মাটিদর্শন বোঝার পর নিজেকে,মাটিকে,পৃথিবীকে বড্ড বোকা মনে হয়।সবকিছুর কেমন অর্থহীন অর্থ! সব বুকে নিয়ে
ঘুরবি কিন্তু পুরোপুরি কারো হবি না। হতে পারবিও না।যত্ন , স্নেহ , মায়া , মমতা , ভালবাসার আড়ালে প্রয়োজনটাই খাটি । কাজ ফুরালে সব শালাই তোকে ছুড়ে দেবে । ঠিক মাটির মত! সব কিছুই মাটিকে ছ্যাদা করে বড় হয়েছে,হয়।মাটি বড় একা।সেও।
জগতে কেউ কারো নয়। তুমি নিজেই তোমার বন্ধু,কিংবা শত্রু।
স্রষ্টার কাছ হতে এসেছ - তার কাছে ফিরে যাবে। তার
মাঝামাঝি কিছু নাই। জমিও বাশার এই দুই বন্ধুহীন সত্ত্বা
এই সুত্রে পরস্পরের খাটি বন্ধু হতে পারত। অথচ তাও হল না।জমি টানে কিন্তু রহস্য ভাঙ্গে না। সে কত ট্রাই দিল! সব ব্যর্থ
। মরুভুমিতে কেবল পানি ঢেলে গেল। একতরফা প্রেম!একতরফা বন্ধুত্ব!


আরো বছর কয়েক পার হল। কাজি সোহান অনার্স পেরোলো।
ব্যবসা ধরল। দুনিয়াগণিতে পিএইচডি হল ।
বাশারের চুলটা ঝুনো। অথচ যেই লাউ সেই ফাউ। একের পর এক জমি দাবড়িয়েও মন পেল না। গোমর ভাঙল না। উত্তর পেল না। এখন? যদি ফট করে মরে যায় ?ক্লান্তিতে হতাশায় তার জীবনরস একদম তিতা হয়ে গেছে। অথচ ভোগে আয়েসে ঘরটা গড়াগড়ি খাচ্ছে। নানারকম সুখের যন্ত্রপাতি ইন হচ্ছে। কিন্তু শান্তি নেই। এসব কেউ বুঝবে না। কেউ না। না বউ না ছেলে।হাভাতে মুরুব্বিরা বলে - এত দৌড়ে লাভ কি? সেই ত সাড়ে তিন হাত মাটির নিচে যাবি। এইবার থাম। আল্লাহ আল্লাহ কর। চিল্লায় যা!শালারা! এই সত্য সবাই জানে। খ্যামটা নাচে এই হাবড়ারাই সবার আগে থাকবে।সময়- সুযোগে টুটি চেপে ধরবে।


পৃথিবীর সবচেয়ে বড় শিক্ষক মাটি বাশারকে অনেক কিছু শিখিয়েছে জ্ঞানী বানিয়েছে - এটা ঠিক।কিন্তু যে জ্ঞান মানুষের শান্তি উবে দেয় -ভেতরটা খা খা বানায়, তা আবার কেমন জ্ঞান?মানুষ এক জীবনে সব প্রশ্নের উত্তর পায় না এটা ঠিক কিন্তু কিছু উত্তর তাকে পেতেই হয়। তার জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নের উত্তর সে কি পাবে না? তার ভুলটা কোথায়?
নিয়তে ভুল? নাকি কাজ বা বোঝার পদ্ধতিতেই ভুল? হয়ত মাটি চায় রাতে চোরের মত না এসে সূর্যের সোনালি আলোয় বুক ভরা সাহস নিয়ে তার সামনে এসে দাঁড়াক? নিজের আমিত্বটুকু ঝেড়ে ফেলে প্রকৃতির অংশ হয়ে জিজ্ঞেস করুক? তখন কি উত্তর পাওয়া যাবে ?



