somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মৌলবাদীদের একটা ব্যাপার ভাল

০২ রা মার্চ, ২০১৯ রাত ১:১৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মৌলবাদীদের একটা ব্যাপার ভাল - সেটা হচ্ছে তারা নিজেদের ফিলোসফিতে কনসিস্ট্যান্ট।
যেমন ধরেন ধর্মান্ধতা। ধর্মের কোন কিছু না পড়ে, না বুঝে, এর ওর কাছ থেকে দুই চারটা বয়ান শুনে নিজের মাথা থেকে কিছু একটা বানিয়ে তারা উগ্রবাদী আচরণ করতে কখনই পিছপা হবেনা। আপনি বলেন "নবী (সঃ) নূরের তৈরী না, বরং তিনিও মানুষ" এতেই দেখবেন আপনাকে "গুস্তাখে রাসূল (সঃ)" ট্যাগ দিয়ে মাথা ফেলতে দৌড়ে আসবে।
অথবা বলুন, ঈদে মিলাদুন্নবী পালন করা ঠিক না। তাইলেই দেখবেন রাস্তাঘাটে আপনাকে চড় থাপ্পড় লাত্থি গুতা মারা শুরু করবে। ক্ষেত্র বিশেষে কোপ।

যে কারনে বলছি যে ওদের এই কন্সিস্টেন্সি আচরণটা ভাল - তা হচ্ছে, আপনি ওদের থেকে আগেভাগেই সাবধান হয়ে ওদের ব্লক করে দিতে পারবেন। আপনি জানেন ওরা পরিস্থিতি ভেদে নিজের জাত, বর্ণ, চেহারা ইত্যাদি বদলাবে না। ওদের পরিত্যাগ করতে চাইলে অতি সহজেই সেটা করতে পারবেন।

নিজেদের "প্রগতিশীল" দাবি করা কতিপয় মানুষ কিন্তু নিজের রঙ পাল্টাতে ওস্তাদ। যেই ফিলোসফিকে ওরা মৌলবাদ বলে গালাগালি করে, সেই একই ফলোসফি নিজেদের হৃদয়ে খোদাই করে লালন করে। সবচেয়ে লেটেস্ট উদাহরণ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৬৯ সালের মেয়েদের একটি গ্রূপ ছবি। সেখানে স্লিভলেস ব্লাউজ পড়া নারীদের ছবি দিয়ে বর্তমানের কিছু হিজাব/বোরখা পরিহিতা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীর ছবি দিয়ে প্রমোট করা হচ্ছে "আমরা পিছিয়ে যাচ্ছি।"

প্রথম কথা, এগিয়ে যাওয়া পিছিয়ে যাওয়া কী পোশাক নির্ভর, নাকি মানসিকতা নির্ভর?
এইটা ঠিক আমাদের পোশাক আমাদের মানসিকতা রিফ্ল্যাকট করে। কিন্তু সবসময়েই কী তাই? প্রিন্সেস ডায়ানা এবং মাদার তেরেসা - দুইজনের মধ্যে বলতে পারবেন কে পিছিয়ে আছেন?
একজন ন্যাংটো নারী, যে ক্লাস ফাইভ পাশও করেনি, সে বেশি অগ্রসর, নাকি নিউক্লিয়ার সায়েন্টিস্ট বিজ্ঞানী - যিনি হিজাব পড়েন - তিনি বেশি অগ্রসর?
আবার বোরখা পড়া ডাক্তার নারী, যার কাজই হচ্ছে মানুষের পেছনে কথা বলে বেড়ানো, এর ওর গীবত গাওয়া - সে বেশি অগ্রসর? নাকি সাধারণ গৃহিনী, যিনি পর্দা করেননা, কিন্তু কারোর সাতেও থাকেন না, পাঁচেও থাকেন না, উপকার ছাড়া কারোর কোন অপকার করেন না - সেই নারী বেশি অগ্রসর? কে বেশি প্রগতিশীল?
উত্তর আমাকে দিতে হবেনা। ওটা আপনি নিজে চিন্তাভাবনা করে বের করুন।

