somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কবরের দাম কোটি টাকা!

২৯ শে জানুয়ারি, ২০২৩ রাত ১২:২৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

অথেন্টিক ইসলামের সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, এর কনভিনিয়েন্স। যেমন, স্রষ্টার ইবাদতের জন্য আমাকে পকেট থেকে একটা পয়সাও খরচ করতে হবেনা। আমাকে দামি পাথর দিয়ে মসজিদ বানাতে হবেনা, স্রষ্টার মূর্তি, ছবি ইত্যাদি কিছুই বানাতে হবেনা, মোমবাতি, ঘিয়ের প্রদীপ, মিষ্টি, খাবার ইত্যাদি উপঢৌকন নিয়ে হাজির হতে হবেনা। যেকোন পরিষ্কার/পরিচ্ছন্ন স্থানেই আমি নামাজ পড়তে পারবো। রোজা রাখতে হলে আমাকে না খেয়ে থাকতে হবে, মানে খাবারেরও খরচ নাই। পানি না থাকলে তায়াম্মুম করেও পবিত্র হতে পারবো। আমার যদি খুব বেশি টাকা পয়সা হয়, তখনই কেবল যাকাত দেয়া আমার অবশ্য কর্তব্য হবে, এবং সেটাও একশো টাকায় মাত্র আড়াই টাকা! একেবারেই নগন্য!
অথচ বাংলাদেশে আমরা ঠিক উল্টোটা বানিয়ে ফেলছি। মসজিদ বানাচ্ছি আলহামদুলিল্লাহ, কিন্তু সেই মসজিদে ইমাম মুয়াজ্জিনের বেতন ভাতা, মসজিদের অন্যান্য সামাজিক কর্মকান্ডে নেতৃত্বপ্রদান ইত্যাদি সব বাদ দিয়ে আমরা ফোকাস করি টাইলস লাগানো, সেই টাইলস উঠিয়ে নতুন টাইলস লাগানো, সেটাও উঠিয়ে মার্বেল লাগানো, এসি লাগানো ইত্যাদি নিয়ে। একটি এলাকার বাসিন্দা খেয়েছে নাকি অভুক্ত আছে, কারোর বাবা মা সন্তানের চিকিৎসার জন্য মানুষের কাছে হাত পাতছে কিনা ইত্যাদি নানা বিষয়, যা মুসলিমদের জন্য আল্লাহ এবং রাসূল (সঃ) “প্রতিবেশীর হক" হিসেবে ফরজ করেছেন, আমরা পুরোপুরি ভুলে যাই। মসজিদ কমিটিতে অযোগ্য মানুষদের বসাই, যাদের নিজেদের ঈমান আমল এবং ধর্মীয় জ্ঞান নিয়েই প্রশ্ন উঠে। আমার শ্বশুর বাড়ির এলাকার মসজিদের ইমামের চাকরি চলে গেল। কেন? কারন উনার দুই মেয়ে ঢাবিতে পড়াশোনা করে। ইমামের মেয়ে কেন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়বে? কাজেই কমিটির চেয়ারম্যান, যে ম্যাট্রিকও পাশ করেনি, শুধু ব্যবসা করে (সেখানেও বাটপারি) প্রচুর টাকার মালিক হয়েছে, ওর সিদ্ধান্তেই এমনটা হলো।
ইমাম সাহেবের খেয়াল আল্লাহ ঠিকই রেখেছেন। কিন্তু আমার কনসার্ন হলো, দেশের লাখে লাখে মসজিদে এমনই সব লোকেরা কমিটি দখল করে আছে। দ্বীনের উন্নতি নিয়ে এদের কোন মাথাব্যথা নেই, নিজেরা নিজেরা পলিটিক্স নিয়েই ব্যস্ত।
অথেন্টিক ইসলামী বিয়েতে পাত্রীপক্ষের খরচ শূন্য হবার কথা। এক বাপ তাঁর মেয়েকে এত বড় করে বিয়ের যোগ্য করেছে, এতেই তাঁর যা খরচ হবার হয়ে গেছে। এখন পাত্র পক্ষের দায়িত্ব, তাঁকে সম্মানের সাথে নিজের বাড়িতে এনে মুনাফা ভোগ করা। মেয়েটা যদি গৃহিনী হয়, তবে বাকি জীবন সে যে সার্ভিস দিবে, সেটার বিনিময়ে কোন কাজের লোক রাখলে কোটি টাকা খরচ হবার কথা।
