somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ধীরে ধীরে ধীরে বও ওগো উতল হাওয়া

১১ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ বিকাল ৩:৩৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



দুর থেকে ওদের চিৎকার চেঁচামেচি ভেসে আসছিল । রমিজের কন্ঠস্বর চিনতে পেরেই জাহিদ আর এক মুহূর্তও দেরি করল না । ওরা একটা ঘোট পাকানোর জন্যই তার রুমের দিকে আসছে । জাহিদ চুপিচুপি রুম থেকে বের হয়ে সিঁড়ির গোড়ায় গিয়ে নিজেকে আড়াল করে দাঁড়ায় । বারান্দার কোনা থেকে চেঁচামেচি গালিগালাজ করতে করতে রমিজ আর সায়েদ তার রুমের দিকেই যাচ্ছে ।

জাহিদ ভেবে পাচ্ছেনা পুরো ডিপার্টমেন্ট এই সময়ে এত সুনশান নিরিবিলি কেন ! ছাত্র-শিক্ষক-কর্মচারি সবাই গেল কোথায় ! সিঁড়ির আড়ালে লুকিয়ে সে তার রুমে চেয়ার-টেবিল ভাংচুরের শব্দ পাচ্ছে । তাহলে কি ফাঁকা ডিপার্টমেন্টে সে একা আছে জানতে পেরেই তারা তাকে আক্রমন করতে এসেছে !

রুম থেকে বেরিয়ে সিঁড়ির দিকে ওরা আসছে বুঝতে পেরেই জাহিদ দ্রুত দুতলায় উঠে যায় । রেলিংয়ের ফাঁক দিয়ে দেখতে পায় সায়েদ বারান্দার এদিক ওদিক খোঁজাখুজি করছে । আর রমিজ সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠে আসছে । দুজনের হাতে একটা করে টিনের কৌটা, কালো রঙের তরলে ভর্তি । রমিজ সিঁড়ি দিয়ে উঠতে গিয়ে জাহিদের নড়াচড়া টের পেয়েই ঐ তরল তার দিকে ছুড়ে মারে । জাহিদ কোনরকম সরে গিয়ে তরল আক্রমন থেকে নিজেকে বাঁচায় । দেয়াল আর সিঁড়ির একাংশ কালো রঙের পদার্থে থিকথিক করছে । তরল থেকে একটা রাসায়নিক গন্ধ বেরুচ্ছে । গন্ধটা নাকে আসতেই সে বুঝতে পারে জিনিসটা আলকাতরা । দোতলার কার্নিশ বেয়ে একটা রুমে গিয়ে চুপিসারে আত্মগোপন করে জাহিদ ।

ইতিমধ্যে সায়েদও দুতলায় উঠে আসে । হন্যে হয়ে তারা দুজনে জাহিদকে খুঁজতে থাকে । জাহিদ প্রমোদ গুনে, প্রতিরোধ না করলে ওরা তার শরীরে আলকাতরা মেখে দিবে । ওরা নিশ্চিত বুঝে গেছে, কালো কালি লেপন ছাড়া জাহিদের ডিপর্টমেন্টের চেয়ারম্যান হওয়া ঠেকাতে পারবে না ।

হঠাৎ জাহিদ আত্মগোপন থেকে দ্রুত বের হয়ে এসে সায়েদকে এক ধাক্কায় ফেলে দেয় । হাত থেকে পড়ে যাওয়া আলকাতরার নর্দমায় সায়েদ লুটোপুটি খায় । রমিজ দৌড়ে তাকে ধরতে এসে সেও আলকাতরার স্রোতে পিছলে পড়ে যায় । জাহিদ দ্রুত সিঁড়ি বেয়ে নেমে আসে । পেছন থেকে রমিজ আর সায়েদের চিৎকার গালাগাল ভেসে আসতে থাকে । তাদের দিকে ঘৃনামিশ্রিত থুথু ছুড়ে দেয় জাহিদ, চিৎকার করে বলে উঠে, "মর শালা ছুঁচোর দল" ।

-কি বললা তুমি ? কে তোমার শালা ?? তোমার এত অবনতি হইছে জাহিদ !! তুমি যে একটা ছোটলোক এটা শুধু আমি জানি, এখন সবাইকে জানানোর সময় এসে গেছে । হায় আল্লাহ, একটা ছোটলোকের সাথে আমারে ঘর করতে দিলা !!

