somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অসমাপ্ত গল্প

০৫ ই মার্চ, ২০১৩ রাত ১১:০০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ভোর হয়নি এখনো। অহনা ওদের বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছে। এতো সকালে উঠার অভ্যাস নেই ওর। বরং দেরি করে উঠার কারণে প্রায়ই মায়ের বকা খেতে হয়। আজ খুব ভরেই কেন যেন ঘুম থেকে উঠে পড়েছে।
নাহ, ভুল বলা হল। আসলে কাল সারারাত ঘুমই হয়নি ।
একটু উঁকি মেরে আকাশটা দেখতে চেষ্টা করল ,এখনো কিছুটা দেখা যায়,পাশের বাসার আঙ্কেলের বোধোদয় ছাদ দিয়ে আকাশ ছোঁয়ার ইচ্ছা , আরেক তালার কাজ চলছে ,হলেই ঢেকে যাবে আকাশটা।
‘আকাশ’ শব্দটা মাথায় গিয়ে লাগল চট্‌ করে,মুখটা আবার থমথমে হয়ে গেলো ওর।
একবার ভেতরে উঁকি দিয়ে দেখল অহনা,
নাহ,কেউ ঊঠেনি এখনো।

চুপচাপ বারান্দার
পুরোনো চেয়ারটাতে বসল সে। বসেই
চোখ পড়ল টবের গাছগুলোর দিকে।
শুকিয়ে খট্খটে হয়ে আছে। কয়েকদিন
পানি দেয়া হয়নি গাছ গুলোতে। অহনাই
কাজটা করে। একদম ভুলে গিয়েছিল।
কদিন ধরে কী যে হয়েছে ওর !

ঘরে গিয়ে বইটা সামনে নিয়ে বসল।
কিন্তু চোখটা বইয়ের পাতায়
না রেখে রাখল জানালায়। কোথায় যেন
হারিয়ে গেলো সে।

এইতো সেদিন পিচ্চি ছিলো অহনা।
মায়ের হাত ধরে ঘুম ঘুম
চোখে স্কুলে যাওয়া। স্কুলে প্রথম
দিনের কথা মনে হলে এখনো হাসি পায়।
ক্লাসের সবাই খুব নার্ভাস ছিলো,
কেউ কেউ তো কাঁদছিলই। আর
অহনা মহাআনন্দে ওর কার্টুনের
বইগুলো সবাইকে দেখাচ্ছিল,হঠাৎ
একটা ছেলে ওর একটা বই হাতে নিতেই
রেগে অহনা দিলো এক খামচি। হুলস্থুল
কান্ড!
ক্লাস ফাইভে পড়ার সময়ই এক
ইচরে পাকা ছেলে তাকে প্রোপোজ
করেছিল স্কুলে যাওয়ার পথে। আর যায়
কোথায়, ইট ছুঁড়ে মেরে বেচারার মাথাই
ফাটিয়ে দিয়েছিলো।
একবার স্কুলে ওর এক ক্লাসমেটকে খারাপ কথা বলায় চেয়ার সহ
উল্টে ফেলে দিয়েছিলো।
আসলে অহনা এরকমই। নিজের
বিরুদ্ধে কিছুই সহ্য করে না, কোন
অন্যায় তো একদমই না ।

ওর বান্ধবীরা যেখানে এক একজন
প্রেম বিশারদ, ও তখনও একাই আছে,
ইচ্ছে যে হয় না, এমন না, কিন্তু ওদের
অবস্থা দেখে সাহসটা আর পায় না, ওর
স্বপ্ন একটাই,
যদি পড়ি তো একবারই, আর তা যেন
হয় সারাজীবনের জন্য।
আশেপাশে যা দেখছে তাতে আর সম্ভব
বলে ই মনে হয়না। তাই অহনার সময়
কাটছে .ওর যে ফ্রেন্ডের ব্রেকআপ হচ্ছে,
তাকে পচিয়ে, আর ওদের বয়ফ্রেন্ড
গুলোকে হুমকি ধামকি দিয়ে। কিন্তু
মন থেকে ছেলেদের প্রতি বিশবাসটাই
উঠে যাচ্ছে ওর।

