somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আপনার নাতিও চিন্তা করে পাবে না কোন পুণ্যের জন্য তাঁর মালিক তাঁকে এত পুরস্কারে পুরস্কৃত করছেন।

০৮ ই আগস্ট, ২০২৪ রাত ২:৩৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

১৯৭১ সাল। চিটাগং।
এক ব্রাক্ষ্মন ভদ্রলোককে পাকিস্তান সেনাবাহিনী রাস্তায় আটকে ফেলে।
"আপকা নাম কেয়া হ্যায়?"
ওরা তাঁর নাম জানতে চায়। ভদ্রলোকের নামেই উনার ধর্মীয় পরিচয় প্রকাশ পাবে। তিনি কি বলবেন না বলবেন চিন্তায় পড়ে গেলেন। হিন্দু পরিচয় বেরিয়ে এলেইতো বুকভর্তি করে ফেলবে বুলেটে। পাকবাহিনী তখন ধুমায়ে হিন্দু মারায় ব্যস্ত।
তিনি কিছু বলার আগেই আজিজুর রহমান চৌধুরী সাহেব এগিয়ে এসে স্পষ্ট ইংলিশে সিপাহীদের জিজ্ঞেস করেন "কোন সমস্যা?"
উপমহাদেশে ব্রিটিশরা দুইশ বছর রাজত্ব করায় একটা লাভ হয়েছে এই যে ইংলিশ ভাষার কদর ওখানে এখনও সাংঘাতিক। অনর্গল ইংলিশে কথা বলা লোকজনকে এখনও আমজনতা সমীহের দৃষ্টিতে দেখে। তখনও দেখতো।
অর্ধশিক্ষিত পাকিস্তানী জওয়ানরা উর্দুতে বলে "উনার পরিচয় জানতে চাই।"
আজিজুর রহমান একজন সাচ্চা মুসলিম। উপরে আল্লাহ ছাড়া কারোর পরোয়া করেন না। উচ্চপদের সরকারি কর্মকর্তা। ঘুষ খান না, খেতেও দেন না। নিজে থাকেন ভাড়া বাড়িতে। বাইসাইকেল চালিয়ে অফিসে যান। তাঁর জুনিয়র অফিসাররাই নিজেদের বাড়িতে থাকে, গাড়িতে চেপে ঘুরে বেড়ায়। তাঁর চোখে চোখ রেখে কথা বলতে পারে না। তিনি সৎ, এইটাই তাঁর অহংকার। তিনি মিথ্যা বলেন না। কাপুরুষদের মিথ্যা বলার প্রয়োজন হয়। তিনি কাপুরুষ নন।
তিনি ইংলিশ চালিয়ে গেলেন।
"ইনি আমার ভাই। কেন? কোন অসুবিধা?"
প্রতিটা মানুষ আদম (আঃ) সন্তান, সেই সূত্রে তিনি সত্য কথাই বলেছেন। মিলিটারিদের কাছে সেটা ব্যাখ্যা করলেন না।
আর্মি জওয়ানরা একবার তাঁর দিকে তাকায়, একবার হিন্দু ভদ্রলোকটির দিকে। আজিজুর রহমানের গালভর্তি দাড়ি, শরীরে পাঞ্জাবি আর লুঙ্গি। বেড়িয়েছেনও মাত্রই মসজিদ থেকে জামাতে নামাজ পড়ে। ইনি যে মুসলিম, তাতে কোনই সন্দেহ নেই। তারউপর মুখ দিয়ে অনর্গল ইংলিশ কথাবার্তা বেরুচ্ছে। কথাবার্তার কনফিডেন্সে মনে হচ্ছে তিনি বড় সর কেউ।
অন্যদিকে সামনের লোকটিকে দেখেই বুঝা যাচ্ছে সে হিন্দু। অথচ মুসলিম লোকটি বলছে, ইনি তাঁর ভাই!
আজিজুর রহমান তাড়া দিলেন, "আপনাদের কোন সমস্যা না থাকলে আমরা তাহলে যাই? দেরি হলে বাড়িতে টেনশন করবে।"
সিপাহীরা তাঁদের আর না ঘাটিয়ে যেতে দিলেন।
"আপলোগ যাইয়ে।"
হিন্দু লোকটি নিজের জীবন ফিরে পেয়ে দৌড়াতে চাইলেন। আজিজুর রহমান সেটা বুঝেই তাঁকে চাপা স্বরে বললেন দৌড়াবেন না। আমার পাশাপাশি নরমালভাবে হাঁটতে থাকুন। দৌড়ালেই গুলি করবে।
আর্মিরা আসলেই তাঁদের দিকে অনেকক্ষন তাকিয়েছিল। তবে কিছু করলো না।

