জীবনের প্রতি বাকে কত কিছু লুকিয়ে থাকে। প্রতি বাকে হারিয়ে যায় কত শত মুখ। কত মানুষকে যেতে দিতে হয়, মনের বিরুদ্ধে। তাদের জন্য, কিংবা নিজের জন্য। আমি তো তোমাকে যেতে দিতে চাইনি। আবার তোমার মনের বিরুদ্ধে তোমাকে খাচাতেও আটকে রাখতে চাইনি। তুমি যখন উড়ে যেতে চাইলে, আমি দরজাও খুলে দিয়েছিলাম। কিন্তু মন থেকে চাইনি। তুমি সেটা দেখেছিলে, তাই আমার জন্যই তুমি আবার খাচার ভেতর ফিরে গিয়েছিলে। আমি তোমাকে বন্দি রাখতে চাইনি। শুধু চেয়েছিলাম তোমার জন্য থাকতে, বলেছিলাম, তোমার দরকার পরলে আমাকে পাবে। তোমাকে পুরাপুরি ছেড়ে দেয়ার মত উদার হইনি। আবার তোমাকে ধরে রাখতেও মনে বাধতো। তোমাকে কষ্ট দিয়েই রেখেছিলাম। কিন্তু মাঝে মাঝে যখন তুমি উড়ে যাওয়ার জন্য ছটফট করতে, আমি দিশেহারা হয়ে পড়তাম। কিভাবে তোমার কষ্ট কমাবো। তোমার আর আমার মাঝে যেই বেড়া তৈরী করেছিলাম, তুমি সবসময় সেই বেড়াতে কষ্ট পেতে। বলতে ঐ বেড়া যতদিন থাকবে, ততোদিন তুমি কষ্ট পাবে। কিন্তু ঐ বেড়া আমার জন্য সরানো সম্ভব না, এও বলেছিলে। আমি তোমাকে বিশ্বাস করেছিলাম। ভেবেছিলাম, সত্যি বোধহয়, ঐ বেড়া আমার পক্ষে ভান্ঙা অসম্ভব। চাইনিও ভান্ঙতে। মিথ্যার বেড়াজাল দিয়ে আরো শক্ত করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু তুমি আমার মিথ্যাগুলো দেখে ফেলেছিলে। মিথ্যার ঐ পারে কি লুকিয়ে রেখেছিলাম, সেগুলো দেখতে পাওনি। আমি চেয়েছিলাম তুমি ভাবো, আমি মিথ্যবাদী, কোন ভাবেই যেন তুমি আমার লুকানো সম্বল দেখতে না পাও। আমি সফল হয়েছিলাম, কিন্তু তার সাথে হারিয়ে ফেলেছিলাম তোমাকেও। তুমি কখনো আমাকে ক্ষমা করনি। তাই সেদিন যখন আরেকবার বললে তোমাকে ছেড়ে দিতে, আমি রাজী হয়ে গিয়েছিলাম। তোমাকে কষ্ট দেয়ার সাধ্য আমার আর ছিলনা। কারন তোমার সাথে সাথে আমি আরো দশগুন কষ্ট পাচ্ছিলাম। খাচার দরজা খুলে দিতে আমি রাজী হয়ে গিয়েছিলাম। কিন্তু আমার প্রতি তোমার ঘৃনা দেখে আমার কষ্ট যেন আরো একশ গুন বেড়ে গেল। কখনো চাইনি এইভাবে বিদায় নিতে। তাই বললাম, তোমাকে একটা কথা বলা দরকার। আমার লুকানো সম্বল, যা আমি এতদিন শত মিথ্যা দিয়ে ঢেকে রেখেছিলাম। এই একটা কথাই আমার শত মিথ্যার কারন। তোমার আমার মাঝের সেই বেড়া তোলার সাধ্য আমি কোথা থেকে পাব বলো? ঐ বেড়া ঐ পাশেই যে ছিল আমার ভাঙা রিদয়খানি। সত মিথ্যা বলেছিলাম, শুধু ঐটা ঢাকতে। ঐ বেড়া রেখেছিলাম আমাকেই প্রটেক্ট করতে। তুমি ঠিক ধরেছিলে। তোমার কাছ থেকে অনেক লুকিয়েছি আমি। আমি আর মেয়েটা জোট বেধেছিলাম। ও আমাকে কথা দিয়েছিল, আমার কথা কোনদিন ফাস করবেনা। করেওনি। ওকে দোষ দাও কেন? ওতো শুধু আমার কথা রেখেছিল।
আমার এইসব কথা শুনে তুমি দিশেহারা হয়ে গেলে। জিগ্গেস করলে, আমি এত বড় ভুল কিভাবে করলাম। কেন বললাম না? বলব কেমন করে বল? আমার বলার কোনই উপায় ছিল না। তাই ক্ষত বিক্ষত হয়ে শত মিথ্যার আড়ালে নিজেকে লুকাতে চেয়েছিলাম। কিন্তু সেই মিথ্যার আবরন যখন খুলে গেল, আমি দাড়িয়ে রইলাম। খুব দৌড়ে পালাতে ইচ্ছা করছিল। চেষ্টাও করেছিলাম। তুমি বলেছিলে, আমি যেন থাকি। তুমি বলেছিলে, আমি যখন বেড়া ভাংলাম, এবং প্রথমবারের মত তোমাকে মুক্তি দিলাম, আর তুমি যখন থাকতে চাইলে, তখন আমি কিনা তোমাকে ছেড়ে চলে যাব? কিন্তু আমি বলেছিলাম, আমার পক্ষে আর থাকা সম্ভব না। তোমাকে যখন মুক্তি দিয়েছি, পুরাপুরি ভাবেই দিতে চাই। যার মানে তোমার কোন কিছুর সাথেই আমি আর জড়াবোনা। তুমি তখন গিল্ট ফিল করছিলে, নাকি রাগ? তোমার শত কষ্ট আর রাগ আবার এসে আমার ঘাড়ে পড়ল। নিজেকে পুরা উজাড় করে দেয়ার পরেও তুমি আমাকে বুঝলেনা। ভাঙা রিদয় নিয়ে আমি পালালাম। তোমার ভালবাসা এসে পড়ার আগেই পালাতে হবে। উড়ে যেতে হবে, বহুদুর। যেন আর কোনদিন খুজে না পাওয়া যায়।
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে মে, ২০০৭ রাত ১০:৫৩