সাধারণত যে কোন ব্যবসায়ীদের ব্যবসা কেমন চলছে জিজ্ঞাসা করলে তারা উত্তর দেয় ' না ভাই, ব্যবসা খুব খারাপ যাচ্ছে '।
কিন্তু বই মেলায় লেখক, বিশেষ করে প্রকাশকদের যদি জিজ্ঞাসা করেন বই কেমন বিক্রি হচ্ছে, উত্তর আসবে ' খুব ভালো'।
তারপরে আরো বলবে এই যে দেখুন, নতুন লেখক বাবলু উদ্দিনের ' তিন চোখ কানা ' বইটি খুব চলছে। আরেক প্রকাশক বলবে নান্টু ঘোটক এর 'বারো রকমের বিয়ে' এবার সুপার হিট। বেস্ট সেলিং। এক হাজার বিক্রি হইছে প্রথম দিনেই। '.......
আসলে সত্যি কথা বলতে কি, বই মেলায় যে পরিমান মানুষ যায় সে পরিমান বই তারা কিনেনা। এই রাষ্ট্রে হুমায়ুন আহমেদ কিংবা জাফর ইকবাল স্যার এমন কিছু মানুষের বই মানুষ লাইন ধরে কিনে। কিন্তু এর বাইরে অনেক দামি মানুষের দামি বই, কেনা তো দূরের কথা সময় মত তাদের বইয়ের নামও জানতে পারেনা অনেক পাঠক। হয়ত সময়ের অনেক পরে ভাগ্য সুপ্রসন্ন হলে মাঝে মাঝে তা আমরা জানতে পারি ।
তবে ব্যক্তিগত ভাবে বিভিন্ন কাজে এ দেশে যাদের পরিচিতি বেশি তারা যদি লিখে থাকে যেকোন বই, তাহলে ব্যক্তি জনপ্রিয়তার কারনে সেই বই চলার সুযোগ বেশি। সেখানে কন্টেন্ট কি তা মুখ্য নয়। আর এরাই প্রকাশকদের মূল টার্গেট। এই কারনে কিছু ধান্ধাবাজ- বাটপার কিছিমের প্রকাশক ঘুরে ঘুরে আমলাদের বই বের করতে উৎসাহ প্রদান করেন এমনকি কৌশলে রাজি করান।
প্রকাশকরা মন্ত্রী পাড়ায় গিয়ে মন্ত্রীদের নতুন স্বপ্ন দেখিয়ে নতুন করে লেখক হতে রাজি করান। আর এসব কাজে একদল লেখক ভাড়ায় খাটে যারা বিভিন্ন প্রভাবশালী দের নামে চাহিদা অনুযায়ী যে কোন বিষয়ে লেখার জন্য প্রস্তুত থাকে।
এই প্রকাশকরা দুই এক সময় বড় বড় ব্যবসায়ীদের নিজের নামে কিংবা তাদের সুন্দরি স্ত্রীদের ভন্ড লেখক হতে রাজি করায় । আমি ব্যক্তিগত ভাবে এমন কিছু জিনিসের সাক্ষী।
এভাবে খেলোয়ার থেকে শুরু করে অনেক তারকাদের বই ভাড়ায় লেখা হয় শুধু প্রকাশকদের ব্যবসায়িক ধান্ধায়। শুধু নামি দামি তারকা হওয়ার সুবাদে আজ এই রাষ্ট্র এর অনেকেই ভন্ড লেখক বনে যাচ্ছে যা বাংলাবাজার এলাকায় ওপেন সিক্রেট। সেখানে গেলে আপনি জানতে পারবেন কোন প্রতাপশালী লোকের বই কোন অভাগা লিখছেন। এভাবেই নতুন ভন্ডদের জম্ন হয় কখনো নিজ আগ্রহে আবার কখনো প্রকাশকদের খপ্পরে পরে। তাই আমলা, রাজনীতিবিদদের লেখায় এখন অনেকেরই সন্দেহের তীর। এসব ভন্ডামির কারনে দু'একজন আমলা বা রাজনীতিবিদ যারা সত্যিকার অর্থেই লেখালিখি করতেন তারাও আজ প্রশ্নবিদ্ধ! হচ্ছেন।
আর এই রাষ্ট্রের বই মেলায় ভালো গবেষণা ধর্মী, তথ্যমূলক, বইয়ের নাম যা না চোখে পরে তার চাইতে তথাকথিত গল্পবাজ, ঔপন্যাসিকদের নতুন ধরনের কিছু মুখস্থ নামতার বই বেশি চোখে পরে। এইসব নামতা মার্কা বইয়ের নাম গুলো খুব আকর্ষিক।
যেমন লাল ঠোট, গোলাপি শাড়ী, ভালোবাসার কামড়, হৃদয় জ্বলে না ঠোট জ্বলে ইত্যাদি। আবার কিছু কিছু বই মানুষ কিনবেই। কারন ড্রোয়িং রুমের শোভার জন্য এসব বই ওই ঘরের মালিককে খুব সহজেই জ্ঞান পিপাসুর তকমা এনে দেয়।
এমন বইগুলো যা পড়া হয় যত না বেশি, তার চাইতে বেশি সাজানো হয় ওই বড়লোকের বড় বড় ড্রয়িংরুমে। যেমন গর্ভধারিণী, যাও পাখী, মা, পবিত্র কোরান শরীফ, রবীন্দ্র গুচ্ছ, ইত্যাদি। যাই হোক বই সাজিয়ে রাখা কিংবা বই ভাড়ায় লেখা নতুন কিছু নয়।
মোঘল, তুঘলক, সুলতানি, কিংবা আব্বাসিয় আমলে এমন নজির রয়েছে। ভাড়ায় বউ পেলে বই অসম্ভব কিছু নয়। শুধু নাম টাই তো বদল হচ্ছে আর কিছু না। এমন ভাড়ার ক্ষেত্রে কবিতার বাজার জমজমাট।
আমি বিষয়ের গভীর রহস্য উন্মচনের জন্য বেশ কিছু বড় লোক মেয়ে, কিছুক্ষেত্রে স্ত্রীদের কবি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করার আহবান জানাই। স্বভাবমতো তারা বলেন কবিতা সে লিখতে পারেনা। কিন্তু লোভ তাদের জিহ্বাগ্রবর্তী।
তাই সুযোগ নিয়ে বললাম আমি যদি আপনার হয়ে লিখে দেই (ভাড়ায়!) !!
ব্যস তখনি শুরু হয়ে গেলো খেলা। সকাল বিকাল তাদের ফোন। ফেসবুক নকিং। ভাগ্যিস আমি খুব ভালো কবিতা লিখতে জানিনা। তাই আর লেখা হয়নি কিছু। তবে এই সুযোগে দেখা হয়েছে অনেক পাগলামি।
যাই হোক আমি কিংবা আমরা কবিতা লিখতে না জানলেও বুঝি যে, আমি এটা জনিনা । কিন্তু অনেকেই কিছু না জেনেই এটা জানে যে, সে লেখক কিংবা কবি। এই আমাদের অদ্ভুত বাংলাদেশ, রহস্যময় বই মেলা। লেখকদের অসহায়ত্ব, অবাক তাকিয়ে থাকা।


সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ বিকাল ৪:৩৯

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




