somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ফেসবুকে যারা দুর্গন্ধ ছড়ায়

২৩ শে অক্টোবর, ২০১৮ সকাল ৯:২৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ফেসবুকে আমার একটা বদনাম আছে। আমি বিশেষ এক গোষ্ঠীকে উদ্দেশ করে "মূর্খ" শব্দটা খুব বেশি ব্যবহার করি। গালিটা স্পষ্টভাবে দেই বলেই অনেকের গায়ে জ্বলে। তারা জানে, তারাও সেই দলের অন্তর্ভুক্ত। কিন্তু তারা রিপিটেডলি মূর্খের মতোই কাজ করে করে নিজেরাই প্রমান করে তাদের যা বলা হয়েছে তা আসলে কম। "মহামূর্খ" বা "মূর্খসম্রাট" গালিটা ব্যবহার করা উচিৎ ছিল।
এদের আবার আরেকটা থিওরি আছে।
যেহেতু আমি এইসব গোষ্ঠীকে মূর্খ বলছি, তার মানে এরা ধরেই নিচ্ছে আমি নিজেকে মহা পন্ডিত মনে করছি। যা আসলে পুরাই মিথ্যা। আমি কখনই এই ক্লেইম করিনা। আমার একটা সরল ফিলোসফি, যেই বিষয়ে আমার জ্ঞান নেই, আমি সেই বিষয় নিয়ে টু শব্দ পর্যন্ত করিনা। কোন বিষয় নিয়ে ১০% ও কথা বলার আমি সেই বিষয় সম্পর্কে ১০০% জেনে তারপরে মাঠে নামি। কাজেই ওদের এই "ধরি মঞ্জুর = মহাপন্ডিত" থিওরিটিই ওদের মূর্খতার আরেক সার্টিফিকেট।
তো তাদের মুর্খামির উদাহরণ হিসেবে লেটেস্ট কিছু ঘটনা বলি।
আইয়ুব বাচ্চু মারা গেলেন।
তখনই এইসব মূর্খের দল ফেসবুক পায়খানা করে ভাসিয়ে দিল। "আইয়ুব বাচ্চু গান গাইতো, তাই সে দোজখে যাবে।"
নিজেদের লেখাকে পান্ডিত্যের ছোঁয়া দিতে এরা কুরআনের কিছু আয়াত যুক্ত করে দিল। এদের মতোই মূর্খরা তখন বাহবা দিল। পায়খানা ঘাঁটাঘাঁটিতে ফেসবুকে গন্ধ ছড়ালো।
কিছু বলার আগে ইসলাম ধর্মের প্রিন্সিপালটা আগে বলি। সবাইকে ধর্ম শেখানো এইসব গো-মানবেরা নিজেরাই যেটা জানেনা।
সেটা হলো কলিম শাহাদাৎ, যার বাংলা হচ্ছে আল্লাহ ছাড়া আর কোন উপাস্য নেই। হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) তাঁর বান্দা ও প্রেরিত পুরুষ।
আরেকটু ব্যাখ্যা করতে সূরা ফাতিহার তৃতীয় বাক্যটি নেই। "বিচার দিবসের মালিক।"
মানে হচ্ছে, আল্লাহ ছাড়া আর কারোর কোনই ক্ষমতা নেই কাউকে বেহেস্তে পাঠাবার, কিংবা দোজখে পাঠাবার।
ওহুদ যুদ্ধে আমাদের প্রিয় নবীর (সাঃ) উপর কুরাইশ বাহিনীর নিক্ষিপ্ত পাথর এবং শর যখন আছড়ে পড়লো, তখন তিনি আফসোস করে বললেন, "সেই জাতি কিভাবে আল্লাহর ক্ষমা পাবে যারা তাদের রাসূলের উপর আঘাত করে!"
আল্লাহ সাথে সাথে কুরআনের আয়াত নাজেল করেন, "হয় আল্লাহ তাদের ক্ষমা করবেন কিংবা তাদেরকে আযাব দেবেন। এ ব্যাপারে আপনার কোন করণীয় নাই। কারণ তারা রয়েছে অন্যায়ের উপর। আর যা কিছু আসমান ও যমীনে রয়েছে, সেসবই আল্লাহর। তিনি যাকে ইচ্ছা ক্ষমা করবেন, যাকে ইচ্ছা আযাব দান করবেন। আর আল্লাহ হচ্ছেন ক্ষমাকারী, করুণাময়।" সূরা আল ইমরান, ১২৮-১২৯.
মানে হচ্ছে, কে জান্নাতে যাবে, কে জাহান্নামে, এটি সম্পূর্ণ আল্লাহর সিদ্ধান্ত। স্বয়ং রাসূলুল্লাহরও সেখানে কোন হাত নেই। কুরআনের ভাষায়, "এ ব্যাপারে আপনার কোন করণীয় নাই।"