ভেবে ভেবে বাশার একটা চূড়ান্ত সমাধান বের করার চেষ্টা করে।কারণ কাজী বাশার বাচার মত বাঁচতে চায়। আর জীবনকে
নিত্য বোঝার চেষ্টা চালিয়ে যাওয়াই হচ্ছে বাঁচার মত বাঁচার একমাত্র পথ। এতে মরণ যদি আসেত আসুক। হয় জিত নয় হার! অবশেষে একটা আইডিয়া মাথায় টোকা দেয়। সকাল টু
সন্ধ্যা তক - মাইলের পর মাইল জমিতে হাটতে কি দৌড়ুতে থাকবে বাশার। ক্রস করা জমি সব তার। একদম লিও টলস্টয়ের গল্পের মত! সাথে ছেলেকে নেবে। জমি ও নিজের সাথে ছেলেকেও পরখ করা হবে। এতে থ্রিল,পাগলামি, এডভেঞ্চার ,অনুসন্ধান সবই এক প্যাকেজে পাওয়া যাবে। মাথার ভেতরে একটা প্ল্যান বানিয়ে ফেলে বাশার। সকাল- সন্ধ্যা পর্যন্ত জমি মাগলে কিছু একটা বের হবেই। ক্রমে বিশ্বাস টা দৃঢ় হয়। কিন্তু বাংলাদেশে কি এটা সম্ভব?

মনে মনে বাশার হাসে। আবার ভাবে - অসম্ভবের ও বা কি আছে ? একটু চেস্টা দিয়েই দেখুক না!

দালাল কে বলতেই সে হেসে কুটি কুটি ।
ভালাই কইলেন!এমুন কিছু খোয়াবেও কেউ দেহে নাই।- দালাল বলে ।

-একটু দেখুন না! ট্রাই দিতে দোষ কি ? যত টাকাই হোক , বাংলাদেশের যেখানেই হোক আমি রাজি আছি ।সব জায়গা এক মালিকের হতে হবে। এক দাগে। কাঠা প্রতি কমিশানের পারসেনটিজ টা শুনে দালালের শরীর খুশিতে হেচকি দিল।


এই এক কমিশানের মূলায় দালাল সব সম্ভব বানিয়ে ছাড়ল।
লোকটা - জমিটা চকরিয়ার -কয়েক বিঘে জমি।
বাজার রেটের বেশি টাকা- এই লোভে সে রাজি। এবার কাজী বাশার ফাইনাল খেলার জন্য প্রস্তুত হল। নিহাকে বলল - আমার সাথে কাজি সোহান ও যাবে। স্বামীর চোখে বিজলি দেখে নিহার
বুকে অজানা একটা ভয় ঝনঝন করল।
- অতদুরে যাবার দরকার কি ? তোমার হার্টে সমস্যা,
কখন কি হয় ভয় লাগে!
- সব ঠিক করে ফেলেছি।
- সোহানকে নিচ্ছ যে ?
কাজী বাশার সিলিং ফ্যানের দিকে তাকিয়ে বলল -


- নিহা! আমাদের কত টাকা! সুখ ঘরটায় গড়াগড়ি খাচ্ছে।
কারেন্ট গেলে ইউপিএস আদর দিচ্ছে।
অথচ মা গরমে হাঁসফাঁস করতেন। ব্লাউজ ভিজে যেত।
কতবার বলত - ফ্যানটা যদি আরেকটু জোরে চলত! কবরে
কেমন আছে কে জানে! সুখের নাভিমুখ সোহানের দেখা দরকার।নিহার বুকটা শক খেল। কাজী বাশার এভাবে
কোনদিন কথা বলেনি। আর না করল না ।

যে খেলাটা খেলতে যাচ্ছে কাজী বাশার তার নাম রেখেছে'' টানের খেলা''। এবং এটাই তার শেষ খেলা। জমির প্রতি বাপ - বেটার টান, বাপ - বেটার প্রতি জমির টান,এবং বাপ - বেটার পরস্পরের প্রতি টান। সব সকাল টু সন্ধ্যার ভেতর দেখে নিতে হবে।''সত্য'' বলে কোন জিনিস থাকলে তা এই টানের খেলায় বের হয়ে আসুক।


নির্দিষ্ট দিনে বাপ - ছেলে হাজির হল।
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৪ বিকাল ৫:৩৪
৪১টি মন্তব্য ৪২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় পণ্য বয়কটের কেন এই ডাক। একটি সমীক্ষা-অভিমত।।

লিখেছেন সাইয়িদ রফিকুল হক, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৩:১৫



ভারতীয় পণ্য বয়কটের কেন এই ডাক। একটি সমীক্ষা-অভিমত।।
সাইয়িদ রফিকুল হক

বিএনপি ২০২৪ খ্রিস্টাব্দে দেশে অনুষ্ঠিত “দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে”-এ অংশগ্রহণ করেনি। তারা এই নির্বাচনের বহু আগে থেকেই নির্বাচনে অংশগ্রহণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×