আমার বড় আপুর গত শুক্রবার সন্ধ্যেবেলা সীজার করে একটি সুন্দর মেয়ে হয়েছে। সৃষ্টিকর্তার রহমতে অপারেশন কোন ঝামেলা ছাড়াই সম্পন্ন হয়েছে। অপারেশন থিয়েটার থেকে বেডে নেবার পর অন্য সব রোগীর মত আপুও প্রচন্ড শীতে কাঁপতেছিল। আমরা কম্বল, কাথা দেবার পরও প্রচন্ড কাঁপতে থাকায় আপুর হাতগুলো আমাদের হাতের সাথে ঘষে উষ্ণতা দিয়েছিলাম। তখন আপুর আচরণ বেশ স্বাভাবিক ছিল। প্রকৃতপক্ষে স্বাভাবিক ছিল কিনা বলার চেয়ে এটা বললে সঠিক হবে যে ওর আচরণে কোন প্রকার অস্বাভাবিকতা আমরা পাইনি। শুধু আমরা না ডাক্তাররাও পায়নি। শনিবার দুপুর পর্যন্তু আপু ঘুমিয়েছে। দুপুরবেলা উঠার পর থেকে ওর সাথে কথা বললে ও কোন প্রশ্নই যেমন ঠিকভাবে বুঝতে পারছে না তেমনি ঠিকমত উত্তরও দিতে পারছে না। যেমন- যদি জিজ্ঞাসা করা হয়, তোমার বাবু কোথায়? ও উত্তর দিচ্ছে, কী করব? কিংবা যদি বলি, আপু কখন ঘুম থেকে উঠলি? ও উত্তর দিচ্ছে, খাইছি অথবা যদি বলি, আমি কে বলতো? ওর উত্তর ওইতো। কিন্তু এই ওইতোর পর আর কিছু বলতে পারছে না। ডাক্তাররা সব পরীক্ষা করে বলছে ওর কোন সমস্যা নাই বিশ্রাম নিলেই ঠিক হয়ে যাবে। শনিবার সারাদিন-সারারাত ঘুমিয়েছে কিন্তু অবস্হার কোনই উন্নতি হয়নি।রবিবার সকাল থেকে ডাক্তার (যে অপারেশন করেছিল) বেশ কয়েকবার দেখে ঔষধ দিয়েছিল। তবুও অবস্হা একই রকম। সারাদিন ঘুমিয়েও যখন কোন উন্নতি ডাক্তার পেল না তখন তিনি পরামর্শ দিলেন আরেকটা ডাক্তার দেখাতে। উল্লেখ্যে যে, আমার আপু কুষ্টিয়ার আদদীন হাসপাতালে সীজার হয়েছে। উনি যে ডাক্তারের কথা বললেন তিনি সনো টাওয়ারে রোগী দেখেন। হার্টের ডাক্তার। তিনিও চেকআপ করে একই কথা বললেন "রোগীর কোনো সমস্যা নাই। ব্লাড প্রেসার নরমাল। কয়েকদিন পর এমনিতেই ঠিক হয়ে যাবে।" ডাক্তারের কাছে এমন করার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলছেন হয়তো সে ভয় পেয়েছে কিংবা অত্যাধিক টেনশন। কিন্তু ও বরাবরই খুব সাহসী এবং ওর টেনশন করার কোন কারণ আমরা খুঁজে পাচ্ছি না। এমনি ওর সংসারে কোন অশান্তিও নাই। আবার প্রথম সনোতে ছেলে হবার কথা বললেও দ্বিতীয়বার সনোতে মেয়ে হবার কথাই ডাক্তার বলেছিল। সুতরাং এ সিচুয়েশনের সাথে সে আগে থেকেই নিজেকে মানিয়ে নিয়েছে। তাই এই চিন্তাও তার মস্তিষ্কে এমন প্রভাব ফেলবে তা মনে হয় একটু কঠিনই। তবে ওকে যখন অপারেশন থিয়েটারে প্রবেশ করায় তখন আরেকটা রোগীর অপারেশন করে সেলাই চলছিল। ওই দৃশ্যটা হয়তো মস্তিষ্কে প্রভাব ফেলতে পারে। এখন পর্যন্ত অবস্হা একইরকম। সবসময় ঘুমাচ্ছে। ঘুম থেকে তুলে কিছু খাওয়ানো তারপর আবার ঘুম। আমার খুব চিন্তা হচ্ছে। আপনার যদি কেউ এই ধরণের সিচুয়েশনে পড়ে থাকেন কিংবা কোন রোগীকে এ অবস্হায় দেখে থাকেন