somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ভালবাসার পন্চ্ঞপর্ব(ছোটগল্প লেখার প্রচেষ্টা :) )

১৯ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ রাত ১২:০৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ভুমিকা পর্বঃ
রাগে মাথার চুল থেকে পায়ের পাতা পর্যন্ত সব জ্বলতেছে। সারাটাদিন এভাবে জ্বালানোর পর এমন একটা ভাব নিয়ে ঘুরছে, যেন কিছুই হয়নি!!
আরে বাবা, এপ্রিল ফুল তো কি হয়েছে? এমনসব অমানবিক! ডস খাওয়ানোর কি মানে!!!!
আর এক এপ্রিল ফুলে কয়বার মিথ্যে বলে বোকা বানাতে হবে।
ইচ্ছে করছে এই সাদা বিল্লিটাকে কাঁচা চিবিয়ে খেয়ে ফেলি! আজকে সকাল থেকেই একটার পর একটা এমন আচরণ করছে!

আমি সাধারণত শুক্রবার সকালে একটু দেরি করেই ঘুম থেকে উঠি। আসলে পুরো সপ্তাহ ই সকালে ক্লাস থাকায় ঘুমুতে পারিনা ইচ্ছে মত, তাই একটু বেশি ঘুমাই ছুটির দিনটায়। আজ সকালেও ঘুমাচ্ছি। হঠাৎ এই লিসার ফোন, ‘ওই তাড়াতাড়ি ঔথ, স্যার রবিবার পড়াতে পারবে না, আজকে যেতে বলছে। ’
ঃ ‘কি বলিস, কখন বলছে?’
ঃ ‘রাতে ফোন করেছিল। ’
ঃ ‘তুই আগে বলিস নাই কেন ?’
ঃ বললে কি লাভ হত! তোকে ঘুম থেকে উঠানোর জন্য তো আমাকে ফোন দিতেই হত! ১০মিনিটের মধ্যে আমার বাসার সামনে আয়। দেরী হয়ে যাচ্ছে!

কথাটা সত্য। প্রতিদিন লিসাই আমাকে ঘুম থেকে উঠায়। ঘড়িতে দেখলাম, সোয়া ছয়টা বাজে!
স্যারকে গালি দিতে দিতে ঘুম থেকে উঠে ব্রাস করে রেডি হয়ে প্রায় বিশ মিনিট পর লিসার বাসার সামনে এলাম। ফোন দিচ্ছি কিন্তু ধরছে না, কেটেও দিচ্ছে না।
পাক্কা পৌনে এক ঘন্টা দাড়িয়ে আমি যখন পৃথিবীর সব দুর্ঘটনার সম্ভাবনার কথা ভেবে ফেলেছি, তখন লিসার এস এম এস!
“APRIL FOOL”

আমি পুরো টাসকিত! আরে আজকে ফার্স্ট এপ্রিল! সকালের ঘুমটা এভাবে নষ্ট করার পর কি মনে হতে পারে!
নিজের উপর ও একটু রাগ হচ্ছিল, কেন যে কোন খোঁজ খবর রাখিনা দিন-তারিখের।
আসলে ঘুমের আফসোস আমার যাচ্ছিল ই না, লিসাকে দুনিয়ার যত বকা আছে সব দিতে দিতে বাসায় আসলাম।

সকাল এগারোটায় আবার লিসার ফোন,
ঃ দোস্ত, রাগ করছিস ?
ঃ না, রাগ করব কেন? অসম্ভব খুশি হয়েছি! হারামি!
ঃ হিহিহি, যাহ, তোকে আজকে খাওয়াবো, বের হ, আজকে সারাদিন ঘুরব, কুইক।
ঃ আমার ঠেকা পরছে তোমারে নিয়া ঘুরতে।
ঃ হুম, বিশ মিনিটের মধ্যে বাসার সামনে আয়। বাই!

