আসুন সবাই মিলে রিপোর্ট করি মানসিক বিকারগ্রস্ত ভারসাম্যহীন এক ব্লগারের পোস্টের বিরুদ্ধে । এই ব্লগারের লেখাকে বিশ্লেষন করলে আমরা ভয়াবহ জিনিস দেখতে পাই, সেটা হলো লেখকের উদ্দেশ্য । কি হীন উদ্দেশ্য নিয়ে তিনি একটি জনপ্রিয় আর প্রতিষ্টিত বিশ্ববিদ্যালয়কে বিশেষ ট্যাগিং দেয়ার চেস্টা করছেন, তা একটু চেস্টা করলেই বুঝা যায় ।
হ্যাঁ, আমি জাহাংগীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের কথা বলছি । মূল লেখায় যাওয়ার আগে একটু বলে নেই, সাভারের উঁচুনিচু লালমাটি, প্রাকৃতিক লেক আর সবুজ প্রান্তর নিয়ে জাবি যাত্রা করে ১৯৭০ সনে । জাবি গড়ার পেছনে পাকি শাসকদের একটা বদমতলব ছিলো, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে ঢাকা থেকে সরিয়ে এই ক্যাম্পাসে স্থানান্তর করা । বিভিন্ন কারনে তাদের ঐ বদ মতলব সফল হয়নি । বাংলাদেশের একমাত্র আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয় হিসাবে যাত্রা শুরুর পর জাবি প্রথম সংকটে পড়ে ১৯৮৯ সালে । স্বাধীনতা বিরোধী শিবির জাবিকে প্রায় দখল করে ফেলেছিল । কিন্তু সাধারন ছাত্রছাত্রী আর সর্বদলীয় ছাত্রসংগঠনগুলোর প্রতিরোধের তারা পিছু হটে, শিবিরের নির্মম আক্রমনে শহীদ হন ছাত্রদল নেতা হাবিবুর রহমান কবির । তারপর সবসংগঠন মিলে জাবিতে শিবিরকে নিষিদ্ধ করা হয়, আজও তারা জাবিতে নিষিদ্ধ ।
এরপর জাবি আরও গুরুতর সংকটে পড়ে ১৯৯৮ সালে সেন্চুরি মানিকের উত্থানে । কিন্তু সাধারন ছাত্রছাত্রী আর ছাত্রী-নির্যাতন বিরোধী আন্দোলনের মুখে কুখ্যাত মানিককেও দলবলসহ পালাতে হয় । এছাড়াও বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন কারনে জাবি নেগেটিভ ভাবে মিডিয়ায় এসেছে, বিশেষ করে ক্ষমাতাশীন রাজনৈতিক নেতাদের দৌরাত্মের কারনে । কিন্তু আপনি বলুনতো কোন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে এদের দৌরাত্ম নেই ?
এবার আসি সেই মানসিক বিকারগ্রস্ত যৌনউন্মাদ 'ইট্টুস কথা'র এই পোস্টে, যেখানে শুধু র্যাগিং আর বিকৃত যৌন উন্মাদনা!! সভ্য সমাজের কলংক!!! আমাদের জাবি ক্যাম্পাস!!!
লেখক এখানে নিজেকে জাবি ছাত্র হিসাবে পরিচয় দিয়েছেন । তো তিনি নাকি জাবিতে ভর্তি পরীক্ষা দিতে এসেই র্যাগিংয়ের শিকার হয়েছিলেন তিনি লিখেছেন, "এক পর্যায়ে আমাদের ২জনকে পরিধেয় পোশাক খুলে ফেলতে নির্দেশ দেয়া হলে আমি হাউমাউ করে কাঁদতে শুরু করলে শিহাবও কান্না শুরু করে দেয়। তোদের ২ জনকে আমাদের সামনে নগ্ন হয়ে সেক্স করতে হবে , একথা বলে তারা জোর করে আমাদের দু'জনের পোশাক খোলা শুরু করে।"
তার এই রগরগে বর্ননা পড়ে হাসব না কাঁদব বুঝতে পারছিনা । কারন ভর্তি পরীক্ষার্থীরা তাদের পূর্ব-পরিচিত কোন আবাসিক ছাত্রের গেস্ট হিসাবেই হলে উঠে । ভর্তি পরীক্ষার সময় হলগুলি পরিক্ষার্থীতে ভরে যায় । নিজের এলাকা, আত্মীয়, পরিচিত বা অন্য কোনভাবে যোগাযোগ করেই এরা কোন ছাত্রের রুমে উঠে । তাহলে বলেন কেউ কি তার নিজের গেস্টকে কখনো র্যাগিং করে ? আপনারা খোজ নিলেই জানতে পারবেন, ভর্তি পরীক্ষার সময় হলের ছাত্ররা তাদের গেস্টদের রুম ছেড়ে দিয়ে এই কয়েকটাদিন কি কস্ট করে রাত কাটায়, কেউবা টিভিরুমে কমনরুমে আড্ডা দিয়েই রাত পার করে দেয় ।
