১. আজকে এক ফ্রেন্ড দেশ থেকে জানালো "জীবনেও সড়ক পেরোবার সময়ে এতটা নিরাপদ বোধ করিনি।"
রাস্তার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নিয়েছে Gen-Z'র পোলাপান। ট্রাফিক পুলিশরা এতদিন বেতন, ট্রেনিং আর ক্ষমতা নিয়েও যা করতে পারেনি, ওরা মাত্র কয়েকদিনেই সেটা করে দেখিয়েছে। আইন বরাবরই ছিল, ছিল না সেটার প্রয়োগ। ওরা রকেট সাইন্স আবিষ্কার করে ফেলেনি, শুধু নিশ্চিত করছে লোকে যেন সেই আইনটা মেনে চলে। ব্যস, এতেই আমাদের সড়ক নিরাপদ হয়ে গেল!
নায়ক ইলিয়াস কাঞ্চনকে নিয়ে কিছু আবাল ট্রল করার ধৃষ্টতা দেখাচ্ছে। বলছে উনি এতদিন কোথায় ছিলেন? এখন পথে নেমেছেন রাস্তা কন্ট্রোল করতে।
এই ছাগলগুলিকে থাবড়ায়ে থাবড়ায়ে বুঝানো উচিত যে ওদের বাপেরা যখন হাফপ্যান্ট ভিজায়ে ফেলতো, তারও আগে থেকে এই লোকটা নিরাপদ সড়কের জন্য আন্দোলন করে আসছেন। বাংলাদেশের ট্রাফিক কন্ট্রোল প্রধানের যদি কোন অফিসিয়াল পদ থাকে, এই লোকটাকে দেয়া উচিত। উনার এতদিনের সংগ্রাম কিছুটা রেকগনিশন পাক।
২. ট্রাফিকের চেয়েও দুর্দান্ত একটা ভিডিও দেখলাম ফেসবুক রিলে। দুই যুবক বাজারে গিয়ে মাইকিং করে ব্যবসায়ীদের বলছে "আপনারা কাউকে একটা টাকাও চাঁদা দিবেন না। কেউ যদি চাঁদাবাজি করে, তবে ছাত্রসমাজকে খবর দিবেন।"
শুনেছি বিএনপির কিছু ধান্দাবাজ নাকি এরই মধ্যে গর্ত থেকে বেরিয়ে এসে চাঁদাবাজি শুরু করতে গিয়েছিল। এগুলিকে লম্বা বাঁশে তেল মেখে পিটায়ে ওদের যোগ্যতা বুঝায় দেয়ার সময় এসেছে। নতুন বাংলাদেশে এইসব চাঁদাবাজি, স্টুডেন্ট পলিটিক্স, টিচার্স পলিটিক্স ইত্যাদি সব যেন নিষিদ্ধ হয়। নিষিদ্ধ মানে নিষিদ্ধ, ক্যাম্পাসে রাজনীতি নিয়ে কোন আলাপই হতে পারবে না। তোরা মেসি-রোনালদো নিয়ে মারামারি কর। তোরা ক্লাসের সবচেয়ে সুন্দরী মেয়েটার প্রেমিক হওয়ার জন্য মারামারি কর। কোন সমস্যা নাই। No more খালেদা-হাসিনা। "আমাদের দেশটা স্বপ্নপুরী, দরকার নাই মোদের দুই বুড়ি!"
ধর্ম নিরপেক্ষ দেশের মতোই পলিটিক্স বিবর্জিত ক্যাম্পাস চাই। তাহলেই আমাদের দেশের ইউনিভার্সিটিগুলো বিশ্বের সেরা ৫০০ ইউনিভার্সিটির তালিকায় চলে আসবে। আশা করি এই তরুণরাই সেটা করে দেখাবে।
৩. আমার ছেলের ডাক্তারের অফিসে এক আফ্রিকান ভদ্রলোক আছেন। উনি দেশবিদেশের খোঁজ খবর রাখেন। আমার সাথে দেখা হলে বাংলাদেশ, ইসলামিক বিশ্ব, ক্রিকেট ইত্যাদি নিয়ে গল্প করেন।
আজকে দেখা হতেই তিনি বলেছেন, "তোমার দেশের অবস্থা কি?"
"এখন ভাল।"
"ডিক্টেটর পালিয়েছে শুনলাম। ওর বিচার হবেনা?"
"দেখা যাক। দেশে ফিরলে অবশ্যই বিচার হওয়া উচিত।"
"নতুন যিনি এসেছেন...."
"ড ইউনুস।"
"হ্যা, নোবেল লরিয়েট, গ্রেট ম্যান!"
"চিনো ওকে?"
লোকটা এমনভাবে তাকালো যেন মনে মনে খুব আঘাত পেয়েছেন। একজন শিক্ষিত মানুষকে জিজ্ঞেস করছি ড ইউনুসকে চিনেন কিনা! এদিকে আমি নিজেওতো জনে জনে সব নোবেল বিজয়ীকে চিনি না। আপনারাই বলেন, গত বছরই যারা নোবেল জিতেছেন, কয়জনকে চিনেন?
