
অলোক গোস্বামী -ছোটগল্পের ক্ষেত্রে কোনটা বেশি উৎসাহ দিত, ইমেজ, চরিত্র, নাকি থিম?একটা চরিত্রকে নিয়ে শুধু গল্প হয় না ।আখেরে থিমটাই ত ইটসেলফ একটা গল্প লিখতে প্রেরণা দিল ?
সিরাজ – দুটোই হয়, দুটোই আমার জীবনে ঘটেছে।হয়ত বোধ, ছেলেবেলায় দেখা বিশেষ কোন চরিত্র আমাকে হন্ট করে এসেছে সারাজীবন।কোন মুহূর্তে লিখবার সময় হঠাৎ,এই যে ‘রানীঘাটের বৃত্তান্ত’ … ওখানে ঐ যে ফালতু নামের চরিত্র, বাবার পরিচয় নেই,পাগলীর ছেলে,ঐ চরিত্রটা আমি দেখেছিলাম।আবার থিম ও এসেছে। …..
জ্যোৎস্নারাতে প্রায়ই বের হতাম। বাশি বাজান অভ্যাস ছিল,দেখেছিলাম একটা লোক গরুর গাড়ির একটা জোয়াল নিজের বুকের কাছে নিয়েছে, এবং পেছনে একটা গরু।সে আপন মনে কথা বলতে বলতে আসছে গরুটার সসঙ্গে।এটা আমার মনে ছাপ ফেলে দিয়েছিল।মনে হয়েছিল গরুটা রুগ্ন এবং সে মুর্শিদাবাদের উত্তর বাগড়ী অঞ্চলের লোক।
অলোক – হ্যা, সেটা বলেছেন।
সিরাজ – এই দৃশ্য আমার মধ্যে থেকে গিয়েছিল।মাঝে মাঝে মনে পড়ত, একটা লোক ভারবাহী জন্তুর মত যাচ্ছে। গরুর প্রতি কি ভালবাসা!অসুস্থ গরু …. এইটা মনে চাপা ছিল।পরে একসময় বের হয়ে আসে দুইটা জিনিস-
একটা চরিত্র ও একটা থিম।
( এভাবেই একদিন তার বিখ্যাত গল্প গোঘ্ন বের হয়ে আসে।)
মাইকে সিরাজের দানাদার গলা শুনলে মনে হবে কোন কথকঠাকুর কথকতা করছেন । ওর গল্পেও এই কথকতা থাকে। কথা বলতে বলতে ও সড়াৎ করে গভীরে নেমে যায়। নাইলে গোঘ্ন লেখে কি করে ?
– শ্যামল গঙ্গোপাধ্যায়
“চারু মাস্টারের বেহালা শুনে দোলাই বড় কেঁদেছিল। দোলাই ছিল নরম মনের ছেলে।বলেছিল আপনার যন্তরে কী জানি কী যাদু আছে, কলজে টাটায়।হেই মাস্টারবাবু, আপনার বিটির বিভায় যত কুমড়া লাগবে, হামি দিবো। যত কলাই লাগবে, হামি দিবো।
সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজের বিখ্যাত গল্প ”গোঘ্ন”এভাবেই শুরু হয়।দোলাই মাস্টারের বিটির বিভায় যত কুমড়া লাগে দেবে বলেছিল।যত কলাই লাগে দেবে বলেছিল।কিন্তু তার আগেই গাবতলার গোরে ঘুমিয়ে গেল দোলাই। হারাই তাই ভাইয়ের কথা রাখতে রাঢ় অঞ্চলে এসেছে।
ভাত খেতে খেতে হারাই বলে,খাছি মা খুব খাছি।বড় মিঠা আপনারঘে রাঢ দেশের ভাত।চারু মাস্টারের মেয়ে হাসে।ও চাচা!তোমাদের দেশের ভাত বুঝি তেতো?হারাই হাসে। – দানাগুলান মোটা,বিটিরে!হামারঘে দ্যাশে রাঢ়ি চালের ভাত খায় শুধু আমির-বড়লোকে। মাস্টারের মেয়ে ত অবাক।তোমরা কি খাও, চাচা?
