somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ঘুরে এলাম পীরগঞ্জ : জেনে আসলাম মধ্যযুগের অন্যতম শ্রেষ্ঠ কবি এবং আধ্যাত্মিক পুরুষ হেয়াত মামুদ এর জীবনী :) :)

০৫ ই আগস্ট, ২০১৩ সন্ধ্যা ৭:০০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

গতমাসের ২০ বা ২১ তারিখ পীরগঞ্জ উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক ও ডঃ ওয়াজেদ আলী মিয়ার ভাতিজা বন্ধুসম বড়ভাই তাজিমুল ইসলাম শামীম মুঠোফোনে দাওয়াত দিয়েছিল পীরগঞ্জ যাওয়ার জন্য।তার কাছ থেকে জানতে পারলাম মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার সন্তান জয় এবং পুতুলও পীরগঞ্জ আসবে স্বপরিবারে।প্রধানমন্ত্রীর অনেক উন্নয়ন কাজের উদ্ভোধনের মাঝে আরেকটি কাজ ছিল স্বপরিবারে ডঃ ওয়াজেদ মিয়ার কবর জিয়ারত এবং জয় ও শামীম ভাইয়ের পরিবারের জন্য সাদামাটা যে দোতালা বাড়ির কাজ শেষ হয়েছে সেই বাড়ীতে ওঠা।
গত ৩১শে জুলাই ভোরবেলা পৌঁছে যাই রংপুরের পীরগঞ্জে।এটা আমার চতুর্থবার পীরগঞ্জ যাওয়া।পীরগঞ্জ পৌঁছে স্বপরিবারে অস্থায়ী হেলিপ্যাড থেকে সোজা চলে আসেন শ্বশুরবাড়ি।সেখানে আগে ডঃ ওয়াজেদ মিয়ার কবর জিয়ারত করে বাড়ীর ভিতর প্রবেশ করেন।সেখানে বাংলার চিরচারিত নিয়ম ও অনুষ্ঠানের মাঝে বরণ করে নেওয়া হয় প্রথমবার পীরগঞ্জ আসা জয়ের স্ত্রী ক্রিস্টিনাকে। ঐ সময় আশেপাশের হাজার হাজার মানুষ ভিড় করে বাড়ীর চারপাশে তাদের ছেলে জয়ের বৌ দেখতে। সেখানে পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের সাথে কুশল বিনিময় এবং খাওয়া দাওয়া করে প্রধানমন্ত্রী সবাইকে নিয়ে যোগ দেন পীরগঞ্জের জনসভায়।জনসভায় পীরগঞ্জ পরিণত হয় জনসমুদ্রে।তার একটামাত্র কারণ ছিল সজীব ওয়াজেদ জয়। রংপুরসহ সারাদেশের মানুষ তাকিয়ে ছিল জনসভায় জয়ের বক্তব্য ও তার ভোটের রাজনীতিতে অংশগ্রহণ নিয়ে।ঐদিনের জয়ের বক্তব্য আগামী সংসদ নির্বাচনের সময় রংপুর-৬(পীরগঞ্জ)থেকে তার প্রার্থিতা প্রায় নিশ্চিত।আর এতে উত্তরবঙ্গের রাজনীতিতে যে নতুন মেরুকরণ হচ্ছে তা গত ৪/৫ দিন সেখানে থেকে বুঝেছি।প্রধানমন্ত্রী ও তার পরিবারের সবাই ঐদিন সন্ধ্যায় ঢাকায় ফিরে আসেন।আমারও রাতে ফিরে আসার কথা থাকলেও শামীম ভাইয়ের পরিবার ও পীরগঞ্জের বন্ধুরা সমস্ত পীরগঞ্জ বেড়াতে নিয়ে যাবে এই লোভ দেখিয়ে আমাকে আসতে দেয়নি।