........※※※.........
এস এস সি এক্সাম শেষ। হাতে অখন্ড
অবসর।
দিনটা কোচিং করে কেটে গেলেও
রাতে সময়টা কাটতেই চায় না। তাই শেষ
ভরসা ফেসবুক |
ইদানিং একটা ছেলের সাথে প্রায়ই
কথা হয় ওর। অহনার হাউজ টিউটরের এক্স স্টুডেন্ট, স্যারের মাধ্যমেই পরিচয়।
আকাশ ছেলেটা ভালোই। অনেক সুন্দর
করে কথা বলে, মানে লিখে আর কি।
তাই আর বোর লাগে না।
সময়টা স্বচ্ছন্দে কেটে যায়। আকাশের
এক ফ্রেন্ড রাতুলের সাথে অহনার
আরেক ফ্রেন্ড রূম্পার রিলেশান।
ওরা দুজন তো বটেই, আকাশ নিজেও
চায় অহনার সাথে কি করে রিলেশান
করা যায়। রূম্পাও অহনাকে বোঝানোর
চেষ্টা করে, ছেলেটা তো ভালোই,
সমস্যা কি?
অহনার পুরোনো কথাই,
"বিশ্বাসটা ঠিক আসে না রে দোস্ত , আমাকে দিয়ে হবে না এগুলা . "

এক সময় রূম্পার কাছে থেকে ই অহনার মোবাইল নাম্বারটাও পেয়ে যায় আকাশ . প্রথমে না চাইলেও এক সময় কথা বলতে থাকে অহনা .
আসলে আকাশের মধ্যে একটা প্রবল আকর্ষণী ক্ষমতা আছে . কেমন সব কিছু ভেঙ্গে দিতে চায় . এত্ত সুন্দর করে কথা বলে !
অহনাও একটু একটু বদলাতে থাকে , ভাবতে থাকে , নাহ , সবাই হয়তো এক রকম না . কেউ কেউ তো আছেই যাদের বিশ্বাস করা যায় আকাশ হয়তো তাদের দলে .
অহনার মনটা বদলে যেতে থাকে . যদিও আকাশকে কোন উত্তর দেয় না সে . কিন্তু আচরণে একটু একটু করে আন্তরিক হয়ে ওঠে সে . মনে মনে স্বপ্ন বুনতে শুরু করে অহনা .

হঠাৎ একটা খবর সব কিছু ওলটপালট করা দেয় .
অহনার এক ক্লাসমেটর কাছ থেকে জানতে পারে , আকাশ - রাতুল দুজনই প্লেবয় টাইপ ছেলে . মেয়েদের সাথে এমন ড্রামা করাই তাদের কাজ . স্তম্ভিত হয়ে যায় অহনা . খোঁজ নিয়ে নিশ্চিত হয় কথাটা সত্যিই .
যোগাযোগ বন্ধ করা দেয় একবারেই .

এদিকে আকাশ আর যোগাযোগ করতে না পেরে স্বভাব মতো অহনার নামেও আজেবাজে কথা ছড়াতে থাকে .
এগুলো যতটা মন খারাপ করায় অহনার , তার চেয়ে অনেক বেশি মন খারাপ করে দেয় অন্য একটা ভাবনা .
জীবনে প্রথমবারের মতো কোন ছেলেকে বিশ্বাস করা শুরু করেছিল , হয়তো একটা স্বপ্নও। আর প্রথমেই এমন একটা কিছু হলো ওর সাথে .
এসব নিয়েই মনটা খারাপ অহনার . কি এমন হতো , আকাশ একটু অন্যরকম হলে .