যেকারনে আমরা দেখতে পাই, ওহুদ যুদ্ধের সব বড় বড় কুরাইশ নেতা একসময়ে মুসলিম হয়ে যায়। আবু সুফিয়ান, ইকরিমা, খালিদ, সাফওয়ান.....। কে আশা করেছিল তাঁরা মুসলিম হবেন? ইকরিমাতো একজন মেজর শহীদ, আর ইসলামিক ইতিহাসে খালিদের সমমানের সেনাপতি দ্বিতীয়টি আসেনি। আসবেও না বলে দেয়া যায়।
অথচ এই আহাম্মকের দল, মূর্খের দল ফেসবুকে ছড়িয়ে বেড়াচ্ছে আইয়ুব বাচ্চু মরেছে খুব ভাল হয়েছে। ব্যাটা জাহান্নামী।
এরপরেও এরা থেমে যাবে না। এই আয়াত এবং উদাহরণ পড়ার পরে গরু শ্রেণীর মূর্খরা বলবে, "আইয়ুব বাচ্চুকে সাহাবীদের সাথে তুলনা করেছে! ব্যাটা ছাগল!" (অবাক হবেন না, ওরা গতকয়েকদিন এই বিষ্ঠাই নিক্ষেপ করছে আমার পোস্টে।)
আর আরেকদল বলবে, "কিন্তু গান বাজনাতো ইসলামে হারাম। এবং তিনি যেহেতু মৃত্যুর আগের দিনও গান বাজনা করেছেন, মানে শয়তানের কাজ করেছেন, তাই তিনি জাহান্নামী।"
তো এদের জন্য এইবার একটা সহীহ হাদিসের উদাহরণ দেই।
আমাদের ধর্মের এবিসিডিও যে জানে, সেও এই হাদিসটা জানে। তারপরেও সঠিক সময়ে সবার ব্রেন ফ্রিজ হয়ে যায়। তাই মস্তিষ্কের সেই বরফ গলাতে আবারও বলছি।
এক বেশ্যা রমণী একবার এক তৃষ্ণার্ত কুকুরকে পানি খাওয়ানোর জন্য আল্লাহ সেই রমণীর সব গুনাহ মাফ করে দিয়েছিলেন।
এখন এই হাদিসটার খুঁটিনাটি বিষয় ভাঙাচোরা করা যাক।
১. বেশ্যা রমণী যে কাজটি করে জীবিকা উপার্জন করতো, সেটি ইসলাম ধর্মে সবচেয়ে ভয়ঙ্কর তিন গুনাহর একটি। (শিরক এবং মানব হত্যা বাকি দুইটি অপকর্ম।) আমাদের ধর্মের মেজর ক্রাইম। সেই তুলনায় গান বাজনা কিছুই না। হাতির সাথে পিঁপড়ার তুলনার মতন। সেই রমণীকে যদি আল্লাহ মাফ করে দিয়ে থাকেন, তাহলে সামান্য গান গাওয়ার "অপরাধ" আল্লাহ মাফ করবেন না? আল্লাহ যে এতবার কুরআন শরীফে বলেন, তিনি ক্ষমাশীল, দয়ালু, পরম করুনাময়, আপনারা কী তাঁকে বিশ্বাস করেন না?
২. যদিও আল্লাহর কাছে সব প্রাণীই তাঁর আপনজন, তারপরেও কুকুর আমাদের ধর্মে নাপাক প্রাণী হিসেবে গণ্য করা হয়। সেই কুকুরকে পানি খাওয়ানোর জন্য আল্লাহ মাফ করে দিয়েছেন, সেই তুলনায় আইয়ুব বাচ্চু কি জীবনেও কাউকেই কখনই খুশি করেন নি? শুনলাম তিনি নাকি কবে কোন শিশুর প্রাণ রক্ষার জন্য লাখ খানেক টাকা দিয়ে শিশুটির মাথায় হাত বুলিয়ে কেঁদেছিলেন। সেই শিশুর মূল্য আল্লাহর কাছে কী কোন অংশে কম?
৩. সেই বেশ্যা রমণীটি সেই কুকুরকে পানি খাইয়ে কোথায় গিয়েছিল, নিজের ব্যবসা চালু রেখেছিল, নাকি বন্ধ করেছিল - কোন ডিটেইল আমাদের কাছে নেই। কাজেই, সেই মেয়েটি যদি মাফ পেয়ে বেহেস্তে যেতে পারে, তাহলে মৃত্যুর কয়েকদিন আগে কনসার্ট করার "অপরাধে" আইয়ুব বাচ্চুকে জাহান্নামে যারা পাঠিয়ে দিচ্ছে, তাদের মূর্খ বলায় আমাকে দোষ দিবেন?