নাহ, ভেবে দেখলাম না গিয়ে রিভেন্জ নেয়ার চেয়ে গিয়ে ওর কিছু টাকা নামিয়ে আসাই ভাল হবে।
সো গেলাম, এবং বিশ্বের প্রথম মানব সন্তান হিসেবে একদিনে একজনের কাছেই দুইবার এপ্রিল ফুল হলাম!
এবার দিলাম ফোন,
ঃ কি শুরু করছিস এগুলা ?
ঃ কি আবার! তোর মত আবুলের ধরা খাওয়ার দরকার আছে!
ঃ আচ্ছা যা, খাইলাম তো! এবার আয়,বের হ ইছি যখন ঘুরে আসি। (আয় খালি একবার মাইর একটাও মাটিতে পরবেনা!)
ঃ যা ভাগ, এই রোদের মধ্যে আমি বের হব কোন দুঃখে! টোয়াইলাইট দেখতেছি, ডিসটার্ব করবি না, মুডে আছি।

দিল ফোন কেটে! শালা, তোর রোমান্টিক মুডের মায়েরে বাপ! বলতে বলতে বাসায় আসলাম।

প্রপোজ পর্বঃ
বিকেলে প্রতিদিনের মত আড্ডা দিতে লিসার বাসার ছাদে গেলাম। এখানেই আমরা প্রতিদিন আড্ডা দেই। আমরা বলতে আমি, লিসা, লিরা আপু(লিসার বোন), শোভন ভাই।
আজকে অবশ্য কেউই আসে নাই লিসা ছাড়া। আর এই মেয়ের ভাব দেখে এখন সারাদিনের রাগ আরো তিন গুণ বেড়ে যাচ্ছে। হঠাৎ দেখলাম, লিসা ছাদের যে কোণায় দাড়িয়েছে, তার ঠিক পাশেই একটা মাকড়সা!
লিসা এই জিনিসটাকে চরম ভয় পায়, ডিসিসান নিয়ে নিছি। শুধু ওর মনোযোগটা অন্যদিকে রাখতে হবে। আইডিয়াও মাথায় চলে আসছে,বুঝবা হোয়াট ইজ এপ্রিল ফুল।
লিসার সামনে গিয়ে দাড়ালাম, 'লিসা তোকে একটা কথা বলব, রাগ করিস না প্লিজ!’
লিসা কিছু বলল না,তবে কপাল কুচকে ফেলেছে, চোখে কৌতুহল! এটাই তো চাই!
আমি শুরু করলাম নিচের দিকে তাকিয়ে, ‘লিসা, আসলে অনেকদিন থেকে, মানে আই থিংক, আই মিন, আই থিংক, আই আ্যাম ফল ইন লাভ উইথ ইউ!’

মাকড়সার দিকে হাত বাড়ানোর আগে ওর মুখের এক্সপ্রেশন দেখার জন্য চোখ তুলেই কোথা যেন হারিয়ে গেলাম! ওর চোখের কোণ চিকচিক করছে। কোথায় গেল মাকড়সা, কোথায় গেল আমার সব প্ল্যান, আমি কোথায় যেন হারিয়ে গেলাম!
দুমিনিটের ক্র্যাশ!!!

টেনশান পর্বঃ
লিসা কিছু বলল না। আমি আসলে ওর তাকানো দেখেই নার্ভাস হয়ে গেছি। কয়েক মিনিট পর কিছু না বলেই নীচে চলে গেল লিসা। আমার নিজের উপরই এত রাগ হচ্ছে, কেন যে করতে গেলাম। কি মনে করলো কে জানে! পুরোটা করতে পারলে অবশ্য প্রবলেম ছিল না! কিন্তু কি যে হয়ে গেল, আসলে লিসা কথাটা শোনার পর কেমন করে যেন তাকিয়েছিল, ওর তাকানোটাই সব গোলমাল করে দিল।