মোটা মাসকলাই, আটার লাহারি, ছাতু, ভুজা, গেঁহু উঠলে আম-কাঁঠালের সঙ্গে গেঁহুর আটার চাপড়ি। আউষের ভাত মাত্র মাসে কয়েকদিন।- হারাই বলে। তাদের রাঢ়ি অঞ্চলের চাল নিতে বছরে একবার আসে – তাও বলে।
কথাকার সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজ এরপর আমাদের জানাতে থাকেন ভাগীরথী-ভৈরবী – পদ্মার পলিতে ভরাট নরম মাটির সমতল দেশে এ মিঠে ধান বড়ই অমূল্য ,সারা বাঘড়ি অঞ্চলে যার নাম শাহদানা,শ্রেষ্ঠ দানা বা শস্য।রাঢ়ে শাহদানার মউসুম এলে তাই বাঘড়ি অঞ্চলে সাড়া পড়ে যায়। সোনার রাঢ়ের দিকে দলে দলে ছুটে ভুগা মুসাফির।
হারাই মুসাফির নয়।মাঙতে আসে না রাঢ়মুল্লুকে। গরুর গাড়িতে নিয়ে আসা খন্দ,ফলমূল সবজির বদলে শাহদানা নিয়ে যায়। কোথাও সংলাপ, কোথাও পরিবেশের পাশে মিশিয়ে চরিত্রের প্রয়োজনীয় স্কেচটুকু দক্ষ হাতে একে যান, বলা ভাল বলে যান সিরাজ। তার নির্মিত জগতে কখন যে ঢুকে পড়ে পাঠক,টের পাওয়া যায় না।দক্ষ কথক সিরাজ এভাবেই তার গল্পের কেন্দ্রবিন্দুপথে পাঠককে নিয়ে যাবার জন্য তার প্রাথমিক ও প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন করেন।
তারপরের দৃশ্যে চলে আসে ধনা,গল্পের প্রেক্ষণবিন্দু কিছুক্ষণ পর যাকে কেন্দ্র করে আবর্তিত ও নিঃশেষ হবে।ধনা অসুস্থ।চোখের কোনায় কালি।কালো ধারা আকা।হাড়ের সার রাতারাতি ঠেলে উঠেছে।চারু মাস্টার বলে-পরিমল বদ্যিকে ডেকে নিয়ে আয়।ছ্যারানি হয়েছে গরুটার।
হারাই হাসে।এতটুকুন বদমাইসিও আছে মাস্টারবাবু।তবে পা ফেললে থামানো যায় না।একদম পঙ্খিরাজ ঘোড়া!চারু মাস্টারকে অবাক করে দিয়ে ধনা দাড়ায়।হারাই হাসে।বলে দেখলেন?।দেখলাম-মাস্টার বলে।তবে পিরিমলকে দেখিয়ে নিয়ে যাস।হারাই কথা রাখে।তারপর চলতে চলতে সন্ধ্যা।হারাই কাঁপে, কারণ সামনে ভয়ের রাত হাঁ করে আছে।রাতচরা বাঘড়ে গাড়োয়ানের ভুত ও জীনের কথা মনে হয়।গাছের ডালে আত্মহত্যাকারীরা মানুষ, শেয়াল, বেড়াল বা পাখির রুপ ধরে সামনে আসে।রাহাজানির ভয় ও আছে । দল বেধে তাই যাতায়াত করতে হয়।হেতেরপাতি রাখতে হয়।গরু বলবান হওয়া চাই।গাড়োয়ান সাহসী হওয়া চাই।কিন্তু এখন ত মউসুম নয়।হারাই কেবল ভাইয়ের কথা রাখতে এসেছে।