শশীর ঘরময় চিৎকারে জাহিদের গভীর ঘুম ভেঙ্গে যায় । ধড়ফড় করে বিছানা থেকে নেমে এসে জিজ্ঞেস করে,

-কি হইছে !! কি হইছে শশী ??
-আর ন্যাকামো করতে হবে না । দিন যত যাচ্ছে তোমার কুৎসিত চেহারাটাও প্রকাশ হয়ে যাচ্ছে । বলি আমার ভাইবোনেরা তোমাকে কি এমন প্যারা দিল যে তাদের ছুঁচোর দল বললা ? তোমাকে পুছার সময় ওদের কারো নাই । আয়নার দিকে তাকিয়ে দেখ, নিজেকে ঠিক ঠিক চিনতে পার কি না !!

হতভম্ব জাহিদ কিছুতেই বুঝতে পারছেনা শশী কেন এই সাত সকালে তার উপর বিগড়ে গেল । কাঁচাঘুম নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকায় পা দুটো টলছে । আর শশীর লাগামহীন কথাবার্তা শুনে মাথাটাও ঝিমঝিম করছে । তবু পরিস্থিতি সাময়িক সামলে নেয়ার জন্য সে ছেলেমেয়ে দুটোকে দেখিয়ে বলল,
-আট'টায় না ওদের আর্ট ক্লাস, আট'টা তো প্রায় বাজে..
-হ্যাঁ তাইতো যাচ্ছি । দরজা ভেড়ানোর জন্য ডেকেছিলাম, আর এর জন্য গোষ্ঠিশুদ্ধ ছুঁচোর দল হয়ে গেলাম । ঠিক আছে, স্কুল থেকে ফিরে আসি, তারপর দেখা যাবে কারা আসল ছুঁচোর দল ।
-বাই বাবা ! বাই বাবা !!
-বাই !!

ছেলেমেয়ে দুটোকে আদর দিয়ে দরজা বন্ধ করে ওখানেই দাঁড়িয়ে থাকল জাহিদ । ধাতস্ত হতে আরও কিছুটা সময় লাগল তার । ঘুমের ঘোরে স্বপ্ন দেখার মাঝে কি যে বলেছিল তা কিছুতেই মনে করতে পারছেনা । আর এটা শুনেই যে শশী তেলেবেগুনে জ্বলে উঠেছে তা বেশ বুঝতে পারছে । সোফায় স্থির হয়ে বসে থেকে স্বপ্নটা মনে করার চেষ্টা করছে জাহিদ, কিন্তু কিছুতেই মনে করতে পারছে না ।

এমনিতে ভোর ছ'টায় ঘুম হতে উঠা তার আশৈশব অভ্যেস । গতকাল ক্যাম্পাসে খুব ঝামেলা গিয়েছে, ভিসি স্যারের সাথে মিটিং ছিল বিকাল পাঁচটায় । সেই মিটিং বিকাল গড়িয়ে রাত আট'টায় শুরু হয়েছে । এমনিতে ভিসি সাহেব জাহিদকে পছন্দ করেন তার সোজাসোজি কথা বলতে পারার সৎসাহসের জন্য । মিটিংয়ে একজন সিনিয়র শিক্ষক ডিপার্টমেন্টে জাহিদের বিরুদ্ধে রমিজ-সায়েমদের তৎপরতা নিয়ে ভিসির দৃষ্টি আকর্ষন করেন । রমিজ সাহেব নাকি স্টুডেন্টদেরও জাহিদের বিরুদ্ধে খেপিয়ে তোলার চেষ্টা করছে । সব শুনে ভিসি স্যার অভয় দেন, সিনিয়রিটির ভিত্তিতে জাহিদই হবে ডিপার্টমেন্টের নেক্সট চেয়ারম্যান ।

