somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

একমুঠো বেকায়দা ভালবাসা

২০ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১১ দুপুর ২:৩১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


ব্লগ নিকঃ বিপ্লবী স্বপ্ন, সামু ব্লগ
আমার কথাঃ আমি অনেক অলস টাইপের মানুষ। আমার খুব খারাপ ধরনের রাগ আর অভিমান আছে। আমি বেকার, এখনও বাবার হোটেলে খাচ্ছি। ছেঁড়া পকেটে বিপ্লব আর আকাশচুম্বী স্বপ্নের মিশেলে আমার জীবন।
লেখাটির পেছনের কিছু কথাঃ এই গল্পের প্রতিটি চরিত্র কাল্পনিক নয়। জীবিত বা মৃত যেকোন ব্যাক্তির সাথে কিঞ্চিত অথবা পুরোপুরি সাদৃশ্য সম্পূর্ণ কাকতালীয় না হলেও হতে পারে।

~ একমুঠো বেকায়দা ভালবাসা ~

‘এই সুমন তোমার মোবাইল নম্বরটা দাও তো’
ভুল শুনলাম নাকি? আমি নাম্বার দিতে ইচ্ছুক কিনা এই মেয়ে সেটার পরোয়াই করল না? সরাসরি চেয়েই বসল? বেকায়দা অবস্থা। এই মেয়েকে তো আমি চিনি না। আমার বন্ধুর বন্ধু। কমার্স কলেজের মাঠে কিছুক্ষণ শুধু বসে ছিলাম সবার সাথে, হয়ত তখন নামটা শুনে থাকবে। আমি সন্দেহের গন্ধ পাচ্ছি। মেয়েদের কাছ থেকে যতটা দূরে থাকা যায় ততই মঙ্গল। এই মেয়েটাকে দেখে অবশ্য সেইরকম কিছু মনে হচ্ছেনা। বিশাল ঢোলা একটা ফতুয়ার সাথে জিন্সের প্যান্ট পরা। কাঁধে একটা ঝোলা টাইপের ব্যাগ। তার চুল নিয়ে একটু আগেই আমার বন্ধুরা যখন ঘোড়ার লেজ বলে ক্ষেপাচ্ছিল তখন সেটাতে সে কিছুটা গর্বিত হল বলেই মনে হল। এসবের মাপকাঠিতে তাকে এই মাঠে বসে থাকা অন্য সব মেয়েদের থেকে আলাদাই মনে হচ্ছে। অবশ্য সন্দেহের কারন ভিন্ন। আমি এমন কোন রাজপুত্তুর ছেলে নই যে হঠাৎ কোন মেয়ে আমার নাম্বার চাইবে। আমার মা-বাবাকে আমার এমনিতেই অনেক ভয়। ‘ঘরপোড়া গরু সিঁদূরে মেঘ দেখলেই ডরায়’- আমার হল সেই অবস্থা। পরে আবার কি ঝামেলায় পড়তে হয় কে জানে! নিজেরই ঘটি-বাটির কোন ঠিক নাই।

আমার নামটাতো জেনেই গেছেন। সদ্য এইচএসসি পাশ করেছি। কোথাও ভর্তি-টর্তি হইনি। ভর্তি পরীক্ষা পেরিয়ে যে চান্স পাব সেই দুরাশাও করছি না। সুতরাং ঢাকা থেকে বাড়িতে ফিরে সারাদিন বন্ধুদের নিয়ে আড্ডা আর বাপের অন্ন ধ্বংস করা ছাড়া কাজ বিশেষ নেই। গতবছর সেপ্টেম্বরে রেজাল্ট দিয়েছে আর এখন জুন মাস। আমার বন্ধুরা অনেকে অনেক জায়গায় ভর্তি হয়ে গেছে। রনি ভর্তি হয়েছে কমার্স কলেজে। সেই সূত্রে আমরা মাঝে মাঝে সকালের দিকে এখানে আড্ডা দিতে আসি।