যাই হোক পরের দিন বেড়িয়ে পড়লাম পীরগঞ্জ ঘুরে দেখতে।প্রথমে গেলাম সদ্য উদ্ভোধন করা পীরগঞ্জ ও দিনাজপুরের বিরামপুরের মাঝে সংযোগ স্থাপন করা জনগণের দীর্ঘদিনের দাবী ডঃ ওয়াজেদ মিয়া সেতুতে।অদ্ভুত সুন্দর স্থানে করতোয়া নদীর উপর সেতুটি বেড়ানোর জন্য নতুন মাত্রা যোগ করেছে সংশ্লিষ্ট এলাকার মানুষের জন্য।



সেতুর স্থান থেকে আমাকে নিয়ে যাওয়া হয় মধ্যযুগের বাংলা সাহিত্যের অন্যতম শ্রেষ্ঠ কবি হেয়াত মামুদের সমাধিস্থলে।ঐখানে যাওয়ার আগে হেয়াত মামুদ সম্পর্কে তেমন কিছু জানতামনা।সেখানে কথা হয় স্থানীয় মাদ্রাসার প্রধান এবং মাজার মসজিদের মুয়াজ্জিনের সাথে।তাদের কাছে জানতে পারলাম হেয়াত মামুদ শুধু কবি নন তিনি উত্তরবঙ্গের অন্যতম ধার্মিক ও আধ্যাত্মিক সাধক।মসজিদের মুয়াজ্জিন সাহেব আমাকে নিয়ে গেলেন মাজার জিয়ারতের জন্য।মাজার জিয়ারত করার আগে মুয়াজ্জিন সাহেব আমাকে পরিচয় করিয়ে দিলেন কিংবদন্তী "কাঁঠাল গাছ" এর সাথে।



শোনালেন হেয়াত মামুদের কিছু জীবনী এবং কাঁঠাল গাছটার কাহিনী।
কবি ও আধ্যাত্মিক পুরুষ হেয়াত মামুদ ১৬৮০ থেকে ১৬৯০ সালের মাঝে কোন এক বছর পীরগঞ্জের ঝাড়বিশিলা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।পিতা কবির মামুদ ও মাতা খায়রুন্নেসার আরও কোন সন্তান ছিল কিনা তা জানা যায় না।কবির পিতা ঘোড়াঘাট সরকারের দেওয়ান ছিলেন এবং ১৭২৩-২৭ সালের মাঝে বাগদ্বার পরগনার কাজী নিযুক্ত হন।ছোটবেলা থেকেই কবি হেয়াত মামুদ খুবই ধার্মিক ছিলেন।শত শত বছর যাবত সেখানকার মানুষেরা তাদের মুরুব্বিদের কাছ থেকে জেনে আসছেন আধ্যাত্মিক মানুষ হেয়াত মামুদ পাঁচ ওয়াক্ত নামায আদায় করতেন পবিত্র কাবা শরিফে।ধর্ম-বর্ণের হিসাবের বাইরে হেয়াত মামুদ মানুষের মঙ্গল কামনায় সারা জীবন কাজ করেছেন।সুফি সাধনার অনুরাগী কবি তার নৈতিকতা সম্পন্ন জীবনে রচনা করেছেন অসংখ্য কাব্য।সর্বজন স্বীকৃত এবং কবির কবরের গায়ে লিপিবদ্ধ ৪টি কাব্যগ্রন্থের কথা যায়--

১। জঙ্গনামা(১৭২৩ খ্রিঃ),
২।সর্বভেদবাণী বা চিত্ত উল্লাস বাণী’(১৭৩২ খ্রিঃ),
৩।হিতজ্ঞান বাণী(১৭৫৩ খ্রিঃ)
৪। আম্বিয়াবাণী(১৭৫৭খ্রিঃ)।
ধারণা করা হয় আনুমানিক ১৭৬০ থেকে ১৭৬৫ খ্রিস্টাব্দের দিকে উত্তর বাংলার এই সাধক কবি ইন্তেকাল করেন।তাঁকে কবর দেওয়া হয় একটা কাঁঠাল গাছের পাশে।



