somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

একটি শিরোনামহীন গল্প [হোসেন শহীদ মজনু]

০৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০১১ দুপুর ১:৪৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


কবরস্থানের পাশ দিয়ে যেতে ভয় লাগে কেন?-কথাটা ভাবতে না চাইলেও মিথুনের মন থেকে ভাবনাটা দূর হয় না। আচ্ছা বড়রা কি করবকে ভয় পায়? তা-ইবা হয় কী করে। প্রতিদিনই তো সন্ধ্যার পর টঙ্গীবাজার থেকে তার বাবা বাড়ি ফেরে ওই কবরস্থান পাশ কাটিয়ে। তাহলে তার এতো ভয় কেন? সেকি এখনও অনেক ছোট। আর কতো বড় হলে তার কবরকে ভয় করবে না।-সকালবেলা কবরস্থানটা পাশ কাটাতে গিয়েও কেন জানি থমকে দাঁড়ায় মিথুন। তারপর কতক্ষণ মনে নেই, যখন মনে হয় তখন ভয় তো তার সড়কের যানজটকে। থিকথিকে গাড়ি, রিকশা, মোটরবাইকের জঞ্জাল। সবকিছু ঠাঁই দাঁড়িয়ে যেন। কিন্তু মানুষ তো দাঁড়ায় না-ফুটপাতের নানা রকমের দোকান এড়িয়ে, থালা নিয়ে ভিক্ষাবৃত্তিতে মত্ত অন্ধজনের পাশ কেটে, যানবাহনের ফাঁকফোঁকর গলিয়ে মানুষ ছুটে চলে। কারো চেহারায় এই যানজটের জন্য তেমন জ্বালা-যন্ত্রণা চোখে পড়ে না। গা-সয়ে গেছে!-এরকম ভাবতে ভাবতে পা চালায় মিথুন। মানুষের ঘামের গন্ধ, এ্যা¤^ুলেন্সের শব্দ-রিকশার বেল, বাস-সিএনজির হর্ন সবকিছু ছাপিয়ে এখন তার ভয়-সময় মতো স্কুলে পৌঁছানো যাবে তো!
স্কুল মনে হয় বেশ আগেই ছুটি হয়েছে। ছাত্র-ছাত্রীদের আনাগোনা একেবারেই নেই। মিথুন পকেট থেকে মোবাইল বের করে সময় দেখে-১১টা ২০। যাক্ তাও বাচা-মাত্র বিশ মিনিট লেট। মিসকল দেয় তিথির মোবাইলে। গেট দিয়ে যেন কোন স্কুলছাত্রীই বেরিয়ে আসে-তিথিকে অনেক বেশি স্নিগ্ধ দেখায়। আর ক’দিন আগে সত্যি সত্যিই ও তো ছাত্রীই ছিল। এখন না শিক্ষক!
তিথিই প্রথম কথা বলে
-এতো দেরি করলে যে!
-রাস্তায় যা জ্যাম।
-তুমি তো আর গাড়ি-ঘোড়ায় চড়ে আসোনি।
-তা ঠিক, কিন্তু রাস্তায় জ্যাম থাকলে জোরে হাটা যায় না তো।
-আচ্ছা বাদ দাও।
মিথুনের হাত ধরে তিথি। কণ্ঠে আবদার ঝরে পড়ে
-চকোলেট খাবো।
-চলো
গ্লাসডোর ঢেলে দুজনে দোকানে ঢুকে। তাদের সঙ্গে গ্রীষ্মের গরম হুড়মুড় করে ঢুকলেও দরজাটা বন্ধ হওয়ায় শরীরে ঠাÊার ছোঁয়া লাগে, ঘর্মাক্ত শরীরটায় ধীরে ধীরে শীতল-স্পর্শ অনুভ‚ত হয়। দোকান অনেকটাই ফাকা। চকোলেট বার খেতে খেতে তিথির গায়ের সঙ্গে লেপ্টে যেতে চায় মিথুন। আরও কাছাকাছি হয় ওরা।
-রিফাত এখন কেমন আছে? মিথুনের এ প্রশ্নে বিরক্ত হয় তিথি। অনেক বার সে নিষেধও করেছে মিথুনকে। কিন্তু কি হয়-
তিথি যথারীতি কথা বলে না। এবারও সে বিরক্ত। মিথুন একা একাই ¯^গোক্তির মতো বলে
-তোমার মাতৃত্বভাবটা আমাকে মুগ্ধ করেছে। আমাদের যখন ছেলেমেয়ে হবে তখন নতুন করে মা-মা ভাবটা তোমার ওপর আরোপ করতে হবে না।
তিথির মেজাজ আরোও বিগড়ে যায়। রিফাত ওর কেউ না। স্কুলের হেড মিস্ট্রেসের একটাই সমস্যা-পারিবারিক সব বিষয় তিনি তিথিকে বলেন। তার একমাত্র মেয়েকে সে চোখেও দেখেনি। একদিন হেডের সঙ্গে সেই মেয়ের ৩-সাড়েতিন বছর বয়সের শিশুপুত্র রিফাত এলো। কেমন করে যেন সখ্যতা গড়ে উঠল তিথির সঙ্গে। ব্যাস! মাস তিনেক হলো-হেডের সেই মেয়ে হাসপাতালে শয্যাশায়ী-জামাই থাকে বিদেশে। রিফাত বাসায় কাজের লোকের কাছে থাকতে থাকতে হাফিয়ে উঠলে তিথি সেই গল্প শুনে হেডকে একদিন যেচে বলেছিল