রাত হয়।পিরিমল বদ্যি বলেছিল মেদীপুর বাজারে রাত জিরোতে ।দু ক্রোশ মাত্র দূর।কিন্তু ধনা অসহায়। মুখ বেয়ে ওষুধ গড়িয়ে পরে।ধনাকে সরিয়ে নিজেই জোয়াল তুলে নেয় হারাই।ধনাকে গাড়ির পেছনে বেঁধে চলতে শুরু করে।হঠাৎ হারাইয়ের সামনে অন্ধকার ফুঁড়ে উপস্থিত হয় এক আগন্তুক,নাম দিলজান।পেশায় কসাই।দিলজান ধনাকে লক্ষ্য করে বলে এ গরু রাত পোহাবে না।তার চেয়ে আমাকে দেন।হালাল করি।হারাই বুকফাটা চিৎকার করে উঠে।দিলজান দাম চড়ায়।কিন্তু হারাই তার সমস্ততা নিয়ে ” না”।
তারপর?হারাই গঞ্জেল আরশ পড়তে পড়তে মেদীপুর চটির কাছাকাছি চলে আসে।ততক্ষণে ধনা প্রায় নির্জীব,হাটতেও পারছে না।মন্ত্রপড়া জল খাইয়ে হারাই শেষ রাত নাগাদ গরু ভাল হয়ে যাবার আশায় থাকে।শেষ রাতে হারাইয়ের পেট খিদেয় চোঁ চোঁ করে।চিড়ে গুড় খেয়ে হারাই যখন তন্দ্রামত অবস্থায়,তখন ভোরে আজানের শব্দ শুনতে পায়।ধনার দিকে তাকাতেই তার কলজে চিরিক করে ওঠে।গোরুটা দু পায়ের উপর মুখ রেখে শুয়ে আছে।অল্প অল্প নড়ছে চোয়াল।
এরপরই গল্প সবচেয়ে সংবেদনশীল,মর্মস্পর্শী কেন্দ্রবিন্দুতে চলে আসে।ওজু করে নামাজে দাঁড়িয়ে হু হু করে কেঁদে হৃদয়ের সমস্ত আকুলতা দিয়ে হারাই বলে ওঠে- ”হামার বেটার জান মাঙি হুজুর। আর কিছু মাঙি না সংসারে। …হেই পরোয়ার দিগার ! হামরা মাগ-মরদে বাঁজা লই তুমার মেহেরবানিতে। তুমি এক ব্যাটার জানের বদলে হামারঘে আরেক ব্যাটার হায়াত দাও!
ব্যাটা মরবে,ব্যাটা জন্মাবে। কিন্তু গোরু মলে কোথায় পাবে হারাই।একটা গরুর দাম জোগাতে অর্ধেক জমি বেচতে হবে।খোদা কি এটা বোঝেন না ?
একটা গরুর অভাবে তার গাড়োয়ানী বন্ধ হবে।চাষবাস বন্ধ হবে।খন্দ ফলমূল ফিরি করতে আসা হবে না রাঢ়ে ।না খেয়ে মারা পড়বে হারাইয়ের বহু বেটা বিটিরা।’মুসাফির’দের মত তাদের ও যে ভিগ মাগতে যেতে হবে রাঢ়ে।ঠিক এমনি করে একটা গরুর অভাবে বাঘড়ির কত মানুষ মুসাফির ভিখিরি হয়ে গেছে।তাই ভেবে হারাই কাঁদে।নমাজে বসে থাকে অনেকক্ষণ।খোদাতালাকে ইনিয়ে বিনিয়ে সব কথা বোঝাতে চায়।”
এই জায়গায় এসে গল্প গল্পকে ছাড়িয়ে যায়, হয়ে ওঠে আখ্যান, গল্প শুধুমাত্র হারাইয়ে সীমাবদ্ধ থাকে না,হারাই ধরা দেয় ভারতবর্ষের প্রান্তিক কৃষককুলের প্রতিনিধি হয়ে, যাদের অস্তিত্বই গরুর উপর নির্ভরশীল,গরু তাই সন্তানের চেয়েও বেশি। সন্তান মানুষের কাছে সবচেয়ে প্রয়োজনীয়,আত্মজ হেতু আত্মিক নৈকট্য ও বেশি,কিন্তু এই গল্পে গরু দুইক্ষেত্রেই মানুষকে প্রতিস্থাপিত করেছে, ছাপিয়ে গেছে। সামান্য কটা বাক্যে ভালবাসার তীব্র ব্যাকুলতা, প্রয়োজনীয়তা,চূড়ান্ত অসহায়তা,অস্তিত্ব সংকটের অশনি সংকেত,হৃদয়ের অকপট সরলতাসমেত হাহাকারে উদ্ভাসিত,যা পাঠককে স্তব্ধ করে দেয়।