‘কই নাম্বারটা দাও। তোমাকে মাঝে মাঝে মিস্‌ কল দিলে কি তোমার কোন অসুবিধা আছে?’। ওরে বাবা, এইবার কোথায় যাই? সেই ক্লাশ ফাইভে কম্বাইড্‌ স্কুল ছাড়ার পর কোন মেয়ের সাথে তেমন খাতির হয়নি। সেজন্য আজকাল আর কোন মেয়ের সামনে তেমন সহজ হতে পারি না। কিন্তু এই মেয়ে মনে হয় সহজে ছাড়বে না। কি আর করা! পড়েছি মোঘলের হাতে খানা খেতে হবে সাথে। আমি বিনয়ে গলে যাওয়ার ভান করে বললাম ‘না না না, সে কি কথা? অসুবিধা থাকবে কেন? এই নাও আমার নম্বর জিরো ওয়ান সেভেন...। তুমি মিস্‌ কল দাও, তোমার নাম্বার সেভ করি’। এই মেয়ের নাম কি তা কে জানে! সরাসরি জিজ্ঞেস করলে যদি বলে জানোনা কেন? এই মেয়ের পক্ষে সবই সম্ভব বলে মনে হচ্ছে। তাই একটু টেকনিক খাটিয়ে বললাম, ‘আচ্ছা তোমার নামের বানানটা বল’। মেয়েটি হাসতে হাসতে বলল ‘তিন্নি, আমার নাম তিন্নি’। আমার আবার বেকায়দা অবস্থা।

দুই দিন পর মনে হল, এই মেয়েকে বিনয় দেখাতে গিয়ে ভাল প্যাঁচে পড়া গেছে। সারাসময় খুট খুট করে মিস্‌ কল দিতেই থাকে। এর মাঝে কিছুদিন কমার্স কলেজের দিকে যাওয়া হয়নি। একদিন বিকালের দিকে আমরা সবাই আমাদের রেগুলার চায়ের দোকানে আড্ডা দিচ্ছি। দোকানটার পজিসন বেশী ভাল জায়গায় না। কাছেই একটা ডাষ্টবিন আছে, মাঝে মাঝে উৎকট গন্ধ ছাড়ে। কিন্তু এর একটা ভাল দিকও আছে। নতুন ধূমপায়ীদের ধরা পড়ার সম্ভাবনাটা একটু কম এখানে। এর থেকে সেফ পজিশন আর খুঁজে পাওয়া যায়নি। আরও একটা ভাল দিক অবশ্য আছে, এই রোডে অনেক কোচিং সেন্টার আছে। বিকালের দিকে অপরূপা কিছু মেয়েদের দেখা যায়। তিনটা মেয়ে আছে ওরা রেগুলার আসে, কোচিং সেন্টার থেকে বেরিয়ে হেঁটে হেঁটে এই চায়ের দোকান পর্যন্ত এসে তারপর রিক্সা নেয়। কোচিংয়ের সামনে থেকেই নিতে পারে, কেন নেয়না কে জানে! এদের মাঝে একজন চশমিশ আছে, আমরা তার নাম দিয়েছি ফুলি। এর মাঝে একটা মেয়েকে আবার আমার বন্ধু শাহীনের অনেক পছন্দ হয়েছে। তবে ওই পছন্দ পর্যন্তই, কোন মেয়েকে ডেকে কিছু জিজ্ঞেস করার বুকের পাঁটা আমাদের কারোরই নেই। এখানে যেহেতু বসার কোন ব্যবস্থা নেই, তাই ঠাঁয় দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। দেওয়ালের সাথে হেলান দেওয়া একটা সাইকেলের ক্যারিয়ারের উপর বসে আড্ডা দিচ্ছি। হঠাৎ একটা অপরিচিত নাম্বার থেকে ফোন। একটা মেয়ে। মেয়ের ফোন পেলেই বুকের রক্ত ছলাৎ করে ওঠে।

-কে?
-আরে আমি তিন্নি।
-ও তিন্নি। বল কি খবর?
-আচ্ছা শোন, আমার মোবাইলে টাকা নাই তো তাই আর মিস্‌ কল দিতে পারছি না। তুমি আবার মাইন্ড কোর না কিন্তু। কালকে রিচার্জ করে আবার মিস্‌ কল দিব।
-আচ্ছা, মাইন্ড করছিনা। রিচার্জ কর, তারপরে মিস্‌ কল দিও।