কিছুক্ষণ একা একা বোকার মত বসে থেকে যখন বাসায় ফিরছি, তখন মাথায় অন্য একটা টেনশান ঢুকে গেল। ‘
বাসায় বিচার দেবে না তো আবার!’
এই মেয়ের দ্বারা অসম্ভব না এটা, ইভেন এর আগে একবার অন্য একটা ব্যাপারে আম্মুর কাছে বলেও দিয়েছিল। আজকে যেহেতু কিছু না বলেই গেছে, তখন এটাই করবে, শিওর! চুপচাপ কখনোই মেনে নেয়ার মত মেয়ে ও না।

আজকে বাসায় গিয়েই অতি ভদ্রছেলের মত পড়তে বসে গেলাম। আজকে কোনরকম বাদরামি না। বাসার কলিংবেল বাজলেই বুকের মধ্যে ধরাম করে ওঠে একেকবার।
দশটা পর্যন্ত যখন কিছু ঘটলো না, তখন হাফ ছেড়ে বাচলাম। সস্তির নিঃশ্বাস ফেলে ঘুমাতে গেলাম। এর মাঝে অবশ্য অনেকবার ফোন দিয়েছি লিসার নাম্বারে, প্রথমবার কেটে দিল, তারপর থেকে সুইচড অফ।

বিষন্ন পর্বঃ
সকালেও কয়েকবার ট্রাই করলাম, পেলাম না। আজকে ঘুমও ভাঙায়নি ফোন দিয়ে আমার। দুপুরের দিক থেকেই মনটা খারাপ হতে থাকল, ধ্যাত, কি যে করি! লিসা মনে হয় অনেক কষ্টই পেয়েছে। সত্যিই তো, এমন একটা বিষয় নিয়ে ফান করা তো আসলেই খুব খারাপ হয়েছে।
আর যখন বিকেলে ছাদেও এল না, আমি কি করব বুঝতে পারছিলাম না, এত খারাপ লাগা শুরু হল!
শুধু তাই না পরের দুদিনেও লিসার কোন খোঁজ পেলাম না। শেষে লিরাপুকে পুরো ঘটনাটা বললাম, আমার মুখচোখ নিশ্চয়ই কেমন হয়ে গিয়েছিল, আমি একটু ভয়েও ছিলাম, আপু কি না কি মনে করে!
কিন্তু আপু রাগ করল না, উল্টো আমার গাল দুটো টেনে দিয়ে হেসে বলল, ‘তোরা যে কি করিস! এত কাঁদাকাটির দরকার নাই, আমি দেখতেছি। ’

ভালবাসা পর্বঃ
আপু আমাকে ছাদে রেখে নীচে গেল। কিছুক্ষণ পর দেখি লিসা আসছে। দেখে একটু চমকেই উঠলাম, পুরো যুদ্ধবিধ্বস্ত এলাকার থেকে উঠে আসছে মনে হচ্ছে,উস্কোখুস্কো অবস্থা,চোখের নীচে কালি!
একটু মায়াই লাগলো,তিনদিনেই কি অবস্থা!
একটু রাগও হল, একটু কথাতেই এমন রিয়েক্ট করতে হবে, উনি যেন আমার সাথে কোন দুষ্টমি করেই না!
বেশ কিছুক্ষণ চুপচাপ দাড়িয়ে থাকার পর আস্তে করে বললাম, ‘আমি স্যরি!’
তারপরো কোন কথা নেই, এবার আমার সত্যি সত্যিই রাগ হচ্ছিল। স্যরি তো বললাম, তাও!
আমি এবার একটু অধৈর্য্য হয়েই লিসার সামনে দাড়ালাম। চোখ বন্ধ করে বলা শুরু করলাম, ‘দেখ লিসা, আমি ভুল করে একটা কথা বলে ফেলছি, এখন এই এক কথা নিয়ে যদি এত রাগ করিস! আমি তো বললাম স্যরি, তারপরো যদি কথা না বলিস, একটা ভুলের জন্য আমাদের এতদিনের ফ্রেন্ডশিপ! নাহ, আমার কিছু বলার নাই আর!’
এক নিঃশ্বাসে কথাগুলো বলার পর একটু থামলাম।
লিসা কেমন অবাক চোখে তাকিয়ে আছে, কিন্তু এখনো কিছু বলছে না।