গল্পটির তাৎপর্য এখানেই শেষ হতে পারত,এরপর স্বাভাবিক নিয়মে এগোতে পারত সমাপ্তিবিন্দুর দিকে, কিন্তু ব্যক্তির মধ্য দিয়ে তার সময়, তার জনপদের মানস চিত্র আঁকা সিরাজের স্বভাব , তার দৃষ্টিভঙ্গি অনুযায়ী গল্প তাই নতুন বাক নেয়, নিতে হয়, নিয়ে আবার ফিরে আসবে হারাইয়ের কাছে, ফলে আমরা বুঝতে পারব ধনা আসলেই হারাইয়ের পুত্রসন্তান,কিংবা তার চেয়ে বেশি,তার ভালবাসা নিখাদ,গল্পকারের আরোপিত নয়, অবশ্য প্রথমেই তা বোঝা গেছে, যদিও- তা হৃদয় দিয়ে , যুক্তিতে নয়।কিন্তু এখন তার আচরণ আমাদের কাছে সব স্পষ্ট করে দেবে, এবং তার তীব্র ও অনিঃশেষ ভালবাসার নির্যাসে পাঠক হৃদয় তুমুলভাবে আলোড়িত হবে, যার রেশ গল্প শেষ করেও থেকে যাবে, অনেকদিন,যে কোন মহৎ গল্প পাঠের মতই।
গল্পে ফিরে আসি।।পরের সকালে মুমূর্ষু ধনাকে কিনে নেয় সেই দিলজান।তারপর জোয়াল কাধে পথ চলতে শুরু করে হারাই।পথে বদর হাজি নামের এক শরীফ ব্যক্তির সাথে দেখা। হাজি বদর জোঁয়াল কাঁধে বলদের মত চলতে কাউকে কখনো দেখেন নি।তার দয়া হয়। তিনি হারাইকে কারো গাড়ির সঙ্গে তার গাড়ি বেঁধে নেয়ার পরামর্শ দেন।তার ঘরে আনেন। স্বভাবসুলভ আপ্যায়নের ব্যবস্থাও করেন।নিজেই হারাইয়ের পাতে মাংস তুলে দেন। আর গরুর মাংস কিভাবে পেলেন বলতে থাকেন।বললেন – দিলজান হালাল করেছে। তখন টুকরোটা হারাই কেবল মুখে পুরেছিল,আচমকা নড়ে ওঠে থুথু করে ফেলে দেয়। বমি করে। বুক ফাটা কান্নায় বলে ওঠে – হেই হাজিসাব!হামাকে হারাম খাওয়ালেন! হামাকে হামার বেটার গোস্ত খাওয়ালেন!
তারপর?
গল্প ফিরে যায় পেছনে।দোলাই চারু মাস্টারের মেয়ের বিভার সব কুমড়া-কলাই দিতে চেয়েছিল।সে এখন পদ্মার পাড়ে ঘুমিয়ে।কুমড়ো আর কলাই দিয়ে হারাই ফিরে আসছে।নিয়ে আসছে ধান,চারু মাস্টারের বেহালার সুর।বেড়ার ধারে দাঁড়িয়ে আছে বউ।মাটির বদনায় পদ্মার জল।এ জল ধনা মনার পা ছুঁয়ে দেবে।
গল্পকে এখানে শেষ হতে হয়, কারণ গল্পের নাম গোঘ্ন।গো হত্যাকারী। বৈদিক ভারতে এই শব্দের অর্থ ছিল অতিথি। এবং অতিথিকে গরু দিয়ে আপ্যায়িত করতে হত।আশ্চর্যের সাথে খেয়াল করতে হয় গল্পে গোঘ্ন শব্দের দুটা রুপই আছে।বদর হাজি হারাইকে গরু দিয়ে আপ্যায়িত করে। ধনাকে দিলজানের হাতে দিয়ে হারাই ত গোঘ্নই,যদিও পরিস্থিতির চাপে,তবু হারাই নিজেকে গোঘ্ন ভাবে,ভাবে বলেই মনের সব দুঃখ বদর হাজির কাছে খুলে বলতে ইচ্ছে হয়,ধনাকে বেচার কথা লুকোয়, গরুটা রাস্তায় মারা গেছে বলে।