ফোনটা রেখে ভাবতে লাগলাম, তাইতো, আজকে সকাল থেকে তো কোন মিস কল আসেনি। হুম, এই তাহলে কারন। পকেটে টাকা মোটামুটি আছে, রিচার্জ করে দেব নাকি? কিছুক্ষণ দ্বিধাদ্বন্দ্বে ভুগে তারপর ভাবলাম, দেই রিচার্জ করে, পঞ্চাশ টাকায় খুব বেশী ক্ষতি হবে না। কিছুদূর সামনে হেঁটে গিয়ে রিচার্জ করতে গেলাম। যে মিস্‌ কলের জ্বালায় গত কিছুদিন বিরক্ত হয়েছি এবার সেটা শোনার জন্যই মনের ভেতরে আকুলি-বিকুলি টের পাচ্ছি। রিচার্জ করার প্রায় সাথে সাথেই মিস্‌ কল। মনটা কেমন একটা অদ্ভুত আনন্দে ভরে গেল।

কিছুদিন পরের কথা। আজকাল আমরা সকালের দিকে রেগুলার কমার্স কলেজে আড্ডা দেই। আমরা যারা বেকার তারা আগে আগে যাই। রনি, তিন্নি, রুমা, রশীদ ওরা ক্লাশ শেষ করে তারপর আসে। তিন্নির সাথে পরিচয় আরও ভাল করে হয়েছে। ‘তুমি’ থেকে সম্পর্ক ‘তুই’তে উন্নীত হয়েছে। ওর হাব-ভাব ওর পোষাকের মতই অদ্ভুত। আড্ডা দিতে দিতে হঠাৎ করে বলবে ‘এই আমি চলে গেলাম’ তখন আর শত চেষ্টা করেও তাকে ফিরানো যাবে না। মাঝে মাঝে ওকে শহরের নানান রাস্তায় একা একা হেঁটে বেড়াতে দেখা যায়। শহরের যেকোন চায়ের দোকানে গেলেই দেখা যায় সব দোকানদাররা ওকে চেনে, আফা আফা বলে খাতির করে। কোন দোকানের চা কেমন সেটা ওর থেকে বেশী কেউ জানে না।

ও আমাকে মাঝে মাঝে অদ্ভুত সব গল্প বলে। বৃষ্টিতে ভিজে চা খেতে নাকি অনেক মজা। বৃষ্টির ফোঁটাতে নাকি চায়ের পরিমাণ বাড়তে থাকে। আমাকেও কোন এক দিন খাওয়াবে বলে কথা দেয়। আমি মনে মনে প্রমাদ গুনি, দুই ফোঁটা বৃষ্টিতেই আমার ঠান্ডা লেগে যায়, সেই দিন আমার কি হবে কে জানে! ছেলেদের যত কাজে তার বিশাল আগ্রহ। একদিন তার ইচ্ছা হল, রশীদের সাইকেল চালাবে কিন্তু পিছন থেকে সাইকেল ধরে রাখতে হবে। কে ধরে রাখবে? আমাকেই হতে হল বলির পাঁঠা। ও সাইকেল চালাচ্ছে, আমি সেই সাইকেলের ক্যারিয়ার ধরে পিছন পিছন দৌড়ুচ্ছি, আর পুরো কমার্স কলেজের সব ছেলে-মেয়েরা উৎসুক দৃষ্টিতে তাকিয়ে দেখছে। তিন্নির কোন ভ্রুক্ষেপই নেই সেইদিকে। কিন্তু আমার তো বেকায়দা অবস্থা। কিন্তু ওর এইসব পাগলামীর কারণেই আমাদের সময়গুলো কেটে যাচ্ছিল অনেক আনন্দে।

