somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমার আম্মু টা জিপিএ ৫ পেয়েছে । :)

২৭ শে ডিসেম্বর, ২০১২ রাত ৯:১২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



জানিনা, ব্লগে ব্যক্তিগত অনুভূতিগুলো শেয়ার করা ঠিক কি না । আজকে আমার খুব আনন্দের দিন । এই আনন্দটুকু সবার সাথে ভাগ করে নিতে চাই । আমার বড় আম্মু 'মাশফিহা মাহি' তার জীবনের প্রথম পাবলিক পরীক্ষা পিএসসি তে জিপিএ ৫ পেয়েছে । সে সিলেটের স্কলার্সহোম স্কুলে ইংরেজি ভার্সনে পড়াশোনা করেছে । আমার আম্মুটার জন্য সবাই দোয়া করেন, যেন জীবনের সব পরীক্ষাতেই সে সফল ভাবে উৎরে যেতে পারে ।

আমার আম্মুটা খুব খুব লক্ষী, এতটাই লক্ষী যে বাবা-মা'র কাছে তার কখনই কোন আবদার নাই । কোন কিছু কিনতে গিয়ে তাকে পছন্দ করতে বললে বলবে 'তোমাদের যা খুশি' । রেস্টুরেন্টে খেতে গেলে বলবে 'তোমাদের যা খুশি' । কোন কিছুতেই তার আবদার নেই, নেই অভিযোগ । সেই ছোট বেলা থেকেই আমার মেয়েটা এই রকম । স্কুলে টিচারদের কাছে আমার মেয়ে খুব আদরের । স্কুলের প্রতিটা অনুষ্টানে নাচ-গান-আবৃত্তি-উপস্থাপনা কোন না কোন বিষয়ে ও সুযোগ পাবেই ।

সেশন জটের কারনে আমার ইউনি লাইফটা ছিলো অনেক দীর্ঘ, প্রায় সাত বছর । ক্যাম্পাস লাইফ অনেক মজা করে কাটিয়েছি । পড়াশোনার পাশাপাশি জাহাংগীরনগর থিয়েটারে নাটক করতাম, ঢাকায় বিভিন্ন ব্যান্ডশো তে লাইট ডিজাইন করতাম । কিন্ত ক্যাম্পাস জীবনের শেষের দিকটা কিছু ব্যক্তিগত টানপোড়ন আর সমস্যার জন্য সুখকর হয়নি । এর প্রভাব পরবর্তিতে আরো কিছুদিন বইতে হয় । যাক শেষে একটা ছোট জব নিয়ে চলে আসি নিজের এলাকা সিলেটে । তার বছর দুয়েকের মধ্যেই বাধ্য ছেলের মত বাবা-মায়ের পছন্দের পাত্রীকে বিয়ে করি । বিয়ের আগে পাত্রী দেখা এবং কথা বলার আয়োজন ছিলো, কিন্তু ইচ্ছে করেই তা করিনি । তবুও বিষয়টা নিতান্তই সরল ছিলোনা, একটা ভিন্ন পরিবেশ ভিন্ন সংস্কৃতিতে বেড়ে উঠা কারো সাথে 'রচি মম ফাল্গুনি' এত সহজ নয় । এর ভিতরেই আমাদের কোল আলো করে এলো আমার বড় আম্মু । সে এসে শুধু ঘরই আলো করেনি, আমাকেও ফিরিয়েছে জীবনে । যে জীবন স্বাভাবিক, যে জীবন সুন্দর ।

এরও বছর পাঁচেক পর আবার ঘর আলো করে এলো আমাদের ছোট মেয়ে 'তাজফিহা ওহি' । এসেই সে জানান দিলো আপু যদি হয় দিঘীর শান্ত জল, আমি তবে উচ্ছল ঝরনা । বড় আম্মুটা বাসায় আছে কিনা টেরই পাওয়া যায়না । হয় পড়ছে, লিখছে না হয় গেম খেলছে, টিভি দেখছে- চুপচাপ শান্ত নিরবধি । আর আমার ছয় বছরের ছোট আম্মু, হাইপার এ্যাক্টিভিজম কাহাকে বলে ওরে দেখলেই বুঝা যায় । সকালে ঘুম ভাংগার পর রাত ১২টা/১টা পর্যন্ত খেলতে খেলতে ক্লান্ত হতে হতে নিজের অজান্তে ঘুমিয়ে পড়ার আগ পর্যন্ত সে আছে । এবং সারাক্ষন বাসাটা মাতিয়ে রাখছে । সে বড়টার মত এত সুবোধ নয়, সবকিছুতেই তার শর্ত আছে । এটা না হলে নিব না, ওটা না হলে হবে না ।



