somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বিশ্বের মুসলিমদের ঐক্য নিয়ে এদের দুশ্চিন্তা, সৌদি আরবের বাদশাহর ঈমান নিয়ে এদের দুশ্চিন্তা, অমুক দেশের এই আইন আর তমুক দেশের সেই সংস্কৃতি নিয়ে এদের টেনশনের শেষ নেই।

০৪ ঠা এপ্রিল, ২০২২ সকাল ৯:২২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

তারাবির নামাজ আট রাকাত নাকি বিশ রাকাত, এই নিয়ে দেখি বাংলাদেশের ইসলামী পন্ডিতরা দুইভাগে ভাগ হয়ে গেছেন। একদল আরেকদলকে মূর্খ ঘোষণা করছেন। ওয়াজনির্ভর সাধারণ মানুষগুলি একওয়াজ শুনে বলে "ঠিক ঠিক, বিশ রাকাতই ঠিক। এর নিচে পড়লে গুনাহ, নামাজ আদায় হয়না।"
এর পরের ওয়াজেই আবার নতুন হুজুরের যুক্তি শুনে বলে, "ঠিক ঠিক, আট রাকাতই ঠিক। বিশ রাকাত পড়া বেদাত।"
সবচেয়ে দুঃখজনক হচ্ছে, বেকুব লোকজন বইপত্র ঘাটাঘাটি না করে হুজুরের কথা শুনেই হাতাহাতি শুরু করে দেয়।
কথা হচ্ছে, কারোর মাথায় অতি সাধারণ যুক্তিটাই আসেনা যে, তারাবিহ নামাজটাইতো "নফল", বা খুব বেশি হলে "সুন্নত" বলতে পারেন, কিন্তু কোন অবস্থাতেই ফরজ বা ওয়াজিব না। কাজেই, নফল নামাজের আবার আট রাকাত, বিশ রাকাত, চল্লিশ রাকাত কি? আপনি আপনার মন ও ঈমান অনুযায়ী পড়তে থাকবেন। আট যদি আশিও হয়ে যায়, কোনই সমস্যা নাই। নবী (সঃ) নিজে পড়তেন আট রাকাত, এবং তিনিই উৎসাহ দিয়েছেন যত বেশি পড়তে পারবে, ততই ভাল। এখানে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো কোয়ালিটি, কে কত উত্তমভাবে, তাকওয়ার মধ্যদিয়ে নামাজ পড়েছে, সেটাই আসল। কে কত বেশি বা কম রাকাত পড়েছে, সেটা মোটেই গুরুত্বপূর্ণ নয়।

