somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নারী মর্যাদা এখন ভূলুণ্ঠিত!

৩১ শে ডিসেম্বর, ২০১২ রাত ৮:১২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

নারী মর্যাদা এখন ভূলুণ্ঠিত!
দিল্লিতে ১৬ ডিসেম্বর ওই তরুণী একটি চলন্ত বাসে ধর্ষিত হওয়ার ঘটনায় বিক্ষোভে ফুঁসে উঠেছে সারা ভারত। এ বিভ চলার সময় আরও দুজন নারী গণধর্ষণের শিকার হয়ে মারা গেছেন দেশটির মণিপুর ও উত্তরখণ্ড রাজ্যে।
ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে নারীরা এখানে কেবল ধর্ষণ বা সহিংসতার শিকার হচ্ছে এমন নয়, বরং নারীরা এখানে বঞ্চিত, হেয়, কোণঠাসা, অবহেলিত ও অচ্ছুত হিসেবে বিবেচিত। পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, দেশটির প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং ‘ব্যাপক সামাজিক পরিবর্তনের’ ডাক দিয়েছেন। কিন্তু নারীর ওপর এসব সহিংসতার পেছনে কোন বিষয়গুলো মূল ভূমিকা পালন করছে, খতিয়ে দেখা দরকার।
বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভারতে জন্মের আগেই ভ্রূণাবস্থায় অনেক নারীকে হত্যা করা হয়। জন্মের পর নারী-পুরুষের অনুপাত ঠিক রাখার অজুহাতে নারীশিশুদের হত্যা করার ঘটনা ঘটছে। এসব এড়িয়ে যেসব নারী বেঁচে থাকেন, তাঁদের অনেকে সামাজিক ও অর্থনৈতিক জীবনে বিভিন্ন পরিস্থিতির কারণে বৈষম্য, কুসংস্কার, সহিংসতা ও অবহেলার মধ্যে জীবন কাটাতে বাধ্য হন।
থমসন রয়টার্সের ট্রাস্ট ল সংবাদ সেবার পরিচালিত এক জরিপের ফলাফল বলছে, বিশ্বের নারীদের জন্য নিকৃষ্টতম স্থান হলো ভারত। এ দেশটিতে মতাসীন দলের প্রধান, পার্লামেন্টের স্পিকার, তিনজন মুখ্যমন্ত্রী এবং অনেক বিখ্যাত খেলোয়াড় ও সফল ব্যবসায়ীদের একাংশ নারী। এটি এমন একটি দেশ, যেখানে তরুণ প্রজন্মের নারীদের এক বিরাট অংশ আগের চেয়ে অনেক বেশি মাত্রায় বাড়ির বাইরে কাজে যোগ দিচ্ছেন। কিন্তু নারীদের ওপরে নির্যাতন-নিপীড়নও বাড়ছে পাল্লা দিয়ে।
বিবিসি বলছে, ২০১১ সালে দেশটিতে ধর্ষণের পরিমাণ আগের বছরের চেয়ে ৯ দশমিক ২ শতাংশ বেড়েছে। ওই বছর প্রায় ২৪ হাজার ধর্ষিত নারীর ৫৪ দশমিক ৭ শতাংশের বয়স ১৮ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে। পুলিশের রেকর্ড বলছে, ৯৪ শতাংশ নারীর কাছে ধর্ষকেরা ছিল পূর্বপরিচিত। এদের এক-তৃতীয়াংশ প্রতিবেশী এবং অন্যদের মধ্যে আছে অভিভাবক ও আত্মীয়রা। দেশটিতে যে পরিমাণ ধর্ষণের ঘটনা ঘটে, তার ১৭ শতাংশ ঘটে কেবল দিল্লিতে। এ জন্য দিল্লির এখন ‘ধর্ষণের নগর’ বলে কুখ্যাতি জুটেছে।
শুধু ধর্ষণ নয়, আরও বিভিন্ন উপায়ে নারীদের ওপরে চালানো হয় অত্যাচার-অবিচার। ২০১১ সালের পুলিশ রিপোর্ট বলছে, দেশটিতে আগের বছরের তুলনায় নারী অপহরণ বেড়েছে ১৯ দশমিক ৪ শতাংশ, যৌতুকের জন্য মৃত্যুর পরিমাণ বেড়েছে ২ দশমিক ৭ শতাংশ, পিটানো বেড়েছে ৫ দশমিক ৪ শতাংশ, অন্যান্য যৌন নিপীড়ন বেড়েছে ৫ দশমিক ৮ শতাংশ এবং নারী পাচার বেড়েছে ১২২ শতাংশ।
অর্থনীতিবিদ শিবন অ্যান্ডারসন এবং দেবরাজ রায়ের একটি গবেষণায় বলা হয়েছে, ভারতে প্রতিবছর গড়ে ২০ লাখ নারী নিখোঁজ হন। এঁদের ১২ শতাংশ জর সময়, ২৫ শতাংশ শৈশবে, ১৮ শতাংশ সন্তান প্রসবকালে এবং ৪৫ শতাংশ বৃদ্ধ বয়সে।
সবচেয়ে বেশিসংখ্যক নারীর মৃত্যু হয় সন্তান জšে§র সময় বিভিন্ন জখমের ফলে। নারীদের প্রতি অবহেলার বিষয়টি এর মধ্য দিয়ে খানিকটা বোঝা যায়।
