আব্রাহাম লিংকন সাধের গণতন্ত্রকে সংজ্ঞায়িত করেছিলেন..
"Democracy is a government of the people, by the people and for the people”
গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ব্যবস্থা জনগনের বাকস্বাধীনতা সহ সকল প্রকার নাগরিক অধিকার নিশ্চিত করে।
রাষ্ট্র তথা সরকার তার সিদ্ধান্ত ও সকল প্রকার পদক্ষেপের জবাবদিহীতা জনগনের সামনে উপস্থিত করবে, গণতন্ত্র এমনই একটি শাসন ব্যবস্থা!
এইতো গত বছর জানুয়ারির কিছু আগেও বড় এক শিকলে আবদ্ধ ছিলো গণতন্ত্র!!
পথে ঘাটে সন্ত্রাস কমে গিয়েছিলো, মানুষ নিশ্চিন্তে সন্ধ্যার পর একা পথে চলতো, চাঁদাবাজরা হঠাৎ কোথায় সরে পরায় দোকানী আর ব্যবসায়ীরা কেমন আয়েশ করে ব্যবসায় মেতে ছিলো.. ঐ যে দেশের শেষ সীমানাটা যেখানে.. একদল শোসক সেখানে এমন এক বেয়ারা পাহারা বসিয়ে দেয় যে চোরাচালানীরা অতীষ্ট হয়ে সেই পাহারাদারদের উপর ক্ষেপে উঠে.... ঢাকার পথে ঘাটে মাস্তানের সংখ্যা প্রায় আশংকাজনক ভাবে হ্রাস পায়...
আর এসবের সাথে যোগ হয় একদলের দীর্ঘশ্বাস আর হা্হাকার.. “হায় গণতন্ত্র! কোথায় গণতন্ত্র!!!”
সত্য কথা.. সন্ত্রাস হ্রাস পেতে পারে, দেশের মানুষ নিশ্চিন্তে কটা দিন ঘুমোতে পারে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্রছাত্রীরা অস্ত্র ছেড়ে হঠাৎ খাতা কলম নিয়ে মেতে উঠতে পারে, অভিভাভবকরা নিশ্চিন্তে আবার সোনালী দিনের স্বপ্নে বিভোর হতে পারেন... কিন্ত গণতন্ত্র তো শৃংখলাবদ্ধ!!! কুচক্রী সরকার গণতন্ত্রের সকল মানস কন্যা ও পুত্রদের শ্রীঘরে পাঠিয়ে তাদের অঢেল সম্পদের হিসেব চাইবার মতো ধৃষ্টতা পর্যন্ত দেখিয়েছে...
অবশেষে.. অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে. টিন চুরির অপবাদে দুষ্ট গণতান্ত্রিকদের বাদ দিয়ে দেশের মানুষ ভোটাধিকার প্রয়োগ করে গণতন্ত্রকে মুক্ত করে আনে...
আনন্দের সাথে শুরু হয় হোলি খেলা.. এই খেলায় রং এর মতো তুচ্ছ জিনিস নয়.. বরং টাটকা রক্তের আবীর মেখে রাঙ্গানো হয় সময়...
এই মুক্তির কয়েক সপ্তাহ পর কুলাঙ্গার সেসব পাহারাদারদের হত্যা করে, ভাতৃপ্রতীম বন্ধু রাষ্ট্রের সাথে সীমানা প্রায় মিটিয়ে আমরা বন্ধুত্ব জোরদার করি। গণতন্ত্র আমাদের সে সৌভাগ্য এনে দেয়!
গণতন্ত্রের অসীম শক্তি বলে শিক্ষা প্রতষ্ঠিানগুলোতে কলম মতো ঠুনক জিনিস ছেড়ে শুরু হয়ে যায় পেশী শক্তির লড়াই...
প্রিয় গণতন্ত্র আমাদের হল দখলের যুদ্ধ দেখার আনন্দ এনে দেয়।
গণতন্ত্র বলে এদেশের মানুষের নিরাপত্তা সম্পূর্ণ বিলুপ্ত হলেও বিশেষ পরিবারের আজীবনের আর বিশেষ দলের ৫ বছরের নিরাপত্তা নিশ্চিত হয়!!