কিংবা এ থেকে উত্তরণের উপায় জেনে থাকেন তাহলে বিনীত অনুরোধ আমাকে জানাবেন। আমি জানি এত এত ভালো ভালো পোষ্টের ভেতরে আমার পোষ্টটা বেমানান। আজকে বিজয় দিবসের দিন। সকল শহীদদের প্রতি আমিও নিবেদন করি শ্রদ্ধা আর অর্ঘ্য। বিজয় উল্লাসের উদ্ভাস হয়তো প্রকাশ করতে পারবো না তবে অন্তরে আজকের দিনটির তাত্পর্য পুরোপুরি ধারণ থাকবে। হয়তো আমার এই আবেদনটা হারিয়ে যাবে শত শত শ্রদ্ধান্জলীর কিংবা বিজয়ের আনন্দ উল্লাসের ভেতরে, হয়তো পড়ার পর মনে আক্ষেপ জাগবে কেন পড়লাম, হয়তো অর্ধেকটুকু পড়েই এড়িয়ে চলে যাবেন, কিংবা কুত্সিত লাগবে বাক্যভঙ্গি দেখে, কিংবা পড়েও নীরবে চলে যাবেন। এটাই বাস্তব। এটাকে মেনে নিতেই হবে। তবুও বাস্তবতার এই পর্দাটাকে খুলে ফেলতে না পারলেও একটুখানি মাথা গলিয়ে চোখের পাতা খোলার সাহস করতেই হয়। আমিও করলাম। কেননা আশাই জীবন। সকলের কাছে আবারও অনুরোধ যদি এই অবস্হায় কেউ কোন রোগী দেখে থাকেন এবং কি করা উচিত তা জেনে থাকেন তাহলে প্লিজ জানাবেন।
সকল ব্লগারদের অনুরোধ করছি পোষ্টটি একবার পড়ার জন্য
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
Tweet
৩৩টি মন্তব্য ২টি উত্তর
আলোচিত ব্লগ
আমরা কেন এমন হলাম না!
জাপানের আইচি প্রদেশের নাগোইয়া শহর থেকে ফিরছি৷ গন্তব্য হোক্কাইদো প্রদেশের সাপ্পোরো৷ সাপ্পোরো থেকেই নাগোইয়া এসেছিলাম৷ দুইটা কারণে নাগোইয়া ভালো লেগেছিল৷ সাপ্পোরোতে তখন বিশ ফুটের বেশি পুরু বরফের ম্তুপ৷ পৃথিবীর... ...বাকিটুকু পড়ুন
অভিমানের দেয়াল
অভিমানের পাহাড় জমেছে তোমার বুকে, বলোনিতো আগে
হাসিমুখ দিয়ে যতনে লুকিয়ে রেখেছো সব বিষাদ, বুঝিনি তা
একবার যদি জানতাম তোমার অন্তরটাকে ভুল দূর হতো চোখের পলকে
দিলেনা সুযোগ, জ্বলে পুড়ে বুক, জড়িয়ে ধরেছে... ...বাকিটুকু পড়ুন
আমাদের গ্রামে মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি
২৬শে মার্চের পরে গাইবান্ধা কলেজ মাঠে মুক্তিযুদ্ধের উপর ট্রেনিং শুরু হয়। আমার বড় ভাই তখন ওই কলেজের বিএসসি সেকেন্ড ইয়ারের ছাত্র ছিলেন। কলেজে থাকা অবস্থায় তিনি রোভার স্কাউটে নাম... ...বাকিটুকু পড়ুন
বিকেল বেলা লাস ভেগাস – ছবি ব্লগ ১
তিনটার সময় হোটেল সার্কাস সার্কাসের রিসিপশনে আসলাম, ১৬ তালায় আমাদের হোটেল রুম। বিকেলে গাড়িতে করে শহর দেখতে রওয়ানা হলাম, এম জি এম হোটেলের পার্কিং এ গাড়ি রেখে হেঁটে শহরটা ঘুরে... ...বাকিটুকু পড়ুন
One lost eye will open thousands of Muslims' blind eyes
শিরোনাম'টি একজনের কমেন্ট থেকে ধার করা। Mar Mari Emmanuel যিনি অস্ট্রেলীয়ার নিউ সাউথ ওয়েলসের একটি চার্চের একজন যাজক; খুবই নিরীহ এবং গোবেচারা টাইপের বয়স্ক এই লোকটি যে... ...বাকিটুকু পড়ুন