somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

রাজনীতিতে শয্যাসঙ্গী বদল

১৪ ই জুলাই, ২০২৩ রাত ১০:২১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

চায়ের আড্ডায় বাঙালির প্রিয় আলোচনার বিষয় রাজনীতি।
শুধু আজকে থেকেই না, কয় শতাব্দী হবে কে জানে! ব্রিটিশ আমল থেকেইতো বাঙালি জাতি রাজনীতি সচেতন। ভারত স্বাধীন হয়ে পাকিস্তান সৃষ্টি, এবং পাকিস্তান ভেঙ্গে বাংলাদেশ সৃষ্টি - সবকিছুতেইতো বাঙালিরই নেতৃত্ব ছিল।

তবে আমি অতি যত্নেই পলিটিক্স এড়িয়ে চলি। ভাল লাগেনা, তারচেয়ে বড় কথা মাথার তার প্যাঁচায় যায়। বুঝিই না যে বিষয়, তা নিয়ে আলোচনা করবো কিভাবে?
তবে একটা ব্যাপার ঐতিহাসিকভাবেই সত্য, তা হচ্ছে, রাজনীতিতে শয্যাসঙ্গী বদল কোন বিষয়ই না। এখানে "বন্ধু" বলে কেউ নেই, সবাই প্রয়োজনে যে যাকে পারে, ব্যবহার করে। দুঃসময়ে স্বার্থে আঘাত লাগলে বন্ধুই পল্টি খেয়ে শত্রু হয়ে যায়। এককালের "বন্ধু" চীন-আমেরিকার বর্তমান অবস্থা দেখেন। আমেরিকা জাপানকে আধুনিক যুদ্ধবিদ্যা শেখালো, সেই জাপানই পার্ল হারবারে বোমা মারলো। জবাবে আমেরিকা জাপানে বোমা ফেলে সব তছনছ করে দিল, আজ সেই জাপানই মার্কিনিদের বন্ধু।

অহিংসার পাঠ মুখস্ত করানো গান্ধীজির ফিলোসফি ছিল এক গালে চড় মারলে আরেকগাল পেতে দিতে। তিনি নিজে এই নীতি মেনে চলেছেন, ভগৎ সিং, সুভাষ বোসরা সেটা মানতেন না বলে তাঁদের তিরস্কারও করেছেন।
সেই গান্ধীজিই কিন্তু ইংরেজদের পক্ষে দেশীয় সিপাহীদের দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ লড়ার পক্ষপাতী ছিলেন। নিজের দেশের স্বাধীনতার জন্য অস্ত্র তুলতে যিনি নিষেধ করেছেন আজীবন, সেই তিনিই ব্রিটিশদের পক্ষে জার্মানদের বিরুদ্ধে লড়ার জন্য দেশীয় সিপাহীদের অস্ত্র তুলতে বললেন। তাঁর যুক্তি, এতে ইংরেজরা কৃতজ্ঞ হয়ে স্বাধীনতা উপহার দিবে।
গান্ধীবিরোধীরা এই ইস্যু নিয়েই বাপুকে চরম আক্রমন করে। এটি যে মোক্ষম অস্ত্র, এ নিয়েতো কোন সন্দেহ নেই।

গান্ধীজির বিপরীত কাজটাই করলেন নেতাজি সুভাষ বোস। তিনি গিয়ে হাত মেলালেন নরপশু হিটলারের সাথে। যে নরাধম জার্মান জাতি ছাড়া পৃথিবীর অন্য যেকোন জাতের মানুষকে মানুষই মনে করতো না, এমনকি জার্মান কেউ যদি নিজ জাতির বাইরে গিয়ে কাউকে বিয়ে করতো, তাহলেও মৃত্যুদন্ড দিত - সেই পিশাচের সাথে হাত মিলিয়েছিলেন "শত্রুর শত্রু আমার বন্ধু" - বিশ্বাসের ভরসায়। উনি কি মনে করতেন যে হিটলার ভারতীয়দের কোলে তুলে রাখবে? হেল নো! রাশিয়া আক্রমন করেই সে বুঝিয়ে দিয়েছিল বিষধরের কোন বন্ধু থাকে না। ভারতীয়রা ব্রিটিশদের বিদায় করলে হিটলার ওর নরপশুবাহিনী নিয়ে ঠিকই ভারত আক্রমন করতো।

