ছোট ফেনী নদী যুগ যুগ ধরে পেশাজীবিদের পুত্রতুল্য। কৃষকেরা ছোট ফেনী নদীর পানি দিয়ে তারা যেমনি সারা বছর কৃষি আবাদ করে ঘরে ফসল তোলে এবং পরিবার পরিজন নিয়ে খাদ্যের সংস্থান যোগান দিয়ে বাড়তি ফসল বিক্রি করে দেশের খাদ্য চাহিদা পূরন করে। তেমনি নদী পাশ্ববর্তী জেলেরা এই নদী থেকে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করে আসছে যুগে যুগে। অপর দিকে জোয়ারভাটায় পলি মাটি জমে নদীর পাশ্ববর্তী জমিগুলিকে উর্বরতা শক্তি দিচ্ছে। নদী এলাকায় দোফসলী ও তিন ফসলী আবাদে বাম্পার ফলন ফলে। রবি শষ্যও ফলে বেশুমার।
কিন্তু একটি মহল এ পেশাজীবিদের জীবনযাত্রা বাদ সেদেছে। মহলটি “সিন্দুরপুর মৎস্যজীবি সমবায় সমিতি লিঃ”এর ব্যানারে নদীটিতে ডুমুরিয়া ব্লক ফিসারিজ-১এ ৩২.২৫ একর ও ডুমুরিয়া ব্লক ফিসারিজ-এ ২১.১১একর বহমান নদী লীজ নেয়। অণুসন্ধানে জানা যায়, সিন্দূরপুর মৎস্যজীবি সমবায় সমিতি লিঃ কোন প্রকৃত মৎস্যজীবি নেই। জেলা সমবায় অফিস-ফেনী রেজিষ্ট্রেশনের শর্তাবলী পূরনে কোন তদন্ত না করে সমিতিটিকে রেজিষ্ট্রেশন প্রদান করে।
জেলা প্রশাসকের অফিস হতে বহমান ছোট ফেনী নদীটির ৮৪৬, ১৮০, ১৮৮০ অংশ ৮৫৩, ৯৫২ ও ৭৪৪দাগে মোট ৫৩.৩৬একর জলমহাল হিসেব কষে প্রকৃত মৎস্যজীবি সংগঠন হতে ইজারার জন্য ২৫/১১/২০০৯ইং তারিখে বিজ্ঞপ্তি প্রদান করে। বিজ্ঞপ্তিতে ডুমুরিয়া বক ফিসারিজ-১এর জন্য ইজারার ৯৮,৭০০/=টাকা ও ডুমুরিয়া বক ফিসারিজ-২ এর জন্য ৬৩,৩১৫/=টাকা নির্ধারন করে। জেলা প্রশাসকের কার্যালয় (রাজস্ব বিভাগ) হতে ১২৪২ নং স্মারকে ২৩/১২/২০১০ইং (যাহা ভুল) তারিখে ইস্যুকৃত চিঠি দিয়ে সিন্দূরপুর মৎস্যজীবি সমবায় সমিতিকে ৩ বছরের জন্য কার্যাদেশ প্রদান করে। এতে করে হাজার হাজার বিভিন্ন পেশাজীবি পরিবারের উপজীব্য ছোট ফেনীটি বেদখল হয়ে যায়। যারা ব্লক ফিসারিজের জন্য লীজ নিয়েছে তারা ৩/৪ গুন বাড়তি টাকায় অলিখিতভাবে অন্যের নিকট হস্তান্তর করেছে বলে অভিযোগ রয়েছে। তাই ছোট ফেনী নদীর পাশ্ববর্তী গ্রাম শরীফপুর, গৌতমখালী, রাজাপুরঘোনা, বিরলী, ডমুরুয়াসহ অন্যান্য গ্রামের পেশাজীবিরা জীবন জীবিকা অচল হয়ে পড়ায় আজ ফুঁসে উঠেছে।
অভিযোগে জানা যায় এই বহমান নদীকে মরা নদী ঘোষনা দিয়ে একটি মহল প্রশাসন থেকে ব্লক ফিসারিজের জন্য লিজ নিয়ে নদীর বিভিন্ন জায়গায় বাঁধ দিয়ে মাছ চাষের অজুহাত তুলে ছোট ফেনী নদীকে পৈত্রিক সম্পত্তি করে রেখেছে। হতদরিদ্র জেলেরা নদীতে মাছ ধরাতো দূরের কথা গোসল করারও সুযোগ পাচ্ছেনা। জেলেরা এই লীজ বাতিলের জন্য ৪/৩/২০১০ তারিখে জেলা প্রশাসকের বরাবরে আবেদন করে। জেলা প্রশাসক এডিসি ও আরডিসিকে বিষয়টি দেখার দায়িত্ব প্রদান করেন। কিন্তু এপর্যন্ত কোন তদন্তের নমুনাও পাওয়া যাচ্ছেনা বলে জেলেরা জানান। এদিকে জোয়ারের সাথে লোনা পানি ঢুকে এখন কৃষকদের ফসলাদী নষ্ট করছে। যদি ব্লক ফিসারিজের জন্য লীজ নিয়ে থাকলে লোনা পানি ঢুকার দায়ভার কে নিবে? সংশ্লিষ্ট বিভাগে আবেদন নিবেদন করেও সাড়া পাওয়া যাচ্ছেনা। লীজের অণুমোদন ফাইল ডিসি অফিসে পেশাজীবিরা খুঁজে পায় নাই বলে অভিযোগ করে।
জেলে এবং কৃষকেরা জানান, অবৈধ তথ্য দিয়ে ছোট ফেনী নদী লীজ নেয়া বাতিল করে তাদের পরিবার পরিজনের জীবন বাঁচানোর ব্যবস্থা করতে হবে। নচেৎ তারা বৃহত্তর আন্দোলনে যাবে বলে এপ্রতিবেদককে জানায়।
ছোট ফেনী নদীর আওতাধীন ইউনিয়ন ভূমি অফিস দানাইকোটের সহকারী ভূমি কর্মকর্তা আবদুল গোফরান জানান, জেলা সমবায় অফিস কিভাবে ইজারার সমিতিকে রেজিষ্ট্রেশন দিয়েছে তা প্রশ্নবিদ্ধ থাকতে পারে কিন্তু ডুমুরিয়া ব্লক ফিসারিজ ১ ও ২ দীর্ঘদিন যাবত জলমহাল হিসেবে চিহিৃত। কিভাবে চিহিৃত হয়েছে জানতে চাইলে তিনি জানান তা তিনি জানেননা।
স্থানীয় সিন্দূরপুর ইউপি চেয়ারম্যান আমজাদ হোসেন ভূঞাকে সিন্দূরপুর মৎস্যজীবি সমবায় সমিতি লিঃ এ প্রকৃত মৎস্যজীবিদের সংগঠন কিনা জানতে চাইলে না সূচক জবাব দেন।
সিন্দূরপুর মৎস্যজীবি সমবায় সমিতি লিঃ সাধারন সম্পাদক মিলাতের রহমানকে তিনি প্রকৃত মৎস্যজীবি কিনা জিজ্ঞেস করলে তিনি বিষয়টি এড়িয়ে যান।
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই মে, ২০১০ রাত ১২:০৫

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