-রিফাতকে স্কুলে আনলেও তো পারেন, তখন কি জানত এর ফল এতদূর গড়াবে। তারপর রিফাত স্কুলে এল। আর বাসায় ফিরে না যাওয়ার জন্য তার সেকি কান্না। শেষমেষ তিথির বাসায় তাকে নিয়ে এসেছে। সে যতক্ষণ স্কুলে থাকে, রিফাত তার ছোট-ভাইবোনদের সঙ্গে খেলাধূলা করে। আর স্কুল শেষে বাড়ি ফিরলে সারাক্ষণ খালামণি-খালামণি করে তিথির পিছু পিছু ঘুরবে, এটা দেখাবে, ওটা করবে। হঠাৎ করে রিফাতের বাবা আরমান দেশে এলো, তার অনুরোধেই একদিন তিথি হাসপাতালে যায় রিফাতের মাকে দেখতে। এসব খবর অবশ্য মিথুনের জানা। সবকিছু তিথিই বলেছে। কিন্তু একটা কথা বলেনি। নিজের সঙ্গে নিজের যুদ্ধটা এখনো চালিয়ে যাচ্ছে, কিন্তু প্রতিনিয়ত তার মনে হচ্ছে-সে হেরে যাচ্ছে। কিংবা কিছু লুকানোর চেষ্টা করছে। চকোলেট বার বি¯^াদ লাগে, ইচ্ছে করছে বাসায় যেতে। মিথুন বলে
- রিফাতকে দেখতে ইচ্ছে করছে, আজকে আমাকে সঙ্গে নেবে?
-না, দেখতে হবে না। তুমি এখন যাও। আমি বাসায় যাব।
মিথুনকে কিছু বলার সুযোগ দেয় না তিথি। নিজেই বিল দিয়ে হনহনিয়ে বেরিয়ে যায় দোকান থেকে। আবারও কিছু গরম বাতাস ঢুকে। মিথুনকে যেন বাইরে ডাকে বাতাস, সামান্য থেমে সাড়া দেয় সে-বাইরে বেরিয়ে হাঁটতে থাকে বাড়ির দিকে। বেকারত্ব ঘোঁচানোর চেষ্টা না করে তিথির সঙ্গে সম্পর্ক চালিয়ে সে কি কোনো অন্যায় করেছে। পরক্ষণেই মগজে উত্তর মেলে-বিসিএস তো এবারও দিয়েছি, চাকরি মিলতেও পারে! আর না মিললে তিথিকে হারাতে হবে?-এই ভয় তাকে জেঁকে ধরে। হাউজবিল্ডিং থেকে টঙ্গীবাজারের দিকে হাঁটা ধরে মিথুন। ঘামে জবজবে শরীর। গরমের ঘাম নাকি অন্যকিছু বুঝতে পারেনা।
কবিতা ভালোবাসত তিথি, তাই মিথুন কবি হতে চেয়েছিল। তার কোনো কবিতা-ই কোনো কাগজে ছাপা হয়নি, তারপরও তিথি যেন মিথুনকে ভালোবাসার আগে তার কবিতাকেই ভালোবেসেছিল। সেই তিথি সাত দিনের ব্যবধানে মিথুনকে পেয়েও তার নতুন কবিতার কথা জিজ্ঞেস করল না, কোনো আবেগ-মথিত কথাবার্তা শুর’র আগেই সবকিছু আউলা হলো রিফাত প্রসঙ্গে মিথুনের আগ্রহে। তিথির খুব মাথা ধরে-বাসায় ফিরে সটান বেডর’মে ঢুকে শুয়ে পড়লেও তার নিস্তার মেলে না। রিফাত সেখানে হাজির
-খালামণি, তুমি স্কুলে যাওয়ার পর বাবা এসেছিল। আমাকে নিতে চাইছিল, যাইনি।
-গেলেই পারতে বাবার সঙ্গে।
-বাবা তো নানুবাড়িতে গিয়েই মন খারাপ করে বসে থাকে, তাই যেতে ইচ্ছে করল না।
-আচ্ছা যাওনি, বেশ ভালোই করেছ। আর শোন, আমার খুব মাথা ধরেছে। একটু রেস্ট নিতে দাও।
-খালামণি আমি তোমার মাথা টিপে দেয়।
রিফাতের ছোট্ট কোমল হাত তিথির মাথায় ঘুরতে থাকে। কোমল আঙুলের চাপে আরামবোধ হওয়ায় ঘুম-ঘুম ভাবটা যেই এসেছে, অমনি তিথির মনে হয়-মিথুনের আদুরে হাত তার মাথায়, মিথুনের কোলে মাথা রেখেই সে ঘুমিয়ে যাচ্ছে। উত্তরা থেকে কতদিন কলেজ ফাঁকি দিয়ে মিথুনের সঙ্গে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে গিয়ে আড্ডা দিয়েছে, কবিতা নিয়ে কথা বলেছে। কবিতাকে ভালোবাসতে বাসতে কখন যেন মিথুনকেই ভালোবেসে ফেলেছে। সবুজ-সতেজ ঘাসের ওপর পা-ছড়িয়ে বসেছে মিথুন। তিথি পরম নির্ভরতায় তার কোলের কাছে পায়ের ওপর মাথা রেখে কবিতা শুনতে শুনতে কখন যেন ঘুমিয়ে পড়ে। আর মিথুনের শিল্পিত-আদরে মাথায় হাত বুলানো তখনো থামেনা। মিথুনের হাতের আঙৃল যেন তার চুলের ভেতর-ওষ্ঠে, চোখের পাতা-ভ্রƒতে কবিতা লেখে!-এসব ভাবনার মাঝেই মনে পড়ে ঘণ্টাখানেক আগে ঘটে যাওয়া ঘটনা। ঝা করে ঘুম টুটে যায়-অসহ্য লাগে রিফাতের স্পর্শ, মাথায় কে যেন আগুন ধরিয়ে দেয়। চোখ খুলে জানালায় তাকিয়ে দেখে-বাইরে ঠা-ঠা রোদের তাÊব, চারদিক পুড়ে যাচ্ছে যেন।
[আগামীতে আবারও কোনো একদিন বাকি অংশ...]
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০১১ দুপুর ১:৪৬
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=আকাশে তাকিয়ে ডাকি আল্লাহকে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:০১


