somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

রাসূলের (সা.) ভূমিকাসমূহ – ২

২৪ শে জুন, ২০১০ সকাল ১১:১৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

[এই পোস্টটা, যারা seriously ইসলাম সম্বন্ধে জানতে চান, তাদের জন্য। আমরা যখন প্রায় "নাস্তিক" একটা মস্তিষ্ক নিয়ে বড় হচ্ছিলাম, তখন চাইলেও ইসলাম সম্বন্ধে জানার তেমন সুযোগ ছিল না - বলা যায়: আজকের মত সহজলভ্য source বা resource কোনটাই তখন ছিল না। আজ তাই যারা "searching souls" - তাদের কাছে প্রয়োজনীয় তথ্য পৌঁছে দিতে বড় ইচ্ছা করে।]

এই সিরিজের আগের লেখাটা রয়েছে এখানে:
www.somewhereinblog.net/blog/mariner77/29183267

আমরা ইনশাল্লাহ্ রাসূল (সা.)-এঁর ৪টি প্রধান ভূমিকা সামনে রেখে আলোচনা করবো :

১)কুর’আনের ব্যাখ্যাকারী
২)স্বনির্ভর আইনপ্রণেতা
৩)নিখুঁত উদাহরণ

এবং
৪)যার আনুগত্য করতে হবে এমন ব্যক্তি।

(১)
কুর’আন ব্যাখ্যাকারী হিসেবে নবী মুহাম্মদ (সা.)

(প্রথম পর্বের ধারাবাহিকতায়, পরবর্তী অংশ)
…….

নবী (সা.) যেভাবে কুর’আনের অর্থ ব্যাখ্যা করে গেছেন:

সাধারণভাবে যে কেউ এটা বুঝবে যে, কুর’আনের বিভিন্ন দিকগুলো একমাত্র নবী (সা.)-ই ব্যাখ্যা করতে পারতেন, কেননা সেজন্য এমন কিছু জ্ঞানের প্রয়োজন, যা কেবল যিনি কুর’আন নাযিল করেছেন, অর্থাৎ আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা – তাঁর কাছেই রয়েছে। নবী (সা.) যেসব উপায়ে কুর’আন ব্যাখ্যা করেছেন সেগুলো নিম্নের শ্রেণীসমূহ ভূক্ত:

(কক)নবী (সা.) ঐ সমস্ত শব্দাবলীর অর্থ ব্যাখ্যা করেছেন যেগুলোর অর্থ বিভিন্ন কারণে অনির্দিষ্ট ছিল

কখনো কখনো কুর’আনের শব্দগুলি কোন ব্যক্তির বোঝার জন্য কিছুটা অসুবিধাজনক হতে পারে। এরকম হবার বেশ কিছু কারণ থাকতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, কুরআনে ব্যবহৃত একটি শব্দের একাধিক অর্থ থাকতে পারে এবং পাঠক হয়তো নিশ্চিত হতে পারেন না যে, আসলে কোন অর্থটা বোঝানো হয়েছে। সেক্ষেত্রে ঠিক কোন অর্থটা বোঝানো হয়েছে, তা জানার জন্য একমাত্র উপায় হচ্ছে যাঁর কাছে কিতাবখানি নাযিল হয়েছিল এবং যাঁকে কিতাবখানির জ্ঞান দেওয়া হয়েছিল – এবং কুর’আন ব্যাখ্যা করা যাঁর পালনীয় ভূমিকা ছিল – সেই নবীর (সা.) শরণাপন্ন হওয়া।
আলবানী এমন অনেক পরিস্থিতির উদাহরণ দেন, যখন, খোদ সাহাবীরা কুর’আনের কোন একটি আয়াতের উদ্দেশ্য বা অর্থ বুঝতে পারেন নি এবং নবী (সা.)-কে তাঁদের কাছে কুর’আনের অর্থ ব্যাখ্যা করতে হয়েছিল।
এ থেকে বোঝা যায় যে, কেবল আরবী ভাষার জ্ঞান থাকাটা – যা কিনা সাহাবীদের ছিল – সকল ক্ষেত্রে কুর’আন বোঝার জন্য পর্যাপ্ত নয়। কুর’আনকে সঠিকভাবে বুঝতে হলে তাই, যে কাউকে সুন্নাহর শরণাপন্ন হতে হবে। উদাহরণস্বরূপ আল্লাহ বলেন:

“যারা ঈমান এনেছে এবং যারা তাদের ঈমানকে জুলুম দ্বারা কলুষিত করেনি, নিরাপত্তা তাদেরই জন্য এবং তারাই হেদায়েতপ্রাপ্ত।” (সূরা আন‘আম, ৬:৮২)

সাহাবীরা জুলুম শব্দটি একটি ব্যাপক অর্থে বুঝেছিলেন, যার মাঝে সকল ধরণের অঠিক কর্মকান্ড অন্তর্ভূক্ত ছিল। তাই তাঁরা প্রশ্ন উত্থাপন করেছিলেন যে, এমন কে আছে যে কিনা কোন না কোন ধরণের অঠিক কাজের দোষে দোষী হয়। তাঁরা আল্লাহর রাসূলকে (সা.) এ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলেন এবং তিনি তাঁদের বললেন যে, এই আয়াতের মর্মার্থ তাঁরা যেমন ভাবছেন তেমন নয়। তিনি তাঁদের বললেন যে, এই আয়াতে ‘জুলুম’ শব্দ দিয়ে সুনির্দিষ্টভাবে আল্লাহর সাথে কাউকে শরীক করা বোঝাচ্ছে এবং এই প্রসঙ্গে তিনি কুর’আনের সূরা লুকমানের ১৩ নম্বর আয়াত উদ্ধৃত করলেন:

“নিশ্চয়ই শিরক করা জুলুম।” (সূরা লুকমান, ৩১:১৩)

এই উদাহরণে উল্লিখিত আয়াতকে ভুল বোঝা থেকে সাহাবীরা যে দুশ্চিন্তায় পতিত হয়েছিলেন, তা থেকে রাসূল (সা.)-কে তাঁদেরকে উদ্ধার করতে হয়েছিল। আরেকটি আয়াতে আল্লাহ বলেন:

“তোমরা যখন দেশবিদেশে সফর করবে, তখন যদি তোমাদের আশংকা হয় যে কাফিররা তোমাদের জন্য ফিতনা সৃষ্টি করবে, তবে সালাত সংক্ষিপ্ত করলে তোমাদের দোষ নেই।” (সূরা নিসা, ৪:১০১)

এই আয়াতের আপাত যে অর্থ দাঁড়ায় তা হচ্ছে এই যে, সফরের সময় কেউ যদি এ আশংকা করে যে, ইসলামের শত্রুরা তাকে আক্রমণ করতে পারে, তাহলেই কেবল সে তার সালাত সংক্ষিপ্ত করতে পারে। কিছু কিছু সাহাবী এ আয়াতের অর্থটা এভাবেই বুঝেছিলেন এবং সে জন্য তাঁরা আল্লাহর রাসূলের (সা.) কাছে গিয়েছিলেন এবং তাঁকে জিজ্ঞেস করেছিলেন যে, যখন কোন শত্রুর ভয় থাকবে না তখনও সালাত সংক্ষিপ্ত করা চালিয়ে যাওয়ার কোন সম্ভাবনা রয়েছে কিনা। রাসূল (সা.) তখন তাদের ভুল বোঝাবোঝির অবসান ঘটিয়ে পরিস্কার করে দিলেন যে, সফরে সালাত সংক্ষিপ্ত করাটা আল্লাহর তরফ থেকে একটা দান যা কিনা যখন ভয়ভীতি থাকবে না তখনও প্রযোজ্য। এবং মুসলিমদের উচিত তাঁর এই দান গ্রহণ করা। এর অর্থ হচ্ছে যে, এই আয়াতের শব্দাবলী কোন একটা কাজের জন্য একটা শর্ত জুড়ে দেয়নি বরং আয়াতটি যখন নাযিল হয়েছিল তখনকার একটি বিরাজমান অবস্থার উদাহরণ দিচ্ছিল যেক্ষেত্রি সালাত সংক্ষিপ্ত করা যাবে। এ ধরণের আরেকটা উদাহরণ হচ্ছে কুর’আনের ঐ আয়াত যেখানে আল্লাহ বলেন:

“ততক্ষণ পর্যন্ত পানাহার কর যতক্ষণ পর্যন্ত ঊষার সাদা সূতা কালো সূতার চেয়ে ভিন্ন প্রতীয়মান না হয়।”(সূরা বাক্বারা, ২:১৮৭)

এই আয়াত নাযিল হওয়ার পরে, একজন সাহাবী তাঁর বালিশের নীচে এক টুকরো কালো ও এক টুকরো সাদা – দুই টুকরো সুতা রাখলেন এবং সঠিকভাবে ঊষালগ্ন নির্ধারণ করতে পরীক্ষা করে দেখতেন যে, তিনি এই দুই টুকরো সুতার পার্থক্য করতে পারছেন কিনা। রাসূল (সা.) ব্যাপারটা সম্বন্ধে শুনলেন ও মন্তব্য করলেন যে, ঐ সাহাবীর একটা বিশাল বালিশ থাকতে হবে। কেননা, এই আয়াতে যা বলা হচ্ছে, তা হচ্ছে ঊষার দিগন্তের শুভ্র আভা থেকে রাত্রির অন্ধকারের কৃষ্ণতার পার্থক্য করা।
উপরের উদাহরণগুলোয় আমরা যে বক্তব্য তুলে ধরেছি, তা আমাদের প্রস্তাবনার পক্ষে যথেষ্ট হওয়া উচিত। ওগুলো থেকে আমরা বুঝতে পারি যে,

কুর’আনকে সম্পূর্ণভাবে ও শুদ্ধভাবে বোঝার জন্য কেবল আরবি ভাষার জ্ঞান পর্যাপ্ত নয়। বাস্তবে এমনকি কুর’আনের অন্যান্য আয়াতগুলোর জ্ঞানও কুর’আনের সকল আয়াত ব্যাখ্যা করার জন্য পর্যাপ্ত নয়। কুর’আনকে সঠিকভাবে বুঝতে চাইলে, যে কাউকে রাসূল (সা.)-এঁর কার্যকলাপ ও বক্তব্যের প্রতি মনোযোগ দিতে হবে এবং তিনি কিভাবে কুর’আন প্রয়োগ করেছিলেন সেটা জানতে হবে।

আর তাই সুন্নাহ পরিত্যাগ করে সেটা করাটা কারো জন্য সম্ভব নয়। রাসূলের(সা.) সাহাবীরা আরবী ভাষায় দক্ষ ছিলেন, তবু অনেক সময় তাঁরা কিছু সুনির্দিষ্ট আয়াতের অর্থ ভুল বুঝেছেন। উপরের উদাহরণগুলোতে আমরা এটাই দেখলাম যে রাসূল (সা.)- এঁর সাহায্য ছাড়া কতিপয় আয়াতের সুনির্দিষ্ট অর্থ, সেগুলো কতটা সাধারণ অর্থ অথবা কতটা বিশেষ অর্থ বহন করে এবং সেগুলো ঠিক কি বিষয়ে কথা বলে সেটা জানাটা সাহাবীদের জন্য অসম্ভব ছিল।

(খখ)নবী (সা.) সাহাবীদের ও অন্যান্যদের ভুল সংশোধন করেন

হাদীস গ্রন্থ মুসলিমে লিপিবদ্ধ রয়েছে যে, নাজরানের খৃষ্টানরা আল-মুগীরা ইবন শু’বাকে নিম্নলিখিত আয়াত সম্বন্ধে জিজ্ঞেস করেছিলেন।

[sb]“হে হারুণের বোন, তোমার পিতা অসৎ ব্যক্তি ছিলেন না এবং তোমার মাতাও ব্যভিচারিনী ছিলেন না।” (সূরা মরিয়ম, ১৯:২৮)

খৃষ্টানরা যুক্তি দেখাচ্ছিল যে “মেরী”[অর্থাৎ, মারয়াম (আ.)] নিশ্চিতভাবে হারুণের বোন ছিলেন না। সুতরাং, ঐ আয়াতে সময়ের হিসাবের একটা গন্ডগোল রয়েছে। মুগীরা যখন মদীনায় ফিরে এলেন তখন নবীকে (সা.) ব্যাপারটা সম্বন্ধে জিজ্ঞেস করলেন । তখন নবী (সা.) তাঁকে বললেন: “তারা নিজেদের তাদের নবীদের এবং তাদের ধার্মিক পূর্বসূরীদের নাম অনুযায়ী ডাকত।”