আর আমার বউ, ওর জন্য সত্যিই কস্ট হয় । ভোর ছয়টা থেকে মাঝ রাত পর্যন্ত আমাদের তিনজনকে সামলায় । মাঝে মাঝে মনে হয় আমরাই সেই গর্বিত সৌভাগ্যবান শেষ প্রজন্ম যারা মাত্র ৮/১০ ঘন্টা অফিস করে বাকী সময়টা জমিদারি করে কাটাতে পারি । কারন আমাদের আছে সর্বংসহা গৃহিনী বধু ।

ব্যক্তিগত সুখ-দুঃখের অনুভূতি জানিয়ে আপনাদের অনেক সময় নষ্ট করলাম । শেষে আরেকটা সুখবর জানিয়ে দেই । বুড়ো বয়সে এমবিএ করছি । শুক্র-শনিবার বউ-বাচ্চারা একটু-আধটু ঘুরতে চায় । তাদের এই আনন্দকে পাশ কাটিয়ে ঐ দুই দিন বিকাল ৪টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত ক্লাসে থাকি । আজই আমার ফার্স্ট সেমিস্টারের রেজাল্ট দিয়েছে, পেয়েছি ৩.৯০ আউট অব ৪ । না, আমাকে এত ব্রিলিয়ান্ট স্টুডেন্ট ভাবার দরকার নাই । ফার্স্ট সেমিস্টারে বিজনেস ম্যাথ-ফিনান্স-একাউন্টিংয়ে কুপাকুপি মার্কস পেয়েছি, আর মার্কেটিং আমার ১৬ বছরের পেশা । সেকেন্ড সেমিস্টার থেকে আর কুপাকুপি করার কোন সাবজেক্ট নেই, সব ডেসক্রিপটিভ এবং কেস এনালাইসিস । তবু ভালো লাগছে একই দিনে আমার আম্মু আর আমি ভালো রেজাল্ট করেছি । দুঃখ শুধু একটাই, এমন আনন্দ দিনে মেয়েরা আমার পাশে নাই । ওরা দাদু বাড়ি বেড়াতে গিয়েছে ।
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে এপ্রিল, ২০১৩ রাত ৯:১২
৭২টি মন্তব্য ৭২টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কে কাকে বিশ্বাস করবে?

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৩৯


করোনার সময় এক লোক ৯৯৯ এ ফোন করে সাহায্য চেয়েছিল। খবরটা স্থানীয় চেয়ারম্যানের কানে গেলে ওনি লোকটাকে ধরে এনে পিটিয়েছিলেন। কারণ, ৯৯৯ এ ফোন দেওয়ায় তার সম্মানহানি হয়েছে।

সমাজে এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিসিএস পরীক্ষার্থীদের পরীক্ষায় বসতে না পারার কষ্টটা সমালোচনার কোন বিষয়বস্তু নয়

লিখেছেন ঢাবিয়ান, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৩৬

গতকালের একটি ভাইরাল খবর হচ্ছে কয়েক মিনিটের জন্য বিসিএস পরীক্ষা দেয়া হলো না ২০ প্রার্থীর !! অনেক প্রার্থীর কান্নাকাটির ভিডিও ভাইরাল হয়েছে।এ বিষয়ে পিএসসি চেয়ারম্যান এর নিয়ামানুবর্তিতার জ্ঞান বিতরনের... ...বাকিটুকু পড়ুন

বারবাজারে মাটির নিচ থেকে উঠে আসা মসজিদ

লিখেছেন কামরুল ইসলাম মান্না, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:৪০

ঝিনাইদহ জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার বারবাজার ইউনিয়নে মাটির নিচ থেকে মসজিদ পাওয়া গেছে। এরকম গল্প অনেকের কাছেই শুনেছিলাম। তারপর মনে হলো একদিন যেয়ে দেখি কি ঘটনা। চলে গেলাম বারবাজার। জানলাম আসল... ...বাকিটুকু পড়ুন

সৎ মানুষ দেশে নেই,ব্লগে আছে তো?

লিখেছেন শূন্য সারমর্ম, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:৪৮








আশেপাশে সৎ মানুষ কেমন দেখা যায়? উনারা তো নাকি একা থাকে, সময় সুযোগে সৃষ্টিকর্তা নিজের কাছে তুলে নেয় যা আমাদের ডেফিনিশনে তাড়াতাড়ি চলে যাওয়া বলে। আপনি জীবনে যতগুলো বসন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

পরিবর্তন অপরিহার্য গত দেড়যুগের যন্ত্রণা জাতির ঘাড়ে,ব্যবসায়ীরা কোথায় কোথায় অসহায় জানেন কি?

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৩:৫৭


রমজানে বেশিরভাগ ব্যবসায়ীকে বেপরোয়া হতে দেখা যায়। সবাই গালমন্দ ব্যবসায়ীকেই করেন। আপনি জানেন কি তাতে কোন ব্যবসায়ীই আপনার মুখের দিকেও তাকায় না? বরং মনে মনে একটা চরম গালিই দেয়! আপনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×