অপরূপ সৌন্দর্য আর প্রাকৃতিক শোভামন্ডিত দর্শনীয় স্থান হাতিয়ার নিঝুমদ্বীপ। পাখির কলকাকলি, হরিণের অভয়ারাণ্য, মেঘনার হিমশীতল বাতাসের প্রবাহ, সৈকত, অতিথি পাখির সমারোহ, জেলেদের মৎস্য শিকার ও বন্য প্রাণীদের সমাগম সৌন্দর্য পিপাসু পর্যটকদেরকে হাতছানি দিয়ে ডাকছে। পর্যটন শিল্পে বিপুল সম্ভাবনার এ স্থানটি বঙ্গোপসাগরের অদূরে নোয়াখালীর
হাতিয়া উপজেলা সদর ওছখালী থেকে প্রায় ১৪ কিলোমিটার দক্ষিনে বংগপোসাগরের মোহনায় অবস্থিত।
চল্লিশের দশকের গোড়ার দিকে শুরু হয় নোয়াখালীর দ্বীপ উপজেলা হাতিয়ার নদী ভাঙ্গণ। মূল ভূ-খন্ডের বিভিন্ন অংশে ভাঙ্গণের পর খন্ডখন্ডভাবে মেঘনার মোহনায় জাগতে থাকে নতুন নতুন চরাঞ্চল। ১৯৭৮ সালে হাতিয়ার এই দর্শনীয় স্থান নিঝুমদ্বীপে ছাড়া হয় ৪ জোড়া চিত্রা হরিণ। আস্তে আস্তে বাড়তে থাকে হরিণের সংখ্যা। উত্তরে মূল ভূ-খন্ড হাতিয়া, দক্ষিণে বঙ্গোপসাগরের উত্তাল ঢেউ এবং সমূদ্র সৈকতের মত সুবিশাল এলাকা, মাঝখানে চোখ জুড়ানো নিসর্গের হাতছানি দিয়ে সৌন্দর্য পিপাসু পর্যটকদের ডেকে বেড়াচ্ছে দ্বীপ উপজেলা হাতিয়ার দর্শনীয় স্থান নিঝুমদ্বীপ। মেঘনার বালিকনা যুক্ত রাশিরাশি লবনাক্ত
ঘোলাজল প্রবাহিত হয়ে বঙ্গোপসাগরের উত্তাল ঢেও ও গর্জনের সঙ্গে মিলিন হয় আপন পরশে। বাতাসের সুমধুর প্রবাহ, কেওড়া বণে ঝাঁক বেঁধে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে মায়াবী চিত্রল হরিণের পাল, দল
বেঁধে ছুটে বেড়াচ্ছে বণ্য কুকুর ও শৃঙগালে দল। ঝাঁকে ঝাঁকে উড়ে বেড়াচ্ছে হরেক রঙ্গের পাখ পাখালি। চোখ পেরালেই হরিণ মায়াবী হরিণের পাল। নিঝুমদ্বীপ বনে ফসলের মাঠে, রাস্তাঘাটে, সমস্ত স্থানে ঝাঁক বেঁধে ঘুরে বেড়া লেই দেখা মেলে মায়াবী হরিণের পাল। এর সৈকত থেকে সূর্যোদয় অবলোকনের দৃশ্য খুবই দর্শনীয়। এখানে জেলেদের মৎস্য শিকারের আনন্দ যেন অন্য এক জগতে পৌছে দেয় পর্যটকদের। শীতে অতিথি পাখিদের সমারোহে আরো প্রাণবন্ত হয়ে ওঠে এ প্রাকৃতিক পরিবেশ। মৎস্য শিকারীরা সর্বদা ব্যস্ত সময় কটায় মৎস্য শিকারে। এর অধিকাংশ স্থান জুড়ে চিকচিক করছে বালিকনা। দ্বীপ উপজেলা হাতিয়ার নিঝুমদ্বীপের প্রাকৃতিক সম্পদের তালিকা প্রণয়নের কাজ বহু আগে শুরু হলেও তা এখনো শেষ হয়নি। আগের তুলনায় বর্তমানে কাজি বাজারে প্রাণী সম্পদ বহুগুণ বেড়ে গেছে। তাছাড়া সুন্দরী, কেউড়া, গেওয়া, গোলপাতা, বাইনগাছসহ বহু প্রজাতির গাছ-পালায় প্রকৃতি সম্পূর্ণ পরিকল্পিত ভাবে সাজিয়ে তুলেছে। বাড়িয়ে দিয়েছে এর দৃষ্টিনন্দন সৌন্দর্য। কাজি বাজারের অভয়ারণ্য হরেক রঙ্গের অতিথি পাখিদের জন্য এক নিরাপদ স্থান। শীতে খাদ্যের অন্বেষণে পৃথিবীর বিভিন্ন স্থান থেকে উড়ে আসে জড়ো হয় এখানে। এরা ঝাঁক বেঁধে চলাফেরা করে, বাসা বাঁধে কেওড়া গাছের ডালে ও কাদাপানিতে। এ মৌসূমে এরা ডিম পাড়ে বাচ্চা ফোটায় আবার চলে যায় দূর অজান্তে। পাখিদের মোহনীয় কুহুতান শুনে মহে হয় এ যেন এক রূপ কথার পক্ষীরাজ্য। এর নির্জন বনে হাজার হাজার হরিণের সাথে বসবাস করে আসছে হাজার হাজারঅতিথি পাখির। তাদের একত্রে চলাফোরা। এ যেন এক অতিথিয়তা ও ভালোবাসার বিরল দৃষ্টান্ত। গোধূলিলগ্নে পাখির কুহুতান প্রাণী আর মেঘনার লোনা বাতাসের গন্ধ মিলে তৈরী হয় এক মোহনীয় ইন্দ্রজাল। শীত মৌসূমে সারা দেশ থেকে এখানে ছুটে আসেন সৌন্দর্য্য পিপাশু পর্যটকরা। শুধু শীত নয়, দর্শনার্থীরা একে বছরের সারা দিন পর্যটনের উপযুক্ত স্থান হিসাবে দেখছেন। আর সৌন্দর্য উপভোগ করার জন্য তারা ছুটে আসেন এখানে। তাই বছরের সারা দিন পর্যটকদের পদাচরণে মুখরিত থাকে এটি। হরিণ, সৈকত, বালিকনা, কাকড়া, শৃগাল, সাগরের পানি ও তিথি পাখিদের সমাগমই পর্যটকদের ।
ঢাকার সদরঘাট থেকে প্রতিদিন বিকাল সাড়ে ৫টায় তিনতলা বিশিষ্ট একটি লঞ্চ ভোল, মনপুরা হয়ে পরদিন সকাল ৯টায় হাতিয়ারতমরুদ্দি ঘাটে পৌছাঁয়। চট্টগ্রাম থেকে সাপ্তাহের ৫দিন
একটি করে স্টিমার হাতিয়ার নলছিরা ঘাটে যাতায়াত করে।
অপরদিকে প্রতিদিন ২টি কলে সিট্রাক ও বড়বড় নৌকা হাতিয়ার
নলছিরা ঘাটে যাতায়াত করে। এগুলো দিয়ে হাতিয়া সদর
ওছখালী পৌছঁলে সেখান থেকে নিঝুমদ্বীপ এ পৌছতে মাত্র তিনঘন্টা লাগবে।