রাহুল আনন্দ দাদাকে আমি একজন ভাল মানুষ হিসেবে চিনি। আজ পর্যন্ত এমন একটা লোককে পাইনি যে তাঁর নামে একটা খারাপ কথা বলেছে।
গান পাগল লোকটা বাদ্যযন্ত্র নিয়ে অনেক নাড়াচাড়া করেন। সুপার জিনিয়াস, সংগীতপ্রেমী ভদ্রলোক যেকোন বস্তুকে বাদ্যযন্ত্রে পাল্টে ফেলতে পারেন। রিক্সার বিভিন্ন পার্টস থেকে সংগীত বের করে আনতে পারেন, অনেক বাদ্যযন্ত্র নিজেই তৈরী করেন।
আমাদের "শকুন্তলা" নাটকে নেপথ্য সংগীত তাঁরই দেয়া। সেই সুবাদে কয়েকদিন রিহার্স্যাল রুমেও উপস্থিত ছিলেন। কি অসাধারন সংগীত যে তিনি দিয়েছেন!
একজন প্রকৃত শিল্পীর মতোই বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে তিনি ছিলেন অগ্রপথিক। সংগীত জগতের সঙ্গীসাথীদের নিয়ে তিনি রবীন্দ্রসরোবরে অবস্থান নিয়েছিলেন। স্বৈরাচারী সরকার তখনও ক্ষমতায়, তাঁর ক্যারিয়ার, তাঁর জীবন সবই বাজি ধরে তিনি দাঁড়িয়েছিলেন গণমানুষের পক্ষে।
অত্যন্ত দুঃখের সাথে জানলাম যে তাঁর বাড়িতে সন্ত্রাসীরা আগুন দিয়েছে। স্ত্রী সন্তান নিয়ে এক কাপড়েই বাড়ি থেকে বেরিয়ে যেতে হয়েছে। বছরের পর বছর ধরে বহু কষ্টে গড়ে তোলা তাঁর বাদ্যযন্ত্র সংগ্রহশালা, তাঁর শান্তির নীড়, বহু স্মৃতির আধার কয়েক মিনিটের ব্যবধানেই ধ্বংস হয়ে গেছে।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে, কারা করেছে?
প্রথমেই সন্দেহ আসবে বিএনপি-শিবিরের উপর, কারন রাহুলদা একজন "হিন্দু!" দেশে হিন্দুদের উপর কিছু হলেই সঙ্গত কারণেই দোষ যায় ওদের উপর।
পার্সোনাল জেলাসি/শত্রুতাও থাকতে পারে। দেশের অরাজকতার সুযোগে অনেকেই ব্যক্তিগত শোধ তুলছে। ওদেরই কেউ হয়তো কাজটা করেছে।
আবার লীগেরও কুকর্ম হতে পারে। যেভাবে ওরা গত ১৫-২০ দিন ধরে আমাদের সবাইকে দেখে নেয়ার হুমকি ধামকি দিচ্ছিল, বলছিল ডিম থেরাপি দিবে, বলছিল উচিত জবাব দিবে! ওদের আপা ওদের লাথি দিয়ে ফেলে ভিনদেশে চলে গেছেন, যাদের কারনে এমনটা হলো, ওদেরকে শাস্তি দিবে না? "হিন্দু"র উপর আক্রমন হলে এমনিতেও দোষ যাবে বিএনপি জামাতের ঘাড়ে, কাজেই কোন চিন্তা ছাড়াই মার! তাছাড়া দেশে অরাজকতা সৃষ্টি করলে লোকে এই বৈষম্যবিরোধী ছাত্রদের বিরুদ্ধে চলে যাবে, বলবে "এর নাম স্বাধীনতা? এজন্য শেখ হাসিনাকে বিদায় করা হয়েছিল? দেশবাসী বুঝবে, ওরা কি রত্ন হারিয়েছে!"
পুলিশ এখন বাটে আছে। গত কয়েকদিন সরকারি নির্দেশে ইচ্ছামতন খুনাখুনি করে এখন নিজেরাই নিজেদের জীবন বাঁচানোর লড়াই লড়ছে। ওরা তদন্ত করবে কখন? কিভাবে?
তবু একটি রাষ্ট্রে পুলিশের ভূমিকাই সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। আশা করি বাংলাদেশ পুলিশ দ্রুত রাজনৈতিক কব্জামুক্ত হয়ে স্বাধীনভাবে তাঁদের কাজ শুরু করবে এবং দুর্বৃত্তদের ধরে বিচারের সম্মুখীন করবে।
রাহুল দার মতন একজন মানুষের প্রতি অবিচারের যদি ন্যায়সংগত বিচার না করা হয়, তবে এই আন্দোলনের মুখে সবচেয়ে বড় কলঙ্কের কালিমা লেপন হবে।

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।


