ডালাসে সহজে বরফ পড়েনা। এক দশকে এক দুইবার তুষার ঝড় আসে, পুরা এলাকা সাদা করে আবারও কয়েক বছরের জন্য বিদায় নেয়। আমাদের এখানে বছরে চার ঋতু। ১. গরম, ২. অসহ্য গরম, ৩. ঠান্ডা ৪. অসহ্য ঠান্ডা। বৃষ্টি কোন ঋতু ফিতু মানে না। যখন মনচায় বর্ষায়, নইলে আস্ত লেক মেক শুকায়ে কাঠ হয়ে যায়। মাঝে মাঝে একই দিনে মাত্র কয়েক ঘন্টার মধ্যেই আমরা চার ঋতুর দেখা পাই।
তুষারপাত আমার কাছে অসহ্য মনে হয়। শুধুমাত্র এই কারণেই নর্থের কোন স্টেটে স্থায়ী হবার ইচ্ছা করেনা। ডালাসে একটু বরফ পড়লেই অফিস আদালত স্কুল সব বন্ধ হয়ে যায়। আমাদের গাড়ির টায়ার এমনভাবে বানানো হয় যা বরফে গ্রিপ করতে পারেনা। পাঁচ মাইল বেগে চালালেও রাস্তায় পিছলা খাই। পিছলা খাওয়া গাড়ির উপর ড্রাইভারের কোন নিয়ন্ত্রণ থাকেনা। পাশের ফুটপাথে উঠে যেতে পারে (আমার ক্ষেত্রে তিনবার ঘটেছে এমন), বা অন্য কোন গাড়ির সাথে বাড়ি খেতে পারে, অন্য কোন গাড়ি পিছলা খেয়ে আমার গাড়ির উপর আছড়ে পড়তে পারে, আমি পিছলা খেয়ে রাস্তার পাশের লেকে/রেললাইনে পড়ে যেতে পারি। কাজেই বুদ্ধিমান মানুষেরা বরফ পড়লে এখানে গাড়ি নিয়ে বেরোয় না।
একবার এমন হলো যে বৌ তখন নতুন নতুন এসেছে। ওর জীবনে প্রথম তুষারপাত। সকালে উঠে আমার অফিস যেতে হবে। নতুন নতুন এই চাকরি শুরু করেছি। বরফের দিনে অফিস বন্ধ না খোলা জানি না। রেডি হয়ে নিচে নেমে দেখি গাড়ি বিশাল বরফের স্তুপের নিচে চাপা পড়ে আছে।
বরফ সরানোর যাবতীয় যন্ত্রপাতি গাড়ির ভিতরে। কাজেই হাত, চামচ ইত্যাদি দিয়ে বরফ সরানো শুরু করলাম। সে এক দিকদারী! অসহ্যকর!
যখন মোটামুটি বরফ সরানো শেষ, গাড়িতে ঢুকে টান দিয়ে পার্কিং স্পট থেকে বেরিয়েই দেখি গাড়ি এগোয় না। বরফে পিছলা খেয়ে একবার ডানে একবার বামে সরছে। আশেপাশের গাড়িতে বাড়ি খেলে আমার খবর আছে। ক্ষতিপূরণ আমাকেই দিতে হবে। বুঝে গেলাম সেদিন আর অফিস যাওয়া হবেনা। তারচেয়ে বড় সমস্যা হলো, গাড়ি আর কিছুতেই আগের জায়গায় ফেরাতে পারিনা। ডানে সরে, বামে সরে, কিছুতেই মাঝে থাকেনা। তারপরে বেলচার মতন কিছু একটা দিয়ে চাকার নিচে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে বরফ অমসৃণ করে এমন অবস্থা তৈরী করতে হয়েছিল যাতে চাকা গ্রিপ করতে পারে। দুই থেকে তিন ঘন্টা সেদিন নষ্ট হয়েছিল এই ফালতু কাজে। তাও এই ঠান্ডার মধ্যে। লোকে তুষারপাত নিয়ে কত রোমান্টিক রোমান্টিক ঘটনার বর্ণনা করেন। বাস্তবে মোটেও তা না। অন্ততঃ আমার ক্ষেত্রেতো নয়ই।
আমি জানি আমার ছেলেও একদিন তুষারপাতে বিরক্ত হবে। সেটা ঘটার আগে ওকে আজকে একটু আনন্দ দিয়ে দিলাম।
যাই হোক। আজকে বাইরের তাপমাত্রা মাইনাসের নিচে। এত ঠান্ডায় গোসল করবো কিভাবে?
বৌ বলল জ্যাকেট পরে গোসলে ঢুকতে। তাহলে ঠান্ডা লাগবে না।
আমি কি বুদাই? জ্যাকেট পরে গোসলে গেলে পানিতে লেগে নষ্ট হয়ে যাবেনা?
তাই সোয়েটার, প্যান্ট আর মোজা পরে গোসল করে আসলাম। আহ! শান্তি!
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২১ ভোর ৪:৩৬