দেশটিতে প্রতিবছর কমপে এক লাখ নারী আগুনে পুড়ে মারা যান। এঁদের একটি বড় অংশকেই যৌতুকের কারণে পুড়িয়ে মারে তাঁদের স্বামী বা শ্বশুরবাড়ির লোকেরা। তবে মৃত্যুর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ কারণ হলো হূদরোগ।
কার্যত ভারতের নারীদের সারা জীবনই বিভিন্ন বঞ্চনার মধ্য দিয়ে যেতে হয়। জীবনের প্রতিটি ধাপে বিভিন্ন প্রতিকূলতা তাঁদের পথরোধ করে দাঁড়ায়। সহিংসতা, দুর্বল স্বাস্থ্য, অসম সুবিধা, অবহেলা, খারাপ মানের খাবার এবং সামাজিক কুসংস্কার নারীদের জীবনকে দুর্বিষহ করে তোলে।
বিশ্লেষকেরা বলছেন, ভারতের নারীদের সামাজিক গ্রহণযোগ্যতা বাড়াতে এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সবার আগে দরকার সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন। দেশটির বিভিন্ন এলাকায়, বিশেষ করে উত্তরাঞ্চলে, পুরুষতান্ত্রিক দৃষ্টিভঙ্গি ও ব্যাপক মাত্রার নারীবিদ্বেষের মূল অনেক গভীরে প্রোথিত।
প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংসহ দেশটির অনেক নাগরিক মনে করেন, নারীর ওপর এত বেশি সহিংসতার জন্য রাজনীতিবিদদের কপটতাই দায়ী। তাঁদের সদিচ্ছার অভাবে নারীর ওপর সামাজিক এবং অর্থনৈতিক বৈষম্য ও নিপীড়ন বন্ধ করা যাচ্ছে না। গত পাঁচ বছরে দেশটির বিভিন্ন পর্যায়ের নির্বাচনে রাজনৈতিক দলগুলো কমপে ২৭ জন প্রার্থীকে মনোনয়ন দিয়েছিলেন, যাঁরা ধর্ষণের কারণে দোষী সাব্যস্ত হয়েছিলেন। দেশটির পার্লামেন্টের কমপে ছয় সদস্যের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ আছে।
নারীদের নিয়ে ভারতের অশিতি জনগণের মধ্যে অনেক ধরনের কুসংস্কার হয়তো শত শত বছর ধরে কাজ করছে। কিন্তু শহুরে শিতি মানুষদের একাংশ যে নারীদের সম্পর্কে কী ধরনের মনোভাব পোষণ করেন, তা বোঝা যায় দুজন রাজনীতিবিদের বক্তব্য থেকে।
গত সপ্তাহে ভারতের রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়ের ছেলে ও পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভায় কংগ্রেসের বিধায়ক অভিজিত্ মুখোপাধ্যায় দিল্লির আন্দোলনরত নারীদের সম্পর্কে যা বলেছেন, তা থেকে ভারতের সামাজিক অবস্থা বেশ ভালো বোঝা যায়। এক টেলিভিশনকে সাাত্কার দেওয়ার সময় তিনি বলেন, ‘যেসব সুন্দরী, সুন্দরী মহিলা, চড়া সাজে সেজে টিভিতে সাাত্কার দিচ্ছেন আর তাঁদের সন্তানদের দেখাচ্ছেন, তাঁরা আসলে সবাই শিার্থী কি না, তা নিয়ে আমার সন্দেহ আছে।’ আসল ঘটনার সঙ্গে জনগণের বিােভের সম্পর্কের বিষয়েও সন্দেহ প্রকাশ করেন তিনি। তবে মন্তব্যের এক দিন পর, ব্যাপক সমালোচনার মুখে তিনি বক্তব্য প্রত্যাহার করে নেন এবং মা চান।
পার্লামেন্টে প্রধান বিরোধী দল ভারতীয় জনতা পার্টির রাজস্থান থেকে নির্বাচিত আইনপ্রণেতা বানোয়ারি লাল সিংগামের ধারণা, স্কুলের শিার্থীরা স্কার্ট পরার জন্যই নিপীড়নের শিকার হন। স্কুলগুলোতে পোশাকবিধি বদলানোর জন্য তিনি কয়েকদিন আগে রাজ্যের প্রধান সচিবকে চিঠি পর্যন্ত দিয়েছেন। ওই চিঠিতে তিনি বলেন, মেয়েরা যখন স্কুলে যাওয়ার জন্য বাসা থেকে বেরিয়ে গাড়িতে ওঠার জন্য অপো করে, তখন সে দৃশ্য অনেকের যৌনতার উদ্রেক ঘটায়। তাই মেয়েদের হয় সালোয়ার-কামিজ বা পুরো-হাতা শার্ট-প্যান্ট পরানো উচিত।
তথ্যসূত্র: প্রথম আলো থেকে নেয়া
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সৎ মানুষ দেশে নেই,ব্লগে আছে তো?