হিটলারকে হারানো চার্চিল ইতিহাসের আরেক জঘন্যতম চরিত্র। ওর কারণেই আমাদের কোটি কোটি মানুষ অভুক্ত হয়ে মারা গিয়েছিল, এবং এ নিয়ে ওর মনে কোন অনুশোচনাও ছিল না। তবে কিনা হিটলারের মতন দানবকে বধ করতে চার্চিল ও স্তালিনের মতই কিছু দানব চরিত্রের প্রয়োজন ছিল। গান্ধীর অহিংসা হিটলারের নামের জানোয়ারের উপর কোন প্রভাব ফেলে না। হাজারটা গান্ধীকে মেরেও হিটলারের মনে বিন্দুমাত্র রেখাপাত ঘটতো না।

৭১ এ আমাদের উপর পাক মিলিটারি গণহত্যা চালায়। প্রাণ বাঁচাতে বাঙালি আশ্রয় নেয় মাত্র পাঁচ বছর আগেই যুদ্ধে আমাদের প্রতিপক্ষ "চিরশত্রু" ভারতে। ইন্দিরা গান্ধী তখন ভারতের প্রধানমন্ত্রী। তিনি আমাদের পাশে না দাঁড়ালে আমাদের স্বাধীনতা কয় দশক পিছিয়ে যেত কে জানে!
স্বাধীনতাকামী নিপীড়িত বাঙালির পাশে যেভাবে তিনি দাঁড়িয়েছিলেন, অটলবিহারী বাজপেয়ি তাঁকে দেবী দূর্গার সাথে তুলনা করে মন্তব্য দিয়েছিলেন; অথচ তিনিই অপারেশন ব্লু স্টারের নামে অমৃতসরে স্বর্ণ মন্দিরে খালিস্তানের (পাঞ্জাবিদের স্বাধীনতা সংগ্রাম) যোদ্ধাদের (ওদের ভাষায় বিদ্রোহী, দেশদ্রোহী, সন্ত্রাসী) উপর আর্মি লেলিয়ে দেন। আমাদের পবিত্র কাবা শরীফে কেউ যদি মিলিটারি নিয়ে আক্রমন করে, আমাদের কেমন লাগবে? ঠিক এই ঘটনাই ঘটেছিল সেদিন শিখদের সাথে। এরই ফলশ্রুতিতে লৌহমানবী ইন্দিরাকে শহীদ হতে হলো নিজেরই শিখ দেহরক্ষীর গুলিতে। তাঁর বিশ্বাস ছিল শিখ দেহরক্ষীরা বুঝবে যে তাঁর শত্রুতা শিখ ধর্মের বিরুদ্ধে নয়, বরং বিদ্রোহীদের দমনের উদ্দেশ্যেই তিনি সেই কঠিন নির্দেশ দিয়েছিলেন। কিন্তু ঐ যে বললাম, নিজেদের মহাপবিত্র ইবাদত স্থলে অমন সেনা অভিযান, অমন রক্তপাত কে কবেই বা মেনে নিতে পারবে?

আমাদের আমেরিকার সংকটটা দেখেন। লিবারেলদের ভোট দিলে অতিরিক্ত লিবারেল হয়ে যায়। আবার কনজারভেটিভদের ভোট দিলে রেসিজম শুরু হয়, হেট ক্রাইম বেড়ে যায়।

আরও বহু উদাহরণ আছে। আমাদের দেশেই আছে। মোট কথা রাজনীতিতে সাদা-কালো বলে কোন কিছু নেই। সবই গ্রে। এক তরফাভাবে সবকিছু চোখ বন্ধ করে সমর্থন করে যাবার কোন উপায়ই নেই। সবসময়েই লেসার অফ টু ইভিলস বেছে নিতে হয়।
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই জুলাই, ২০২৩ রাত ১০:২১
৫টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

দ্যা এডামেন্ট আনকম্প্রোমাইজিং লিডার : বেগম খালেদা জিয়া

লিখেছেন ডি এম শফিক তাসলিম, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:০৪

১৯৪৫ সালে জন্ম নেয়া এই ভদ্রমহিলা অন্য দশজন নারীর মতই সংসার নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন, বিয়ে করেছিলেন স্বাধীন বাংলাদেশের অন্যতম সুশাসক শহিদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান কে! ১৯৭১সালে এ... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মিশন: কাঁসার থালা–বাটি

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:২৭

বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

×