দিনটা অন্যান্য ছুটির দিনের মতই গৎবাঁধা রুটিন কাজ করে ব্যয় হয়ে যায় । দুপুরে সবাইকে নিয়ে জাহিদ একটা বিয়ের অনুষ্টানে যায় । বাইরে যাওয়ার কথা শুনলেই বাচ্চাদুটো আনন্দে লাফাতে থাকে । ডিপার্টমেন্টে একজন প্রোফেসর হিসাবে গাম্ভীর্য বজায় রাখলেও পরিবার বন্ধুদের সাথে সে যথেষ্ট খোলা মনের । বন্ধু বলতে শশীর তিন বান্ধবীর পরিবার, বাচ্চাদের স্কুল থেকে তাদের পরিচয় । গত পাঁচ বছরে এই সম্পর্ক নিবিঢ় পারিবারিক আবহে মোড় নিয়েছে । একসাথে বেড়ানো আর অনুষ্টানাদিতে যাওয়াতো আছেই, প্রতি সপ্তাহেই তারা কারো না কারো বাসায় আড্ডা দিতে বসে যায় । এদের পিচ্চিগুলোর মাঝেও প্রগাঢ় বন্ধুত্ব, এমনকি তারা বাইরের পিচ্চিদের সাথে মিশতেই চায় না ।

সকালের পর থেকে শশীর সাথে জাহিদের কথা বন্ধ । বিয়েতে বন্ধু পরিবারের উপস্থিতিতে সময়টা তাদের আনন্দেই কেটে যায় । চারজন পুরুষই উঁকিঝুকি মেরে নতুন বউ দেখে আর সরস মন্তব্য ছুঁড়ে দেয় । তাদের কথা শুনে তাদের বউরা হেসে লুটোপুটি খায় । বিয়ের অনুষ্টান শেষে বন্ধু পরিবারের সবাই তাদের বাসায় আসে । তাদেরকে বাসায় বসিয়ে জাহিদ হন্তদন্ত হয়ে বাইরে চলে যায়, সন্ধ্যায় তাকে একটা প্রাইভেট ইউনিতে ক্লাস নিতে হয় ।

বাসায় ফিরে ডিনার সেরেই জাহিদ বইপত্র নিয়ে বসে । রাত দশটা বাজলেই তার ঘুমের প্রস্তুতি নেয়া শুরু হয়ে যায়, কারণ এগারটার পরে আর সে জেগে থাকতে পারে না । সকালে জঘন্য একটা ঝগড়ার পর শশীকে স্বাভাবিক করার জন্য একটু প্রেম-রোমান্স করার প্রয়োজন বোধ করে সে । এমনিতে বাচ্চারা বড় হয়ে যাওয়ায় তাকে আলাদা খাটে একা ঘুমাতে হয়, তার উপর সারাদিনের ক্লান্তি নিয়ে বাসার ফেরার পরই সে ঘুমের ঘোরে ঝিমুতে থাকে । তাই শশীর সাথে শারিরীক মিলন এখন আর তেমন হয়ে উঠেনা ।

বেডরুমে শশী বাচ্চা দুটোর হোমওয়ার্ক নিয়ে বসেছে । জাহিদ হঠাৎ অতি তৎপর হয়ে বিছানার বেড কভার পাল্টে দেয় । অগোছালো রুমটাকে সুন্দর করে গোছাতে থাকে । শশী আড়চোখে জাহিদের কার্যকলাপ দেখে ঠোঠ বাঁকায় । ঘর গোছানো হয়ে গেলে বাচ্চা দুটোকে গাল টিপে আদর দিয়ে বলে, "বাবারা, রাত জাগলে শরীর খারাপ করবে । তোমরা এখন ঘুমুতে যাও, সকালে উঠে পড়তে বসবা" ।

বাসার কাজে কর্মে এই অতি তৎপরতা জাহিদের নিজস্ব সিগনাল, প্রেম-রোমান্সের সিগনাল । জাহিদের পরিষ্কার সিগনাল বুঝতে পেরেও শশী সেদিকে ভ্রুক্ষেপ করে না । বাচ্চাগুলোকে আরো মনোযোগ দিয়ে পড়া দেখিয়ে দিতে থাকে ।

