somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

একটি সহজপাচ্য বুর্জোয়া-প্রলেতারিয়েত প্রসঙ্গ

২৫ শে জুলাই, ২০১২ রাত ১০:২২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

পৃথিবীর সব ক্ষেত্রেই একটা বুর্জোয়া আর প্রলেতারিয়েত শ্রেণীর উদ্ভব হয়। প্রসেসটা শুরুর সাথে সাথে হয়ত হয় না, সময়ের সাথে সাথে হয়।

প্রথমে সবচেয়ে পুরানো সংগঠন পরিবারের দিকে দেখা যাক। বিয়ের পরে প্রেম ভালবাসার প্রাথমিক আবেগটা শেষ হয়ে যাবার পরে বউ পিটানো অথবা যৌতুক আকাঙ্খী পুরুষ হয়ে ওঠে পরিবারের ভেতরকার বুর্জোয়া শ্রেণী, স্ত্রীটি এই ক্ষেত্রে হয়ে যায় প্রলেতারিয়েত। আবার স্ত্রীটি বড়লোক বাপের মেয়ে অথবা দজ্জাল টাইপের হলে ঘটনা হয় বিপরীত।

আরেকটা ডাইমেনশন দেখা যাক। ধরা যাক, আমার একটা জমি আছে। আমি এক বস্তির সর্দারকে সেইটা ইজারা দিলাম। সে সেইখানে একটা বস্তি খুলে বসল। এখন সেই বস্তিবাসীর কাছে সর্দার হল বুর্জোয়া শ্রেণী আর বস্তিবাসীরা হল প্রলেতারিয়েত। আবার সেই সর্দারের কাছে আমি বুর্জোয়া আর সে নিজে প্রলেতারিয়েত। এইটা একটা লেয়ার্ড শ্রেণীবিভাজন। এর মধ্যম শ্রেণী, যারা ক্ষেত্রবিশেষে বুর্জোয়া এবং প্রলেতারিয়েত উভয়ই হতে পারে, তারা হল একটা সুবিধাবাদী শ্রেণী। এরা উপরের বুর্জোয়াদের থেকে যতই শোষিত হবে এরা ততই এদের নীচের প্রলেতারিয়েতের উপর শোষণ বাড়াতে থাকবে। নিজের লাভটা এরা ঠিকই কড়ায় গন্ডায় উঠিয়ে নেবে। এর ফলাফল হিসেবে টপ লেভেল বুর্জোয়ারা বড়লোক থেকে আরও বড়লোক হতে থাকে, অপরদিকে লোয়ার লেভেল প্রলেতারিয়েতরা দরিদ্র থেকে নিঃস্ব হয়ে যেতে থাকে। তাই হয়ত বুর্জোয়াদের বিরুদ্ধে বেশীরভাগ সমতাবাদী আন্দোলন এই লোয়ার লেভেল প্রলেতারিয়েতদের থেকেই আরম্ভ হয়েছে।

সমাজের শুরু থেকেই লিঙ্গ বিভাজনের ভিত্তিতে পুরুষ নামক বুর্জোয়া শ্রেণীর উত্থান হয়েছে, নারীদের স্থান হয়েছে প্রলেতারিয়েত হিসেবে। প্রথম থেকেই এই বুর্জোয়ারা শিক্ষা-দীক্ষা, সাহিত্য, সুবিধা সবকিছু নিজের কুক্ষিগত করেছে, আর শূণ্য করে রাখা হয়েছে প্রলেতারিয়েত শ্রেণীটিকে। বুর্জোয়া সমাজের সৃষ্ট কিছু ম্যাকানিজম আছে। এইগুলা ব্যাবহার করে মানুষের বিশ্বাসকে পুঁজি করে যুগ যুগ ধরে এই শ্রেণী বিভাজনটাকে প্রকটভাবে জিইয়ে রাখা হয়েছে। প্রলেতারিয়েতরা এই বিভাজন যতটুকু ভাঙ্গতে পেরেছে তা সম্ভব হয়েছে অসাধারণ চিন্তাশীল কিছু সদস্যদের দৃঢ়চেতা মনোভাবের কারণে। কিন্তু দীর্ঘকাল এই শ্রেণীবিভাজনের মধ্যে বেঁচে থেকে এই শ্রেণীটি অসম্ভব রকম নতজানু হয়ে পড়েছে। এদের আনুগত্য এমন পর্যায়ে পৌঁছে গেছে যে এরা নিজেরাই নিজের অজান্তে বুর্জোয়াদের পক্ষে কথা বলে যায়। এদের বড় একটা অংশই এই প্রলেতারিয়েত শ্রেণী হয়ে বেঁচে থাকাটাকে নিজেদের নিয়তি বলে স্বীকার করে নিয়েছে। এই বিভাজন ভাঙ্গতে আন্দোলনের সাহায্যে যে শক্ত আঘাত করা প্রয়োজন সেটা করার শক্তিটাও তারা হারিয়ে ফেলছে প্রতিদিন। আধুনিক যুগে বুর্জোয়া শ্রেণীর সমতাবাদী বেশকিছু সদস্য এই বিভাজন ভেঙ্গে সমতা আনয়নে আগ্রহী। কিন্তু তারা কোনদিনই সফল হবে না যতদিন না এই ক্রমনিঃস্ব হতে থাকা প্রলেতারিয়েতরা তাদের নিজের অধিকার নিজেরাই আদায় করে নিতে শিখবে। চে গুয়েভারা বলেছিলেনঃ “I am not a liberator. Liberators do not exist. The people liberate themselves.”