এর মধ্যে আমি ঢাকাতে ভর্তি হয়েছি। প্রথম প্রথম সবার সাথে কথা হত, আস্তে আস্তে সেটা কমতে লাগল। আমারও ব্যাস্ততা বাড়ছে, বাড়ছে পড়াশুনার চাপ। কিন্তু সবকিছু ছাপিয়ে আমার মন পড়ে থাকে কমার্স কলেজের মাঠের কোণটায়, ওই ডাষ্টবিনের ধারের চায়ের দোকানটায়। ক্লাশ না থাকলে ঘরে বসে থাকি। কলেজ লাইফের ভীষণ আড্ডাবাজ এই আমি কেমন যেন যেন ঘরকুনো হতে শুরু করেছি। কিছুই ভাল লাগে না। তিন্নির কথা অনেক বেশী মনে পড়ে, অনেক মিস্‌ করি ওকে। ইচ্ছা করে ফোন দিয়ে কথা বলি। কি মনে করে তাই ভেবে আর ফোন দেইনা। মাঝে মাঝে খুব অভিমান হয় ওদের সবার উপরে। আমাকে ছাড়াই ওরা সবাই কেমন আড্ডা দিয়ে যাচ্ছে, আমাকে সবাই ভুলেই গেছে। এই অভিমানের বশে একদিন তিন্নিকে মেসেজ পাঠালাম একটা। কিছুক্ষণ পর ও নিজেই ফোন করল। কথা হল বেশ কিছুক্ষণ। এর পরে আমি নিজেই ভাবতে লাগলাম, আমি অন্য কাউকে মেসেজ না পাঠিয়ে তিন্নিকে কেন পাঠালাম? আমি কি তবে ওকে পছন্দ করা শুরু করেছি? সর্বনাশ। এমন তো হওয়ার কথা না। প্রেম-ভালবাসায় কোনদিনই তেমন বিশ্বাস নেই আমার। একটা ছেলে সারাজীবন একটা মেয়ের সাথে কিভাবে থাকতে পারে আমি এটাই ভেবে পাই না।

ছুটিতে বাড়িতে এসেছি। ডিসেম্বর মাস। অনেক ঠান্ডা। একদিন ভোর ৬টায় তিন্নির ফোন।
-এই তুই নিউমার্কেট যাবি?
-এত সকালে নিউমার্কেটে কি?
-চা খেতে যাব। আচ্ছা থাক তোর আসা লাগবে না, তুই তো আবার সকালে উঠতে পারিস না। রনিকে ফোন করেছি, ও আসছে নিউমার্কেটে।
আবারও বেকায়দা অবস্থা। আমি জানি ও ইচ্ছা করে আমাকে ফোন করেছে, ও জানে যে আমি না এসে থাকতে পারব না। আমি বললাম, ‘তুই দাঁড়া পিটিআই মোড়ে, আমি আসছি’। এত সকালে বাসার কেউ ওঠেনি। চুপি চুপি তালা খুলে বেরিয়ে পড়লাম। বাবা জানতে পারলে কি হবে কে জানে! মাফ্‌লার-টুপি-জ্যাকেট যা কিছু ছিল তাই কোনমতে মুড়ি দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে পিটিআই মোড়ে আসলাম। কুয়াশায় কিছু দেখা যায় না তার মধ্যে তিন্নি দাঁড়িয়ে। রিক্সা নিয়ে নিউমার্কেট গেলাম। রনিও চলে এসেছে। দেখা গেল কোন চায়ের দোকান তখনও খোলেনি। খুঁজে পেতে একটা পাওয়া গেল যেটাতে মাত্র পানি গরম চড়িয়েছে। তো সেখানেই বসলাম আমরা।
-তোর ব্যাপারটা কি বল তো?
-কি ব্যাপার?
-এই সকালবেলা চা খেতে বের হবার কোন দরকার ছিল? দেখেছিস দোকানও খোলেনি এত সকালে। একটু বেলা হলে তো আমরা এমনিতেই বের হতাম।
-তাতে তোর কি? আমি তো তোকে বললাম যে আসা লাগবে না। তুই তো নিজে নিজে আসলি।
-তাহলে আর আমাকে ফোন করার কি দরকার ছিল? একাই চলে আসতি।
-তোকে এমনি জানানোর জন্য ফোন করেছিলাম, যদি আসতে চাস্‌ এইজন্য। আচ্ছা এর পর থেকে আর কোনদিন ফোন দেব না তোকে।
কি বেকায়দা! ভাল ঝামেলায় পড়া গেল।
-আমি কি তাই বলেছি নাকি? খালি খালি রাগ করিস ক্যান?
-আচ্ছা যা, রাগ করছি না।
-ফোন দিবি না আর আমাকে?
-জানিনা। ভেবে দেখি।
-এইতো তুই রাগ করেছিস। আবার বলিস যে রাগ করিনি।
-আচ্ছা, ফোন দেব। হইছে? এইবার চুপ কর।