লিখেছেন শূন্য সারমর্ম, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:৪৮








আশেপাশে সৎ মানুষ কেমন দেখা যায়? উনারা তো নাকি একা থাকে, সময় সুযোগে সৃষ্টিকর্তা নিজের কাছে তুলে নেয় যা আমাদের ডেফিনিশনে তাড়াতাড়ি চলে যাওয়া বলে। আপনি জীবনে যতগুলো বসন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

গরমান্ত দুপুরের আলাপ

লিখেছেন কালো যাদুকর, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৫৯




মাঝে মাঝে মনে হয় ব্লগে কেন আসি? সোজা উত্তর- আড্ডা দেয়ার জন্য। এই যে ২০/২৫ জন ব্লগারদের নাম দেখা যাচ্ছে, অথচ একজন আরেক জনের সাথে সরাসরি কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজীব নূর কোথায়?

লিখেছেন অধীতি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:২৪

আমি ব্লগে আসার পর প্রথম যাদের মন্তব্য পাই এবং যাদেরকে ব্লগে নিয়মিত দেখি তাদের মধ্যে রাজীব নূর অন্যতম। ব্যস্ততার মধ্যে ব্লগে কম আসা হয় তাই খোঁজ-খবর জানিনা। হঠাৎ দু'একদিন ধরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×