ইন্ডিয়া-পাকিস্তানের যুদ্ধ লাগলে কার লাভ? কারোরই না। কিন্তু ক্ষতি? গোটা বিশ্বের। যে পরিমান লোকক্ষয় এবং সম্পত্তি বিনাশ হবে, সেটা মানব কল্যাণে ব্যয় হলে মানবজাতি কয়েক শতাব্দী সামনে এগিয়ে যাবে নিশ্চিত।
আগেও বহুবার বলে এসেছি, ভবিষ্যতেও বলবো, আধুনিক বিশ্বে একটা যুদ্ধ লাগা যতটা সহজ, বন্ধ করা তারচেয়ে অনেক বেশি কঠিন বা রীতিমতন অসম্ভব।
অতি সাম্প্রতিক রাশিয়ার আগ্রাসনের যুদ্ধটাই ধরা যাক। সবাই ধরেই নিয়েছিল ইউক্রেন দুই সপ্তাহও টিকতে পারবে না। সেই লড়াই দুই আড়াই বছর পেরিয়ে গেছে, এখনও কোন সমাধান নেই।
এর আগে আমেরিকার আফগানিস্তান-ইরাক আক্রমনের ঘটনা নেয়া যাক। অতি সহজে আমেরিকা সেইসব দেশের সরকার পতন ঘটিয়ে দিয়েছে, কিন্তু এরপরেই শুরু হয়েছিল আসল যুদ্ধ। গেরিলা যুদ্ধে মানুষ মরতে আর মারতে মারতে একটা পর্যায়ে আমেরিকা ওসব দেশ থেকে সেনা ফিরিয়ে আনতে বাধ্য হয়। মাঝে দিয়ে আমেরিকার সাত ট্রিলিয়ন ডলার খতম। সাত ট্রিলিয়ন মানে যীশু খ্রীষ্টের জন্মের পর প্রতিদিন যদি কাউকে দশ মিলিয়ন ডলার করে দেয়া হয়, তাহলে সংখ্যাটা সাত দশমিক তিন ট্রিলিয়ন হবে। একে ১১৭ দিয়ে গুন্ করলে টাকার হিসাব আসবে। এখন অনুমান করতে পারছেন কি বিপুল পরিমান এই টাকা? এই টাকায় চিকিৎসা, শিক্ষা, গবেষণা ইত্যাদিতে ব্যবহার করলে দুনিয়া কোথায় চলে যেত!
আর লক্ষ লক্ষ মানুষের প্রাণ ক্ষয়ের হিসাব কিভাবে করবেন? মৃত সন্তানের শরীরের টুকরো হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা একেকটি মাকে কত টাকার ক্ষতিপূরণ দিবেন? জীবনের মূল্য কি ডলারের হিসাবে হয়?
এখন ইন্ডিয়া পাকিস্তানের মাঝেও যুদ্ধ যুদ্ধ খেলা চলছে। অন্তত মিডিয়ায় যুদ্ধ শুরু হয়ে গেছে। দুই দেশেরই মিডিয়ায় কার্টুনের অভাব নেই, ওরা লাফালাফি করছে যুদ্ধ শুরু হলে হ্যান করেঙ্গা, ত্যান করেঙ্গা, বাস্তবে যুদ্ধ লাগলে এরাই সবার আগে চিপায় পালাবে। হাতি দিয়ে টেনেও এদেরকে ময়দানে আনতে পারবেন না। মাঝে দিয়ে দুই দেশের সেনাবাহিনীর কিছু সৈনিক ও ব্যাপক সাধারণ মানুষের মৃত্যু ঘটবে।
বাংলাদেশের চিন্তার বিষয় বা ফায়দা কি?
আপনি আমাকে বলেন, প্রতিবেশীর যদি ক্ষতি হয়, আপনার কি আসলেই কোন লাভ হয়? প্রতিবেশীর উন্নতিতেই বরং লাভ হয়। আমরা এমন প্রতিবেশী সবাই চাই যার বাড়িতে ঝগড়াঝাটি হয়না, গৃহকর্তা/কর্ত্রী ভাল চাকরি/ব্যবসা করেন, ছেলেমেয়েরা মন দিয়ে পড়াশোনা করে। এমন না যে ওর আয়ের উপর আমার সংসার নির্ভরশীল। ওর সাথে দেখা হলে কুশলাদি বিনিময়েই আমরা খুশি।
ওদেরকে দেখে আমরাও মোটিভেটেড হই। নিজেরাও নিজেদের আয় উন্নতি ঘটাই। বাচ্চাদের বলি উনাদের ছেলেমেয়েদের মতন রেজাল্ট করতে। বাড়িতে কেউ অতিথি আসলে গর্ব করে বলি "আফজাল সাহেবকে চিনেছেনতো? ঐ যে অমুক, উনিতো আমার প্রতিবেশী!"