কাংক্ষিত গণতন্ত্র এনে দেয় শোকের নামে বিকৃত চর্চা..
প্রিয় গণতন্ত্র বলে শুরু হয় প্রতিহিংসা আর ক্ষমতার দাপটে যাকে তাকে হেনস্থা...
প্রিয় গণতান্ত্রিকের হাতে বাংলাদেশের মানুষ হারায় বাক স্বাধীনতা!
গণতন্ত্র বলে কথা.. ক্ষমতাসীনের কুলাঙ্গার সন্তানরা লুটে নেয় মানুষের ঘর, জমি, ব্যবসা আর মেরুদন্ডের জোর!
অনেক স্বপ্ন নিয়ে কষ্টার্জিত অর্থে দরিদ্র বাবা মা কলম হাতে যে সন্তানকে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে পাঠিয়েছিলেন, গণতন্ত্রের উপহার স্বরূপ পেয়ে যান পুত্রের লাশ!
তাতে কি.. এমন তো হতেই পারে, এটা কোন ব্যাপার না!!
জনসংখ্যার ভারে নুয়ে পড়া দেশে এমন দু চারজন মারা গেলে মন্দ নয়, কোন এক পরিবারের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা আছে!!
আহা গণতন্ত্র!
"Of the People, By the People, For the People...”
সংজ্ঞা আজ পাল্টেছে সোনার বাংলায়.. হয়েছে..
“Of the Party, By the Party, For the Party!!!”
নতুন যুগ, নতুন সময়... সংজ্ঞাটি আরেকটু ঘষামাজা করে বর্তমানে নতুন রূপ ধারন করেছে..
“Of the Family, By The Family, For the Family”
গণতন্ত্র মানে আত্মজার ক্ষমতায় আরোহন
গণতন্ত্র মানে স্ত্রী পুত্রের গদি দখল
গণতন্ত্র মানে ক্ষমতাসীনের সন্ত্রাস আর লুটপাট
গণতন্ত্র মানে রাষ্ট্র প্রধানের পরিবারের চোটপাট
গণতন্ত্র মানে স্বৈরাচারের মুখে বিজয়ের হাসি
গণতন্ত্র মানে নিরীহ জনতার স্বাধীনতায় ফাঁসী
গণতন্ত্র মানে হল দখল, সন্ত্রাস আর চাঁদাবাজী
গণতন্ত্র মানে ছাত্রদের কলম ছেড়ে বন্দুক আর বারুদবাজী
গণতন্ত্র মানে হারিয়ে ফেলা বাক স্বাধীনতা
গণতন্ত্র মানে ক্ষমতাসীনের শুধুই পদলেহিতা।
আমার পূর্বপুরুষের রক্তের বিনিময়ে, প্রাণের বিসর্জনে অর্জিত স্বাধীনতা আর মুক্তিযুদ্ধ আজ শুধু ক্ষমতালোভীর ফেরি করে ফেরা পণ্য মাত্র।
ক্ষমতালোভী ক্ষুধার্ত শকুনীর পাল আজ খামচে ধরেছে দেশের মানচিত্র, কুলুপ এঁটে দিয়েছে মানুষের মুখে। তাদের নোংরা নখরে ক্ষত বিক্ষত ধর্ষিতা মাতৃভূমি।
সরকারের তোষামোদ না করলে গুড়িয়ে দেয়া হয় সংবাদিকের কলম, ছিনিয়ে নেয়া হয় বাকস্বাধীনতা! তাই, বন্ধ হয়ে যায় চ্যানেল ওয়ান!
বন্ধ হয়ে যায় ফেসবুক।
বন্ধ হয়ে যায় “আমার দেশ” দৈনিক সংবাদপত্র।
অতঃপর.. বর্তমান বাংলাদেশে এই আমাদের গণতন্ত্র!!!!!