নাহ, আর ভাবতে পারে না......
আরে , এত কুয়াশা এলো কোথা থেকে , এখন তো বর্ষা কাল !!
নাকি চশমাটা চোখে নেই ?
চোখে হাত দিয়েই ভুলটা ধরা পড়ে , কোথা থেকে যে এত জল আসে !
নিজের উপরে ই খুব বিরক্ত হলো সে

সঞ্জিব চৌধুরীর গান মনে পড়ে গেল ,
"চোখটা এত পোড়ায় কেন ?
এও পোড়া চোখ সমুদ্রে যাও ,
সমুদ্র কি তোমার ছেলে
আদর দিয়ে চোখে মাখাও...."

উঠে হাত মুখ ধুতে গিয়ে আয়নায় তাকিয়ে নিজেই চমকে ওঠে...
কি হাল হয়েছে চেহারার , চোখের নিচে কালি পড়ে গেছে দুদিনেই , নাহ , এসব নিয়ে আর ভাববে না, মাথাটা ঝাড়া দেয় একটু , যেন ঝেড়ে ফেলতে চায় সব....

যেভাবেই হোক, অহনাকে স্বাভাবিক হতে হবেই। আর এই দুদিনের সপ্নের চেয়ে বাবা মায়ের ষোল বছর ধরে দেখা সপ্নের মূল্য অনেক অনেক বেশি।
অহনাকে প্রমান করতেই হবে , অহনা মেয়ে হওয়াতে এর বাবা মা একটুও আশাহত হয়নি, তা বিন্দু মাত্র ভুল ছিল।
নাহ,যে করেই হোক আগের লাইফে ফিরতে হবে, ভাবে অহনা।


সত্যিই একসময় সব স্বাভাবিক হয়ে যায়। কলেজে ক্লাস, পড়াশোনার চাপ, অন্য দিকে মনোযোগ দেয়ার সময় কোথায়!

একসময় টেস্ট পরীক্ষাও শেস হয়ে যায়। রাতে পড়া শেষ করে ফেইসবুকে একটু ঢু মারে ঘুমানর আগে।

এর মধ্যে একটা ব্যাপার হয়েছে। আকাশ-রাতুলদেরই আরেকটা ফ্রেন্ড , রন , ওকে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠিয়েছিল। দু-একদিন ভেবে কেন যেন অ্যাক্সেপ্টও করে অহনা।

কিন্তু ওয়াল-কমেন্টে দু-একটা কথা ছাড়া আর কোন কথা হয় না।

এরপর হঠাত্‌ করেই একদিন অনেক রাতে একটা অফ্লাইন মেসেজ আসে রনের কাছে থেকে।
তেমন কিছু না, শুধু লেখা,
“এত রাতে কি করেন?”

প্রচন্ড কৌতূহল চেপে রেখে একটু ফান করেই রিপ্লাই দেয় অহনা।
এরপরেই ফান করেই কিছু মেসেজ চালাচালির পর গুড নাইট বলে রন ঘুমোতে চলে গেলেও অহনার ঐ রাতে আর ঘুম হয় না।

এতদিন পর আবার অহনার পুরোনো কথাগুলো মনে পড়ে, একে একে সব সৃতি মনের আঙিনায় ভীড় করে।
আর একটা প্রশ্নও ছোট করে মাথায় চলে আসে, রন কে হয়ত আকাশই প্ল্যান করে পাঠিয়েছে আরেকটা নাটক নাটক খেলার জন্য।
কিন্তু এবার আর ছাড়বে না অহনা, আর বোকা হবে না অহনা,
দিজ টাইম দে হ্যাভ টু বি পানিসড,মাস্ট বি পানিসড!
নিজের মনেই ভাবে অহনা।

তারপরও চলে কথা, চলে অফ্লাইনে বিশাল বিশাল মেসেজের আদানপ্রদান।
অহনা প্রায়ই বুঝিয়ে দিতে চায় রনকে , ওদের প্ল্যানটা বুঝে ফেলেছে অহনা, বিভিন্ন কথায়।

