somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ভ্রমণ কাহিনিঃ "নকাটা, মুপ্পোছড়া ও ধুপপানি ঝর্না" পর্ব-১

০২ রা ডিসেম্বর, ২০২০ সকাল ৯:৩৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

কিছুদিন কোথাও যেতে না পারলে হাসফাস লাগে। মনে হয় শহরের বাতাসে অক্সিজেনের বড্ড অভাব হয়েছে। পেটের ভাতও ঠিকঠাক হজম হতে চায় না। তাই সুযোগ পেলেই বেরিয়ে পড়ি। হোমমিনিস্টার যতই গাঁইগুঁই করুকনা কেন, শেষ পর্যন্ত তা ধোপে টেকে না। এবারে আমাদের যাত্রা বিলাইছড়ির নকাটা ও মুপ্পোছড়া ঝর্না এবং উলুছড়ির ধুপপানি ঝর্না।


খুব কম সময়ের মধ্যে বন্ধুবান্ধবদের ফোন দিয়ে আমরা ছয়জন একত্র হই। ঢাকা থেকে কাপ্তাই যাওয়ার জন্য সেন্টমার্টিন পরিবহনের আপ ও ডাউন টিকেট কেটে নেই। এই রুটে এখন পর্যন্ত এটাই ভালো বাস সার্ভিস। নন-এসি বাস কিন্তু এসি বিজনেস-ক্লাস বাসের মতো প্রতি সারিতে তিনটি করে সিট। ভাড়া জনপ্রতি ৬০০/- আপ-ডাউন ১২০০/-। ভালো সিট পেতে হলে অন্তত কয়েকদিন আগে টিকেট কেটে ফেলতে হবে।

রাত ১১ঃ০০ টায় বাসে উঠেছি। ঢাকা - চট্টগ্রাম হাইওয়েতে দ্রুতগতিতে গাড়ি ছুটে চলছে। রাত যত গভীরই হোকনা কেন, এ রাস্তা কখনো ঘুমায় না। দুপাশের গাড়ির সারি দেখলে মনে হয় যেন, বিশাল লম্বা দুটো ট্রেন একটি আরেকটিকে ক্রস করছে। প্রতিটি গাড়ি যেন এক-একটি ট্রেনের বগি। আকাশে পূর্ণিমার চাঁদ, আমাদের সাথেই ছুটে চলছে। গাড়ির হেডলাইটের তিব্র আলো চাঁদের মায়াবি আলোকে ম্লান করে দিচ্ছে। ভাবছি, পরদিন রাতে কাপ্তাই লেকে বসে বসে আরাম করে পূর্ণিমা দেখবো।

আধোঘুম আধো জাগরণের মাঝে শিহরণ জাগিয়ে ভোর সারে চারটায় আমরা কাপ্তাই পৌঁছে গেলাম। আমরা জেটিঘাটের কাছে মসজিদে ফ্রেস হয়ে নামাজ পড়ে নাস্তা খাওয়ার জন্য হোটেলে ডুকলাম। সবে মাত্র হোটেল খুলেছে। নাস্তা তৈরির আয়োজন চলছে। নাস্তা সেরে দুই দিনের জন্য ট্রলার ভাড়া করতে চলে গেলাম জেটি ঘাটে।

বিলাইছড়ি হয়ে উলুছড়ি এবং উলুছড়ি থেকে আবার কাপ্তাই ফিরে আসার জন্য আমরা ৫,৫০০/- টাকা দিয়ে ট্রলার ঠিক করে উঠে পড়লাম। এটা ছাড়া আমাদের আরো একটি বিকল্প ছিল। লোকাল ট্রলারে করে বিলাইছড়িতে গিয়ে সেখান থেকে ট্রলার ভাড়া করা। সে ক্ষেত্রে এক বা দেড় হাজার টাকা সাশ্রয় করা যেতো।

জেটিঘাট থেকে ট্রলার ছাড়তেই কাপ্তাই জলবিদ্যুতের ডেম ও সুইসচগেট চোখে পড়বে। যে বাঁধের কারণে এ লেকের সৃষ্টি, শুরুতে তা দেখেই আমাদের ট্রলারে করে যাত্রা শুরু হয়। একটু এগুলোই চোখে পড়বে লেকভিউ আইল্যান্ড। এটিও বেড়ানোর জন্য খুব ভালো জায়গা।

ট্রলারের ছাদে উঠে চারপাশের স্বচ্ছ জলরাশি আর পাহাড়ের গায়ে গায়ে বেড়ে ওঠা সবুজ গাছের অপরূপ সবুজে অবগাহন করতে করতে আমরা এগিয়ে চলছি। ভোরের শীতল বাতাস দেহ ও মনকে শীতল করে দিচ্ছে। নগর জীবনের সকল ক্লান্তি এই শীতল বাতাসের সাথে যেন ধীরে ধীরে মিলিয়ে যাচ্ছে।