জীবনে দুঃখ... আসলে নেমে
শান্তি গেলে থেমে;
আমি বারান্দায় দাঁড়িয়ে হই উর্ধ্বমুখী,
আল্লাহকে বলি সব খুলে, কমে যায় কষ্টের ঝুঁকি।

আমি আল্লাহকে বলি আকাশে চেয়ে,
জীবন নাজেহাল প্রভু দুনিয়ায় কিঞ্চিত কষ্ট পেয়ে;
দূর করে দাও সব... ...বাকিটুকু পড়ুন

"ছাত্র-জনতার বেপ্লবের" ১৮ মাস পরে, আপনার ভাবনাচিন্তা ঠিক আগের মতোই আছে?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:৫৭



২০২৪ সালের পহেলা জুলাই "ছাত্র-জনতার বেপ্লব শুরু হয়, "৩৬শে জুলাই" উহা বাংলাদেশে "নতুন বাংলাদেশ" আনে; তখন আপনি ইহাকে ব্যাখ্যা করেছেন, ইহার উপর পোষ্ট লিখেছেন, কমেন্ট করেছেন; আপনার... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের হাদিকে গুলি করা, আর আওয়ামী শুয়োরদের উল্লাস। আমাদের ভুল কোথায়?

লিখেছেন তানভির জুমার, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৫৩



৩০ জনের একটা হিটলিস্ট দেখলাম। সেখানে আমার ও আমার স্নেহের-পরিচিত অনেকের নাম আছে। খুব বিশ্বাস করেছি তা না, আবার খুব অবিশ্বাস করারও সুযোগ নাই। এটাই আমার প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

এ যুগের বুদ্ধিজীবীরা !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১:৪০


ডিসেম্বর মাসের চৌদ্দ তারিখ বাংলাদেশে বুদ্ধিজীবী দিবস পালন করা হয়। পাকিস্তান মিলিটারী ও তাদের সহযোগীরা মিলে ঘর থেকে ডেকে নিয়ে হত্যা করেন লেখক, ডাক্তার, চিকিৎসক সহ নানান পেশার বাংলাদেশপন্থী বুদ্ধিজীবীদের!... ...বাকিটুকু পড়ুন

টাঙ্গাইল শাড়িঃ অবশেষে মিললো ইউনস্কর স্বীকৃতি

লিখেছেন কিরকুট, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:৫৭



চারিদিকে যে পরিমান দুঃসংবাদ ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে এর মধ্যে নতুন এক গৌরবময় অধ্যায়ের সূচনা হলো বাংলাদেশের টাঙ্গাইলের তাতের শাড়ি এর জন্য, ইউনেস্কো এই প্রাচীন হ্যান্ডলুম বুননের শিল্পকে Intangible Cultural... ...বাকিটুকু পড়ুন

×