somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমার একটা বউ আছে।

০১ লা জুন, ২০০৮ সন্ধ্যা ৭:২৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমার একটা বউ আছে। আমি তাকে অনেক নামেই ডাকি। কখনও টুনটুনি, কখনও ময়না, কখনও সোনাপাখি, কুত্তা পাখি, আরও কত কি! পাখিটা যখন বিছানায় ঘুমিয়ে থাকে আমার মনে হয় জানালা গলে একখণ্ড আলো বুঝি বিছানায় ছড়িয়ে আছে। ওকে আমি এতো আদর করি, তবু আমার পেট ভরে না। দাঁতে দাঁত চাপতে চাপতে মাথা ধরে যায় কিন্তু সাধ মেটে না। তখন কামড় দই। পাখিটা লাফিয়ে ওঠে। আমাকেও একটা কামড় বসিয়ে দেয়।

একটা মিনিট আমাকে ছাড়া ও থাকতে চায় না। যতণ দূরে থাকি তখন ফোনের বারোটা বাজিয়ে দেয়। আমার কি কোনও কাজ নেই? আমাকে চাকরি করতে হবে না?
তাহলে খাব কী? এসব ও বোঝে না।

সেদিন গেলাম এক বন্ধুর বাসায়। ওকে নিতে খুব লজ্জা লাগছিল। ফ্রেন্ডটা আমার সিনিয়র। কিন্তু সে বিয়ে করেনি। বড়ভাইদের সামনে বউ নিয়ে যেতে কেমন লজ্জা লাগে না! কিন্তু ও যাবেই। ওকে না নিলে আমাকেও যেতে দেবে না। তো কী আর করার গেলাম!

আশরাফ ভাই সোৎসাহে সব ম্যানেজ করলেন। বিকেল থেকে অনেক রাত পর্যন্ত আমরা একাই ছিলাম। যত্তোরকম শয়তানি দুষ্টুমি, গালি প্রতিযোগিতা সব করেছি। আশরাফ ভাইর আসার পর খেয়ে দেয়ে একটু গল্প করতে বসলাম।! ওমা! পাশের রুম থেকে তার সে যে কত রকমের শব্দ! আমি তো বুঝি আমাকে ডাকছে। আমি গেলাম না। শেষে মোবাইলের রিংটোন বাজালো। গলোম , গিয়ে ডস খেলাম।
এরপর যখন আবার ফোন বাজল ফাঁকী না সত্যি তবু গেলাম না। ও এসে ফোনটা ফিক দিয়ে আমার কোলে ফেলে গদগদ করতে করতে চলে গেলো। ফোনটা ছিল ভাইয়ার।

আশরাফ ভাই ডিজাইনের কাজ করছিল। দেখতে দেখতে অনেক সময় কেটে যায়। ওর রুমে যখন যাই তখন ও ঘুমে বিভোর। বিরক্ত না করে আমিও পাশে শুয়ে পড়রাম। একটু পর দেখি আমার গলা টিপে ধরে সেইসব গালি... ...
ওর নিষেধ উপো করে গোসল দিলাম। কারণ ভোরে নামাজ পড়তে হবে। নয়ত আশরাফ ভাই মাইন্ড করবে। তারপর থেকেই গলায় কাশি আর জ্বর। ওতো একটা দুর্দান্ত সুযোগ পেয়ে গেলো। বলিনি... ...
এই দুষ্টু পাজি পাখিটা আমাকেও পাখি বলে ডাকেÑ
 এই, পাখি!
 হু
 শোন না!
 পারমু না।
 আসো না!
 হাইত্তামনো
 আরে ধুর আসোতো!
 ফারবাইম না, কইছি না! হারতাইমনো।
 কিল্লাই আতিনো?
 আঁর ইচ্চা। তোরে ছিল্লাইতাম ন কইছি।
 তোমার এই বিশ্রী ভাষা বন্ধ করবা?
 হ, করবাম।
 আবার?
 খইত্তেছি যে খইত্তেছি।
 তাড়াতাড়ি করো।
 আমার বাসা বালা লাগে না যে? বালা ন লাগে?
 উহ থামবা?
 আইচ্চা, তামি গেলাম, আন্নে ইবার কুশিতো? কুব কুশি?
 কই থামলা..
 অ, একনো তামি নাই যে...?
এইসব ভাষা নিয়ে আমরা মজা করি। ভালো লাগে। আমাদের আঞ্চলিক বাসভূমি এসব অঞ্চলের নয়। আমার জন্ম কুষ্টিয়া, আর ওর জন্ম ফরিদপুর। তবু বিখ্যাত অঞ্চলের ভাষাবৈচিত্র নিয়ে দুষ্টুমি করতে করতে ওসব অঞ্চলের মানুষের সঙ্গে মিশে কিছুটা আয়ত্ত করেছি।...
তারপর ও আল্টিমেটাম দেয়, এই ভাষা না থামালে কামড়ে দেবে। এবং সত্যি সত্যি গালে কামড় দিয়ে ধরে রাখল। আমি হাতপা ছুড়ে চিৎকার করছি। তারপর ছাড়ল। আমিও শোধ নিলাম কামড়ের বদলে কামড়, গালের বদলে গালে। হাতাহাতি পাড়াপাড়ি, একজন আরেকজনের সমস্ত পোষাক খুরে ফেলি,
তারপর.....
তারপর আবার গোসল।
সময়টা এভাবেই কেটে যাচ্ছিল। হঠাৎ কালো মেঘ উঠলো আকাশে। ওর মাসিক বন্ধ! বন্ধ কেন? কয়দিন? এই প্রথম দেখি পরে হবে হয়ত। না একমাস দুমাস তিনমাস মাসিক আর হয় না।.. .. .. ..
অতপর.
সাতমাসে আল্ট্রাসনো করে দেখি আমি ছেলের বাপ হতে চলেছি। ডাক্তার ডেট দিয়েছে ২৪ মে। আমি ওকে বাড়ি চলে যেতে বলি। ও আমাকে ছেড়ে এক পাও নড়ে না। আমি ভয়ে ভয়ে ওর সঙ্গে মিশি না। অনাগত সন্তানকে নিয়েই আমাদের যত কল্পনা। আমরা ভুলে গেলাম আমাদের অস্তিত্ব। আমাদের হাসি-তামাশা, ফুর্তি, ঘুড়ে বেড়ানো, সব থেমে গেলো। কপালে ভাঁজ পড়ে থাকে চিন্তার। কেউ কাউকে মজা করে গালি দেই না। রাতে বিছানায় শুই অতি সন্তর্পণে যেন ওর সঙ্গে ধাক্কা না লাগে। ওর ভেতরের অস্তিত্বটাকে ও আগলে রাখে যতেœ।
অনেক জোরাজুরি করে ওকে বাড়িতে পাঠিয়ে দিয়ে একটু নিশ্চিত হলাম যতেœর ব্যাপারে। কিন্তু প্রতি রাতেই াফিস থেকে ফিরে যখন দেখি বিছানাটা শূন্য, অদম্য কান্নায় বুকটা ভরে ওঠে। অনেক রাত পর্যন্ত টিভির দিকে তাকিয়ে থাকি। বাজে বা অশ্লীল কোনও দৃশ্য চোখে পড়লে চ্যানেল চেঞ্জ করে ফেলি। যদি আমার কোনও বদভ্যাসের প্রভাব আমার সন্তানের উপর পড়ে! অনেক রাত হয়। খুব ইচ্ছেকরে ওকে ফোন দিতে, দেই না। ও হয়ত ঘুমিয়েছে, ঘুম ভাঙলে আর হয়ত ঘুমাতে পারবে না। শরীর খারাপ করবে। বাবুরও তাতে সমস্যা হবে। বরং স্রষ্টার সঙ্গে কথা বলি। তাহাজ্জুদের মাধ্যমে। আর কাঁদি। যেন ওদেরকে আল্লাহ সুস্থ রাখে।
ভেতরে প্রচণ্ড ুধা, একাকিত্বের। মশারীটা না টানিয়ে ঘুমিয়ে পড়ে। বিছানাটা ঝারতে ইচ্ছে করে না। ওর কথা মনে পড়ে। কতদিন থাকতে হবে একা! কমপে ৫মাস? জীবনের শুরুতে এমন বিরহ?
২১টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হাদির হত্যাকান্ড ও সরকারের পরবর্তি করণীয়!