বুখারী এবং মুসলিমে আবু মুলাইকার বর্ণনায় নিম্নলিখিত হাদীসটি এসেছে:
“যদি নবীর স্ত্রী আয়েশা (রা.) এমন কিছু শুনতেন যা তিনি বুঝতেন না, তবে তিনি তা নিয়ে ততণ পর্যন্ত গবেষণা করতেন, যতণ না তা তাঁর বুঝে আসত। নবী (সা.) একবার বলেন, “যার কর্মফলের হিসাব নেওয়া হবে সে শাস্তি পাবে।” আয়েশা (রা.) বলেন, ‘কিন্তু আল্লাহ কি বলেন নি, “নিশ্চয়ই তাদের একটা হালকা হিসাবের সম্মুখীন হতে হবে” ?’ তিনি (সা.) বলেন, ‘সেটা হচ্ছে তাদের কর্মকান্ডের উপস্থাপনা। তবে যার কর্মকান্ডের বিস্তারিত হিসাব নেওয়া হবে সে ধ্বংসপ্রাপ্ত হবে’।”

(গগ)যা কিছু অবাধ নবী (সা.) সেটা নির্ধারণ করে দিয়ে গেছেন এবং সাধারণ অনুশাসন নির্দিষ্ট ক্ষেত্র চি‎‎হ্নিত করে গেছেন

নবী (সা.)এঁর কুর’আন ব্যাখ্যা ও প্রয়োগের একটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দিক হচ্ছে এই যে, তিনি এই আয়াতগুলো প্রয়োগের ক্ষেত্র নির্ধারণ করে দিয়ে গেছেন। উদাহরণস্বরূপ একটা সাধারণ অভিব্যক্তি থেকে অনেক সময় মনে হবে যে, তা একটি শ্রেণীর সকল সদস্যের বেলায় প্রযোজ্য হবে। কিন্তু বাস্তবে রাসূল (সা.) দেখিয়ে দিয়ে গেছেন যে, একটা সাধারণ বক্তব্য সবসময় যে সকলের বেলায় প্রযোজ্য হবে এমন কোন কথা নেই – অর্থাৎ – একটা সাধারণ অভিব্যক্তির বাইরে কিছু কিছু ব্যতিক্রম থাকতে পারে। উদাহরণস্বরূপ আল্লাহ কুরআনে বলেন:

“পুরুষ চোর এবং স্ত্রী চোরের বেলায় [বিধান হচ্ছে যে], তাদের হাত কেটে দাও।” (সূরা মায়িদাহ্, ৫:৩৮)

এই আয়াতখানি কিভাবে প্রয়োগ করতে হবে তা জানার একমাত্র উপায় হচ্ছে আল্লাহর রাসূলের (সা.) সুন্নাহর শরণাপন্ন হওয়া। কেননা ‘চোর’ এবং ‘হাত’ উভয়ই সাধারণ বা অনির্দিষ্ট অভিব্যক্তি। এমনিতে আপাতদৃষ্টিতে মনে হবে যে, প্রত্যেক চোরেরই হাত কেটে ফেলতে হবে। কিন্তু নবীর (সা.) কাছ থেকে আমরা যেমন জানি, এই দু’টো অভিব্যক্তিরই সাধারণ অনির্দিষ্ট অর্থটা এখানে বুঝানো হয়নি। উপরের আয়াতে হাতের জন্য ব্যবহৃত আরবী শব্দ ‘ইয়াদ’ বাহুমূল পর্যন্ত হাতের যে কোনটুকুই বোঝাতে পারে। কিন্তু রাসূল (সা.) ব্যাখ্যা করে গেছেন যে, এখানে কেবল কব্জি পর্যন্ত হাতের অংশ কেটে ফেলার আদেশ দেয়া হয়েছে। তিনি আরো বলে গেছেন যে, প্রত্যেক চোরেরই যে হাত কেটে ফেলা হবে এমনটি নয়। উদাহরণস্বরূপ আল্লাহর রাসূল (সা.) বলেন, “এক দীনারের এক চতুর্থাংশ বা তার চেয়ে বেশী মূল্যমানের কিছু চুরি করার জন্য হাত কাটতে হবে।” (বুখারী ও মুসলিম)
কুর’আনের এমন আরো অনেক আয়াত রয়েছে, যার সত্যিকার নিহিতার্থ নবী (সা.) সেই আয়াতগুলো সম্বন্ধে কি বলেছেন তা না জানলে বের করা সম্ভব না। নিম্নলিখিত আয়াতে একটা সাধারণ অর্থে ‘রক্ত’ শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে। কিন্তু নবী (সা.) ব্যাখ্যা করেছেন যে, ঐ সাধারণ বক্তব্যের কিছু ব্যতিক্রম রয়েছে:

“তোমাদের জন্য মৃত পশু (জবাই না করা মৃত পশু) এবং রক্ত এবং শূকরের মাংস নিষিদ্ধ।” (সূরা মায়িদা, ৫:৩)

রাসূল (সা.) মুসলিম জাতির জন্য ব্যাখ্যা করে গেছেন যে, এমন দুই ধরণের রক্ত রয়েছে যা তাদের জন্য হালাল, আবার এমন দুই ধরণের মৃত প্রাণীও রয়েছে যা তাদের জন্য হালাল। তিনি বলেন, “তোমাদের জন্য দুই ধরণের মৃত প্রাণী (মৃত জবাই না করা প্রাণী) হালাল এবং দুই ধরণের রক্ত (রক্তের উৎস) হালাল। দুই শ্রেনীর মৃত প্রাণী হচ্ছে মাছ ও পঙ্গপাল। দুই ধরণের রক্ত হচ্ছে কলিজা ও প্লীহা।” (ইবন মাজা, আলবানীর মতে সহীহ)। আল্লাহর রাসূল (সা.) বুঝিয়ে না দিলে মুসলিমরা তাদেরকে কিছু ভাল জিনিস থেকে বঞ্চিত করতো, যা আসলে আল্লাহ তাদের জন্য হালাল করে দিয়েছেন। একই ভাবে আল্লাহ বলেন:

“বলুন, আমার কাছে যে ওহী এসেছে তাতে লোকে যা খায় তার মাঝে আমি মৃত প্রাণী, বহমান রক্ত ও শূকরের মাংস ছাড়া কিছুই হারাম পাইনি।” (সূরা আল-আন’আম, ৬:১৪৫)।

কিন্তু এ ছাড়াও রাসূল (সা.) অন্য ধরণের খাদ্যও নিষিদ্ধ করে গেছেন। উদাহরণস্বরূপ তিনি গাধার মাংস নিষিদ্ধ করে গেছেন যা উপরোক্ত আয়াতে আল্লাহ উল্লেখ করেন নি।

(ঙঙ)কুর’আনের কোন আয়াতগুলো মানসুখ তা নবী (সা.) চি‎হ্নিত করে গেছেন

ইমাম আশ-শাফিঈ(রহ.) লিখেছেন, “কিতাবের বেশীরভাগ নাসিখ আয়াতগুলো (যেগুলো অন্য আয়াতকে বাতিল করেছে) কেবল নবীর (সা.) সুন্নাহ থেকে জানা যায়।” বাস্তবে ঐ ধরণের জ্ঞান কেবল নবীর (সা.) কাছ থেকেই লাভ করার কথা – যিনি ওহী এবং তার ব্যাখ্যা, দু’টোই লাভ করেছিলেন। কেননা তা না হলে তাঁর জীবদ্দশায় কারো একথা নিশ্চিতভাবে দাবী করার উপায় ছিল না যে, একটি আয়াত অন্য আর একটি আয়াতকে বাতিল করে দিয়েছে। আল্লাহ কুরআনে বলেন:

“তোমাদের নারীদের মাঝে যারা ব্যভিচার করে, তাদের বিরুদ্ধে তোমাদের মধ্য থেকে চারজন সাী তলব করবে। যদি তারা স্যা দেয় তবে তাদেরকে গৃহে অবরুদ্ধ করবে, যে পর্যন্ত না তাদের মৃত্যু হয় অথবা আল্লাহ তাদের জন্য অন্য ব্যবস্থা করেন।” (সূরা নিসা, ৪:১৫)

