somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

"কোথায় গেল আমাদের পরিশ্রমের টাকা যা দিয়ে আমরা সময় মতন বিল পরিশোধ করেছি?"

০৯ ই জুন, ২০২৩ রাত ৯:৫৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমেরিকার ডাকবিভাগ অনেক চালু একটি প্রতিষ্ঠান। ইমেইল-ম্যাসেঞ্জার-এসএমসের যুগে এখন ব্যক্তিগত চিঠি চালাচালি বিলুপ্ত হয়ে গেলেও এখনও ব্যাংক-ক্রেডিট কার্ড কোম্পানি বা নানান ব্যবসা প্রতিষ্ঠান তাঁদের বিজ্ঞাপনের অন্যতম মাধ্যম হিসেবে ডাক বিভাগকেই ব্যবহার করে। প্রতিদিন আমরা আমাদের মেইলবক্সে আধা কেজি বা তারও বেশি পরিমান চিঠি, লিফলেট, বিজ্ঞাপন পেয়ে থাকি। সবাই ইউএসপিএসের মাধ্যমেই পাঠায়। বাংলাদেশের মতন এখানেও যদি পুরানো কাগজ বিক্রির ব্যবস্থা থাকতো, প্রতিমাসে এইসব বিজ্ঞাপন বিক্রি করেই আমাদের গ্যাস আর ইন্টারনেটের বিল উঠে আসতো।

তারপরেও আমেরিকান ডাক বিভাগ প্রতিবছর ন্যূনতম এক বিলিয়ন ডলার লস করে। যাদের মাথায় বিলিওন ডলার শব্দটি ঢুকছে না, তাঁদের জ্ঞাতার্থে, টাকায় এর পরিমান ১,০৮১,৯৩৪,০০,০০০. এই বিপুল পরিমান অর্থ আসে এমন সব খাত থেকে যেখানে আমেরিকা লাভ করে। যেকোন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানেও তাই। ধরা যাক আমার বিস্কিটের ফ্যাক্টরি আছে। নানান প্রোডাক্ট তৈরী হয়। আমার সবচেয়ে বেশি লাভ হয় ক্রিম বিস্কিটে। কিন্তু টোস্ট বিস্কিটে লসে চলছি। টোস্ট বিস্কিট প্রোডাকশন বন্ধ করার উপায় নেই, কারন তাহলে মার্কেট থেকে ছিটকে পড়বো। বিস্কিটের মার্কেটে আমার টিকে থাকতে হলে আমাকে সব জাতের বিস্কিটই তৈরী করতে হবে। তাই ক্রিম বিস্কিটের লাভ থেকে কিছুটা অর্থ আমি টোস্ট বিস্কিট প্রোডাকশনে ব্যবহার করবো, যাতে দুইটা প্রোডাক্টকেই আমি টেনে নিয়ে যেতে পারি। সেই সাথে আমার গবেষণা চলতে থাকবে কিভাবে টোস্ট বিস্কিটকে লাভজনক প্রোডাক্ট করা যায়। এর প্রোডাক্ট কস্ট কমাতে হবে, মার্কেটিং আরও জোরালো করতে হবে। সেলস বাড়াতে হবে। ইত্যাদি ইত্যাদি।
এইটাকে বলে মানি ম্যানেজমেন্ট। এই কারণেই যেকোন সফল অফিসে একাউন্টিং, ফাইন্যান্স, আরএন্ডডি, মার্কেটিং ইত্যাদি ডিপার্টমেন্ট থাকে। এই কারণেই একেকজন সিএফওকে মিলিয়ন ডলার বেতন দিয়ে রাখা হয়। সেও লাখে লাখে ডলার বেতন দিয়ে বিভিন্ন ডিপার্টমেন্টে প্রেসিডেন্ট, ভাইসপ্রেসিডেন্ট রাখে।
দেশের ক্ষেত্রেও ব্যাপারটা তাই।
এইটা সম্ভবই না যে আপনার দেশের সব ডিপার্টমেন্টই আপনাকে লাভ এনে দিবে। আমেরিকার মত বিশ্বের সবচেয়ে ধনী দেশের একটা উদাহরণতো দিলামই। বিশ্বের যেকোন দেশের কথাই ধরুন, সরকারকে এমন অনেক খাতেই ভর্তুকি দিয়ে পয়সা ঢালতে হয়। বাজেট করতে হয়। এবং সেই টাকার ব্যয়ের ব্যপারে মনিটরও করতে হয়। আমাদের দেশে বিদ্যুৎ, জ্বালানি তেল ইত্যাদিতে প্রতিবছর সরকারের বিপুল পরিমান ভর্তুকি দিতে হয়, এই কথা সবাই জানে। সরকার নিজেই বহুবার বলেছে, এবং বলাও উচিত। দেশের টাকা কোথায় কোথায় কত পরিমান ব্যয় হচ্ছে, সেটা জানা সব জনতারই অধিকার।
এর পরেও লোকে প্রশ্ন তুলছে, আমরা নিজেরা নিজেদের বিল ঠিক মতন পরিশোধ করেছি, তাহলে কেন বিদ্যুৎ পাচ্ছি না?
প্রশ্নটা মোটেই অযৌক্তিক না। কারন যেকোন সরকারেরই দায়িত্ব হচ্ছে, ভর্তুকি দেয়ার আগেই হিসাব করা যে এই পরিমান বিদ্যুৎ উৎপন্ন করতে আমাকে এত পরিমান টাকা খরচ করতে হবে। গ্রাহকদের থেকে আমি এত তুলে আনতে পারবো। তারপরেও আমার এত টাকা ভর্তুকি দিতে হবে। এই টাকা আমার আছেতো? যদি থাকে, তাহলেই আমি ঢালবো। নাহলে বাজেট কমিয়ে দিব। সাময়িক লোডশেডিং হোক, সমস্যা নাই, অচিরেই বিদ্যুৎহীন হতে হবেনা। এইটা যেকোন "ম্যানেজারের" জন্য এবিসিডির মতন অতি বেসিক ডিসিশন। সমস্যা হচ্ছে, আমাদের দেশে মন্ত্রী মিনিস্টার হতে হলে আপনাকে শিক্ষিত, অভিজ্ঞ (শিক্ষিত হলেই আপনি অভিজ্ঞ হয়ে যাবেন, এমনটা নয়) হতে হয়না। পাবলিক ভোট দিলে বা না দিলেও হতে পারবেন। তারচেয়ে বড় কথা, বিদ্যুৎ বিভাগে এত এত শিক্ষিত, যোগ্য, বিচক্ষণ মানুষ থাকার পরেও কারোরই পরামর্শের তোয়াক্কা করা হবেনা। সবাইকে মন্ত্রীর কথাই মানতে হবে। মন্ত্রীর দৃষ্টি আগামী পাঁচ বছর পরের নির্বাচনের দিকেই নিবদ্ধ থাকে। এর পরের বিষয় নিয়ে সে পরে ভাবে। ও যেহেতু নিশ্চিত না যে সে পরের টার্মেও মন্ত্রী হতে পারবে কিনা, কাজেই সে পরোয়াই করে না ওর পরে দেশের কিছু হোক বা না হোক। লং টার্ম গোল বা উন্নতি বিষয়টা আমাদের কালচারেই নেই।

