’০৪ ব্যাচের বিদায়লগ্নে একটি (অপ)মানপত্র
হে বিদায়ী ভাইয়েরা,
আজকের এ দিনে মনে পড়ছে কেবল তোমাদেরই সাথে কাটানো সেসব স্মৃতির কথা। তোমাদের পদচারণায় চার চারটি বসন্ত মুখরিত ছিল আমাদের প্রাণপ্রিয় আহসানউল্লাহ হলের দোতলা। এই চারটি বছরে যতবার শৌচাগারে তোমাদের পদচিহ্ন পড়েছে ততবারই দূর থেকে টের পাওয়া গেছে সেখানে তোমাদের মূল্যবান উপস্থিতি। সেখানে গিয়ে পেয়েছি তোমাদের ফেলে যাওয়া মূল্যবান নিদর্শন। তখন মনে মনে তোমাদের উদ্দেশ্যে বর্ষণ করেছি কত না কটুবাক্য। কিন্তু আজ হায়, বিদায়ের এ অন্তিমক্ষণে তোমাদের কথা মনে পড়বার সাথে সাথে মনে পড়ছে তোমাদের ফেলে যাওয়া
পুঁতিগন্ধময় সেসকল স্মৃতির কথাও যা বহুদিন ধেও আমাদের ঘ্রাণশক্তিকে আলোড়িত করে গেছে।
হে আঁতেল সম্রাটেরা,
কি নিদারুণ যন্ত্রণাতেই না পার করেছ তোমরা চার চারটি বছর! চোথার অভিশাপ ছিনিয়ে নিয়েছিল বিশ্ববিদ্যালয় তোমাদের জীবনের সকল রসকষ। আমরা যখন মুক্ত বিহঙ্গের মতো উড়ে বেড়াতাম তখন তোমাদেরকে দেখাযেত পাঠাগারের এক কোণায় পর্বতপ্রমাণ বইয়ের আড়ালে মুখ গুঁজে বসে আছো। কিন্তু হায়! ভাগ্যেও কি নির্মম পরিহাস! প্রকৌশলী হওয়ার যে স্বপ্ন নিয়ে বুয়েটে পা রেখেছিলে - আজ সে স্বপ্নে জল ঢেলে তোমরা হতে চলেছ সামান্য বেতনের মাস্টার মাত্র। তোমাদের এ দুঃখের দিনে আজ আমরাও আন্তরিকভাবে দুঃখিত।
হে প্রেমিক পুরুষেরা,
মোবাইল কোম্পানিগুলো যদি ঘুণাক্ষরেও জানতে পারতো তোমাদের কথা তাহলে তোমাদের হয়তো আজীবন সম্মনননা পদকে ভূষিত করতো। কারণ মোবাইল নামক তুচ্ছ এ যন্ত্রটির পেছনে তোমরাা যে অতুলনীয় শ্রম, অমূল্য সময় আর অপরিমেয় অর্থ ব্যয় করেছ তা অবশ্যই প্রশংসার দাবী রাখে। সকালে-বিকালে, ক্ষণিকের অবসরে তোমাদের পাওয়া যেত আউলার করিডোরে। কতই না বিনিদ্র রজনী তোমরা পার করেছ ****(একটি স্বনামধন্য মহিলা কলেজের নাম) কুখ্যাত ললনাদের সাথে খোশগল্পে। তোমাদের এই বাকযুদ্ধের স্পৃহাকে স্যালুট জানাই, এবং আশা করি আমরাও হতে পারব একসময় এ যুদ্ধের সফল সৈনিক।
ওহে নারীরূপী পুরুষেরা,
সারাটা বিশ্ববিদ্যালয় জীবন জুড়ে তোমাদেও গায়ে সেঁটে ছিল ”হাফ লেডিস” তকমা। কি নারী পুরুষ সকলেই তোমাদেও হেয় প্রতিপন্ন করবার জন্য সবসময় ছিল তৎপর। পুরুষত্ব নামক বস্তুটি ছিল তোমাদের জন্য সোনার হরিণ। কিন্তু জ্ঞানীরা বলেছেন "নো বডি ইজ পার্ফেক্ট” - এ মহাসত্য মেনে নিয়ে তোমাদেও আজ বরণ করে নিলাম।
ওহে লম্পটেরা,
স্বরস্বতী পুজার দিন দেখা যেত তোমাদের আসল রুদ্ররূপ। শাড়ী পড়া বঙ্গললনাদের দেহবল্লরীর প্রতিটি খাঁজে খাঁজে বাঁকে বাঁকে অবাধে বিচরণ করতো তোমাদের তৃষ্ণার্ত দুটি চোখ। তাদেও দেখে তোমাদের মুখ হতে অবাধে লালা ঝরতো কিনা জানি না, জানি না তাদের দেখার পর তোমরা গোসলখানায় ছুটে গিয়ে "সেল্ফ হেল্প ইজ বেস্ট হেল্প” মটোটির যথার্থ প্রয়োগ করতে কিনা। আজ বিদায়বেলায় হয়তো তোমরা নিসঙ্গ, কিন্তু চিরকাল মনে রেখ - থাকিতে আপন হস্ত হব কেন নারীর দ্বারস্থ।
হে বিদায়ী কুয়োর ব্যাঙেরা,
নাওয়া নেই খাওয়া নেই - তোমরা পড়ে থাকতে তোমাদের মান্ধাতা আমলের পিসির সামনে। পড়াশোনা, খেলাধুলা, খাওয়াদাওয়া পারলে প্রকৃতির ডাকেও সাড়া দিতে তোমরা ঐ সংকীর্ণ গৃহকোণে বসে। জানি না হয়তো প্রাপ্তবয়স্ক ছবির কল্যাণেই তোমাদের রুম থেকে ভেসে আসতো যন্ত্রণাকাতর শীৎকার। তোমাদের এ নির্লজ্জ বেহায়াপনায় বিস্মিত হতাম আমরা সকলেই, এই বিদায়বেলায় তোমাদের কাছে একটাই দাবী - তোমাদের এই চার বছরের সঞ্চিত ৫০০ গিগার ভান্ডার আমাদের মুক্ত হস্তে দান করে যাও।
আজ এই বিদায়বেলায় তোমাদের সকল নচ্ছারপণা, কৃপণতা, বাতুলতা, লাম্পট্য আর বেহায়াপনার পঙ্কিলতা থেকে মুক্তি পাও এই আশায় বুক বেঁধে আউলার পবিত্রভূমি থেকে উৎখাত করছি আমরা একদল অপোগন্ড।
আউলার দোতলার অভাগা অনুজেরা
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে জুলাই, ২০০৯ বিকাল ৩:৫৭

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