সে যদি চাকরীজিবী হয়, তাঁর বেতনের টাকাটা এই সংসারেই খরচ হবে। কাজেই, ছেলেপক্ষের “অবশ্য কর্তব্য” মেয়েকে দেনমোহর দিয়ে, ওয়ালিমা আয়োজন করে, মানুষজনকে খাইয়ে বৌ হিসেবে নিজের বাড়িতে তুলে আনা।
আমাদের দেশে ঠিক উল্টাটা হচ্ছে। পাত্রপক্ষ কনেপক্ষের উপর অনেক জোর জুলুম চাপিয়ে দিচ্ছে। এই অনুষ্ঠান, সেই অনুষ্ঠান, পাত্রের বন্ধুবান্ধব, আত্মীয়স্বজনদের জনে জনে শাড়ি, পাঞ্জাবি গিফট থেকে শুরু করে কোটি কোটি টাকা খরচ করাচ্ছে।
তারসাথে যোগ হচ্ছে ঘর ভর্তি ফার্নিচার, ফ্ল্যাট, গাড়ি ইত্যাদি হয়ে কুরবানীর ঈদে গরু পর্যন্ত সবকিছুই এই অমেরুদন্ডী জোঁকেরা চুষে খাচ্ছে।
পাত্রপক্ষের থেকে এরই শোধ হিসেবে তাঁরাও এমন আকাশচুম্বী মোহর সেট করছে যে পাত্রপক্ষও চোখ কপালে তুলে ফেলছে। তখন উনারা খাঁটি মুসলিম হয়ে বলেন, “এত মোহর সেট করাতো ইসলামে নিষেধ।”
তা ইসলামেতো উপহারের নামে, অনুষ্ঠানের নামে এমন জুলুম করাও নিষেধ। তখন ঈমান কই থাকে?
আর তাছাড়া, ঘরভর্তি ফার্নিচার, ফ্ল্যাট, গাড়ি ইত্যাদি নিজের নামে লিখিয়ে নেয়ার পরে মন চাইলো বৌকে ছেড়ে দিলা, তখন? ওর ফিন্যান্সিয়াল নিরাপত্তা কে দিবে?
কাজেই, বিষয়টা দুই দিক থেকেই এগিয়ে এসে সমাধান করতে হবে। একচুয়েলি তিন দিক থেকে। সমাজের মানুষের অহেতুক কৌতূহল, “মোহর কত দিয়েছে?” টাইপ প্রশ্ন শুনলেই জবাবে বলবেন, “আপনি জেনে কি করবেন? আপনি দিবেন?”
এইসমস্ত মানুষজনই বেশি ক্ষতি করে। একটা এমাউন্ট বলেন, ওরা বলবে “এত কম কেন? অমুকতো এত টাকা দিয়েছে। এই যুগে এত কম চলে?” টাইপ কথাবার্তাই সমাজকে নষ্ট করে।
তা যা বলছিলাম, ইসলাম খুবই কনভিনিয়েন্ট একটা ধর্ম। পৃথিবীর সবচেয়ে ধনী ব্যক্তিটি (সৌদি রাজ পরিবার, সম্মিলিত সম্পত্তির হিসাবে ওদের ধারেকাছে কেউই নেই) যেমন এর অনুসারী হতে পারবে, তেমনই সবচেয়ে গরিব ব্যক্তিটিও (সোমালিয়া ও সেই অঞ্চলের মানুষ, ক্ষুধা মেটাতে মাটি খায়) সহীহভাবে ইসলামচর্চা করতে পারবে।
কিন্তু বাংলাদেশ এখন আরেক কেরামতি শুরু করেছে। একটা পোস্টে দেখলাম ঢাকা শহরে কবরের দাম দেড় কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে! দেড় কোটি!!! অবিশ্বাস্য! সাধারণ মানুষ মরলে তাহলে কি ঢাকার বাইরে কবর দিতে হবে? নাকি নদীতে ভাসিয়ে দিবেন? বিদেশে খ্রিষ্টানদের কবর দেয়ার জন্যও অনেক খরচ করতে হয়। যে কারনে অনেক গরিব খ্রিষ্টান বাধ্য হয়ে শরীর পুড়িয়ে ফেলে।
মৃত মুসলিমদের জন্য বাংলাদেশের মুসলিমরা কেন কবরের মতন বিষয়টাকে এত জটিল করে ফেলছে? একে মেডিকেল বিল, তারউপর কবরের জন্য এত টাকা, তার উপর কুলখানি, কাঙালিভোজ নামের আরও কিছু কুপ্রথা ঢুকিয়ে একেবারে বারোটা বাজিয়ে দিচ্ছে। আমরা কি শান্তিতে মরতেও পারবোনা?
এর সমাধান সবাই জানি, কিন্তু করবেটা কে? আপনি যদি শুরু না করেন, তাহলে কেউই করবে না।
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে জানুয়ারি, ২০২৩ রাত ১২:২৮
৬টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছবিতে গণতন্ত্রের নামে মবতন্ত্র