তা আমাদের দেশে কিছুদিন আগেও লোড শেডিং বিদায় নিয়েছিল। বিদ্যুতের বিল আকাশ ছুঁই ছুঁই ছিল, তারপরেও লোকে বিদ্যুৎ পাচ্ছিল বলে খুশি ছিল। এখন শোনা যাচ্ছে বকেয়া পরিশোধ না করায় কিছু বিদ্যুৎ উৎপন্ন কেন্দ্র বন্ধ হয়ে গেছে। কাজেই, গরমে অতিষ্ট মানুষ স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন করবে যে কোথায় গেল আমাদের পরিশ্রমের টাকা যা দিয়ে আমরা সময় মতন বিল পরিশোধ করেছি?
এর উত্তর হতে পারে, ১. শুরুতেই সরকারের বিচক্ষণতার অভাব ছিল। হিসাব নিকাশ না করেই বিপুল পরিমান বিদ্যুৎ উৎপন্ন করে বকেয়া শোধের সময়ে দেখে টাকা নাই। এই মিসক্যাল্কুলেশনের জন্য এই বিভাগের সাথে জড়িত লোকজনের কাছে জবাবদিহিতা চাওয়া খুবই যৌক্তিক।
২. বিদ্যুৎ বিভাগে দুর্নীতি ঘটেছে। সংশ্লিষ্টরা সরকার থেকে প্রাপ্ত টাকা অফিসে না খাটিয়ে নিজের ব্যাংকে জমা করেছে। ছেলে মেয়েদের বিদেশে পড়তে পাঠিয়েছে, অথবা বৌয়ের নামে সম্পত্তি কিনেছে। এজন্যও জবাবদিহিতা দাবি করা যেকোন সভ্য নাগরিকের অধিকার।

কেউ কেউ দাবি করছেন আমেরিকা ইংল্যান্ডেও বিদ্যুতের এমন অবস্থা। নারে ভাই, আমি আমেরিকায় থাকি। দুই সেকেন্ডের জন্যও কারেন্ট যায় নাই। কাজেই বেহুদা মিথ্যাচার ছড়াবেন না।
পাবলিকের প্রতি অনুরোধ, বিশেষ করে ভিআইপি জনতা, প্লিজ, বিদ্যুৎ খরচে সাশ্রয়ী হন। আমার টাকা আছে, বা আমি সরকারি অফিসার, আমাকে বিল দিতে হয়না, কাজেই যা তা উপায়ে কারেন্ট পুড়াবো - এমন মেন্টালিটি থেকে সরে আসেন। আপনাদের কারনে এখন সাধারণ পাবলিক বিদ্যুৎ পাচ্ছেনা।

ফেসবুকে এখন অতিরিক্ত বুদ্ধিজীবী, যারা বুদ্ধিহীন লেখালেখিতে তাদের চেয়েও বুদ্ধিহীন পাবলিকের এটেনশন পাবার চেষ্টা করে। আশা করি ভবিষ্যতে উনারা একটু পড়ালেখা করে, একটু চিন্তাভাবনা করে লেখালেখি করবেন। এইটুকু দায়িত্ব নিতেই হয়।
এই লেখাটা পড়ে অনেকেই বিম্পি জামাত ট্যাগ দিয়ে দিতে পারেন। বেকুবকদের জ্ঞাতার্থে, জামাত বিম্পি আমলে বাংলাদেশ দুর্নীতিতে পরপর পাঁচবার চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল। কাজেই ওটা নিয়ে কথাই তুলতে চাইছি না। সরকারের কোন স্পেসিফিক কাজের সমালোচনা করা, আর সরকারের বিরোধিতা করা এক না। সহমত ছাগুরা সেটা বুঝে না।
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই জুন, ২০২৩ রাত ৯:৫৪
৮টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×