ঘন্টাদেড়েক পর আমরা পৌঁছালাম গাছকাটা আর্মি ক্যাম্পে। এখানে সকলের জাতীয় পরিচয়পত্র ও মোবাইল নম্বর জমা দিতে হবে। এখানে বলে রাখা ভালো প্রত্যেককে চারকপি করে এনআইডি আনতে হবে। তিন কপি তিনটি ক্যাম্পে ও এক কপি হোটেল/বোডিং এ জমা দিতে হবে। ক্যাম্পে দায়িত্বরত সেনাবাহিনীর সদস্য আমাদের ছবিও তুলে রাখলেন।


আমরা আবার যাত্রা শুরু করলাম। সূর্য এখন অনেকখানি উপরে উঠে গেছে। বিশাল নীল আকাশের মাঝে কিছু কিছু সাদা মেঘের ভেলা অলসভাবে ঘুরে বেড়াচ্ছে। লেকের স্বচ্ছ জলে তার ছায়া পড়ছে। জল কেটে কেটে আমাদের ট্রলার এগিয়ে চলছে।

আধাঘন্টা পর আমরা আমাদের গন্তব্যে পৌঁছে যাই। আমাদের নামতে হবে হাসপাতাল ঘাটে। আগে থেকে নিরিবিলি বোডিং এ রুম বুক করে রেখেছি। ঘাটে ভিড়তেই বোডিং এর ম্যানেজার শশী মিষ্টি হাসি দিয়ে আমাদের স্বাগত জানালো। এমনভাবে আমাকে মামুনভাই বলে সম্বোধন করলো যেন, কতদিনের চেনা।


শশী ভাইয়ের দেখানো পথে আমরা বোডিং এ গিয়ে উঠলাম। ফ্রেস হয়ে আমরা আবার ট্রলারে ফিরে আসবো। এখান থেকে একজন গাইডও নিয়ে নিবো, যে আমাদের নকাটা ও মুপ্পোছড়া ঝর্নায় নিয়ে যাবে। শুরু হবে আমাদের ট্রেকিং।
(চলবে)
আবদুল্লাহ আল মামুন
রচনাকাল - ০১ নভেম্বর ২০২০ ( ভ্রমণকাল ২৯-৩১ অক্টোবর ২০২০)
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা ডিসেম্বর, ২০২০ সকাল ১০:১৩
৫টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

খুলনায় বসবাসরত কোন ব্লগার আছেন?

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:৩২

খুলনা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় তথা কুয়েট-এ অধ্যয়নরত কিংবা ঐ এলাকায় বসবাসরত কোন ব্লগার কি সামুতে আছেন? একটি দরিদ্র পরিবারকে সহযোগীতার জন্য মূলত কিছু তথ্য প্রয়োজন।

পরিবারটির কর্তা ব্যক্তি পেশায় একজন ভ্যান চালক... ...বাকিটুকু পড়ুন

একমাত্র আল্লাহর ইবাদত হবে আল্লাহ, রাসূল (সা.) ও আমিরের ইতায়াতে ওলামা তরিকায়

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৬:১০



সূরাঃ ১ ফাতিহা, ৪ নং আয়াতের অনুবাদ-
৪। আমরা আপনার ইবাদত করি এবং আপনার কাছে সাহায্য চাই।

সূরাঃ ৪ নিসার ৫৯ নং আয়াতের অনুবাদ-
৫৯। হে মুমিনগণ! যদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। মুক্তিযোদ্ধা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১



মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তালিকা প্রণয়ন ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ‘দেশের প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি রয়েছে। তারা স্থানীয়ভাবে যাচাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় রাজাকাররা বাংলাদেশর উৎসব গুলোকে সনাতানাইজেশনের চেষ্টা করছে কেন?

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:৪৯



সম্প্রতি প্রতিবছর ঈদ, ১লা বৈশাখ, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, শহীদ দিবস এলে জঙ্গি রাজাকাররা হাউকাউ করে কেন? শিরোনামে মোহাম্মদ গোফরানের একটি লেখা চোখে পড়েছে, যে পোস্টে তিনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঘুষের ধর্ম নাই

লিখেছেন প্রামানিক, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫৫


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

মুসলমানে শুকর খায় না
হিন্দু খায় না গাই
সবাই মিলেই সুদ, ঘুষ খায়
সেথায় বিভেদ নাই।

হিন্দু বলে জয় শ্র্রীরাম
মুসলিম আল্লাহ রসুল
হারাম খেয়েই ধর্ম করে
অন্যের ধরে ভুল।

পানি বললে জাত থাকে না
ঘুষ... ...বাকিটুকু পড়ুন

×