কিন্তু রনের ব্যাপারটা ঠিক বোঝে না অহনা, রন কি বুঝেও না বোঝার ভান করে নাকি সত্যিই বোঝে না !
কিছুদিন পর অহনা নিজেই কনফিউজ্ড হয়ে যায়, আকাশদের ফ্রেন্ড হলেও রনের কথাবার্তা ওদের থেকে অনেক আলাদা !
আকাশ কথা বলত অনেক সুন্দর করে, কিন্তু তার মাঝে চালবাজির একটা ব্যাপার ছিল যা পরে বুঝেছে অহনা, রন তেমন না,
রনের কথায় কেমন একটা অন্য রকম ছেলেমানুষী পাওয়া যায়, শুধু তাই না, কেমন একটা বোকা বোকা কথা বলে প্রায়ই, অনেকটা বাচ্চা ছেলেদের মত।

সন্দেহের পর্দাটা দিনে দিনে সরে যেতে থাকে অহনার চোখ থেকে।

হঠাৎ একদিন রনের একটা নোট দেখে অবাক হয়ে যায় অহনা।
বেশ কষ্টের একটা লেখা, কিছুটা ইঙিতপূর্ণ লেখা। কেমন একটা হৃদয় পোড়া গন্ধ যেন!

লেখাটা পড়ে অবশ্য অহনার খারাপ লাগা দূরে থাক, হাসি আসতে থাকে।
এই ছেলে ! কিভাবে সম্ভব !
আরে বাবা, ছ্যাকা খেতে হলে কারো সাথে আ্যাট লেস্ট প্রেম করতে হবে আগে!
এই আবুলের সাথে কে প্রেম করছে!

ফানি মুড ঢেকে রেখেই রনকে আস্ক করে অহনা , ঘটনাটা কি ?

প্রথমে বলতে না চাইলেও একসময় বলে পুরো ব্যাপারটা, যা রনের সাথে অতিতে ঘটে গিয়েছিল।
ওই ঘটনার একটা বিশেষ দিনকে মেনশন করে লেখাটা।

অহনার ধারণা ঠিকই ছিল, তবে পুরোটা না।

গল্পটা ভালবাসার না, বরং কাউকে ফিরিয়ে দেয়ার, ভালবাসা ফিরিয়ে দেয়ার, কাউকে কষ্ট দেয়ার কারণে এক তীব্র অপরাধবোধ থেকেই ছিল নোটের লেখাটা।

অন্য সবার মত অহনাও রনকে পরামর্শ দেয় ফিরে যেতে মেয়েটির কাছে।
কিন্তু যে ছেলেটার মাঝে একটা হিমু বাস করে, যে প্রতিনিয়ত চেষ্টা করে হিমু হতে, সে কেন কারো বন্ধনে আটকা পড়বে, কারো হাত ধরবে জীবনের পথে হাঁটতে!

অহনার মনের সব সন্দেহ দূর হয়ে যায়, অনেক বেশি কথা হতে থাকে আগের চেয়ে।
একসময় অহনাও বলে ওর আর আকাশের ঘটনাটা।

কষ্ট আনন্দের স্মৃতি, ভাললাগা-মন্দলাগার কথাগুলো শেয়ার করতে করতে একে অপরের অনেক কাছে চলে আসে,
খুব ভাল বন্ধুত্বটা একসময় ভার্চুয়াল গন্ডী পেরিয়ে বাস্তবে চলে আসে।

দুজন মিলে ছোট্ট শহরটা চষে ফেলে, সময় পেলেই বেরিয়ে পড়ে রিক্সা ভ্রমণে, নিরুদ্দেশ হাঁটাহাটি করে হয়তো কখনো।
সারাদিন একসাথে আড্ডা দেয়ার পরও ওদের কথা ফুরোয় না, রাতে মোবাইলে কথা বলতেই হবে, আ্যাট লেস্ট ফেবু চ্যাটে।

একঘেয়ে আর কষ্টের স্মৃতিময় পৃথিবিটা বদলে গিয়ে এক আনন্দের পঙ্খিরাজে চড়ে যেন সময়টা কাটতে থাকে, বদলে যেতে থাকে চারপাশ।

