মেয়েদের পড়ার সুবাদে আমার দার্জিলিং যাওয়া হয়েছে অনেকবার।এক কথায় দার্জিলিং আমার ভাত বাড়ী হয়ে গিয়েছিল। আমি এখান থেকে মেয়েদের জন্য ভাঁপা পিঠেও করে নিয়ে গিয়েছি। প্রতিবারই যাওয়া আসার পথে একটি শব্দ আমাকে আচ্ছন্ন করে তুলতো। সেটি হলো ঝিক ঝিক হু…..। টয় ট্রেন।
আরও যখন জানতে পারণলাম এটি এখন ভারতের হেরিটেজ। কয়লা চালিত ইজ্ঞিন এটিই আছে। তখন এই ট্রেনে চড়ার উতসাহ আরো বেড়ে গেল।কার্শিয়ং থেকে দার্জিলিং যাবো।
সাল এবং তারিখ আমার মনে নেই। সেপ্টেম্বর মাসের শেষে দিক ছিল্। সারাদিন প্রচন্ড বৃষ্টি। এত বৃষ্টি যে বাইরে বের হয়ে হোটেলে খেতে যেতে পারলাম না।শুকনো খাবার যা সাথে ছিল তাই খেয়ে রাত কাটাতে হলো। তার উপর ইলেক্ট্রিসিটি ফেল করলো। তাই মোমের আলোতে রাত পার করলাম। পরদিন সকালে ট্রেনে চড়বো একটা চাপা উত্তেজনা কাজ করছিল।
সকাল ৬ টায় ট্রেন। তাই বৃষ্টি আর মানা গেল না। স্টেশনে এলাম। যাত্রী আমরাই কেবল।সকাল ৭টায় ট্রেন ছাড়লো।
সফর সংগী বেবী আপা(টুনটুনের সহপাঠি চন্দ্রিকার মা), বেবী আপার বান্ধবী ডেইজী আপা, ডেইজী আপার সংগী মেয়েটির নাম মনে নেই।আর ছিলেন লতিফা আপা(প্রফেসর লতিফা আকন্দ।)
পাহড়ের ঝোপঝারের মধ্যে দিয়ে এঁকে বেঁকে ট্রেন চলতে লাগলো।ঝিক ঝিক হু….হু।
একটি করে পাহাড় দেখে আর লতিফা আপা বলেন এই পাহাড়েই সম্ভবত আমাদের বাড়ী ছিল। আমরা কলকাতায় পড়তাম।(উনি লেডি ব্রাবোন কলেজের ছাত্রী ছিলেন)। গরমের সময় ছুটি কাটাতে এখানে আসতাম। দেশ ভাগের পর ঢাকাতে স্থায়ী হলে বাবা এই বাড়ীটি বেঁচে দেন।
আপার স্মৃতি কথা শুনতে শুনতে হঠাত তাকিয়ে দেখি শাড়ী কাপড় কয়লার কুচিতে ঢেকে গেছে। এরই মধ্যে ট্রেনও থেমে গেছে জল আর কয়লা নিতে। ডেইজী আপা ব্যগের ভিতর থেকে বাদাম, চিপস আর কেক বের করে দিল। সকালের নাশতটা করে নিলাম।
হু ঝিক ঝিক ট্রেন আবার চলছে। এবার খুব চা খেতে ইচ্ছে হলো। ট্রেন ততক্ষনে আবার জল আর কয়লা নিতে লাগলো। আমরা নেমে গেলাম। পাশের এক খুপড়ী দোকানে গরম চা খেয়ে এসে আবার ট্রেনে চাপলাম।
ট্রেন চলেছে বাতাসিয়া লুপ দিয়ে। কি যে রোমাঞ্চকর অনুভূতি তা শুধু অতি আপন জন কাছে থাকলেই অনুভব করা যায়্। একদল স্কুল ছাত্র এরই মধ্যে চলন্ত ট্রেনে উঠে পড়লো। একটু পরে আবার স্কুলের কাছে আসতে চলন্ত ট্রেনেই নেমে গেল।
ধোয়া উড়িয়ে ট্রেন চলেছে। কখনও রোদ কখনও বৃষ্টি,কখন্ও মেঘ আর ঝোপ ঝাড় আর পাহাড়ের কোল ঘেষে আলো র্ছায়া অতিক্রতম করে আমরা যাচ্ছি দার্জিলিং এ।
প্রচন্ড শীতে পা জমে যাচ্ছে। ঠিক করলাম মোজা কেনা দরকার। অমনি দোকান দেখে নেমে পড়লাম। সামনেই স্টেশন ঘুম। ট্রেন থেমে গেল। তার ক্ষুদা লেগেছে।জল এবং কয়লা নেবে।
আমরা নতুন মোজা পড়ে খানিকটা হেঁটে ঘুম স্টেশনে এসে ট্রেনে উঠলাম।টুনটুন বলে দিয়েছিল ঘুম স্টেশনে ঘুম এসে যাবে। ঘুম আসে নি। তবে শুন শান একটা নীরবতায় প্রাণটা আনচান করে উঠেছে।
বেলা ১১.৩০ মিনিটে আমরা দার্জিলিং পৌঁছালাম।
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ সকাল ১০:০১