হলমার্ক কেলেঙ্কারির রেশ কাটার আগেই শোনা যাচ্ছে নয়া কেলেঙ্কারির আওয়াজ। এবারের ঘটনা বিশেষায়িত রাষ্ট্রায়ত্ত
ব্যাংক বেসিক ব্যাংকে। হলমার্কের সঙ্গে টাকার অঙ্কে হেরফের সামান্যই। এবারের অঙ্ক ৩৫০০ কোটি টাকা। কেলেঙ্কারিতে জড়িয়ে গেছে একটি আলোচিত নাম। তিনি ব্যাংকটির চেয়ারম্যান শেখ আবদুল হাই বাচ্চু। সন্দেহের তালিকায় বাইরে নেই তার ভাই শেখ শাহরিয়ার পান্না-ও। পারিবারিক প্রভাব-প্রতিপত্তিকে কাজে লাগিয়ে ব্যাংকিং আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে লোপাট করা হয়েছে অর্থ। যথাযথ কাগজপত্র ছাড়াই দেয়া হয়েছে বিশাল অঙ্কের ঋণ। এ মেগা দুর্নীতির অনুসন্ধানে গত সপ্তাহে একটি টিম গঠন করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। উপ-পরিচালক জয়নুল আবেদীন শিবলীর নেতৃত্বে গঠন করা হয়েছে ৪ সদস্যের টিম। এ টিম এরই মধ্যে বৈঠক করেছে বলেও জানা গেছে। জনগণের অর্থ আত্মসাৎকারীদের আদ্যোপান্ত বের করার চেষ্টা করছেন দুদকের সদস্যরা। বেসিক ব্যাংকের চেয়ারম্যান, চেয়ারম্যানের ভাই শাহরিয়ার পান্না ছাড়াও ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক কাজী ফারুকুল ইসলাম এবং অন্য পরিচালকরা ক্ষমতার অপব্যবহার করে ঋণ দিয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
সূত্র জানায়, অনিয়মের ব্যাপারে ২০১১ সালের জুন মাসে বেসিক ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদকে চিঠি দিয়েছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার জন্য নির্দেশনাও দেয়া হয়েছিল। কিন্তু রাজনৈতিক চাপের কারণে সে সময় পরিচালনা পর্ষদ কোন ব্যবস্থা নেয়নি। দুদকের অনুসন্ধান টিম ব্যাংকটির গুলশান, শান্তিনগর, দিলকুশা ও রাজশাহী শাখার ঋণের অনিয়ম বিশেষভাবে খতিয়ে দেখছে। ব্যাংকটির গুলশান শাখা থেকে প্রায় ১৬ কোটি টাকার ঋণ বিতরণে অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে। শিপাইর আহমদ গুলশান শাখার ব্যবস্থাপক থাকাকালে এসএম সুহী শিপিং লাইনের নামে ৪৫ কোটি টাকা, এস রিসোর্স শিপিং লাইনের নামে ৬৫ কোটি টাকা, শিপান শিপিং লাইনের নামে ৫০ কোটি টাকা, আমিরা শিপিং লাইনের নামে ৯০ কোটি টাকা, এসএফজি শিপিং লাইনের নামে ৭৫ কোটি ও গ্রিন বাংলা শিপিং লাইনের নামে ১৩০ কোটি টাকা ঋণ দেয়া হয়েছে। শেখ শাহরিয়ার পান্না অনিয়মের মাধ্যমে ৭৩০ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছেন বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে। ব্যাংকটির শান্তিনগর শাখার ১৫০০ কোটি টাকার ঋণ অনিয়মের অভিযোগ অনুসন্ধান করছে দুদক। এই শাখা থেকে নাহার গার্ডেন ২৫ কোটি, মেসার্স অটো ডিফাইন ১৬৩ কোটি, মেসার্স সৈয়দ ট্রেডার্স ২৭ কোটি, নোমান টেক্সটাইল ১১০ কোটি, এরিস্টোক্রেট ৭০ কোটি টাকাসহ আরও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নামে বিশাল অংকের ঋণ জালিয়াতি রয়েছে। ব্যাংকটির চেয়ারম্যান ছাড়াও সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ের দু’ কর্মকর্তা এ শাখা থেকে ঋণ নিয়েছেন বলে জানা গেছে। ব্যাংকটির দিলকুশা শাখা থেকে ১৪০০ কোটি টাকার ঋণ অনিয়ম হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। এর মধ্যে বেলায়েত নেভিগেশনের নামে ৭০ কোটি, আদিব ডায়িং ৫৫ কোটি, ওয়েলটেক্স ৪২ কোটি, ওয়েল সোয়েটার্র্স ২৫ কোটি, বে-নেভিগেশন ৫৫ কোটি, আলোটেক ২৮ কোটি, অ্যাপোলো কনস্ট্রাকশন ৬৫ কোটি ও ইমারেল্ড কোম্পানির নামে ৫৫ কোটি টাকার ঋণে বড় ধরনের অনিয়ম হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। ব্যাংকটির রাজশাহী শাখায় ঋণ বিতরণে অনিয়মের অভিযোগও দুদক কার্যালয়ে এসে পৌঁছেছে। দুদক চেয়ারম্যান ড. গোলাম রহমান সাংবাদিকদের বলেন, বেসিক ব্যাংকের বিষয়ে কিছু অভিযোগ কমিশনে জমা হয়েছে। অনুসন্ধান শুরু হয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদন পাওয়ার আগ পর্যন্ত এ বিষয়ে কোন মন্তব্য করা যাবে না। একটি সূত্র জানিয়েছে, বেসিক কেলেঙ্কারির মূলহোতা এক সময় স্থানীয় পর্যায়ের রাজনীতি করতেন। প্রয়াত রাজনীতিবিদ নাজিউর রহমান মঞ্জুরের অনুসারী ছিলেন। বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলেও ছিলেন আলোচনায়। সে সময় নিজেকে তিনি তৎকালীন সেনাপ্রধান জেনারেল মইন উ আহমেদের ভাইয়ের বন্ধু বলে পরিচয় দিয়ে বেড়াতেন। সে পরিচয়ে অনেক সুযোগ নিয়েছিলেন। মহাজোট সরকার ক্ষমতায় আসার পরও তার প্রভাব-প্রতিপত্তি কমেনি। উল্টো ক্ষমতার আরও কাছাকাছি চলে যান। পারিবারিক প্রভাব-প্রতিপত্তির অপব্যবহারের কারণে এখন আবারও তিনি আলোচনায়।লিঙ্ক