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ২৩ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:১০



তথাকথিত গণতন্ত্রকামীদের পীর আল্লামা পিনাকী এবং ছোট হুজুর ইলিয়াস মোল্লার উস্কানীতে দেশজুড়ে চলছে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার নামে মবতন্ত্র। আল্লামা পিংকুর যুক্তি হচ্ছে- যে বা যারাই তাদের (গণতন্ত্রকামীদের) সূরে কথা না... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় আগ্রাসনবিরোধী বিপ্লবীর মৃত্যু নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ২৩ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:৩৭



শরিফ ওসমান হাদি। তার হাদির অবশ্য মৃত্যুভয় ছিল না। তিনি বিভিন্ন সভা-সমাবেশ, আলোচনা ও সাক্ষাৎকারে বক্তব্য দিতে গিয়ে তিনি অনেকবার তার অস্বাভাবিক মৃত্যুর কথা বলেছেন। আওয়ামী ফ্যাসিবাদ ও ভারতবিরোধী... ...বাকিটুকু পড়ুন

আজকের ডায়েরী- ১৭৩

লিখেছেন রাজীব নুর, ২৩ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:৩৪



গত কয়েকদিন আমি চিনি ছাড়া চা খাচ্ছি।
সারাদিনে মাত্র দুই কাপ চা। আগে চা খেতাম কমপক্ষে ৮ থেকে দশ কাপ। সবচেয়ে বড় কথা চা যেমন-তেমন, সিগারেট খাচ্ছি না।... ...বাকিটুকু পড়ুন

পাকিস্তান ও চীন কি ভারত-বাংলাদেশ যুদ্ধ বাধাতে চায়?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৩ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:৩১



ভারত-বাংলাদেশ যুদ্ধে পাকিস্তান ও চীনের লাভ আছে। যুদ্ধে বাংলাদেশ ক্ষতিগ্রস্থ্য হলে ভারত বিরোধীতায় তারা সহজে বাংলাদেশীদের তাদের পাশে পাবে। বাংলাদেশের নিরাপত্তার অযুহাতে এখানে তারা সামরিক ঘাটি স্থাপনের সুবিধার... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রচুর ব্লগিং করুন, কিন্তু......

লিখেছেন জটিল ভাই, ২৪ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১:৫৯

♦أَعُوْذُ بِاللهِ مِنَ الشِّيْطَانِ الرَّجِيْمِ (বিতাড়িত শয়তান থেকে আল্লাহ্'র নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করছি)
♦بِسْمِ ٱللَّٰهِ ٱلرَّحْمَٰنِ ٱلرَّحِيمِ (পরম করুণাময় অসীম দয়ালু আল্লাহ্'র নামে)
♦ٱلسَّلَامُ عَلَيْكُمْ (আপনার উপর শান্তি বর্ষিত হোক)


(ছবি নেট হতে)

তা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×