somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বিষয়টা আল্লাহ, ভগবান, ঈশ্বরের জন্য খুবই অবমাননাকর!

২৭ শে জুলাই, ২০২৩ রাত ৯:১৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ইন্ডিয়াতে ভয়াবহ বন্যা হচ্ছে। বাড়িঘর ভেঙে যাচ্ছে, গাড়ি ভেসে যাচ্ছে, ব্রিজ ভাঙছে, মানুষ মরছে। অবস্থা খুবই খারাপ।
বাংলাদেশেও সেটার রিয়েকশন হবে। পানিতো ওদের দেশ হয়ে এইদিকেও আসে। আমাদের প্রস্তুতি আছেতো?
সেটা পরে দেখা যাবে। বরং অতি বিরক্তিকর একটি বিষয় নিয়ে লেখা যাক।
“বন্যায় সব ভেসে গেলেও ভাঙেনি মহাদেবের মন্দির!”
কমেন্ট সেকশন ভরে যায় “হর হর মহাদেব” কমেন্টে।
একই ঘটনা ঘটে মুসলিমদের ক্ষেত্রেও। বন্যায় বা আগুনের রক্ষা পাওয়া মসজিদের ভিডিওর নিচে কমেন্ট আসে “আল্লাহু আকবর!”
যারা কমেন্টগুলো করে বেশিরভাগের সাথেই ধর্মের কোন সম্পর্ক নাই। ফেসবুকে কোন ন্যাংটা মানুষের প্রোফাইল ফলো করতে করতে হঠাৎ করে নিউজফিডে চলে আসে, তখন আবেগ দেখিয়ে কমেন্ট করে আবার ব্যস্ত হয়ে যায় পাপে।
অথচ মাথা একটু খাটালেই বুঝতো বিষয়টা আল্লাহ, ভগবান, ঈশ্বরের জন্য খুবই অবমাননাকর! এর মানে দাঁড়ায় চরম প্রাকৃতিক দুর্যোগে সর্বশক্তিমান নিজের বাড়ি সামলাতেই ব্যস্ত, বাকি মানুষ বাঁচলো না মরলো তাতে উনার কিচ্ছু যায় আসে না।
কিংবা, মানুষ মরছে, তাঁকে ডাকাডাকি করছে, অথচ তিনি নিজের বাড়ি ছাড়া কিছুই বাঁচানোর ক্ষমতা রাখেন না।
এমনতো না যে কোন প্রাকৃতিক দুর্যোগে মন্দির মসজিদ গির্জার কোন ক্ষতি হয় না। বরং তেমন উদাহরণই কোটি কোটি। একটা মন্দির বা মসজিদ বাঁচলেও ভেসেছে, ভেঙেছে, নিশ্চিহ্ন হয়েছে শ খানেক। কেন হবে না? আল্লাহ নিজেই তো বলেছেন, তিনি অবিনশ্বর, বাকি সব নশ্বর। তার মানে হচ্ছে পৃথিবী ও এর ভিতরের বাইরের সবকিছুই একদিন ধ্বংস হবে। ধ্বংস হতে বাধ্য। থেকে যাবেন কেবল তিনি। এটাই কি সব ধর্ম বলে না?
ইসলাম ধর্মের উদাহরণই দেই।
আমাদের শ্রেষ্ঠ মানব মুহাম্মদ (সাঃ), পৃথিবীতে তাঁর আয়ু ছিল কেবল ৬৩ বছর। তিনি চিরঞ্জীব ছিলেন না। সেটা সম্ভবও না। কুরআনেও বলা হয়েছে তাঁকেও মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতে হবে যেমনটা অতীতের সব নবী রাসূলদের করতে হয়েছে।
কোন নবী রাসূলই অমর হননি। সবাই মারা গেছেন।
আল্লাহর বাণী কুরআন, আমাদের সবচেয়ে পবিত্রতম গ্রন্থ। আগুনে পোড়ালে পুড়ে যায়, পানিতে ডুবালে বিনষ্ট হয়। না হওয়ার কোনই লজিকাল ও ধর্মীয় কারন নেই।
পবিত্র কাবা শরীফ, যেদিকে ফিরে আমরা নামাজ আদায় করি, যার চাইতে পবিত্রতম কোন স্থাপনা মুসলিমদের জন্য নেই - সেই কাবা ঘরও অতীতে বহুবার ধ্বংস হয়েছে, ভবিষ্যতেও হতে পারে। এইটাই নিয়ম।
মাঝে দিয়ে এই ফালতু ভিডিও ছবিগুলো বানাবার, পোস্ট করার, লাইক শেয়ার কমেন্ট করার মানে কি?
বরং একটি জরুরি ফ্যাক্ট তুলে ধরি। একটু গভীরভাবে চিন্তা করুন।
একবার আমাদের নবীজি (সঃ) কাবার চারপাশে তাওয়াফ করছিলেন, এবং কাবার উদ্দেশ্যে বলছিলেন, “কত উত্তম তুমি হে কাবা! আর্কষীয় তোমার খুশবু, কত উচ্চ মর্যাদা তোমার ( হে কাবা)! কত মহান সম্মান তোমার। সেই সত্তার শপথ, যাঁর হাতে মুহাম্মাদের প্রাণ! আল্লাহর নিকট মুমিন ব্যক্তির জান-মাল ও ইজ্জতের মর্যাদা তোমার চেয়ে অনেক বেশী।”
হাদিসটি বলেছেন আমাদের দ্বিতীয় খলিফা হজরত উমরের (রাঃ) পুত্র আব্দুল্লাহ (রাঃ), যিনি নিজেও একজন সাহাবী এবং আমাদের ইতিহাসের শ্রেষ্ঠতম আলেমদের একজন। এর মানে হচ্ছে, কাবা পৃথিবীর শ্রেষ্ঠতম, পবিত্রতম স্থাপনা - কিন্তু এর মর্যাদাও একটি মানুষের প্রাণ, সম্পদ ও সম্মানের চেয়ে বেশি নয়।
আরেকটা ইন্টারেস্টিং হাদিস বলি।
তবে তার আগে একটা ব্যাকগ্রাউন্ডও। আমাদের মসজিদে নববীতে আমরা জানি এক ওয়াক্ত নামাজ আদায়ের সওয়াব অন্যান্য মসজিদে নামাজের হাজার গুন বেশি। ঠিকতো?
তো একবার আমাদের নবীজির (সঃ) জামাতে নামাজের জন্য দেরি হচ্ছিল। এতটাই যে সাহাবীগণ নিজেরাই জামাতে আদায় করে ফেলেন। পরে যখন তিনি এসে উপস্থিত হন, তখন তাঁকে দেরির কারন জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, তিনি দুইজন মানুষের ঝগড়া মিটিয়ে মিলমিশ করাচ্ছিলেন। সেটা তাঁর কাছে মসজিদে নববীতে ইমামতির চাইতেও বেশি গুরুত্বপূর্ণ ছিল।
ভাবুন। ভাবতে থাকুন।
ভিডিওতে ফালতু এটেনশন না দিয়ে বন্যায়, ঝড়ে, তুফানে, যুদ্ধে, মহামারীতে, যেকোন দুর্যোগে আক্রান্ত মানুষের পাশে এসে দাঁড়ান, মানুষের মাঝে শান্তির ব্যবস্থা করুন, মানুষের সম্পদ ও সম্মান নষ্টে মনোযোগ না দিয়ে সেটা রক্ষার দিকে মন দিন। ইন শা আল্লাহ, বেহেস্ত আপনার পায়ের তলে এসে লুটাবে।
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে জুলাই, ২০২৩ রাত ৯:১৮
৫টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

