somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সাদি মোহাম্মদের মৃত্যু ও ডিপ্রেশন

১৫ ই মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:৫০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমার অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ এক ক্লায়েন্ট আছে। যদিও আমার বয়স ওর বড় ছেলের সমান, তবুও ক্লায়েন্ট না বলে বন্ধু বলা ভাল। একদম পরিবারের মতন হয়ে গেছি। বাড়ির সদস্যদের নাম ধরে চিনি, ওরাও আমার বৌ বাচ্চার খোঁজ খবর নেয়।
ইটালিয়ান পরিবার। লোকটার বড় ছেলেটা চার বছর আগে একদিন হঠাৎ মরে যায়। সুস্থ সবল যুবক, হাসছে, খেলছে, খাচ্ছে, হঠাৎ দুম করে মরে গেল।
ছোট একটা বাচ্চা এবং বিধবা বৌ।
বৌটাও ছয় মাস পরে আত্মহত্যা করে ফেলে। আত্মহত্যার আগে নিজের শরীরে প্রয়াত স্বামীর ছবি ট্যাটু করে। সারাক্ষন ডিপ্রেস্ড থাকতো। এবং মরার সময়ে সুইসাইড নোটে স্বামীর নামে লিখে যায়, "আমি তোমার কাছে আসছি।"
দম্পতির একটি মাত্র সন্তান। ছোট্ট একটি ছেলে। বাবা মাকে হারিয়ে এখন দাদার সাথে থাকে। দাদা সারাদিন কাজ করে। ওর আর ওর বোনের (বোনই আমার মূল ক্লায়েন্ট) অত্যন্ত ব্যস্ততায় দিন কাটে। নাতি ওদের সাথে থাকে, ঘুরে বেড়ায়।
ওর পরিবারে মৃত্যুর মিছিল চলছে। গত বছর ওর ভাগ্নি মারা গেছে। তার আগের বছর আরেক ভাগ্নি। ওরা অত্যন্ত ক্লোজলি নিটেড পরিবার, তাই বন্ডিং অনেক শক্ত। আজকেই লোকটা আমাকে বলছিল "আমার মাঝে মাঝে ইচ্ছা করে একটি ট্রাকের নিচে ঝাঁপিয়ে পড়ি। আমার অনেক যৌক্তিক কারন আছে। কিন্তু কাজটা আমি করবো না, কেন জানো বন্ধু? কারন আমি যদি মরে যাই, তাহলে আমার নাতি, ভাগ্নিদের কে দেখবে? ওরাতো পথে নেমে যাবে।"
তখন বললাম, "হ্যা, আমাদের যারা মরে যায়, তাঁরা জানেই না অন্যদের উপর দিয়ে কি কষ্টটা যায়।"

সাদি মোহাম্মদের মৃত্যুতে সবাই কাঁদছে। গোটা দেশের মানুষ উনার জন্য শোকাহত। কেন? তিনি শুধু একজন ভাল শিল্পী ছিলেন বলেই কি? ভাল শিল্পীতো অনেকেই থাকেন। আসলে তিনি একজন ভাল মানুষও ছিলেন। তাঁকে নিয়ে কোন নোংরামি, কুৎসিত স্ক্যান্ডাল ইত্যাদি কখনও শুনেছেন?
ভাল মানুষকে সবাই ভালবাসে, তাই তাঁর মৃত্যুতে এখন সবার মন খারাপ।
তিনি কেন মারা গেলেন? কোন অভিমানে নিজের প্রাণ কেড়ে নিয়েছেন?
পরিবারের লোকজন বলছেন মায়ের মৃত্যুর পরে তিনি ডিপ্রেশনে থাকতেন, সেটা থেকে বেরোতে পারেননি।

আমাদের দেশের মানুষ অসচেতন বলেই বলছি, এইটা একটি ভয়াবহ ব্যাধি। ডিপ্রেশনের রোগীদের প্রফেশনাল মানসিকরোগ বিশেষজ্ঞদের কাউন্সেলিংয়ের প্রয়োজন হয়। ক্ষেত্র বিশেষে ওষুধের ওপর থাকতে হয়। শরীরে ইনফেকশন হলে আপনি এন্টিবায়োটিক নেন না? ডিপ্রেশনের জন্যও তেমন মাঝে মাঝে ওষুদের দরকার হয়। আমাদের ব্রেন একটি অর্গান, যেমনটা আমাদের কিডনি, লিভার ইত্যাদি হয়ে থাকে, ব্রেনের কাজ আরও জটিল। শরীরের মাসলগুলো নিয়ন্ত্রণ করে। সেও ক্লান্ত হয়। ওরও বিশ্রামের প্রয়োজন হয়। কিডনি/লিভার ইত্যাদি ব্যথা হলে ডাক্তারের কাছে যান না? তাহলে ডিপ্রেশনে কেন যাবেন না? মানসিক রোগ মানেই পাগল নারে ভাই। মান্ধাতার আমলের এই ধারণা থেকে বেরিয়ে আসুন।

