somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বিটি বেগুন চাষের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করতে হবেঃ মনসান্তো - মাহিকোর বায়ো সন্ত্রাস রুখতে হবে

২৪ শে জানুয়ারি, ২০১৪ রাত ৯:০৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সিনজেন্টার পর এবার মনসান্তো –মাহিকোর বায়োসন্ত্রাসের কবলে বাংলাদেশ। এদেশের ঐতিহ্যবাহী শস্যবীজের দখল নিতে চায় বহুজাতিক কোম্পানি – এদেশের প্রাণ-পরিবেশ- প্রকৃতির উপর চাপিয়ে দেয়া হচ্ছে বায়োলজিকাল দূষণ। শুধু বিটি বেগুন না, সামনে আসবে বিটি তুলা, বিটি আলু। এদেশকে বানানো হচ্ছে বহুজাতিক এগ্রো কর্পোরেশনের মুনাফার জমিন আর আমাদের করা হচ্ছে গিনিপিগ।

দুনিয়া জুড়ে জিএম বিটি বেগুন কেউ অনুমোদন দেয় নাই। এই বেগুনের উদ্ভাবক মাহিকো নিজের দেশ ভারতেই এটা অনুমোদন পায় নাই, ভারত ও ফিলিপাইনে বাজারজাত করতে না পেরে মুনাফাখোর কোম্পানি বাংলাদেশকে বেছে নিয়েছে। এদেশ এখন ডাম্পিং স্টেট। এদেশের কৃষি গবেষণা কাউন্সিল এর মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা এদেশের জনগণকে গিনিপিগ মনে করেন বলেই বলে দিয়েছেন, “ বিটি বেগুন পরিবেশ ও মানুষের জন্য ক্ষতিকর কিনা সেটা যাচাই করতেই এই বেগুনের স্বল্প চাষের অনুমোদন দেয়া। “ এই বিজ্ঞানী কি জানে না যে কোন ঝুঁকিপূর্ণ ড্রাগ, টক্সিন এর রিস্ক এসেসমেন্ট মানুষের উপর করতে হয় শেষ ধাপে, প্রাথমিক ধাপে লোয়ার এনিম্যাল এর উপর টক্সিসিটি টেস্ট করতে হয়? এসব প্রাথমিক পরীক্ষা নিরীক্ষাও পর্যাপ্তভাবে না করেই কেন তা চাষের অনুমতি দেয়া হল?

বারি কেন গবেষণা রিপোর্ট প্রকাশ করছে না? কতদিনের স্টাডি করা হয়েছে? হাইকোর্ট নাকি গবেষণা রিপোর্ট প্রকাশ করতে বারিকে নির্দেশনা দিয়েছে, তো সেই নির্দেশনা না মেনেই কেন তড়িঘড়ি করে এই বেগুন চাষের জন্য উঠেপড়ে লেগেছেন? নাকি এখন আর আদালতের নির্দেশনার দাম নাই? মাহিকো যে ৯০ দিনের স্টাডি করেছে তার ডাটা এনালাইসিস করেই বিজ্ঞানিরা জানান বিটি বেগুন ইঁদুরের স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর ( যদিও কোম্পানি জালিয়াতি করে রিপোর্ট দেয় যে তাতে ক্ষতি হবে না!!) ফার্মাকোলজি/ টক্সিকোলজির নিয়ম অনুসারে এসব ক্রনিক টক্সিকলজিক্যাল স্টাডি ৯০ দিন থেকে ২ বছর পর্যন্ত করতে হয়। তা না করেই অর্থাৎ পর্যাপ্ত রিস্ক এসেসমেন্ট না করেই জিএম বীজের চাষ গণস্বাস্থ্যকে ঝুকির মুখে ঠেলে দিবে। আবার এই জিএম জাতের সাথে ক্রসিং ওভার হয়ে বেগুন এর কাছাকাছি অন্যান্য জাত ( এবং অন্যান্য উদ্ভিদ) জেনেটিকালি দূষণের কবলে পড়বে। মনসান্তো –মাহিকো- ইউএস এআইডি এর প্রযুক্তি ও আর্থিক সহায়তায় যে বীজ তার মালিক হবে এসব কোম্পানি, কৃষকের বীজ নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়বে। জেনেটিকালি দূষণ আর পেটেন্ট আগ্রাসনের কারনে হারিয়ে যেতে পারে এদেশের অসংখ্য বেগুন বীজ। এদেশের কৃষি বীজের উপর এই বায়ো সন্ত্রাস রুখতে হবে।

বাংলাদেশে একের পর এক জিএম শস্য অনুমোদন দিয়ে কৃষিমন্ত্রী মতিয়া নিজেকে জিএম কন্যা হিসেবে হাজির করেছেন। তিনি জিএমও বিটি বেগুন বীজ কৃষকদের মাঝে বিতরণ করেছেন ২৩ জানুয়ারি রাজধানীর ফার্ম গেট কৃষি গবেষণা কাউন্সিল (বার্ক )মিলনায়তনে । কৃষকের বীজনিরাপত্তা, খাদ্যনিরাপত্তা, মানবদেহ, পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্যের জন্য হুমকির কথা বিবেচনায় না নিয়ে শুধু মাত্র মার্কিন বহুজাতিক কর্পোরেশন মনসান্তো আর ভারতের বীজ কোম্পানি মাহিকোর কর্পোরেট স্বার্থে বিটি বেগুনের বাণিজ্যিক ব্যবহারের অনুমোদন দেন কৃষিমন্ত্রী।