শশীর সাড়া না পেয়ে জাহিদ এবার এক্সট্রিম সিগনালের দিকে আগায় । নাইট গাউন পড়া খোলামেলা শশীর দিকে আড়চোখে তাকিয়ে গদগদে ফিসফিস গলায় বলে, "সারাদিন একটুও রেস্ট নাওনি । ওদের ঘুম পাড়িয়ে আসো, মাথা মেসেজ করে দিলে ভাল লাগবে" ।

জাহিদের গদগদ গলা শুনতে না পাবার ভান করে শশী বাচ্চাদুটোকে ধমকে উঠে, :এই পড়! পড়া শেষ না হলে আজকে একটাকেও ঘুমাতে দেব না" ।

শশীর গলার ঝাঁঝটা যে তাকে লক্ষ্য করেই, জাহিদ তা বেশ বুঝতে পারে । এই অবস্থায় বাচ্চাদের সামনে নিজেকে খুব খেলো আর অস্বস্তিকর লাগে । তাই সে পাশের রুমে চলে যায় । শশীর প্রত্যাখানে তার শরীরে জ্বলে উঠা রোমান্স ধীরে ধীরে নিভে যেতে থাকে । ইতিমধ্যে রাজ্যের ঘুম এসে জড়ো হয় তার দু'চোখে । রোমান্সের ইচ্ছেটা অবদমিত হয়ে আস্তে আস্তে সে হারিয়ে যায় ঘুমের রাজ্যে ।

দিনটা যথারীতি ব্যস্ততার মাঝেই কাটে জাহিদের । দুপুরে টিচার লাউঞ্জে লাঞ্চ সেরে নিজের রুমে এসে থিতু হয়ে বসে । তারপর একটা মোটা ভারি বইয়ের পৃষ্ঠায় ক্রমশ হারিয়ে যেতে থাকে । মোবাইলের রিংটোনের আওয়াজে বাস্তবে ফিরে আসে সে । স্ক্রীনের দিকে তাকিয়ে দেখে শশীর ফোন,

-হ্যালো শশী, বল..
-তুমি এখন কোথায় ?
-ডিপার্টমেন্টে
-লাঞ্চ করেছ ?
-হ্যাঁ হ্যাঁ, টিচার লাউঞ্জে ।
-রুমী-প্রমী খেয়েছে, নাকি না খেয়ে আছে খোঁজ নিয়েছ ?
-হ্যা হ্যা, ওরা খেয়েছে ? আমি মিটিংয়ে ছিলাম, ওখান থেকে সবার সাথে লাঞ্চে সেড়ে আসছি । তুমি খেয়েছ ?
-আমার খবর তোমার নেয়া লাগবে না । তুমি জান না, খেতে বসে রুমি কি সব কাহিনী করে ! ফোন করে একবার ছেলেমেয়ে দুইটার খবর নেয়ার সময় থাকে না, নিজে ঠিকই লাঞ্চ সেড়ে আসছ..
-এই শোন শোন, আমি..
-থাক, আর কারণ দর্শাতে হবে না, রাখি ।

জাহিদ আবার কলব্যাক করে, ওপাশ থেকে শশী রিসিভ করে না । সারাটা বিকাল ডিপার্টমেন্টে কাটিয়ে শেষ বিকালে জাহিদ সরাসরি শিশু একাডেমিতে গিয়ে হাজির হয় । রুমী-প্রমি বিকালে গান শেখে এখানে । একাডেমির বারান্দায় শশী কয়েকজন মহিলার সাথে আড্ডা দিচ্ছে । গানের ক্লাস শেষ হবার পর জাহিদ সবাইকে নিয়ে শহরের এক নামকরা ইয়াম্মি রেস্টুরেন্টে খেতে যায় । এখানকার চিকেন মিটবল রুমী-প্রমী খুব পছন্দ করে । সবাই মিলে ডিনার খেয়ে তারা বাসায় চলে আসে ।

