somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

"বোরখাওয়ালি ক্রিকেট খেলে"

১২ ই সেপ্টেম্বর, ২০২০ রাত ১১:৪১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

একটা মা, সে তাঁর সন্তানের সাথে খেলছে, এ নিয়ে ফেসবুকীয় জনতার হাউকাউয়ের কি ঘটেছে বুঝলাম না। বিশেষ করে "নারীবাদী" দাবিকারী, যারা নাকি নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য জানপ্রাণ দিয়ে দিচ্ছেন, তাঁদের কাউকে কাউকে অতি নোংরা ভাষায় এই ছবির বিরোধিতা করতে দেখছি।

বোরখায় সমস্যাটা ঠিক কোথায় একটু বুঝিয়ে বলবেন কি? ইসলামিক পোশাক বলেই সমস্যা? তাহলে তাদের সমস্যাটা নারীর স্বাধীনতায় নয়, তাঁর ধর্মচর্চায়। দুইটাকে এক করে নিজেরাই বিভ্রান্ত হয়ে গেছেন।
এক নারী কি পোশাক পরবে, তাঁর নিজের শরীরের কোন অংশ ঢাকবে কোনটা উন্মুক্ত রাখবে সেটা নির্ধারণ করে দিবে কতিপয় "নারীবাদী" মহিলা? মাস শেষে এই বোরখা পরিহিতা মহিলার কয়টা বিল (গ্যাস, বিদ্যুৎ, বাড়িভাড়া ইত্যাদি) এরা পরিশোধ করে একটু বলতে পারবেন? তাহলে মানুষের ব্যক্তিগত ব্যাপারে এত নাক গলানো কেন?

বোরখা সৌদি/পাকিস্তানী/আফগানী পোশাক বলেই আপত্তি? যদি তাই হয় তাহলে শার্ট প্যান্টে যখন মেয়েরা খেলে তখন এই একই মানুষেরা আপত্তি করেন? শার্ট প্যান্টওতো বাঙালি পোশাক না। ওটা ইংরেজদের পোশাক যারা প্রায় দুইশ বছর আমাদের লুটপাট করেছে। বাঙালি পোশাক দাবি করলে কেবলই শাড়ি পরে খেলতে হবে তাহলে। স্যালোয়ার কামিজও যতদূর জানি "বিদেশী"(পাকিস্তানী খুব সম্ভবত) পোশাক।
ওয়েট! তাহলেতো ক্রিকেটও খেলতে পারবে না। সেটা ইংরেজদের আবিষ্কার। দেশি খেলা কি আছে? কাবাডি! আর কিছু? একটা মা তাহলে শাড়ি পরিহিতাবস্থায় নিজের ছেলের সাথে কাবাডি খেললেই ইনাদের কলিজা শীতল হবে?
এত চেতনা! এত চেতনা! আহা!

স্বাধীন বাংলাদেশ কি তাঁর নাগরিকদের যার যার ধর্ম চর্চার পাশাপাশি যার যার রুচি অনুযায়ী পোশাক পরার অধিকার নিশ্চিত করে না? বোরখা পরলেও এদেশিদের গাত্রদাহ হয়, শাড়ি পরলেও আরেকদলের গাত্রদাহ হয়। এদেশের মেয়েরা করবেটা কি? মরে যাবে?

আচ্ছা, "নারীবাদী" দাবিকারীরা এইভাবে কেন দেখছে না যে, অন্তঃপুরবাসিনী এক রমণী বাড়ির চৌকাঠ পেরিয়ে নিজের সন্তানের সাথে ক্রিকেট খেলছেন? আমার স্কুল জীবনের এক বান্ধবী আপাদ মস্তক বোরখা পরিহিতা অবস্থায় মাইলের পর মাইল সাইক্লিং করে। নিজের স্বভাবটা পুত্রের মধ্যেও ঢুকিয়ে দিয়েছে। এখন মাতা পুত্রের সাইক্লিংয়ের ছবি নিয়মিতই দেখি। আলহামদুলিল্লাহ! লোকে কি আশা করেছিল, মেয়েরা বোরখা পরে রান্নাবান্না ছাড়া আর কিছুই করতে পারবে না? অথবা বাইরে বেরুতে হলে অবশ্যই বোরখা বাদ দিয়েই বেরুতে হবে?
একটি গ্লাসের সম্পূর্ণ ভরাট অংশ বাদ দিয়ে সামান্য খালি অংশকে হাইলাইট করার এ কেমন অসুস্থ প্রবৃত্তি?

একটা সময়ে আমাদের দেশের নারীদের পোশাক ছিল শাড়ি। ধীরে ধীরে স্যালোয়ার কামিজ এসে সে স্থান দখল করলো। স্যালোয়ার কামিজেরও বিভিন্ন ডিজাইন ছিল। শর্ট কামিজ, লং কামিজ ইত্যাদি। ধীরে ধীরে মেয়েরা প্যান্ট পরতে শুরু করে। কেউ কেউ কামিজের সাথে স্যালোয়ারের বদলে জিন্স দিয়ে শুরু করে, এবং একটা পর্যায়ে এখন প্রায়ই দেখা যায়, প্যান্ট, টিশার্ট বা শার্ট পরে মেয়েরা ঘুরছে। অফিসে হয়তো স্যুটও পরছে। যুগে যুগে এইভাবেই মানুষের পোশাকে বিবর্তন ঘটে। পুরুষেরাও একটা সময়ে ধুতি/পায়জামা কোট পরে অফিস করতে যেত, এখন প্যান্ট শার্ট পরে যায়। ফেসবুক এবং ইন্টারনেট যদি আরও বহু যুগ আগে থেকেই সস্তা থাকতো, তাহলে এইসব কুমন্তব্যের সাথে আমরা বহু আগে থেকেই পরিচিত হয়ে যেতাম।

নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠার দাবিকারী এইসমস্ত মানুষদের অবশ্যই আগে নিজেদের বিবেক বুদ্ধি মন মানসিকতা পরিশুদ্ধির চর্চা করতে হবে। নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠা "সে ন্যাংটা থাকলো নাকি বোরখা পরলোর" উপর নির্ভরশীল নয়, বরং আমি যতদূর জানি, একটি নারী নিজের স্বাধীন ইচ্ছানুযায়ী নিজের দায়িত্ব নেয়ার যোগ্যতা অর্জন নিশ্চিত করাটাই নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠা। এর মাঝে নিজের ইচ্ছানুযায়ী পোশাক পরার অধিকারও অন্তর্ভুক্ত। মানে নারীবাদী দাবিকারী নিজেরাই নারীস্বাধীনতা বিরোধী মন্তব্য করে বেড়াচ্ছেন। হোয়াট আ হিপোক্রেসি!
স্বামীর সাথে তালাক হয়ে গেলে, অথবা বিয়ে না হলে কোন রমণী যেন অন্য কারোর উপর নির্ভরশীল হয়ে না থাকেন, নিজেই সম্মানজনক কাজ করে নিজের ও নিজের নির্ভরশীলদের ব্যয়ভার বহন করতে পারেন, এমন পরিবেশ ও সমাজ প্রতিষ্ঠার আন্দোলনের নামই "নারীবাদ।"
বিদেশী নারীরা প্যান্ট শার্ট পরে বলেই তাঁরা এগিয়ে যায়নি, তাঁরা পরিশ্রমী, নিজেরা নিজেদের উপর নির্ভরশীল বলেই এগিয়েছেন। যারা নিজেরাই বুঝে না নারীর স্বাধীনতার মানে কি, তারা কিনা আন্দোলন করে, আবার নেতৃত্বও দেয়!
যারা পোশাক বা মাদক সেবনকে নারীর অধিকারের সাথে মিলিয়ে মিশিয়ে এক করে ফেলেন, তারা ভন্ড। মূলত বিভ্রান্তি ছড়ানো ছাড়া কোন কাজের কাজটা করে না। নিজের ভাল মন্দ বুঝতে পাড়ার ক্ষমতাও নারীবাদের অংশ। এবং প্রথম ধাপ হচ্ছে, এদের থেকে সাবধান হওয়া ও এদের পরিত্যাগ করা।

প্রিয় মায়েরা ও বোনেরা। একটা সত্য কথা বলি, ভাল করে মন দিয়ে শুনেন। দয়া করে স্কুল কলেজে যাবেন, মন দিয়ে পড়াশোনা করবেন। নিজের সিলেবাসের বাইরেও যেখানে যে বই পাবেন, পড়ে ফেলবেন। সেলাই থেকে শুরু করে কম্পিউটার - যেখানে যা শেখার সুযোগ পাবেন, শিখে ফেলবেন। যত জ্ঞানী হবেন, যত স্কিলফুল হবেন, ততই আত্মনির্ভরশীল হবেন। নারীর স্বাস্থ, নারীর চিকিৎসা, নারীর বেতন, নারীর শিক্ষা ইত্যাদি অধিকার নিশ্চিত হবে তখনই যখন সে সুশিক্ষিতা হবে। কাজেই পড়ালেখার কোনই বিকল্প নেই। আপনি হিজাব মাথায় ডাক্তারি করছেন নাকি বিকিনি পরে, সেটা ম্যাটার করবে না। যা ম্যাটার করবে তা আপনার মস্তিষ্কে কি ভরা আছে সেটার প্রয়োগে কয়জনের প্রাণ রক্ষা করছেন বা নিজের ও সমাজের উপকার করছেন, সেটা। আজাইরা ফালতু কুমন্তব্যে বিভ্রান্ত না হয়ে বরং নিজের লক্ষ্যে ফোকাস্ড থাকুন।
বেগম রোকেয়াকে চিনেন না? তিনিই আসল নারীবাদী। তিনি পড়ালেখার দিকে জোর দিয়েছেন, তাই তাঁকেই মেনে চলুন।
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই সেপ্টেম্বর, ২০২০ রাত ১১:৪১
১৫টি মন্তব্য ১০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমার প্রফেশনাল জীবনের ত্যাক্ত কথন :(

লিখেছেন সোহানী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সকাল ৯:৫৪



আমার প্রফেশনাল জীবন বরাবরেই ভয়াবহ চ্যালেন্জর ছিল। প্রায় প্রতিটা চাকরীতে আমি রীতিমত যুদ্ধ করে গেছি। আমার সেই প্রফেশনাল জীবন নিয়ে বেশ কিছু লিখাও লিখেছিলাম। অনেকদিন পর আবারো এমন কিছু নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×