আজিজুর রহমান চৌধুরী ছিলেন আমার বাবার বাবা, মানে আমার দাদা। হিন্দু ভদ্রলোকটি ছিলেন আমার বাবার বেস্ট ফ্রেন্ডের বাবা।

সেদিনের সেই পুণ্যের জন্যই কিনা জানিনা, আজিজুর রহমান চৌধুরীর বংশধররা বিশ্বের নানান প্রান্তে ছড়িয়ে আছে, এবং প্রত্যেকেই মোটামুটি খেয়ে পড়ে বাঁচতে পারছে। প্রত্যেকের জীবনেই নানান সময়ে নানান বিপদ আসে, এবং পাশ কাটিয়েও চলে যায়। তাঁরা চিন্তা করে, ঘটনা কি? হয়তো কোন একদিন আল্লাহর সৃষ্ট এক মানুষকে তাঁদের পূর্বপুরুষ বাঁচিয়েছিলেন বলেই আল্লাহ খুশি হয়ে তাঁর বংশধরদের এসব বিপদ আপদ থেকে রক্ষা করে চলেছেন।
আল্লাহ আমাদেরকে বহুবার বহু পরীক্ষা করবেন। পাশ করলে পুরস্কার যা পাব, তা কল্পনাও করতে পারবো না।

দেশের এই অরাজক পরিস্থিতিতে, মজলুমের পাশে দাঁড়ান। হিন্দু বাড়িতে হামলা হচ্ছে? লুট হচ্ছে? আপনার বাড়িতে তাঁদের আশ্রয় দিন। অথবা দল নিয়ে ওদের বাড়িতে অবস্থান করুন। নিশ্চিত করুন কারোর বাবারও যেন সাধ্য না হয় সে বাড়ির দিকে একটা ঢিল ছোড়ার। প্রতিবেশীর বিপদে এগিয়ে আসা প্রতিটা মুসলিমের জন্য ফরজ। আপনি আপনার দায়িত্ব পালন করবেন। বিনিময়ে হয়তো পঞ্চাশ বছর পরে আপনার নাতিও চিন্তা করে পাবে না কোন পুণ্যের জন্য তাঁর মালিক তাঁকে এত পুরস্কারে পুরস্কৃত করছেন।
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই আগস্ট, ২০২৪ রাত ২:৩৭
৬টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

লিখেছেন এস.এম. আজাদ রহমান, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৪৪



বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

কেন বিএনপি–জামায়াত–তুরস্ক প্রসঙ্গ এখন এত তপ্ত?
বাংলাদেশের রাজনীতিতে দীর্ঘদিন ধরে একটি পরিচিত ভয়–সংস্কৃতি কাজ করেছে—
“র”—ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা নিয়ে রাজনীতিতে গুজব,... ...বাকিটুকু পড়ুন

নিশ্চিত থাকেন জামায়েত ইসলাম এবার সরকার গঠন করবে

লিখেছেন সূচরিতা সেন, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৪২


আমাদের বুঝ হওয়ার পর থেকেই শুনে এসেছি জামায়েত ইসলাম,রাজাকার আলবদর ছিল,এবং সেই সূত্র ধরে বিগত সরকারদের আমলে
জামায়েত ইসলামের উপরে নানান ধরনের বিচার কার্য এমন কি জামায়েতের অনেক নেতা... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রকৌশলী এবং অসততা

লিখেছেন ফাহমিদা বারী, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:৫৭


যখন নব্বইয়ের দশকে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার সিদ্ধান্ত নিলাম এবং পছন্দ করলাম পুরকৌশল, তখন পরিচিত অপরিচিত অনেকেই অনেকরকম জ্ঞান দিলেন। জানেন তো, বাঙালির ইঞ্জিনিয়ারিং এবং ডাক্তারিতে পিএইচডি করা আছে। জেনারেল পিএইচডি। সবাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

×