এইবার আসে দ্বিতীয় প্রশ্নে, নারীর পোশাকের স্বাধীনতা।
ধরুন, কোন নারী সাগরে গিয়ে বিকিনি পড়তে চায়। খুবই ভাল। আপনি বাঁধা দেয়ার কে? তাঁর স্বামী? ভাই? বাবা? না। আপনার যদি দেখতে ভাল না লাগে, তাকাবেন না। তাঁর বেহেস্তে যাওয়ার শখ নেই, সে উলঙ্গ হয়ে ঘুরে বেড়াতে চায়। আপনি তাঁকে বাধ্য করতে পারেন না।
ঠিক যেমনটা আপনি দাড়ি রাখছেন বলে কারোর অধিকার নেই সেই দাড়ি টান দিয়ে ছেঁড়ার বা ক্লিন সেভ করিয়ে দেয়ার। আপনার শখের দাড়ি - কারোর কিছু যাওয়া আসার কথা না। এই লজিকটা মানেনতো? এইটাই পোশাকের স্বাধীনতাতো?
তাহলে কেউ যদি বোরখা পড়তে চায়, তাঁর নিজের শরীর ঢেকে রাখতে চায় - তাহলে আপনি বাঁধা দেয়ার কে? তাঁরা বাবা? স্বামী? ভাই? কেউ হন? তাঁর ইচ্ছা সে বেহেস্তে যেতে চায়, তাঁর ইচ্ছা সে সেই পোশাক পড়বে - আপনি টু শব্দটি উচ্চারণ করার কে? এইখানে কেন নিজেদের হিপোক্রেট প্রমান করেন?

কিছুদিন আগে থাগস অফ হিন্দুস্তান সিনেমাটা দেখলাম। ক্যাটরিনা কাইফের একটি নাচ আছে, যেখানে তাঁকে এতটাই খোলামেলা পোশাক পড়ানো হয়েছিল যে আরেকটু হলে ন্যাংটাই করে ছাড়তো। মাথায় রাখুন, ১৭৯৫ সালের বাঈজীর চরিত্র ছিল তাঁর। আমরা ১৮০০ ১৯০০ শতকের বাইজির ছবিও যখন দেখি প্রত্যেককে দেখি ইয়া লম্বা ঘাগড়া লেহেঙ্গা পোশাকে। কিন্তু আরও অন্যান্য হাজারটা ভুলের মতন এই ফিল্মে ডিরেক্টর সাহেব ক্যাটরিনাকে ২০২০ সালের নাইটক্লাবের পোশাক পড়িয়ে সেটে নাচিয়েছেন। এই গর্ধবটা ভেবেছিল পাবলিক ন্যাংটা নায়িকা দেখে খুশি হয়ে সেটের ব্যাকড্রপে লাইট বাল্বের স্যান্ডেলিয়ারের মতন হাস্যকর সব ভুল ধরতে পারবেনা। ধরা খাওয়ায় উচিৎ শিক্ষা হয়েছে আশা করি।
পয়েন্ট হচ্ছে, নায়িকাদের কেন সবসময়ে এমন স্বল্প বসনায় পরিবেশন করা হয় কখনও ভেবেছেন? বরফের পাহাড়ে নাচানাচি হবে, নায়ক সোয়েটারের উপর জ্যাকেট, তার উপর মাফলার চড়িয়ে গানে ঠোঁট মেলাবে। এদিকে নায়িকাকে পাতলা কাপড়ের শাড়ি পড়িয়ে নাচাবে। কেন?
"আইটেম সং" সবসময়ে নায়িকাকে খোলামেলা হতে হবে। কোন নায়কের আইটেম সং থাকে না। আর যদি থাকেও, তাহলেও তাঁর সাথে আশেপাশে এক্সট্রারা বিবস্ত্র অবস্থাতেই নাচবে। কোন নায়িকা যদি আপত্তি করে, তাহলে এই প্রগতিশীলরা বাণী শুনাবেন, "তোমার শরীর কেন ঢেকে রাখতে হবে? স্মার্ট হও, দেখিয়ে দাও পৃথিবীকে তুমি কারোর পরোয়া করো না। ইত্যাদি ইত্যাদি।"
মেয়েও তখন ভাবতে শুরু করবে ন্যাংটা না হলে বুঝিবা স্মার্ট হওয়া যাবে না।
হলিউডে কিছুদিন আগেও কিছু নায়িকা ন্যুড সীনে অভিনয়ে বাধ্য করা নিয়ে আপত্তি তুলেছিল। ইচ্ছের বিরুদ্ধে তাঁদের কেন ন্যুড হতে হবে? খুবই ভ্যালিড পয়েন্ট। কেউ অবশ্য তেমন নড়াচড়া করেনি। মিটু মুভমেন্ট নিয়ে সবাই ব্যস্ত ছিল। তবে একদিন হয়তো কেউ আপত্তি করবে।