আমি চলে যাওয়ার জন্য পা বাড়ালাম। সিড়ি দরজার কাছে আসতেই পেছন থেকে লিসা একটু জোরেই বলে উঠল, ‘যদি ভুল না হয়!’

আমি বিদ্যুৎবেগে ঘুরে জিজ্ঞাসা করলাম, ‘মানে?!!!’
লিসা হেসে বলল, ‘মানে কিছু না, আইসক্রিম খাবা?’


এখন আইসক্রিম খাচ্ছি, এখন থেকে নাকি দুইজনকে এক আইসক্রিম শেয়ার করে খেতে হবে, আজব!!! ;)
রোমান্স করার জন্য আইসক্রিম শেয়ার করা অমানবিক! ;)

$$ সমাপ্ত $$

৪টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

পিরিতের সংস্কৃতিওয়ালা তুমি মুলা’র দিনে আইলা না

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ১৬ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৩:৫৬


---- আমাদের দেশে ভাষা, সংস্কৃতি এবং সামাজিক সমুন্নয়ন তলানিতে। তেমন কোন সংস্কৃতিবান নেই, শিরদাঁড়া সোজা তেমন মানুষ নেই। সংস্কৃতির বড় দান হলো ভয়শূন্য ও বিশুদ্ধ আত্মা। যিনি মানবের স্খলনে, যেকোন... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইসরায়েল

লিখেছেন সাইফুলসাইফসাই, ১৬ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:৪৮

ইসরায়েল
সাইফুল ইসলাম সাঈফ

এ মাকে হত্যা করেছে ইসরায়েল
এ বাবাকে হত্যা করেছে ইসরায়েল
নিরীহ শিশুদের হত্যা করেছে ইসরায়েল
এই বৃ্দ্ধ-বৃদ্ধাদের হত্যা করেছে ইসরায়েল
এ ভাইক হত্যা করেছে ইসরায়েল
এ বোনকে হত্যা করেছে ইসরায়েল
তারা মানুষ, এরাও মানুষ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

গ্রামের রঙিন চাঁদ

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ১৬ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১২


গ্রামের ছায়া মায়া আদর সোহাগ
এক কুয়া জল বির্সজন দিয়ে আবার
ফিরলাম ইট পাথর শহরে কিন্তু দূরত্বের
চাঁদটা সঙ্গেই রইল- যত স্মৃতি অমলিন;
সোনালি সূর্যের সাথে শুধু কথাকোপন
গ্রাম আর শহরের ধূলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহার।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ১৬ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১৭



পাহাড়পুর বৌদ্ধ বিহারের ধ্বংসাবশেষঃ
পালবংশের দ্বিতীয় রাজা শ্রী ধর্মপালদেব অষ্টম শতকের শেষের দিকে বা নবম শতকে এই বিহার তৈরি করছিলেন।১৮৭৯ সালে স্যার কানিংহাম এই বিশাল কীর্তি আবিষ্কার করেন।... ...বাকিটুকু পড়ুন

পরবাসী ঈদ

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ১৬ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:২৩

আমার বাচ্চারা সকাল থেকেই আনন্দে আত্মহারা। আজ "ঈদ!" ঈদের আনন্দের চাইতে বড় আনন্দ হচ্ছে ওদেরকে স্কুলে যেতে হচ্ছে না। সপ্তাহের মাঝে ঈদ হলে এই একটা সুবিধা ওরা পায়, বাড়তি ছুটি!... ...বাকিটুকু পড়ুন

×