ডিপ্রেশনের রোগীরা নিজেদের ব্যর্থ মনে করে। তাঁরা মনে করেন পৃথিবীতে তাঁরা অহেতুক বেঁচে আছেন। এখানে যেমন মায়ের মৃত্যুর পর তাঁর মনে হয়েছে পৃথিবীতে তাঁর আর কেউ রইলো না। পরিবারের লোকজনের সময় কোথায়? তাঁরা নিজেরাইতো নিজেদের পরিবার নিয়ে ব্যস্ত থাকে। তিনি একা হয়ে গেলেন, এবং একাকিত্বই তাঁকে শেষ করে দিল।

এই যে এত মানুষের ভালবাসা, তিনি উপলব্ধিই করেন নাই। তাঁকে সেই ভালবাসা না জানালে তিনি উপলব্ধি করবেনই বা কিভাবে? তাঁর চলে যাওয়ায় যাদের ক্ষতি হয়ে গেল, তিনি যদি আগে জানতেন, বুঝতে পারতেন, তাহলে কি এই সিদ্ধান্ত নিতেন?
শিবলী মোহাম্মদ বলছেন তাঁরা দুই ভাই প্রতি রাতেই কথা বলতেন, আড্ডা দিতেন, সিনেমা দেখতেন, গান শুনতেন.... কিন্তু বড় ভাইয়ের ডিপ্রেশন কাটছিল না। সবকিছুর হতাশ হয়ে গিয়েছিলেন। ছোট ভাই বুঝাতেন সবাই তাঁকে কত ভালবাসে, স্টুডেন্টরাই তাঁদের সন্তান, বাংলাদেশের সঙ্গীতে তাঁর কত বড় অবদান ইত্যাদি। কিন্তু হতাশা কাটছিল না।
সমস্যাটা এখানেই, কেন আমরা ডিপ্রেশনকে সিরিয়াসলি নেইনা? হয়তো প্রফেশনাল কাউন্সেলিং বা প্রেস্ক্রাইবড মেডিসিন তাঁকে সুস্থ করে তুলতে পারতো!
আহারে! এমন মৃত্যু কারোর না হোক।
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:৫০
৪টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। আমের খাট্টা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৪



তাতানো গরমে কাল দুপুরে কাচা আমের খাট্টা দেখে ব্যাপারটা স্বর্গীয় মনে হল । আহা কি স্বাদ তার । অন্যান্য জিনিসের মত কাচা আমের দাম বাড়াতে ভুল করেনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ডাক্তার ডেথঃ হ্যারল্ড শিপম্যান

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:০৪



উপরওয়ালার পরে আমরা আমাদের জীবনের ডাক্তারদের উপর ভরশা করি । যারা অবিশ্বাসী তারা তো এক নম্বরেই ডাক্তারের ভরশা করে । এটা ছাড়া অবশ্য আমাদের আর কোন উপায়ই থাকে না... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার ইতং বিতং কিচ্ছার একটা দিন!!!

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:০৩



এলার্ম এর যন্ত্রণায় প্রতিদিন সকালে ঘুম ভাঙ্গে আমার। পুরাপুরি সজাগ হওয়ার আগেই আমার প্রথম কাজ হয় মোবাইলের এলার্ম বন্ধ করা, আর স্ক্রীণে এক ঝলক ব্লগের চেহারা দেখা। পরে কিছু মনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিসিএস শুধু দেশের রাজধানী মুখস্ত করার পরীক্ষা নয়।

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:১৪

"আমার বিসিএস এক্সামের সিট পরেছিলো ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট এ, প্রিপারেশন তো ভালোনা, পড়াশুনাও করিনাই, ৭০০ টাকা খরচ করে এপ্লাই করেছি এই ভেবে এক্সাম দিতে যাওয়া। আমার সামনের সিটেই এক মেয়ে,... ...বাকিটুকু পড়ুন

কে কাকে বিশ্বাস করবে?

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৩৯


করোনার সময় এক লোক ৯৯৯ এ ফোন করে সাহায্য চেয়েছিল। খবরটা স্থানীয় চেয়ারম্যানের কানে গেলে ওনি লোকটাকে ধরে এনে পিটিয়েছিলেন। কারণ, ৯৯৯ এ ফোন দেওয়ায় তার সম্মানহানি হয়েছে।

সমাজে এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×