বলি না? ভাল, ভদ্র, সমাজে মান্যগন্য প্রতিবেশী পেতে লাখ লাখ টাকা বেশি খরচ করে ভাল এলাকায় বাসা নেই। বাড়ির পাশে বস্তি গড়ে উঠতে গেলে আমরাই বাধা দেই। কেন? কারন আমরা জানি বস্তিতে ঝগড়াঝাটি, গালাগালি, মাদক, দেহ ব্যবসা ইত্যাদি ঘটে। আমরা জানি আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের উপর এর নেগেটিভ প্রভাব পড়ে।
কিন্তু এই আমরাই দেশের ক্ষেত্রে পুরো বিপরীত হয়ে যাই। "প্রতিবেশি রাষ্ট্রের" ক্ষতি হলে খুব আনন্দ পাই। শুধু আমাদের কথা বলছি না, আমি ইন্ডিয়া-পাকিস্তান সবার কথাই বলছি। ইন্ডিয়ার সাথে বর্তমানে এর কোন প্রতিবেশীরই সম্পর্ক ভাল নেই। ওরা যদি আদর্শ প্রতিবেশীই হতো, তাহলেতো এমনটা হওয়ার কথা ছিল না। কেন এমন হলো? সেটা নিয়ে ওদের চিন্তা নাই। ওদের গদি মিডিয়া এইসব প্রশ্ন করে না, ওদেরও এ নিয়ে ভাবনা নেই।
গদি মিডিয়া পাকিস্তানেও আছে। দেশের অর্থনীতি রীতিমতন থালা হাতে ভিক্ষা করার অবস্থানে চলে এসেছে, কিন্তু ইন্ডিয়ার বিরুদ্ধে হুমকি ধামকি দিতেই ওদের জনতা সব ভুলে গলা মিলাচ্ছে। পাকিস্তান সুপার লীগ টুর্নামেন্টে ভাল পারফর্মারকে একটা হেয়ার ড্রায়ার পুরস্কার দিচ্ছে, এদিকে এরা সোশ্যাল মিডিয়ায় যুদ্ধ জিতে ফেলছে।
একবারও প্রশ্ন করছে না ইন্ডিয়ার সাথে লড়বি ভাল কথা, তা আমার পাতে খাবার জুটবেতো?
স্বার্থপরের মতন শোনাচ্ছে? দেশ যুদ্ধে জড়াচ্ছে, আর আমি ভাত/রুটির চিন্তা করতে বলছি? জ্বি, এটাই বাস্তবতা। এইসব ফালতু যুদ্ধে নেতাদের কিছুই যাবে আসবে না। ওরা আরও প্রচুর দুর্নীতি করার সুযোগ পাবে। নির্দোষের রক্তে রাজনীতি করার সুযোগ পাবে। আমার ভাতে টান পড়লে আমার বৌ বাচ্চা না খেয়ে থাকবে। আর যুদ্ধে আমি মারা গেলেতো কথাই নাই। সাম্প্রতিক যেকোন যুদ্ধের উদাহরণ নেন, নির্দোষ মানুষের হতাহতের সংখ্যা কত সেটা শুধু দেখেন। নেতাদের কিছুই হয়না।
হ্যা কাশ্মীরে যে সন্ত্রাসী হামলা হয়েছে সেটার তদন্ত, বিচার ইত্যাদি সবই হওয়া উচিত। যারা হামলা করেছে, ওদেরকে একেবারে কোমর ভেঙে দেয়া উচিত। ভবিষ্যতে যেন এমন হামলা না হতে পারে, সেই ব্যবস্থা নেয়া উচিত। যাদের ব্যর্থতায় এই হামলা হয়েছে, ওদেরকে জবাবদিহি করতে হবে। সাধারণ মানুষের জীবনকে রক্ষার জন্যই সরকারকে দায়িত্ব দেয়া হয়। সেই দায়িত্ব পালনে ব্যর্থতার দায় কেন সরকার নিবে না? কেন এত গুরুত্বপূর্ণ স্থানেও সিকিউরিটির ব্যবস্থা ছিল না? কিভাবে সন্ত্রাসীরা এত গভীরে এসে পালিয়ে যেতে পারে? কেন এতদিন পরেও একটা সন্ত্রাসীকেও গ্রেফতার করা গেল না? ইন্টেলিজেন্স রিপোর্ট ছিল? না থাকলে কেন ছিল না? আর থাকলে কেন ব্যবস্থা নেয়া হলো না? মোদির নিজের উক্তিতেই দেশ রক্ষার দায়িত্ব সরকারের। এখনতো সে সরকার। সে কেন জনতাকে এ বিষয়ে প্রশ্নই করতে দিচ্ছে না? উত্তর দেয়াতো বহুদূরের ব্যাপার।
পাকিস্তান আর কতদিন সন্ত্রাসীদের অভয়ারণ্য হয়ে থাকবে? কেন দুনিয়ার সব ওয়ান্টেড সন্ত্রাসী ওদেরই দেশে পাওয়া যায়? এর জবাব দিতেই হবে।
কিন্তু "যুদ্ধ" কখনই এই সমস্যার সমাধান করতে পারবে না।
প্রতিবেশীর বাড়িতে আগুন লাগলে আমাদের খুশি হওয়ার কিছু নেই। ইন্ডিয়া যদি দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে বড় "Bully" রাষ্ট্র হয়ে থাকে, পাকিস্তানের সাথে আমাদের পুরানো হিসাব নিকাশ থেকেও থাকে, তবুও না। কারন ওদের বাড়ির সেই আগুন অতি দ্রুত আমার বাড়িতেও ছড়িয়ে পড়তে পারে। এই প্রতিবেশী আমার জায়গা এক হাত দখল করে ফেলেছে? আমার বাড়ির সীমানায় আবর্জনা ফেলে? মধ্যরাতে উঁচু ভলিউমে গান শুনে ঘুমের ব্যাঘাত ঘটায়? সব সমস্যার সমাধান আলোচনার মাধ্যমে করা যাবে। কিন্তু দুই প্রতিবেশীর বাড়িতে আগুন লাগলে আমার বাড়িও ঝুঁকিতে পড়ে যাবে। এটাই বাস্তব, এটাই সায়েন্স।
বাকিটা বুদ্ধিমান পাঠকরা বুঝে নিন।
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা মে, ২০২৫ রাত ৮:৫৫

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