বাসায় ফিরে বাচ্চাদুটো আবার খেলাধুলা শুরু করে । শশী টেনেহেচড়ে দুটোকে পড়তে বসায় । মায়ের পিটুনির ভয়ে ইচ্ছের বিরুদ্ধে পড়তে গিয়ে দুজনেই ঝিমুতে থাকে । শশী অনেক্ষন চেঁচামেচি করেও তাদের ঘুম সরাতে পারে না । পরে বিরক্ত হয়ে দুজনকেই বিছানায় শুইয়ে দেয় ।

জাহিদ এই সময়টার জন্যই তক্কে তক্কে ছিল । বাচ্চারা ঘুমিয়ে যেতেই কোন সিগনাল ছাড়াই পেছন থেকে এসে শশীকে জড়িয়ে ধরে । আদরে চুমুতে শশীকে ভাসিয়ে দিতে থাকে । কিন্তু শশী জোড় করে জাহিদের হাতের বাঁধন থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নেয় । কন্ঠ থেকে তার একরাশ অভিমান ঝরে পড়ে, "যাও! কিছু করা লাগবে না" !!

জাহিদ এবার সামনে এসে শশীর দুহাত টেনে জড়িয়ে ধরে চুমু খেয়ে বলে- "সরি শশী, আই এ্যাম রিয়েলি সরি" !!

শশীর অভিমান এবার ঝাঁঝ ছড়ায়, "যাও! স্টুডেন্টের সাথে গিয়ে ইটিশপিটিশ কর । ডিপার্টমেন্টের চেয়ারম্যান হও,আর বাসায় এসে নাক ডেকে ঘুমাও । আমার জন্য কারো মায়া দেখাতে হবে না" !!

জাহিদের তীব্র আদরের কাছে শশীর কপট রাগ আর অভিমান ভেসে যেতে থাকে । দীর্ঘদিনের অবদমিত যৌবন তাদের রক্তের শিরায়-উপশিরায় অকাল বান ডেকে আনে । পুলকে শিহরণে উন্মত্ত নারী-পুরুষ দুজনকেই দুজনের কাছে অপরিচিত মনে হয় । আদিম শৃঙ্গারের মদিরা-মাধুরীতে মাতাল দুজনের মাঝে শেষ সূতোটাও আর বাঁধা হয়ে থাকে না । পনেরো বছরের দাম্পত্য জীবনের রুটিন কর্মটুকু আজ তাদের মাঝে বিস্ময় হয়ে ধরা দেয় । ক্রমশ তারা ভুলে যেতে থাকে পুরানো সম্পর্ক-পরিচয় আর অস্থিত্বের রসায়ন । নারী-মাংসের প্রথম স্বাদ পাওয়া হায়েনা যেন ঝাঁপিয়ে পড়ে নব রজঃস্বলা যুবতির উপর । দুজনেই প্রাণপনে সুঁড়ঙ্গ খুঁড়ে, যেন আর একটু খুঁড়লেই দেখা মিলবে মুক্তির সূর্যের । তিমির আঁধার পেরিয়ে যেন জেগে উঠবে কমনীয় রাঙা ভোর ।

আচমকা চুলের পেছনে হ্যাচকা টানে সম্বিত ফিরে জাহিদের,

-আহ, কি করছ জাহিদ! তুমি দেখি এক্সপ্রেস ট্রেন চালাতে শুরু করেছ!
-কেন কি হয়েছে শশী! এনি থিং রং !!
-তুমি বোঝ না ! এখন আর এত উন্মাদনা সইবে কেন !! বৈঠা দিয়ে নৌকা চালাও জাহিদ । সন্তর্পনে, যেন মাছেরাও টের না পায় । ধীরে ধীরে বেয়ে পার হও শান্ত নদী । যেন অনন্তকাল ধরে তুমি বেয়ে চলেছ আমার তরী..

জাহিদ ধীর হয়ে আসে, ছন্দিত ত্বরণ ক্রমে স্পন্দিত মন্দনে থিতু হয়ে আসে । যেন অনন্তকাল ধরে সে বেয়ে চলেছে এই তরী, শান্ত নিরবধি । গলা-পিঠে সুখ বুলিয়ে যায় শশীর হাতের ধারালো কোমল পরশ..