লিখেছেন আহলান, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:৫১

হাদির প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা। সে দেশকে ভালোবেসে, দেশের মানুষকে ইনসাফের জীবন এনে দিতে সংগ্রাম করেছে। তাকে বাঁচতে দিলো না খুনিরা। অনেক দিন ধরেই তাকে ফোনে জীবন নাশের হুমকি দিয়ে এসেছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মব রাজ্যে উত্তেজনা: হাদির মৃত্যুতে রাজনৈতিক পরিস্থিতি অগ্নিগর্ভ

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:৪২

রোম যখন পুড়ছিল নিরো নাকি তখন বাঁশি বাজাচ্ছিল; গতরাতের ঘটনায় ইউনুস কে কি বাংলার নিরো বলা যায়?



বাংলাদেশ প্রেক্ষাপটে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পদটি সবসময় ছিল চ্যালেঞ্জিং।‌ "আল্লাহর... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইন্টেরিম সরকারের শেষদিন : গঠিত হতে যাচ্ছে বিপ্লবী সরকার ?

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:২২


ইরাক, লিবিয়া ও সিরিয়াকে ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করার আন্তঃদেশীয় প্রকল্পটা সফল হতে অনেক দিন লেগে গিয়েছিল। বাংলাদেশে সে তুলনায় সংশ্লিষ্ট শক্তিসমূহের সফলতা স্বল্প সময়ে অনেক ভালো। এটা বিস্ময়কর ব্যাপার, ‘রাষ্ট্র’... ...বাকিটুকু পড়ুন

মব সন্ত্রাস, আগুন ও ব্লাসফেমি: হেরে যাচ্ছে বাংলাদেশ?

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৩:৫২


ময়মনসিংহে হিন্দু সম্প্রদায়ের একজন মানুষকে ধর্মীয় কটূক্তির অভিযোগে পুড়িয়ে মারা হয়েছে। মধ্যযুগীয় এই ঘটনা এই বার্তা দেয় যে, জঙ্গিরা মবতন্ত্রের মাধ্যমে ব্লাসফেমি ও শরিয়া কার্যকর করে ফেলেছে। এখন তারই... ...বাকিটুকু পড়ুন

তৌহিদি জনতার নামে মব সন্ত্রাস

লিখেছেন কিরকুট, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:৫৪




ছবিঃ অনলাইন থেকে সংগৃহীত।


দেশের বিভিন্ন স্থানে সাম্প্রতিক সময়ে ধর্মের নাম ব্যবহার করে সংঘটিত দলবদ্ধ সহিংসতার ঘটনা নতুন করে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। বিশেষ করে তৌহিদি জনতা পরিচয়ে সংঘবদ্ধ হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×