কেয়ামতের দিন আল্লাহর সামনে দাঁড়াতে গিয়ে এক মুহাম্মদ (সঃ) ছাড়া বাকি সব নবী রাসূলদেরও হাত পা কাঁপবে, সেখানে সাধারণ মুসলিম হিসেবে কোন সাহসে এই ছাগপাল আত্মবিশ্বাসের সাথে একটা লোককে জাহান্নামী বলে দেয়? নিজেরা কী ধরেই নিয়েছে তারা জান্নাতে যাচ্ছে? পাপপুণ্যের বিচারের অধিকার যেখানে আল্লাহ ছাড়া আর কারোর নেই, সেখানে এত ধৃষ্টতা ওরা দেখায় কিভাবে? এই কনফিডেন্স আসে কোত্থেকে?

নিশ্চিত জান্নাতের সুসংবাদ শোনার পরেও আবু বকর, উমার (রাঃ) কাঁদতে কাঁদতে নিজেদের দাড়ি ভিজিয়ে দিতেন। মৃত্যুর আগে খালিদ আফসোস করে বলেছিলেন, "আমি সারাটা জীবন যুদ্ধে ব্যস্ত ছিলাম, তাই কুরআন পড়ার সুযোগ পাইনি। তবে ইন শা আল্লাহ, আল্লাহ আমাকে ইসলামের খাদেম হিসেবে কবুল করবেন।" (তিনি নিজেও কনফিডেন্ট না।)
যেকোন সাহাবীর নাম নিন, কেউই নির্ভয়ে মৃত্যু বরণ করেন নি। সবার ভয়, কেয়ামতের দিনে আল্লাহ যখন আমার ছোট বড় গুনাহ নিয়ে প্রশ্ন করবেন, আমি কী জবাব দেব?

এই কারণেই আমি বলি জ্ঞান পিপাসু ব্যক্তি মাত্রই জানেন তিনি কত কম জানেন। কোন কিছু শোনার সাথে সাথেই তিনি চিন্তা করেন, আগে পড়তে হবে, জানতে হবে। আর মূর্খের দল গলা ফাটিয়ে চিৎকার দিয়ে বলে, ও মুনাপেক, ও নাস্তেক, ও জাহান্নামী।
আল্লাহ হেদায়েত দিন।
শেষ করি রাসূলুল্লাহর একটি শিক্ষা দিয়ে। মূর্খের দল জীবনেও তাঁর জীবনী পড়েনি, তাই তাদের জন্যই লিখছি।
একবার রাসূলুল্লাহ (সঃ) সাহাবীদের সাথে বসে ছিলেন। পাশে দিয়ে এক ইহুদি জানাজা যাচ্ছিল। রাসূলাল্লাহ, যিনি তখন মদিনার রাষ্ট্রপতি, তিনি দাঁড়িয়ে সম্মান দিলেন। যেখানে কোন নেতার জন্য দাঁড়িয়ে যাওয়া আমাদের ধর্মে কিন্তু সাধারণভাবে নিষেধ।
সাহাবীগণ অবাক হয়ে বললেন, "ইয়া রাসূলাল্লাহ (সঃ), মৃত ব্যক্তি যে একজন ইহুদি!"
তিনি উল্টো অবাক হয়ে বললেন, "সে কী মানুষ না?"
একজন মানুষ পৃথিবী থেকে বিদায় নিলে তাঁকে সম্মান জানানো আমাদের রাসূলের শিক্ষা। একজন সাধারণ মানুষ হলেও সে এই কাজটা করবে। নিতান্তই শূকর শ্রেণীর প্রাণী না হলে কেউ জাহান্নামী কিনা এই গবেষণায় ফেসবুকে পায়খানা ছড়াবে না।