এই অবস্থায় চুপ করে যাওয়াই আমার কাছে ভাল বলে মনে হল। কথা বলতে গেলে হিতে বিপরীত হতে পারে। চা খেয়ে এসে আবার চোরের মত বাসায় ঢুকলাম।

আমি এতদিনে বুঝতে শুরু করেছি যে তিন্নিকে আমি পছন্দ করি, কিন্তু ওকে গিয়ে এইটা বলতে গেলে নিজেকে ছোট ছোট লাগবে তাই আর সাহস হয় না। অন্য কোন সম্ভাব্য উপায়ে তিন্নিকে আমার মনের কথাটা বলা যেতে পারে ঠিক বুঝে উঠতে পারছি না। ও যে টাইপের মেয়ে, যদি না বলে বসে শেষে বন্ধুত্বটাও যাবে। এটা ওটা ভাবতে ভাবতে আমার একটা কথা মনে পড়ল। ও আমাকে একবার বলেছিল যে কেউ একজন মাঝে মাঝে কোন অপরিচিত নম্বর থেকে ওকে কল করে কয়েকবার ‘আই লাভ ইউ’ বলে ফোন কেটে দেয়। শেষে একদিন বিকালে মাথায় কি ভর করল আমাদের ল্যান্ডফোন থেকে ফোন করলাম তিন্নিকে। ও হ্যালো বলতেই কয়েকবার ‘আই লাভ ইউ’ বলে ফোনটা রেখে দিলাম। পরদিন সকালবেলা কলেজে আড্ডা দিতে এসে ও আমাদের এই ঘটনাটাই সবিস্তারে বর্ণনা করল। কি ভেবে শেষে আমাকে বলল, ‘আচ্ছা তুই কি আমাকে ফোন দিয়েছিলি নাকি?’। তখন আমি বললাম ‘হুম, দিয়েছিলাম। আমার মোবাইল থেকে।
-না না, অন্য কোন ল্যান্ডফোন নাম্বার থেকে দিয়েছিলি নাকি?
এরপর আমার মাথায় কি আসল আমি জানি না। আমি বললাম ‘আসলে এতদিন ধরে আমিই তোকে ফোন করে ‘আই লাভ ইউ’ বলে ফোন রেখে দেই। তুই যখন জেনেই গেছিস তাহলে তোর উত্তরটা দিয়ে দে।
-দেখ, ফালতু কথা বলবি না।
-ফালতু না, সত্যি কথা।
-যত্তোসব, আমি বাড়ী চলে যাচ্ছি।
সত্যি সত্যি তিন্নি খুব রেগে বাড়ীতে চলে গেল।

পরেরদিনের আড্ডা। সেই একই কথা নিয়ে আলোচনা। আমার বন্ধুরাও এইটা নিয়ে ওকে ক্ষ্যাপানো আরম্ভ করেছে। তোকে হ্যাঁ/না কিছু একটা বলতেই হবে। একটু পরে তিন্নি এবার নিজেই ফাজলামি করতে লাগল এটা নিয়ে। কিছু বললে বলে, আরে আমার উত্তর হ্যাঁ। আমার বন্ধুরা বলে ‘তার মানে কি তুই রাজী?’
-হুম, রাজি।
এইবার আমি কিভাবে হাঁটু গেড়ে তিন্নিকে গোলাপ ফুল দেব সেটাও অভিনয় করে দেখান শুরু হয়। এদিকে আমার মনের মধ্যে ধুকপুক, আমি তো বুঝতে পারছি যে তিন্নি করছে ফাজলামি। আমি পুনরায় বেকায়দায়।