চাঁদগাজীর মত শিম্পাঞ্জিদের পোস্টে আটকে থাকবেন নাকি মাথাটা খাটাবেন?

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৫৭



আমাদের ব্রেইন বা মস্তিষ্ক কিভাবে কাজ করে লেখাটি সে বিষয়ে। এখানে এক শিম্পাঞ্জির কথা উদাহরণ হিসেবে টেনেছি মাত্র।

ধরুন ব্লগে ঢুকে আপনি দেখলেন, আপনার পোস্টে মন্তব্যকারীর নামের মধ্যে "জেন একাত্তর" ওরফে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্মীয় উগ্রবাদ ও জঙ্গী সৃষ্টি দিল্লী থেকে।

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:১৫


((গত ১১ ডিসেম্বর ধর্মীয় উগ্রবাদ ও জঙ্গী সৃষ্টির ইতিবৃত্ত ১ শিরোনামে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম। সেটা নাকি ব্লগ রুলসের ধারা ৩ঘ. violation হয়েছে। ধারা ৩ঘ. এ বলা আছে "যেকোন ধরণের... ...বাকিটুকু পড়ুন

=আকাশে তাকিয়ে ডাকি আল্লাহকে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:০১


জীবনে দুঃখ... আসলে নেমে
শান্তি গেলে থেমে;
আমি বারান্দায় দাঁড়িয়ে হই উর্ধ্বমুখী,
আল্লাহকে বলি সব খুলে, কমে যায় কষ্টের ঝুঁকি।

আমি আল্লাহকে বলি আকাশে চেয়ে,
জীবন নাজেহাল প্রভু দুনিয়ায় কিঞ্চিত কষ্ট পেয়ে;
দূর করে দাও সব... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের হাদিকে গুলি করা, আর আওয়ামী শুয়োরদের উল্লাস। আমাদের ভুল কোথায়?

লিখেছেন তানভির জুমার, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৫৩



৩০ জনের একটা হিটলিস্ট দেখলাম। সেখানে আমার ও আমার স্নেহের-পরিচিত অনেকের নাম আছে। খুব বিশ্বাস করেছি তা না, আবার খুব অবিশ্বাস করারও সুযোগ নাই। এটাই আমার প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

এ যুগের বুদ্ধিজীবীরা !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১:৪০


ডিসেম্বর মাসের চৌদ্দ তারিখ বাংলাদেশে বুদ্ধিজীবী দিবস পালন করা হয়। পাকিস্তান মিলিটারী ও তাদের সহযোগীরা মিলে ঘর থেকে ডেকে নিয়ে হত্যা করেন লেখক, ডাক্তার, চিকিৎসক সহ নানান পেশার বাংলাদেশপন্থী বুদ্ধিজীবীদের!... ...বাকিটুকু পড়ুন

×