ঘটনা সংক্ষেপে বলতে গেলে এমন, রমজান মাসের এক রাতে সাহাবীরা দেখলেন নবীজি (সঃ) মসজিদে নামাজ পড়ছেন। সামনে যদি মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (সঃ) দাঁড়িয়ে নামাজ পড়েন, কে তখন তাঁর সাথে জামাতে শরিক হওয়া থেকে বিরত থাকতে চাইবে? কাজেই সাহাবীগণ তাঁর পেছনে দাঁড়িয়ে গেলেন।
পরের দিন আরও কিছু সাহাবী এসে দাঁড়িয়ে গেলেন। তাঁরা খবর পেয়েছেন নবীজি (সঃ) বিশেষ নামাজ আদায় করেন।
এর পরেরদিন গোটা মদিনা উপস্থিত হয়ে গেল। গোটা শহরেই খবর পৌঁছে গেছে "কিয়ামুল লাইলের" ব্যাপারে। কিন্তু সে রাতে নবীজি (সঃ) বাড়ি থেকে বের হলেন না। তিনি এলেন ফজরের সময়ে। এবং বললেন, আমি ভয় করছি আল্লাহ তোমাদের এই উৎসাহ দেখে এই নামাজ না তোমাদের উপর ফরজ করে দেন!
সেটাই ছিল তাঁর জীবনের শেষ রমজান। পরের রবিউল আউয়াল মাসেই তিনি ইন্তেকাল করেন।
আবু বকরের (রাঃ) সময়েও সাহাবীগণ নিজ নিজ মতন নামাজ আদায় করতেন। কেউ বাড়িতে, কেউ মসজিদে।
উমারের (রাঃ) সময়ের শুরুর দিকেও ছিল তাই।
একরাতে খলিফা উমার (রাঃ) দেখেন মসজিদ ভর্তি মানুষজন যে যার মতন নামাজ আদায় করছেন। তখন তিনি বলেন সবাই এক জামাতেই নামাজ আদায় করুক।
কেউ কেউ কুতর্ক তোলে যে উমার (রাঃ) বেদাত করেছেন। তারাবীহ জামাতে আদায় করেছেন। বাস্তবে যা ভুলই না, মূর্খতাও। কারন জামাতে নামাজ আদায় নবীর সময়েই তাঁরই নেতৃত্বে হয়েছিল। উমার (রাঃ) সেটাই ফিরিয়ে আনেন। নবীজি (সঃ) বন্ধ করেছিলেন এই আশংকায় যে আল্লাহ ফরজ করে দিতে পারেন, এবং যেহেতু এখন নবীজি (সঃ) চলে গেছেন, কাজেই আর ফরজ করার সুযোগ নেই।
তা শুরুর দিকে তারাবীহ আট রাকাতই পড়া হতো। কিন্তু আমাদের জামাতে নামাজ আদায়ের একটা নিয়ম হচ্ছে বৃদ্ধ, শিশু, নারী ও দুর্বলদের কথাও মাথায় রাখতে হয়। দীর্ঘক্ষণ একেক রাকাত নামাজ আদায় করাটা যথেষ্ট পরিশ্রমের বিষয়। বরং রাকাত সংখ্যা বাড়িয়ে কিছুক্ষন পরপর রুকু, সিজদাহ দিলে দাঁড়িয়ে থাকার মাঝে একটা বিরতি চলে আসে, যা নামাজে মনোনিবেশ করার জন্যও ফলপ্রসূ। কাজেই রাকাত সংখ্যা আট থেকে বাড়িয়ে বিশ করা হলো। কেন বিশ, কেন বাইশ, বা ষোল নয়, সেটা তাঁরাই ভাল বলতে পারবেন। অনুমান নির্ভর কিছু বলতে চাইছি না। তবে হজরত উমারের (রাঃ) সময়েই মসজিদে এত ভিড় হতো যে পুরুষদের জন্য দুইজন ইমাম এবং মহিলাদের জন্য একজন ইমামের ব্যবস্থা করতে হয়েছিল। সেই সময়ে মাইক্রোফোন না থাকায় স্বাভাবিকভাবেই একজনের কণ্ঠস্বর এত দূর পর্যন্ত শোনা যেত না।

ব্যস। এই হচ্ছে ঘটনা। এখানে কোথাও কোন সাহাবী বলেন নাই আট রাকাতের জায়গায় বিশ রাকাত পড়া যাবেনা, কিংবা বিশের নিচে পড়লে কারোর নামাজ অসম্পূর্ণ রয়ে যাবে। এই ক্যাঁচাল বাংলাদেশ সহ ইন্ডিয়া পাকিস্তানের পন্ডিতদেরই সৃষ্টি। কথায় কথায় একজন আরেকজন মূর্খ বলে, কাফের বলে, বেদাতি বলে। সবচেয়ে বিরক্তিকর হচ্ছে, এরা নিজেদের মতানৈক্যের উপর ভিত্তি করে একের পর এক মসজিদ বানিয়ে উম্মতকে বিভক্ত করে। নামাজে আমিন জোরে বলা আস্তে বলা, নাভির উপরে হাত বাঁধা বা বুকে বাঁধা বা হালের বিশ রাকাত বা আট রাকাত তারাবীহ ইত্যাদি ছোট ছোট বিষয় নিয়ে এরা বিভিন্ন দলে উপদলে বিভক্ত। আর এরাই বলে, "বিশ্বে মুসলিমদের মধ্যে কোন ঐক্য নেই।"
সবচেয়ে হাস্যকর ছিল কয়েক বছর আগে বিশ্ব ইজতেমার ঘটনা। দুই দল রাস্তার কুকুর বেড়ালের মতন মারামারি করে আখেরি মুনাজাতে মুসলিম বিশ্বের ঐক্য চেয়ে আল্লাহর দরবারে হাত তুলেছিল।
ফাজলামি দেখেছেন? বিশ্বের মুসলিমদের ঐক্য নিয়ে এদের দুশ্চিন্তা, সৌদি আরবের বাদশাহর ঈমান নিয়ে এদের দুশ্চিন্তা, অমুক দেশের এই আইন আর তমুক দেশের সেই সংস্কৃতি নিয়ে এদের টেনশনের শেষ নেই। এদিকে নিজেরা ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র ঘটনায় কামড়াকামড়ি করে মরে। এদিকে নিজেরা ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র ঘটনায় কামড়াকামড়ি করে মরে।


সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা এপ্রিল, ২০২২ রাত ৮:৫৪
৯টি মন্তব্য ৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হাদিসের সনদের মান নির্ধারণ করা শয়তানী কাজ

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৬:৪০



সূরাঃ ৯ তাওবা, ১০১ নং আয়াতের অনুবাদ-
১০১। মরুবাসীদের মধ্যে যারা তোমাদের আশেপাশে আছে তাদের কেউ কেউ মুনাফিক। মদীনাবাসীদের মধ্যেও কেউ কেউ মোনাফেকী রোগে আক্রান্ত। তুমি তাদের সম্পর্কে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছায়ানটের ‘বটমূল’ নামকরণ নিয়ে মৌলবাদীদের ব্যঙ্গোক্তি

লিখেছেন মিশু মিলন, ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



পহেলা বৈশাখ পালনের বিরোধীতাকারী কূপমণ্ডুক মৌলবাদীগোষ্ঠী তাদের ফেইসবুক পেইজগুলোতে এই ফটোকার্ডটি পোস্ট করে ব্যঙ্গোক্তি, হাসাহাসি করছে। কেন করছে? এতদিনে তারা উদঘাটন করতে পেরেছে রমনার যে বৃক্ষতলায় ছায়ানটের বর্ষবরণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

বয়কটের সাথে ধর্মের সম্পর্কে নাই, আছে সম্পর্ক ব্যবসার।

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:৫০


ভারতীয় প্রোডাক্ট বয়কটটা আসলে মুখ্য না, তারা চায় সব প্রোডাক্ট বয়কট করে শুধু তাদের নতুন প্রোডাক্ট দিয়ে বাজার দখলে নিতে। তাই তারা দেশীয় প্রতিষ্ঠিত ড্রিংককেও বয়কট করছে। কোকাকোলা, সেভেন আপ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মানুষের জন্য নিয়ম নয়, নিয়মের জন্য মানুষ?

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৫:৪৭



কুমিল্লা থেকে বাসযোগে (রূপান্তর পরিবহণ) ঢাকায় আসছিলাম। সাইনবোর্ড এলাকায় আসার পর ট্রাফিক পুলিশ গাড়ি আটকালেন। ঘটনা কী জানতে চাইলে বললেন, আপনাদের অন্য গাড়িতে তুলে দেওয়া হবে। আপনারা নামুন।

এটা তো... ...বাকিটুকু পড়ুন

একজন খাঁটি ব্যবসায়ী ও তার গ্রাহক ভিক্ষুকের গল্প!

লিখেছেন শেরজা তপন, ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:০৪


ভারতের রাজস্থানী ও মাড়ওয়ার সম্প্রদায়ের লোকজনকে মূলত মাড়ওয়ারি বলে আমরা জানি। এরা মূলত ভারতবর্ষের সবচাইতে সফল ব্যবসায়িক সম্প্রদায়- মাড়ওয়ারি ব্যবসায়ীরা ঐতিহাসিকভাবে অভ্যাসগতভাবে পরিযায়ী। বাংলাদেশ-ভারত নেপাল পাকিস্তান থেকে শুরু করে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×