এবং ভাতের পাতে ধনার কথা জানার পর তার মানসিক যন্ত্রণা ভেতর থেকে উপচে পরে,জবাই করা প্রাণির মত ধরফড়ায়, আমরা জানি এক পদ্মার পানিতেও এ আগুন নিভবে না গো। ফলে মানবতার অব্যক্ত ক্রন্দনধ্বনিতে সিক্ত হয় পাঠকহৃদয়,সঞ্চারিত হয় অপার বেদনাবোধ, -তাতে মিশমিশ ব্যক্তি।সময়।সমাজ।ইতিহাস।
রাঢ়বাংলা ও রাঢ়ের মানুষের জীবন সিরাজের গল্পের মূল চারণভূমি।তাদেরকে উপস্থাপিত করতে তিনি এনেছেন লোকজ মিথ,মানুষের চিরায়ত বিশ্বাস,আচার,প্রেম,ভালবাসা,প্রকৃতি ও জীবন সংগ্রাম।গোঘ্ন গল্পেও তার ব্যত্যয় হয়নি,অন্তজ মানুষের কঠোর কঠিন নির্মম জীবন,ও পোষাপ্রাণির প্রতি কৃষকের জীবন নির্ভরতার এক অভাবনীয় ও অবিশ্বাস্য চিত্র তিনি শব্দের তুলিতে এঁকেছেন। তাতেও থেমে থাকেননি,মানুষ ও সভ্যতার ইতিহাস ভালভাবে জানা আছে বলেই তিনি অবলীলায় বলে যেতে পারেন, –
”দুনিয়ার অনেক মানুষ ও তোদের মত অবলা জানোয়ার বইকি। ঠাউর করে দেখবি, তাদেরঘে ওপিঠে ওজনদার ছালা চাপানো আছে, ধনা!তাদের কেও ছালা বহিতে হয়, বাপ।হু ঠাউর করে দ্যাখ।হাসিস না । তাদেরঘে ভি কষ্ট। ঘাড়ে কাল দাগ পড়ে।গোস্ত দরকচা পড়ে যায়। শাঁস ফেলতে হাঁপানি, পা ফেলতে জ্যাংয়ে বেথা,পিছের ভার টেনে হাঁটে। তাদেরঘে ভি মুনিব আছে।ঠাউর করে দ্যাখ।”
ইতিহাসের অনাদিকাল হতে চলা জীবন সংগ্রামের যে বিন্দুটায় মানুষ ও জন্তু একাকার হয়ে যায় – হারাই ও ধনা তার প্রতীক,এর বিস্তার পুরো দুনিয়ায়, এ গল্প তাই পুরো বিশ্বের শোষিত শ্রেণীর গল্প , সমকালীন এবং শোষণ থাকা সাপেক্ষে চিরকালীন।
সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজের রয়েছে জাদুকরি গদ্যভাষা।তার হাতে পড়ে শব্দ অলৌকিকতা পায়,গদ্যশরীর থেকে বের হয় সোদামাটির গন্ধ।
প্রমিত গদ্যের ভেতর তিনি অনায়াসে মিশিয়ে দেন পটভূমিজাত উপভাষার নির্যাস।’গোঘ্ন’ গল্পেও তার এই শৈল্পিক দক্ষতা হীরের মত উজ্জ্বল।
সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজের ছোটগল্পের ভাণ্ডারে সার্থক শিল্পশস্যের অভাব নেই।বাংলা সাহিত্য তার বিস্ময়কর অপার দানে সমৃদ্ধ। ‘গোঘ্ন’ তার শ্রেষ্ঠ শিল্পের একটি। এই শিল্পসুধা পানে পাঠক নিজেকে সমৃদ্ধ করবেন এই কামনা।
( ছোটকাগজ '' স্নান'' এ প্রকাশিত )
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ রাত ২:৩৫

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