ইতিমধ্যে মস্তিষ্ক নিঃসৃত ডোপামিন জাগিয়ে দিয়েছে জাহিদের লাখো কোটি শুক্র সৈনিক । যুদ্ধসাজে ব্যারাক ছেড়ে বেরিয়ে আসে অনল প্রবল স্যুইসাইড স্কোয়াড । বাঁধ ভাঙ্গা জোয়ারের মত উপচে পড়ে ভাসিয়ে দেয় শুকনো জমি, শস্যের আঁধার । মিলিত শিৎকার ধ্বনি-প্রতিধ্বনিতে সিক্সথ সিম্ফনির সুর মূর্ছনায় স্থিমিত হয়ে আসে চরাচর ।

যথারীতি সকাল ছ'টায় ঘুম ভাঙ্গে জাহিদের । অবাক বিস্ময়ে সে নিজেকে আবিষ্কার করে শশীর স্ফিত কামিনি শয্যায় ।

শশীর রিনিরিনি হাসির নিক্কনে হতভম্ব জাহিদের প্রাণপাখি যেন ফিরে আসে শৃঙ্খলিত খাঁচায়, দুজনেই ফিরে যায় পনেরো বছর আগের সেই চিমটি কাটা সময়ে,,
-"ঠিক রাত এগারোটায় তোমার ঘুমিয়ে পড়ার অভ্যাস আর গেলনা জাহিদ" !!




**************************************

ছবিঃ অন্তর্জাল ।
৬৯টি মন্তব্য ৬৯টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

যেকোন বাংগালীর ইন্টারভিউর সময়, 'লাই-ডিটেক্টটর' যোগ করে ইন্টারভিউ নেয়ার দরকার।

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৫ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:০৭



আপনার এনলাকার এমপি, প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী কামাল সাহেব, যেকোন সেক্রেটারী, যেকোন মেয়র, বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান, বিএনপি'র রিজভী, আওয়ামী লীগের ওয়ায়দুল কাদের, আপনার থানার ওসি, সীমান্তের একজন বিজিবি সদস্য, ঢাকার... ...বাকিটুকু পড়ুন

ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা করা সকলের দায়িত্ব।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৩৮



এগুলো আমার একান্ত মতামত। এই ব্লগ কাউকে ছোট করার জন্য লেখি নাই। শুধু আমার মনে জমে থাকা দুঃখ প্রকাশ করলাম। এতে আপনারা কষ্ট পেয়ে থাকলে আমি দায়ী না। এখনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

তাবলীগ এর ভয়ে ফরজ নামাজ পড়ে দৌড় দিয়েছেন কখনো?

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:২৬


আমাদের দেশের অনেক মসজিদে তাবলীগ এর ভাইরা দ্বীন ইসলামের দাওয়াত দিয়ে থাকেন। তাবলীগ এর সাদামাটাভাবে জীবনযাপন খারাপ কিছু মনে হয়না। জামাত শেষ হলে তাদের একজন দাঁড়িয়ে বলেন - °নামাজের... ...বাকিটুকু পড়ুন

এখনো নদীপারে ঝড় বয়ে যায় || নতুন গান

লিখেছেন সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:২০

এ গানের লিরিক আমাকে অনেক যন্ত্রণা দিয়েছে। ২৪ বা ২৫ এপ্রিল ২০২৪-এ সুর ও গানের প্রথম কয়েক লাইন তৈরি হয়ে যায়। এরপর ব্যস্ত হয়ে পড়ি অন্য একটা গান নিয়ে। সে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ফেতনার সময় জামায়াত বদ্ধ ইসলামী আন্দোলন ফরজ নয়

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ১১:৫৮



সূরাঃ ৩ আলে-ইমরান, ১০৩ নং আয়াতের অনুবাদ-
১০৩। তোমরা একত্রে আল্লাহর রজ্জু দৃঢ়ভাবে ধর! আর বিচ্ছিন্ন হবে না। তোমাদের প্রতি আল্লাহর অনুগ্রহ স্মরণ কর।যখন তোমরা শত্রু ছিলে তখন তিনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×