অস্ট্রেলিয়ায় এক বাঙালি বাচ্চা গাড়ির ভিতরে গরমে মারা গেছে।
ব্যাপারটা দুঃখজনক, তবে নতুন না। বিদেশে প্রায়ই এমনটা ঘটে। বাচ্চা, কুকুর বা এমনকি প্রাপ্তবয়ষ্করাও নিয়মিতই গাড়ির ভিতরে গরমে হিট স্ট্রোক করে। টেক্সাসের উদাহরণ দিতে গেলে, গরমের দিনে (অগাস্টের দিকে) আমাদের এখানে মাঝে মঝে একশো ডিগ্রি ফারেনহাইট (সাড়ে সাত্রিশ ডিগ্রি সেলসিয়াস) মাত্রা ছাড়িয়ে যায়। কিন্তু এসি গাড়ির ভিতর সেটা অনুভব করা যায়না। চালক যখন গাড়ি থেকে বের হয়, তখনই সে লু হাওয়া টের পায়।
এসির পাশাপাশি গাড়ির দরজা জানালা বন্ধ থাকলে বাইরের তাপমাত্রার (৮০-১০০ ডিগ্রি ফারেনহাইটে) সাথে পাল্লা দিতে গিয়ে গাড়ির ভিতরের তাপমাত্রা ১৩০-১৭২ ডিগ্রি ফারেনহাইটে (৭৭ ডিগ্রি সেলসিয়াসে) পৌঁছে যায়। এই সময়ে গাড়ির ভিতরে কোন বডিস্প্রের ক্যান থাকলে সেটা বার্স্ট করতে পারে। কোন পেপসির ক্যান অবশ্যই বার্স্ট করবে। আমার নিজের গাড়িতেই করেছিল।
তাই এই ভয়াবহ তাপমাত্রায় কেউই বাঁচার কথা না।
কিছু গাড়িতে (যেমন টেসলা) এখন এই অপশন থাকে যে আপনি বাইরে বেরিয়ে গেলেও গাড়ির ভিতরটা সে একটা নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় স্থির রাখবে। বেশিরভাগ গাড়িতেই এই অপশন নেই। কাজেই, এই ভয়াবহ তাপমাত্রা এড়াতে লোকে গাড়ির কাঁচের কিছু অংশ খুলে রাখেন, যাতে বাইরের বাতাস ভিতরে যাওয়া আসা করতে পারে।
আবার অনেকেই অনেকে কারণেই গাড়ির কাঁচ নামান না, যেমন হঠাৎ বৃষ্টি আসতে পারে, কোন চোর সেই ফাঁকের সুযোগ নিয়ে গাড়ির দরজা খুলে গাড়ি নিয়ে পালিয়ে যেতে পারে ইত্যাদি।
এখন অনেকেই এমন ভুলোমনা আছেন যারা ভুলে যান যে গাড়িতে বাচ্চা আছে। যেমন একটা কেস স্টাডিতে পড়েছিলাম এক বাবা নিয়মিত বাচ্চাকে ডে কেয়ারে ড্রপ করেন না। তিনি গাড়ি নিয়ে সরাসরি অফিসেই যান।
একদিন কোন বিশেষ প্রয়োজনে তাঁর দায়িত্ব ছিল বাচ্চাকে ডে কেয়ারে ড্রপ করবেন। গাড়িতে বাচ্চাকে তোলাও হয়েছিল। কিন্তু অফিসের ঝামেলায় তাঁর মন এতটাই আচ্ছন্ন ছিল যে গাড়ি চালু করতেই তিনি ভুলে যান গাড়ির পেছনে বাচ্চা আছে। বাচ্চাও ঘুমিয়ে ছিল, কোন আওয়াজ করেনি।
ভদ্রলোক ডেকেয়ারে না গিয়ে অফিসে চলে যান। গাড়ি পার্ক করে তিনি নিয়মিত অফিস করতে থাকেন। যতদূর জানি লাঞ্চের আগেও তাঁর মনে পড়েনি কি ভয়াবহ ভুল তিনি করে ফেলেছেন।
যত্তক্ষনে তাঁর খেয়াল হলো সব শেষ।
এটাতো অনেক সময়ের ব্যাপার বললাম।
অনেক মাই থাকেন যারা দেখেন সন্তান ঘুমাচ্ছে, কাজেই ঝট করে গ্রোসারি শপিং সেরে আসতে বাচ্চাকে গাড়িতে রেখেই দোকানে ঢুকে যান। ফিরে এসে দেখেন বাচ্চা শেষ।
অনেকের ক্ষেত্রে এমনটাও ঘটেছে যে তাঁরা ভাল করেই জানেন বাচ্চা গাড়িতে আছে, এবং গাড়িতে এভাবে ফেলে রাখলে কি পরিণতি হতে পারে, তারপরেও পার্ক করার মুহূর্তেই তাঁদের মোবাইল ফোন বেজে উঠে, তাঁরা কথাবার্তায় ব্যস্ত হয়ে যায়, এবং সেই ফাঁকে বাচ্চার কথা ভুলে গিয়ে গাড়ি লক করে চলে যায়।
কারন যেটাই হোক, এটি একটি ভয়াবহ দুর্ঘটনা, যে কারোর সাথে ঘটতে পারে, এ নিয়ে কোনই সন্দেহ নেই। আমাদের যাদের বাচ্চা আছে, তাঁদের শুধু সাবধান থাকতে হবে এই ব্যাপারে। ফোনে কথা বলা যাবেনা। এবং বাচ্চার সাথে কথাবার্তা বলতে হবে যাতে কিছুই মন ভুলে না যায় যে আমাদের বাচ্চা গাড়িতেই আছে।
যে বাবা মা বাচ্চা হারিয়েছে, তাঁদের জন্য সমবেদনা। সান্তনার কোন ভাষাই থাকেনা।
বিদেশে সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে, এগুলি ঘটনাকে শুধু একটা দুর্ঘটনা হিসেবেই দেখে না, child endangerment (নেগলিজেন্সের কারনে) হিসেবে ধরা হয়। এর ফল ভয়াবহ। স্টেট সেই বাবা মায়ের অন্যান্য বাচ্চাদেরও সরিয়ে নিবে। ধরেই নিবে অন্যান্য বাচ্চাদেরও জীবন সংকটময়। সাবধানতার কোনই মার নাই।
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ রাত ১১:৩৪

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