এর মানে নোবেল জয় ছাড়াও উনার অবদান আরও অনেক বেশি। যে কারনে ফ্রান্স, ইতালি, জাপান, আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়াসহ বিভিন্ন দেশের সরকারপ্রধান উনাকে নিয়ে টানাটানি করে। মেসির মতন GOAT লাইনে দাঁড়িয়ে থাকে উনার সাথে ছবি তুলবে বলে। বিশ্বদরবারে সবচেয়ে উজ্জ্বলতম বাংলাদেশী নক্ষত্র তিনি, আর আমাদের দেশেই আমাদের সাবেক প্রধানমন্ত্রী বলতেন "উনি গরিবের রক্তচোষা, সুদখোর!"
আর উনার বিশ্বস্ত প্রাণীরা জিভ বের করে লেজ নাড়তে নাড়তে বললো "ঠিক ঠিক!"
একটা কথা আমি প্রায়ই আমার লেখায় লিখি, সেটা হচ্ছে, "আল্লাহ যাকে ইজ্জত দিয়েছেন, বান্দা তাঁকে বেইজ্জত করতে পারে?"
মানি লোকের সম্মান করতে না পারলে একদিন নিজেকেই বেইজ্জত হতে হয়।
৪. এদিকে গোপালগঞ্জে আরেক কমেডি চলছে। সেখানকার নেতাকর্মীরা বঙ্গবন্ধুর কবরের সামনে শপথ নিয়েছে যে ওরা দেশনেত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে না আনা পর্যন্ত আমৃত্যু সংগ্রাম করে যাবে। এ উদ্দেশ্যে ওরা ঢাকা খুলনা হাইওয়েতে বিক্ষোভও করেছে। ওদের হাতে ছিল রামদা, কিরিচ, লাঠি সোটা সহ দেশি অস্ত্র শস্ত্র। এর ফলে সেখানে বিরাট যানজটের সৃষ্টি হয়েছিল। যদিও পাত্তা না পাওয়ায় এক সময়ে নিজেরাই বাড়িতে ফিরে গেছে।
কথা হচ্ছে, আমি নিশ্চিত, ওদের এই আন্দোলনে গোটা দেশবাসী ওদের পাশে আছে। আমরা সবাই চাই আমাদের ঘরের মেয়ে ঘরে ফিরে আসুক। ক্ষমতা টিকিয়ে রাখতে এতগুলি মানুষকে গণহারে খুন করে, আয়নাঘর চালিয়ে, দেশি অর্থ বিদেশে পাচার করে, নিজের কাছের লোকজনকে দুর্নীতিতে সহায়তা করে তিনি একটা হেলিকপ্টারে চেপে পালিয়ে যাবেন, এত সহজ? দেশের মানুষের জন্য যা করেছেন, সেটা অস্বীকার করা নমকহারামী হবে। কিন্তু এতগুলি খুনের ওজন কয়টা পদ্মা সেতু, মেট্রোরেলে সমান হবে?
দেশের আদালতে উনার এবং উনাকে সহায়তা করা প্রতিটা কুশীলবের বিচার হতে হবে। বাদ যেন না যায় পুরানো কোন রাজনীতিবিদ দেশ শাসকও। দুর্নীতির জন্য যেন কোন ছাড় না দেয়া হয়। দুর্নীতি হচ্ছে দেশদ্রোহিতা, এর শাস্তি তেমনই কঠিন হতে হবে।
দেশের বিচার বিভাগ স্বাধীন হতে হবে, জাস্টিস শামসুদ্দিন চৌধুরীর মতন নির্লজ্জ্ব মিথ্যুক দালাল বিচারকদের বের করে দিতে হবে, দেশে প্রচলিত হতে হবে আইনের শাসন, নিশ্চিত করতে হবে কেউই আইনের উর্দ্ধে নয় - তবেই আমাদের দেশটা এমন এক দেশ হবে যা দেখে লোকে হিংসায় জ্বলবে। আর আমরা বলবো "আমাদের মত হতে চাও?"
যেমনটা পাকিস্তানিরা এরই মাঝে আমাদের হিংসা করতে শুরু করেছে।
৫. শ্রীলংকার পর বাংলাদেশের গণঅভ্যুত্থান দেখে পাকিস্তানেও খানিকটা নড়াচড়া শুরু হয়েছে। কথা হচ্ছে, ঐতিহাসিকভাবেই বাঙালি রক্ত গোলামীতে অভ্যস্ত নয়। ব্রিটিশ আমল থেকেই বাঙ্গাল জাতটা গোলামীর বিরুদ্ধে লড়ে এসেছে। পাকিস্তানের ক্ষেত্রে সেটা হয়নি। জন্মের পর থেকেই সামরিক শাসনের অধীনে থেকে থেকে ওদের রক্তের প্রতিটা কোষে গোলামী ঢুকে গেছে। এখন দেখার বিষয় এই যে ওরা কি সেই বিষাক্ত শেকড় উপরে ফেলতে পারবে কিনা। ওরা যদি নয়া পাকিস্তান গঠন করতে পারে, সেটা আমাদের উপমহাদেশের জন্যই মঙ্গলজনক। আমরা যদি সামনে এগুতে চাই, আমাদের ইন্ডিয়া-পাকিস্তান-শ্রীলংকা-নেপাল-ভুটান-মায়ানমার সবার সাথেই বন্ধুত্ব করে এগোতে হবে। বন্ধুত্ব মানে বন্ধুত্ব, গোলামী, চাটাচাটি, "আমার সব তোমার, তোমার কিছুই আমার নয়" ধরনের সম্পর্ক নয়।

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।