এর দুইদিন পরে তিন্নি গ্রামে গেল ঘুরতে। এইবার আমার আরেক জ্বালা। খালি ওর সাথে কথা বলতে ইচ্ছা করে। ফোন করলে ধরে না, ভাল নেটওয়ার্ক কাভারেজও নাই, মাঝে মাঝে যান্ত্রিক কন্ঠস্বর আমাকে বলে যে মোবাইল বন্ধ। এর মাঝে আবার হাবিবের একটা গান বের হয়েছে- ‘ভালবাসব, বাসব রে বন্ধু তোমায় যতনে’। আমি হেভী মেটাল বাদ দিয়ে সারাদিন বসে বসে এই গান শুনি। অনেকটা দেবদাস জুনিয়র হওয়ার মত অবস্থা। আমি জানুয়ারীর ৪ তারিখ ঢাকা চলে যাব, তার মধ্যে আমার একটা ডিসিশন দরকার। উৎকন্ঠায় বারবার কল করি। শেষে রাতের দিকে ফোন ধরল।

-কি রে ফোন ধরিস না ক্যান?
-কাছে ছিলাম না। কি হইছে বল।
-কিছু না। এমনি। তোরে ফোন করতে করতে আমার আঙ্গুল ব্যাথা হয়ে গেছে। এই শোন আমি ৪ তারিখ চলে যাচ্ছি, তুই আসবি কবে?
- ৪ তারিখ যাচ্চিস ক্যান? ৫ তারিখ তো শুক্রবার। তোর ক্লাশ রবিবারে না?
- হুম, কিন্তু যেতে হবে।
- যা। আমি ৪ তারিখে আসব তাহলে, আমার সাথে তোর আর দেখা হবে না।
-আগে আয় না, এরকম করিস ক্যান?
-আমার সাথে দেখা করতে হলে তুই ৫ তারিখ যাস্‌।
- বাবা টিকিট কেটে ফেলেছে রে, এখন কি করি বল তো। পারলে তো থেকেই যেতাম। তুই একদিন আগে আয় না।
-হুম, বুঝলাম। আচ্ছা, আমি ২ তারিখ আসব তাহলে।

২ তারিখ সকালবেলা। বাস ষ্টপে গিয়েছি ওকে রিসিভ করতে। রিক্সা করে ওর বাসার দিকে যাচ্ছি।

-তুই কি সিরিয়াস?
-হ্যাঁ। হাসতে হাসতে বলল তিন্নি।
-সিরিয়াস হলে হাসছিস কেন?
-আচ্ছা, আর হাসছিনা।

কিছুক্ষন পর।

- তুই কি আসলে সিরিয়াস?
-আমি তো বললাম যে আমি সিরিয়াস।
-তুইতো হাসতে হাসতে বলেছিস।

আমি চরম বেকায়দায়। এমন অবস্থায় জীবনে কোনদিন পড়িনি। কি করব বুঝতে পারছি না কিছুই।

তিন্নির বাসার কাছে এসে পড়ছি। চারপাশের পৃথিবীটা কেমন যেন উলট-পালট লাগছে। এইবার একটা দীর্ঘনিঃশ্বাস ছেড়ে আকুতির স্বরে বললাম, ‘এই তুই কি সিরিয়াস?’

-হ্যাঁ, আমি সিরিয়াস, আই রিয়েলী অ্যাম। গম্ভীর মুখে বলল তিন্নি।

জানুয়ারী ২, ২০১১

ফ্যান ফেয়ার ফার্ষ্ট ফুড কর্ণার।

সুমনঃ কি খাওয়াবি বল!
তিন্নিঃ আমি খাওয়াব মানে? খাওয়াবি তো তুই। চার বছর আগে এই দিনে তোকে ‘হ্যাঁ’ না বললে তো কেঁদেই দিচ্ছিলি।
সুমনঃ এহ, আমি মোটেই কেঁদে দিচ্ছিলাম না। আমার জন্য কত মেয়ে বসে ছিল জানিস?
তিন্নিঃ জানি জানি। সেই জন্যেই তো এতদিনেও আর কোন গার্লফ্রেন্ড জুটল না তোর।
সুমনঃ হেহ, জানিস অপ্সরী নামের ধানমন্ডি গার্লস এর একটা মেয়ে আমাকে ফোন করত। এইরকম আরও আছে, আমি তো খালি তোর কথা ভেবে সবাইকে না করে দেই।
তিন্নিঃ বেশী বাড়তি কথা বলিস না বুঝলি। আমি যে এতদিন তোর গার্লফ্রেন্ড হয়ে আছি সেইজন্য তোর কৃতজ্ঞ থাকা উচিত। যদি মার খেতে ইচ্ছা করে তাহলে ফাউ কথা বলতে থাক।

সুমন চুপ। আবারও বেকায়দা!