হ্যাঁ র্যাগিং হয়, সেটা ১ম বর্ষে ক্লাস শুরু হওয়া নতুন ছাত্রদের । এই জগন্য জিনিস শুরু হয়েছিল কয়েক বছর আগে, এখন প্রশাসন এটা আইন করে বন্ধ করে দিয়েছে ।
এবার আসি ছাত্রীদের রাতের বেলা হলের বাইরে থাকা নিয়ে তিনি কি লিখেছেন । "অফিসিয়ালি মেয়েদের হলে ফেরার নিয়ম রাত ১০ টায় মধ্যে। কিন্তু রাত ১২ টা পর্যন্ত তো একেবারেই ডালভাত। আর বিশ্ববিদ্যালয়ে যদি কোন অনুষ্ঠান থাকে তাহলে সারা রাতই বাইরে থাকা যায়। এক্ষেত্রে জাবিতে বলতে গেলে বছরের ৩৬৫ দিনই কোনো না কোনো অনুষ্ঠান থাকেই ।" কি আর বলবো, আপনাদের পরিচিত কোন জাবি ছাত্রীর সাথে যোগাযোগ করলেই বুঝতে পারবেন উনি কি জঘন্য মিথ্যাচার করেছেন ।
এবার দেখুন এই বিকারগ্রস্ত উন্মাদ বামপন্থী ছাত্রীদের নিয়ে কি লিখেছে, "অবশ্য বামপন্থীদের ছেলে না মেয়ে চেনা কঠিন । কারন মেয়েরা ঠোটে লিপস্টিক ব্যবহার না করা, পান্জাবী বা ফতুয়া পড়া এবং প্রায় ছেলে -মেয়ে সবার শুকনা(গাঁজা) খাওয়ার অভ্যাস থাকা। বামপন্থী মেয়েরাও ওড়না ছাড়াই পান্জাবী বা ফতুয়া পরে, কারন শুকনা খাওয়ার কারনে ওড়না না পড়লেও চলে।"
এরপরও বলুন এই ভারসাম্যহীন কুৎসিত লোকটার ব্যাপারে (ইট্টুস কথা) কিছু বলার রুচি থাকে ?
'ইট্টুস কথা' নিজেই জানিয়েছে এই অপকর্মগুলো মাত্র ১৫% ছাত্ররা করে । তার হিসেবমত ১৫% ছাত্র-ছাত্রীই যদি খারাপ হয়ে থাকে, তাহলেও কি একটা পুরো বিশ্ববিদ্যালয়কে আমরা এইরকম জঘন্য ট্যাগিং দিতে পারি ??
এইবার আসেন আসল কথায় । 'ইট্টুস কথা'র মনে অনেক দুঃখ, জাবিতে কবে কারা জানি এক শিবিরকে পিঠিয়ে মেরেছিলো (উনার ৬নং পয়েন্ট) ! কি?? সূত্র পাওয়া যায় ?? জ্বী, উনি একজন স্বনামধন্য শিবির নেতা । জাবিতে শিবির নিষিদ্ধ থাকায় উনি সবসময়েই নিজেকে আত্মগোপন করে রেখেছেন, এমনকি স্বাভাবিক ছাত্রজীবনের আনন্দ-উদ্দীপনাগুলোও উনি উপভোগ করতে পারেননি । তাই এখন উনি পুরো বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধেই বিষ উগরে দিচ্ছেন । আর উনার ব্যক্তিগত চরিত্র !!?? মাশাল্লাহ, সমকামিতা নিয়ে যে রগরগে বর্ননা উনি বারেবারে দিয়ে গেছেন, তারপরে আর কোন কথা চলেনা ।
আমার এই পোস্ট দেবার কারন, 'ইট্টুস কথা'র পোস্ট পড়ে অনেকেরই হয়ত খারাপ লেগেছে কিংবা জাবি সম্পর্কে একটা নেতিবাচক ধারনা মনে পোষন করছেন । কিন্তু আসল জিনিসটা হলো ইট্টুস কথা এটা করেছে উদ্দেশ্যমুলক ভাবে । একটু খোজ নিয়ে জানুন, আপনারই হয়ত কোন আত্মীয়, পরিচিত বা এলাকার কেউ হয়ত জাবিতে পড়ে । আশাকরি আপনার কাছে সবকিছু পরিষ্কার হয়ে যাবে ।
আমি 'ইট্টুস কথা'র ঐ পোস্টের বিরুদ্ধে সামু কর্তৃপক্ষের কাছে রিপোর্ট করেছি, তার এই হীন, উদ্দেশ্যমুলক, রুচিহীন পোস্টের বিরুদ্ধে রিপোর্ট করতে আপনাদেরও অনুরোধ জানাচ্ছি ।
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে নভেম্বর, ২০১২ সকাল ১১:৪৪

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