আরও কিছু ঘউদাহরণ দেয়ার লোভ ছিল। কিন্তু এর বেশি সময় নষ্ট করার রুচি হলো না। গ্রূপ থেকে অমন সদস্য পাওয়ামাত্রই ঝেঁটিয়ে বিদায় করা হচ্ছে। হাত গান্দা হচ্ছে ঠিক। কিছু করার নেই। গ্রূপ পরিষ্কার রাখতেই পাতলা পায়খানার রোগীদের বিদায় করা হচ্ছে।
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে অক্টোবর, ২০১৮ সকাল ৯:২৭
৮টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মানুষের জন্য নিয়ম নয়, নিয়মের জন্য মানুষ?

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৫:৪৭



কুমিল্লা থেকে বাসযোগে (রূপান্তর পরিবহণ) ঢাকায় আসছিলাম। সাইনবোর্ড এলাকায় আসার পর ট্রাফিক পুলিশ গাড়ি আটকালেন। ঘটনা কী জানতে চাইলে বললেন, আপনাদের অন্য গাড়িতে তুলে দেওয়া হবে। আপনারা নামুন।

এটা তো... ...বাকিটুকু পড়ুন

একটা গাছ কাঠ হলো, কার কী তাতে আসে গেলো!

লিখেছেন নয়ন বড়ুয়া, ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:০৬



ছবিঃ একটি ফেসবুক পেইজ থেকে

একটা গাছ আমাকে যতটা আগলে রাখতে চাই, ভালো রাখতে চাই, আমি ততটা সেই গাছের জন্য কিছুই করতে পারিনা...
তাকে কেউ হত্যা করতে চাইলে বাঁধাও দিতে পারিনা...
অথচ... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। কালবৈশাখী

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:২৪



গত পরশু এমনটি ঘটেছিল , আজও ঘটলো । ৩৮ / ৩৯ সে, গরমে পুড়ে বিকেলে হটাৎ কালবৈশাখী রুদ্র বেশে হানা দিল । খুশি হলাম বেদম । রূপনগর... ...বাকিটুকু পড়ুন

একজন খাঁটি ব্যবসায়ী ও তার গ্রাহক ভিক্ষুকের গল্প!

লিখেছেন শেরজা তপন, ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:০৪


ভারতের রাজস্থানী ও মাড়ওয়ার সম্প্রদায়ের লোকজনকে মূলত মাড়ওয়ারি বলে আমরা জানি। এরা মূলত ভারতবর্ষের সবচাইতে সফল ব্যবসায়িক সম্প্রদায়- মাড়ওয়ারি ব্যবসায়ীরা ঐতিহাসিকভাবে অভ্যাসগতভাবে পরিযায়ী। বাংলাদেশ-ভারত নেপাল পাকিস্তান থেকে শুরু করে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে...

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে,
পড়তো তারা প্লে গ্রুপে এক প্রিপারেটরি স্কুলে।
রোজ সকালে মা তাদের বিছানা থেকে তুলে,
টেনে টুনে রেডি করাতেন মহা হুলস্থূলে।

মেয়ের মুখে থাকতো হাসি, ছেলের চোখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×