১৯-২২শে জানুয়ারী, ২০১১, ঢাকা।

বিঃদ্রঃ গল্পটি সামহয়ারইন ব্লগের ভালবাসা দিবস সংকলন ২০১১ - ভালবাসায় অনুক্ষণ -এ প্রকাশিত।

সংকলনটি ডাউনলোড করতে চাইলে -
মিডিয়াফায়ার থেকে - জিপ ফাইল ( ৮৮৩ কিলোবাইট) - পিডিএফ ফাইল ( ১ মেগাবাইট)
সরাসরি লিঙ্ক - জিপ ফাইল ( ৮৮৩ কিলোবাইট) - পিডিএফ ফাইল ( ১ মেগাবাইট)

সর্বশেষ এডিট : ২০ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১১ দুপুর ২:৪৯
১২টি মন্তব্য ১০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

লালনের বাংলাদেশ থেকে শফি হুজুরের বাংলাদেশ : কোথায় যাচ্ছি আমরা?

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:১৪



মেটাল গান আমার নিত্যসঙ্গী। সস্তা, ভ্যাপিড পপ মিউজিক কখনোই আমার কাপ অফ টি না। ক্রিয়েটর, ক্যানিবল কর্পস, ব্লাডবাথ, ডাইং ফিটাস, ভাইটাল রিমেইনস, ইনফ্যান্ট এনাইহিলেটর এর গানে তারা মৃত্যু, রাজনীতি,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমেরিকার গ্র্যান্ড কেনিয়ন পৃথিবীর বুকে এক বিস্ময়

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৪১


প্রচলিত কিংবদন্তি অনুসারে হাতে গাছের ডাল আর পরনে সাধা পোশাক পরিহিত এক মহিলার ভাটাকতে হুয়ে আতমা গ্র্যান্ড কেনিয়নের নীচে ঘুরে বেড়ায়। লোকমুখে প্রচলিত এই কেনিয়নের গভীরেই মহিলাটি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি! চুরি! সুপারি চুরি। স্মৃতি থেকে(১০)

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৩৪


সে অনেকদিন আগের কথা, আমি তখন প্রাইমারি স্কুলে পড়ি। স্কুলে যাওয়ার সময় আব্বা ৩ টাকা দিতো। আসলে দিতো ৫ টাকা, আমরা ভাই বোন দুইজনে মিলে স্কুলে যেতাম। আপা আব্বার... ...বাকিটুকু পড়ুন

যেকোন বাংগালীর ইন্টারভিউর সময়, 'লাই-ডিটেক্টটর' যোগ করে ইন্টারভিউ নেয়ার দরকার।

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৫ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:০৭



আপনার এনলাকার এমপি, প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী কামাল সাহেব, যেকোন সেক্রেটারী, যেকোন মেয়র, বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান, বিএনপি'র রিজভী, আওয়ামী লীগের ওয়ায়দুল কাদের, আপনার থানার ওসি, সীমান্তের একজন বিজিবি সদস্য, ঢাকার... ...বাকিটুকু পড়ুন

তাবলীগ এর ভয়ে ফরজ নামাজ পড়ে দৌড় দিয়েছেন কখনো?

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:২৬


আমাদের দেশের অনেক মসজিদে তাবলীগ এর ভাইরা দ্বীন ইসলামের দাওয়াত দিয়ে থাকেন। তাবলীগ এর সাদামাটাভাবে জীবনযাপন খারাপ কিছু মনে হয়না। জামাত শেষ হলে তাদের একজন দাঁড়িয়ে বলেন - °নামাজের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×