এই জিএম বীজ চাষ হলে বাংলাদেশের ক্ষতি সমুহঃ

বায়োপাইরেসির শিকার হবে বাংলাদেশের বেগুন, বেগুনের বীজের সত্ত্ব চলে যাবে বহুজাতিক কৃষি কর্পোরেশন এর হাতেঃ জিএম বীজ উত্পাদনের প্রযুক্তি মনসান্তোর হওয়ায় এবং মনসান্তো-মাহিকোর যৌথ কারিগরি সহযোগিতায় এ বিটি বেগুন উদ্ভাবন হওয়ায় তার পেটেন্ট রাইটস কোম্পানির হাতে চলে যাবে এবং আমাদের কৃষকদের চড়া দামে পেটেন্টেড বেগুন বীজ কোম্পানির কাছ থেকে কিনতে হবে। অধিক উত্পাদনের আশায় কৃষকরা পেটেন্টেড শস্য বীজ উচ্চ দামে কোম্পানি থেকে কিনতে বাধ্য হবে। ফলে উত্পাদন খরচ বেড়ে যাবে।

হরেক রকম স্থানীয় বেগুন বীজ হারিয়ে যেতে পারেঃ বিটি বেগুনের বাণিজ্যিক ব্যবহার আমাদের বেগুনের জেনেটিক বৈচিত্র্যকে হুমকির মুখে ফেলে দেবে। বেগুন বীজের পেটেন্ট বহুজাতিক কোম্পানীর কাছে থাকবে বলে এবং সরকারের পক্ষ থেকে অধিক ফলনের বিজ্ঞাপন দিয়ে বিটি বেগুন চাষে কৃষককে উত্সাহিত করা হলে শুধু এ জিএম বীজের চাষাবাদে কৃষক নিয়োজিত থাকবে। কৃষকরা নির্ধারিত কিছু জিএম জাতের পণ্য ফলনের দিকে নজর দেবে। ফলে ঐতিহ্যবাহী লোকায়ত জাতগুলোর জায়গা দখল করে নেবে জিএম বীজ। এতে ধীরে ধীরে দেশী বীজের সংরক্ষণ ও পুনরুত্পাদনের ধারাবাহিক প্রাকৃতিক প্রক্রিয়া হারিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকবে এবং হরেক রকম স্থানীয় বেগুন বীজ হারিয়ে যেতে পারে। অর্থাত্ শেষ পর্যন্ত বীজের ওপর কৃষকদের নিয়ন্ত্রণ থাকবে না বরং প্রতিষ্ঠিত হবে বহুজাতিক কোম্পানির মনোপলি নিয়ন্ত্রণ! ফলন বৃদ্ধির নামে শেষ পর্যন্ত খাদ্যের জন্য বহুজাতিক কোম্পানির প্রতি নির্ভরশীলতা তৈরি হবে।

বিটি বেগুনে স্বাস্থ্যগত কোনো ঝুঁকি নেই বলে ভারতের মাহিকো ও বাংলাদেশের বারি দাবি করলেও নিউজিল্যান্ডের এপিডিমলজিস্ট লুই গালাঘের, ফ্রান্সের সেরালিনিসহ আন্তর্জাতিক অনেক বিজ্ঞানীর দাবি, বিটি বেগুন মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর।

মাননীয় কৃষি মন্ত্রী, বহুজাতিক কোম্পানির মুনাফা বৃদ্ধির দেখভাল করার জন্য আপনাকে মনোনীত করা হয় নাই, কৃষিপ্রধান বাংলাদেশের কৃষি ও কৃষকের স্বার্থ দেখভাল করাই আপনার দায়িত্ব! জিএম খাদ্য অনুমোদন দিয়ে বাংলাদেশের কৃষিতে কর্পোরেট আধিপত্য প্রতিষ্ঠার চেষ্টা বন্ধ করুন!

বাংলাদেশের কৃষিতে আন্তর্জাতিক মার্কিন ও ভারতীয় বীজ কোম্পানির চলমান আগ্রাসন রুখে দাঁড়াতে হবে এখনই।


দেশের কৃষক, ভোক্তা , বিজ্ঞানী, পরিবেশবিদদের এই বীজ আগ্রাসনের প্রতিবাদ করতে হবে, না হলে মার্কিন ও ভারতীয় এগ্রো কর্পোরেশনের মুনাফার স্বার্থে একের পর এক জিএম শস্য ( বেগুন, আলু, তুলা) অনুমোদন দিয়ে এদেশের প্রাণ ও পরিবেশকে হুমকির মুখে ঠেলে দেয়া হবে।



০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

গরমান্ত দুপুরের আলাপ

লিখেছেন কালো যাদুকর, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৫৯




মাঝে মাঝে মনে হয় ব্লগে কেন আসি? সোজা উত্তর- আড্ডা দেয়ার জন্য। এই যে ২০/২৫ জন ব্লগারদের নাম দেখা যাচ্ছে, অথচ একজন আরেক জনের সাথে সরাসরি কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজীব নূর কোথায়?

লিখেছেন অধীতি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:২৪

আমি ব্লগে আসার পর প্রথম যাদের মন্তব্য পাই এবং যাদেরকে ব্লগে নিয়মিত দেখি তাদের মধ্যে রাজীব নূর অন্যতম। ব্যস্ততার মধ্যে ব্লগে কম আসা হয় তাই খোঁজ-খবর জানিনা। হঠাৎ দু'একদিন ধরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মৃত্যুর আগে ইবলিশ ঈমান নিয়ে টানাটানি করে

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:০২



ইউটিউব হুজুর বললেন, মৃত্যুর আগে ইবলিশ ঈমান নিয়ে টানাটানি করে। তখন নাকি নিজ যোগ্যতায় ঈমান রক্ষা করতে হয়। আল্লাহ নাকি তখন মুমিনের সহায়তায় এগিয়ে আসেন না। তাই শুনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×