উপরের এ আয়াতটি সূরা নূরের ২ নম্বর আয়াত কর্তৃক মানসুখ (বাতিল হয়ে যায়)। নবী (সা.) নিম্নলিখিত বাক্যের মাধ্যমে তা ব্যাখ্যা করে গেছেন: “তোমরা আমার কাছ থেকে জেনে নাও। আল্লাহ তাদের জন্য একটা উপায় বাতলে দিয়েছেন। ব্যাপারটা যদি [ক] একজন বিবাহিত মানুষের সাথে অপর একজন বিবাহিত মানুষ অথবা একজন কুমার/কুমারীর মাঝে হয়, অথবা [খ] একজন কুমার ও একজন কুমারীর মাঝে হয়, বিবাহিত ব্যক্তিকে একশ দোররা মারা হবে, তারপরে পাথর নিক্ষেপ করা হবে। অবিবাহিত ব্যক্তিকে একশ দোররা মারা হবে এবং তারপর এক বৎসরের জন্য নির্বাসিত করা হবে।” (মুসলিম)
{উপরে [ক] এবং [খ] চিহ্নগুলো হাদীসের অংশ নয়, পাঠকের সুবিধার জন্য আমার সংযোজন}

(চচ)নবী (সা.) কুর’আনের ঐ সমস্ত আদেশগুলোর বিস্তারিত প্রয়োগ দেখিয়ে গেছেন, যেগুলোর কুর’আনে বিস্তারিতভাবে উল্লেখ নেই।

নবী (সা.) বিভিন্ন কুর’আনিক আদেশের বিস্তারিত ব্যাখ্যা দিয়ে গেছেন। উদাহরণস্বরূপ আল্লাহ মুসলিমদের সালাত কায়েম করতে বলেন কিন্তু তা কিভাবে সম্পাদিত হবে তা বিস্তারিতভাবে বলেন নি। কিভাবে সালাত সম্পাদন করতে হবে এই প্রশ্নের উত্তর স্পষ্টভাবে কুরআনে পাওয়া যাবে না। কিন্তু “আমাকে যেভাবে সালাত সম্পাদন করতে দেখ সেভাবে সালাত সম্পাদন কর” – এই বলে আল্লাহর রাসূল (সা.) এই জিজ্ঞাসার জবাব দিয়ে গেছেন।

এ ছাড়াও নবী (সা.) যাকাত, রোজা, হজ্জ, বিয়ে, তালাক, জিহাদ এবং এই ধরণের অন্যান্য বিষয়াদির ব্যাপারে আইনকানুন বা অনুশাসনের বিস্তারিত ব্যাখ্যা দিয়ে গেছেন। এই সব বিষয়ে কর্তব্য পালন করার জন্য মানুষকে তাগিদ দিয়ে কুর’আনের বহু আয়াত পাওয়া যাবে। কিন্তু ইসলামের এই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোর বিস্তারিত ব্যাখ্যার অধিকাংশই কুরআনে পাওয়া যাবে না। নবীর (সা.) পালনীয় ভূমিকার অন্যতম একটি ছিল এই যে, তিনি তাঁর কথা ও কাজ দ্বারা বিষয়গুলোর আইন-কানুন ও বিস্তারিত ব্যাখ্যা করবেন এবং তার বাস্তব প্রয়োগ দেখিয়ে দেবেন।
কুর’আনের নিরিখে তাঁর এই ভূমিকার কথা বলতে গিয়ে মওদুদী বলেন:

“কুর’আনকে এককথায় আইনগত খুঁটিনাটির একখানি পুস্তক না বলে বরং সাধারণ নীতিমালার একখানি কিতাব বলা যায়। জীবনের জন্য ইসলামের কর্মসূচীর বুদ্ধিবৃত্তিক ও নৈতিক ভিত্তিসমূহ পরিস্কারভাবে এবং পর্যাপ্ত পরিমাণে ব্যাখ্যা করাই হচ্ছে এই কিতাবের লক্ষ্য। মানুষের মস্তিষ্ক ও অন্তর উভয়ের কাছে আবেদন রেখে তা (কুর’আন) সেগুলো সুসংহত করতে চেয়েছে। বাস্তব ইসলামী জীবন ধারার জন্য এর পথনির্দেশনার পদ্ধতির মাঝে আইনকানুনের খুঁটিনাটি বিষয়গুলোর উল্লেখ অন্তর্ভূক্ত নয়। তার চেয়ে তা বরং মানব কর্মকান্ডের প্রতিটি দিকের জন্য মৌলিক কাঠামোর একটা রূপরেখা নির্ধারণ করা এবং এমন কিছু দিক নির্দেশনা প্রদান করা যার আওতায় মানুষ তার জীবনকে আল্লাহর ইচ্ছানুযায়ী সাজিয়ে নিতে পারবে – এসবকেই অগ্রাধিকার দিয়েছে। নবীর (সা.) মিশন ছিল কুর’আনিক নীতিমালার এক জীবন্ত উদাহরণ হিসাবে পৃথিবীর ব্যক্তিগত চরিত্র এবং মানবীয় অবস্থা ও সমাজের একটা মডেল উপহার দিয়ে সুন্দর জীবনের ইসলামী ধ্যানধারণাকে একটা বাস্তব রূপ দিয়ে যাওয়া।”

কুর’আনের বিষয়গুলো পরিষ্কার করে দেওয়া এবং সেগুলোর প্রয়োগ দেখিয়ে দেওয়ার ব্যাপারে নবীর (সা.) যে ভূমিকা, তার গুরুত্ব অপরিসীম। কুর’আনের অধিকাংশ অনুশাসনই সেগুলোর প্রয়োজনীয় বিস্তারিত ব্যাখ্যা ছাড়াই কুর’আনে উল্লিখিত হয়েছে। সেইসব প্রয়োজনীয় বিস্তারিত ব্যাখ্যা কেবলমাত্র নবীর (সা.) সুন্নাহর কাছ থেকে জেনে নেয়া যায়। ……….(চলবে, ইনশা’আল্লাহ্!!

[Page#107~116, The Authority and Importance of Sunnah - Jamaal al-Din M. Zarabozo থেকে অনুদিত।]

সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে জুন, ২০১০ সকাল ১১:২০
৬টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। মুক্তিযোদ্ধা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১



মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তালিকা প্রণয়ন ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ‘দেশের প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি রয়েছে। তারা স্থানীয়ভাবে যাচাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় রাজাকাররা বাংলাদেশর উৎসব গুলোকে সনাতানাইজেশনের চেষ্টা করছে কেন?

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:৪৯



সম্প্রতি প্রতিবছর ঈদ, ১লা বৈশাখ, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, শহীদ দিবস এলে জঙ্গি রাজাকাররা হাউকাউ করে কেন? শিরোনামে মোহাম্মদ গোফরানের একটি লেখা চোখে পড়েছে, যে পোস্টে তিনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি করাটা প্রফেসরদেরই ভালো মানায়

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৩


অত্র অঞ্চলে প্রতিটা সিভিতে আপনারা একটা কথা লেখা দেখবেন, যে আবেদনকারী ব্যক্তির বিশেষ গুণ হলো “সততা ও কঠোর পরিশ্রম”। এর মানে তারা বুঝাতে চায় যে তারা টাকা পয়সা চুরি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঘুষের ধর্ম নাই

লিখেছেন প্রামানিক, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫৫


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

মুসলমানে শুকর খায় না
হিন্দু খায় না গাই
সবাই মিলেই সুদ, ঘুষ খায়
সেথায় বিভেদ নাই।

হিন্দু বলে জয় শ্র্রীরাম
মুসলিম আল্লাহ রসুল
হারাম খেয়েই ধর্ম করে
অন্যের ধরে ভুল।

পানি বললে জাত থাকে না
ঘুষ... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরান-ইজরায়েল দ্বৈরথঃ পানি কতোদূর গড়াবে??

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:২৬



সারা বিশ্বের খবরাখবর যারা রাখে, তাদের সবাই মোটামুটি জানে যে গত পহেলা এপ্রিল ইজরায়েল ইরানকে ''এপ্রিল ফুল'' দিবসের উপহার দেয়ার নিমিত্তে সিরিয়ায় অবস্থিত ইরানের কনস্যুলেট ভবনে বিমান হামলা চালায়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×