somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

একজন খুনি যদি বুঝতে পারতো কোপ মারা object টাও আসলে তার মতই একজন মানুষ!

০৩ রা নভেম্বর, ২০১৫ সকাল ৮:২৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমাদের দেশে বৃষ্টি বাদলার দিনে আমি শেষ কবে ছাতা ব্যবহার করেছিলাম মনে করতে পারছিনা। এমনকি বাড়ি ফেরার পথে যখন ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি আসতো, আমি তখন রিক্সার হুড ফেলে দিয়ে বৃষ্টি উপভোগ করতাম।
আমার বাবা টেনশনে ব্লাড প্রেসার বাড়িয়ে ফেলতেন।
"বৃষ্টিতে ভিজলে মাথা ব্যথা করবে। জ্বর আসবে। নিউমোনিয়া হবে। মাথা মুছ! ভাল করে মাথা মুছ!"
সেই বয়সে আমার নিজেকে ওয়াটার রেজিস্ট্যান্ট মনে হতো। বাংলার জেলে-মাঝিদের মতন বৃষ্টি বাদলায় আমার শরীরে কোন রোগ বালাই বাসা বাঁধতে পারতো না। তবু পিতার মন রক্ষা করতেই অনিচ্ছা সত্বেও মাথায় তোয়ালে ঘসতাম। এবং তারপরেও তাঁর আতংকের সমাপ্তি ঘটতো না।
"কী দরকার শুধু শুধু বৃষ্টিতে ভেজার? শহরের বৃষ্টি মানে জানো? এসিড রেইন! চামড়ায় পড়লে চামড়া ঝলসে যায়।"
আমার মায়ের আতংক ছিল আরেকটু বেশি।
"খবরদার! বৃষ্টিতে বাইরে হাঁটাহাঁটি করবেনা। মাথায় বাজ পরলেই কিন্তু সব শেষ!"
মাকে কয়েকবার বলেছিলাম যে সাধারনত উঁচু স্থানে বাজ পরে, এবং রাস্তায় আমার আশেপাশে যেহেতু অনেক উঁচু উঁচু বাড়িঘর, ল্যাম্প পোস্ট এবং গাছপালা থাকে, সেহেতু আমার মাথায় বাজ পরার সম্ভাবনা কম।
তবু মায়ের আতংক দূর হয়না।
এখন নিজে বাবা হয়েছি, নিজে বুঝি সন্তান অসুস্থ হলে কেমন লাগে।
আমার ছেলেটা গত কয়েকদিন ধরে অসুস্থ। সর্দি হয়েছে, সেই সাথে কাশি। নিয়ে গেলাম ডাক্তারের কাছে, মহিলা নানান পরীক্ষা করে বললেন, "আতংকিত হবার কিছু নেই। এইসব অতি সাধারণ ব্যপার। তাঁর লাংস পরিষ্কার আছে, এই সর্দি আপনাতেই সেরে যাবে। যদি জ্বর আসে, বা শ্বাসকষ্ট হয়, তখন আমাদের কাছে এসো।"
অ্যামেরিকায় থাকার একটা যন্ত্রণা হচ্ছে, এখানে একবার ঠান্ডা লেগে গেলে কয়েক সপ্তাহেও সারে না। ওষুধ খেতে হয়। এত ছোট বাচ্চার জন্য কোন ওষুধ নেই। ডাক্তার বলেছেন, "সময় লাগবে, কিন্তু আপনাতেই সারবে। চিন্তার কিছু নেই।"
কিন্তু পিতার মন কী এত সহজে মানে?
মাঝরাতে বাবুর একটু উহ আহ শব্দেই লাফ দিয়ে উঠি। ঘুমন্ত মুখে চুমু খাই। পৃথিবীতে সব যন্ত্রণা সহ্য করা যায়, সন্তানের কষ্ট নয়। এখন বুঝি কেন আমার বাবা প্রতিদিন আল্লাহর কাছে এই দোয়া করতেন যে, "আমার ছেলেমেয়েকে যে রোগ দিবে, সেটা তুমি আগে আমাকে দিও।"
আমি জানি আমার বাবা একজন অসাধারন বাবা ছিলেন। আমি এও জানি, পৃথিবীতে সব বাবাই অসাধারন হয়ে থাকেন।
কাজেই, একটা বাবা যখন তাঁর সন্তানকে ফোন করে পান না, এবং তাঁর সন্ধানে তাঁর অফিসে গিয়ে দেখেন অফিস তালাবন্ধ, এবং তারপর মহা আতংকিত মন নিয়ে লোকজনের সাহায্যে অফিসের দরজা ভেঙ্গে ছেলের রক্তাক্ত দেহ উদ্ধার করেন - হয়তো তখন সেই পিতা মনে মনে বলেন, "হে ঈশ্বর! যদি এটি দুঃস্বপ্ন হয়ে থাকে তবে তুমি আমার উপর করুনা কর! আমার ঘুম ভাঙ্গাও!"
তাঁর ঘুম ভাঙ্গেনা। দুঃস্বপ্ন দীর্ঘায়িত হয়। তাঁকে ফোনে বলতে হয়, "কারা যেন আমার ছেলেকে মেরে ফেলেছে। পুলিশ লাশ নিয়ে গেছে।"
তাঁকে এও বলতে হয়, "আমি আমার সন্তান হত্যার বিচার চাই না। তাঁর খুনিদের শুভবুদ্ধির উদয় ঘটুক, তাতেই চলবে।"
একজন খুনি যদি বুঝতে পারতো কোপ মারা object টাও আসলে তার মতই একজন মানুষ! তারও বাড়ি ফেরার প্রতিক্ষায় কেউ একজন না খেয়ে বসে থাকে। তারও সামান্য সর্দি কাশি হলে তার বাবা মায়ের রাতের ঘুম হারাম হয়। এবং তারও কাঁধে পৃথিবীর লালনকর্তা এক বা একাধিক শিশুকে পালন করে মানুষের মতন মানুষ করার দায়িত্ব দিয়েছেন! একজন মানুষকে মেরে ফেলা মানে একই সাথে তাঁর বাবা-মা, ভাই-বোন, স্ত্রী-সন্তানদেরও হত্যা করা - একজন মানুষের হত্যা মানে মহা পরিকল্পনাকারীর পরিকল্পনায় সরাসরি হস্তক্ষেপ! ওরা যদি কেবল একবার বুঝতে পারত!
নিজের কেউ না মরলে কেউ বুঝে না কাছের মানুষ হারানোর যন্ত্রণা কেমন হতে পারে!
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা নভেম্বর, ২০১৫ সকাল ৮:২৯
৫টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কোরআন কী পোড়ানো যায়!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ২০ শে মে, ২০২৪ সকাল ১০:৩৮