[শেষকথাঃ বুর্জোয়া-প্রলেতারিয়েত শ্রেণীবিভাজনের কনসেপ্টটা মূলত অর্থনৈতিক বৈষম্যকে বুঝায়। আমি ব্যাপারটিকে শোষক আর শোষিতের রূপক হিসেবে দেখিয়েছি। এর মধ্যে সমাজতন্ত্রের কোন জটিল তত্ত্ব খোঁজার চেষ্টা না করলেই ভাল।]

২৫শে জুলাই, ২০১২, ঢাকা।
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে জুলাই, ২০১২ রাত ১১:১৭
১৪টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

লালনের বাংলাদেশ থেকে শফি হুজুরের বাংলাদেশ : কোথায় যাচ্ছি আমরা?

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:১৪



মেটাল গান আমার নিত্যসঙ্গী। সস্তা, ভ্যাপিড পপ মিউজিক কখনোই আমার কাপ অফ টি না। ক্রিয়েটর, ক্যানিবল কর্পস, ব্লাডবাথ, ডাইং ফিটাস, ভাইটাল রিমেইনস, ইনফ্যান্ট এনাইহিলেটর এর গানে তারা মৃত্যু, রাজনীতি,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমেরিকার গ্র্যান্ড কেনিয়ন পৃথিবীর বুকে এক বিস্ময়

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৪১


প্রচলিত কিংবদন্তি অনুসারে হাতে গাছের ডাল আর পরনে সাধা পোশাক পরিহিত এক মহিলার ভাটাকতে হুয়ে আতমা গ্র্যান্ড কেনিয়নের নীচে ঘুরে বেড়ায়। লোকমুখে প্রচলিত এই কেনিয়নের গভীরেই মহিলাটি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি! চুরি! সুপারি চুরি। স্মৃতি থেকে(১০)

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৩৪


সে অনেকদিন আগের কথা, আমি তখন প্রাইমারি স্কুলে পড়ি। স্কুলে যাওয়ার সময় আব্বা ৩ টাকা দিতো। আসলে দিতো ৫ টাকা, আমরা ভাই বোন দুইজনে মিলে স্কুলে যেতাম। আপা আব্বার... ...বাকিটুকু পড়ুন

যেকোন বাংগালীর ইন্টারভিউর সময়, 'লাই-ডিটেক্টটর' যোগ করে ইন্টারভিউ নেয়ার দরকার।

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৫ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:০৭



আপনার এনলাকার এমপি, প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী কামাল সাহেব, যেকোন সেক্রেটারী, যেকোন মেয়র, বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান, বিএনপি'র রিজভী, আওয়ামী লীগের ওয়ায়দুল কাদের, আপনার থানার ওসি, সীমান্তের একজন বিজিবি সদস্য, ঢাকার... ...বাকিটুকু পড়ুন

তাবলীগ এর ভয়ে ফরজ নামাজ পড়ে দৌড় দিয়েছেন কখনো?

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:২৬


আমাদের দেশের অনেক মসজিদে তাবলীগ এর ভাইরা দ্বীন ইসলামের দাওয়াত দিয়ে থাকেন। তাবলীগ এর সাদামাটাভাবে জীবনযাপন খারাপ কিছু মনে হয়না। জামাত শেষ হলে তাদের একজন দাঁড়িয়ে বলেন - °নামাজের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×