অনেক আগে একবার কোথায় যেন পড়েছিলাম, খুব সম্ভব এভানেসেন্সের এমি লি এক সাক্ষাৎকারে "তুমি কেন অন্যান্যদের মতন খোলামেলা হও না?" প্রশ্নে বলেছিল, "আমি খোলামেলা পোশাক পড়লে লোকে আমার চামড়া দেখবে, গানে মনোযোগ দিবে কখন?"
পয়েন্টটা বুঝতে পারছেন?
আপনি খোলামেলা হলে আপনার মাথায় কী চলছে, আপনার চিন্তা ভাবনা নিয়ে আমরা পুরুষেরা বিন্দুমাত্র মাথা ঘামাবো না। আমরা শরীর দেখায় মনোযোগ দেব।
আপনি নিজেকে সুন্দরভাবে উপস্থাপন করলে (পর্দা/বোরখা ছাড়াও সুন্দরভাবে উপস্থাপন করা যায়, চাকরির ইন্টারভিউর সময়ে সবাই সুন্দরভাবেই উপস্থিত হয়) আপনার মন মানসিকতায় ফোকাস করতে পারবো।
মাথায় রাখুন, প্রগতিশীলতা আমাদের মস্তিষ্কে। বোরখা পড়ুন কী বিকিনি, মাথাকে স্বচ্ছ রাখার চেষ্টা করুন।
আর যারা নিজেদের প্রগতিশীল দাবি করেন, ভণ্ডামি ত্যাগ করুন। একটি ফিলোসফিতে কনসিস্ট্যান্ট হন। তাহলে নিজেও ভাল থাকবেন, অন্যকেও ভাল রাখবেন।
যদি কারোর মনে আঘাত দিয়ে থাকি, তাহলে বুঝে নিবেন নিশ্চই আপনার মধ্যে এই হিপোক্রেসি স্বভাব আছে, যে কারনে খারাপ লেগেছে। আমাকে গালাগালি করতে চাইলে করতে পারেন, তবুও নিজেকে শুধরান। :)
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা মার্চ, ২০১৯ রাত ১:১৬
৩টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা ও পদ্মশ্রী পুরস্কার

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৫৬



এ বছরের পদ্মশ্রী (ভারতের চতুর্থ সর্বোচ্চ অসামরিক সম্মাননা) পদকে ভূষিত করা হয়েছে, বাংলাদেশের রবীন্দ্র সংগীত এর কিংবদন্তি শিল্পী রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যাকে।

আমরা গর্বিত বন্যাকে নিয়ে । ...বাকিটুকু পড়ুন

কষ্ট থেকে আত্মরক্ষা করতে চাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৯



দেহটা মনের সাথে দৌড়ে পারে না
মন উড়ে চলে যায় বহু দূর স্থানে
ক্লান্ত দেহ পড়ে থাকে বিশ্রামে
একরাশ হতাশায় মন দেহে ফিরে।

সময়ের চাকা ঘুরতে থাকে অবিরত
কি অর্জন হলো হিসাব... ...বাকিটুকু পড়ুন

রম্য : মদ্যপান !

লিখেছেন গেছো দাদা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৩

প্রখ্যাত শায়র মীর্জা গালিব একদিন তাঁর বোতল নিয়ে মসজিদে বসে মদ্যপান করছিলেন। বেশ মৌতাতে রয়েছেন তিনি। এদিকে মুসল্লিদের নজরে পড়েছে এই ঘটনা। তখন মুসল্লীরা রে রে করে এসে তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

= নিরস জীবনের প্রতিচ্ছবি=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৪১



এখন সময় নেই আর ভালোবাসার
ব্যস্ততার ঘাড়ে পা ঝুলিয়ে নিথর বসেছি,
চাইলেও ফেরত আসা যাবে না এখানে
সময় অল্প, গুছাতে হবে জমে যাওয়া কাজ।

বাতাসে সময় কুঁড়িয়েছি মুঠো ভরে
অবসরের বুকে শুয়ে বসে... ...বাকিটুকু পড়ুন

Instrumentation & Control (INC) সাবজেক্ট বাংলাদেশে নেই

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৫




শিক্ষা ব্যবস্থার মান যে বাংলাদেশে এক্কেবারেই খারাপ তা বলার কোনো সুযোগ নেই। সারাদিন শিক্ষার মান নিয়ে চেঁচামেচি করলেও বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরাই বিশ্বের অনেক উন্নত দেশে সার্ভিস দিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×