সাধক কবি হেয়াত মামুদ ইন্তেকালের ২০ বা ৩০ বছর পর একদল দুর্বৃত্ত হেয়াত মামুদের কবরের পাশের কাঁঠাল গাছটি কেটে নিয়ে যায় এবং বলে যায়,যদি হেয়াত মামুদ ধার্মিক বা আধ্যাত্মিক মানুষ হয়ে থাকে তবে আজ রাতের মধ্যে যেন কাঁঠাল গাছটি আগের অবস্থায় ফিরে যায়।কাঁঠাল গাছটি যে কাঁটা হয়েছিল সেই বিষয়টা আজকেও ভালভাবে বোঝা যায়।



যাইহোক,পরেরদিন ভোর বেলা স্থানীয় মানুষেরা দেখতে পায় কেটে নিয়ে যাওয়া গাছটি আগে যেমন অবস্থায় ছিল ঠিক সেইভাবে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে।যেন দুর্বৃত্তদের ছুঁড়ে দেওয়া চ্যালেঞ্জটি গ্রহণ করে কাঁঠাল গাছটি স্বমহিমায় দাঁড়িয়ে আছে সাধক কবি হেয়াত মামুদের আধ্যাত্মিকতার সাক্ষী হিসেবে।
সবথেকে বড় বিষয় গাছটি শত শত বছর যাবত একই রকমভাবে রয়েছে।মাজার সংলগ্ন মসজিদের সেই মুয়াজ্জিন সাহেবও তাতে সায় দিয়ে বললেন,তিনি নিজেও ছোট বেলায় যে অবস্থায় গাছটিকে দেখেছিলেন ঠিক সেইভাবে আজকেও রয়েছে।প্রচলিত আছে কাঁঠাল গাছের পাতা মানুষেরা বিভিন্ন নিয়ত করে খেয়ে পানিতে ভিজিয়ে রেখে সেই পানি খায় বা পাতাটি চিবিয়ে খায়।সবশেষে সাধক কবির কবর জিয়ারত করে সন্ধ্যার আগে ফিরে আসলাম পীরগঞ্জে।সাথে জেনে আসলাম উত্তরবঙ্গের অন্যতম একজন সাধক কবির জীবনী।
৮টি মন্তব্য ৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হার জিত চ্যাপ্টার ৩০

লিখেছেন স্প্যানকড, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



তোমার হুটহাট
চলে আসার অপেক্ষায় থাকি
কি যে এক ছটফটানি
তোমার ফিরে আসা
যেন প্রিয় কারো সনে
কোথাও ঘুরতে যাবার মতো আনন্দ
বারবার ঘড়ি দেখা
বারবার অস্থির হতে হতে
ঘুম ছুটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবনাস্ত

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৪৪



ভোরবেলা তুমি নিশ্চুপ হয়ে গেলে একদম,
তোমার বাম হাত আমার গলায় পেঁচিয়ে নেই,
ভাবলাম,তুমি অতিনিদ্রায় আচ্ছন্ন ,
কিন্তু এমন তো কখনো হয়নি
তুমি বরফ জমা নিথর হয়ে আছ ,
আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দাদার দাদা।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৫৫

বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী।

আমার দাদার জন্মসাল আনুমানিক ১৯৫৮ সাল। যদি তার জন্মতারিখ ০১-০১-১৯৫৮ সাল হয় তাহলে আজ তার বয়স... ...বাকিটুকু পড়ুন

জেনে নিন আপনি স্বাভাবিক মানুষ নাকি সাইকো?

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:১৮


আপনার কি কারো ভালো সহ্য হয়না? আপনার পোস্ট কেউ পড়েনা কিন্তু আরিফ আর হুসাইন এর পোস্ট সবাই পড়ে তাই বলে আরিফ ভাইকে হিংসা হয়?কেউ একজন মানুষকে হাসাতে পারে, মানুষ তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×