আমি বেশ কয়েকজন আরবীভাষী সহপাঠি পেয়েছি । তাদের মধ্যে দু'এক জন আবার নাস্তিক। একজনের সাথে কোরআন নিয়ে কথা হয়েছিল। সে আমাকে জানালো, কোরআনে অনেক ভুল আছে। তাকে বললাম, দেখাও কোথায় কোথায় ভুল... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেঞ্চুরী’তম

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ২০ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:১৪


লাকী দার ৫০তম জন্মদিনের লাল গোপালের শুভেচ্ছা

দক্ষিণা জানালাটা খুলে গেছে আজ
৫০তম বছর উকি ঝুকি, যাকে বলে
হাফ সেঞ্চুরি-হাফ সেঞ্চুরি;
রোজ বট ছায়া তলে বসে থাকতাম
আর ভিন্ন বাতাসের গন্ধ
নাকের এক স্বাদে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরানের প্রেসিডেন্ট কি ইসরায়েলি হামলার শিকার? নাকি এর পিছে অতৃপ্ত আত্মা?

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ২০ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৯


ইরানের প্রেসিডেন্ট হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হয়ে নিহত!?

বাঙালি মুমিনরা যেমন সারাদিন ইহুদিদের গালি দেয়, তাও আবার ইহুদির ফেসবুকে এসেই! ইসরায়েল আর।আমেরিকাকে হুমকি দেয়া ইরানের প্রেসিডেন্টও তেমন ৪৫+ বছরের পুরাতন আমেরিকান হেলিকপ্টারে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভণ্ড মুসলমান

লিখেছেন এম ডি মুসা, ২০ শে মে, ২০২৪ দুপুর ১:২৬

ওরে মুসলিম ধর্ম তোমার টুপি পাঞ্জাবী মাথার মুকুট,
মনের ভেতর শয়তানি এক নিজের স্বার্থে চলে খুটখাট।
সবই যখন খোদার হুকুম শয়তানি করে কে?
খোদার উপর চাপিয়ে দিতেই খোদা কি-বলছে?

মানুষ ঠকিয়ে খোদার হুকুম শয়তানি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আসবে তুমি কবে ?

লিখেছেন সেলিম আনোয়ার, ২০ শে মে, ২০২৪ দুপুর ১:৪২



আজি আমার আঙিনায়
তোমার দেখা নাই,
কোথায় তোমায় পাই?
বিশ্ব বিবেকের কাছে
প্রশ্ন রেখে যাই।
তুমি থাকো যে দূরে
আমার স্পর্শের বাহিরে,
আমি থাকিগো অপেক্ষায়।
আসবে যে তুমি কবে ?
কবে হবেগো ঠাঁই আমার ?
... ...বাকিটুকু পড়ুন

×