বদলে যেতে থাকে রনের হিমু হতে চাওয়া মনটাও।
এখন আর আগের মত হলুদ পান্জাবিটা আকর্ষণ করেনা, বরং এখন দোকানে গিয়ে ব্ল্যাক টিশার্টটাই কিনে আনতে বেশি ভাল লাগে।
হয়তো ফেরার সময় কোন দোকানের ডিসপ্লেতে স্কাই ব্লু রঙের শার্ট দেখে মনে পড়ে যায় অহনার প্রিয় রঙের কথা।
মুচকি হেসে কেন যেন কিনেও ফেলে শার্টটা, নিজের অপছন্দের রঙ সত্ত্বেও।

হুম, সত্যি বদলে যেতে থাকে রন, দেখার দৃষ্টিও বদলে যায়, বন্ধুর চেয়েও বেশি কিছু ভাবার ইচ্ছে হয় অহনাকে, পাবার ইচ্ছে হয় একান্ত আপন করে।

কিন্তু ভয়েই বলা হয়না, বন্ধুত্বটা যদি নষ্ট হয় সেই শঙ্কায়।

ভেতরে ভেতরে ঠিকই পুড়তে থাকে না বলতে পারার বেদনায়।
অহনাও খেয়াল করে রনের অস্থিরতা, তবে গুরুত্ব দেয়না খুব একটা। নিজে থেকে জিজ্ঞেসও করে না কিছু,
ভাবে, হয়তো কোন কারণে রনের সময়টা খারাপ যাচ্ছে, তাই একটু ডিপ্রেসড।
সময় নিলেই হয়তো ঠিক হয়ে যাবে।

এদিকে রন অস্থিরতার চরম সীমায় পৌছে গেছে। রনের কেবলই মনে হয় অহনাকে ছাড়া ভবিষ্যৎ প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়বে রনের। এতটাই নির্ভরশীলতা আর কোথাও পাবেনা রন।
রনের বোকামিগুলো, অনর্থক রাগ দেখানো কিংবা খুব খারাপ সময়ে এত ভাল বন্ধু হয়ে আর কে কাধ বাড়িয়ে দেবে মাথা রাখার জন্য।

এক বিকেলে অহনাকে নিয়ে বের হয় রন, শহরের পাশের এই ছোট নদীটার পাড়ে প্রায়ই বসে ওরা, এখন অবশ্য শুকনো মৌসুম, পানি নেই বললেই চলে।
রন সিদ্ধান্ত নিয়ে নেয়, প্রপোজ করার, প্রস্তুতি নিয়েই বেরিয়েছে আজ।
অহনা অবশ্য তেমন কিছু টের পায় না। দুজন কথা বলে কিন্তু অহনার কেন যেন মনে হচ্ছে আজ রন যেন একটু অন্যরকম। প্রতিদিনের মত কথা ফুলঝুড়ি ছুটছে না, অনর্থক তর্ক করছে না, অহনাকে খোঁচাচ্ছে না। হু-হা করে কথা চালিয়ে যাচ্ছে। রনের সাথে যদিও এমন একবারেই যায় না, তবুও গুরুত্ব দেয় না অহনার। ও ভাল করেই জানে, এই পাগলের কোন কিছুরই ঠিক নেই, গাধারাম একটা।

ওরা একটা বাঁধা নৌকায় গিয়ে বসে। নৌকাটা এখানেই পড়ে আছে অনেকদিন, পরিত্যাক্ত মনে হয়।
জায়গাটা দুজনেরই অনেক প্রিয়। প্রাযই বসে এখানটায়।

আজ বসেই চুপচাপ পানির তাকালো। রনের দিকে তাকিয়ে অহনা আস্তে করে বলে, ‘কিছু হয়েছে তোমার ?’
রন ঘাড় নেড়ে না করে একটু যেন হাসার চেষ্টা করে।
এত ভদ্রভাবে কথা রন কখনোই বলে না ওর সাথে।
অহনার এবার সত্যিই মনে হয় কোন একটা ঝামেলা নিশ্চয়ই হয়েছে।
এতটা নিঃশ্বব্দতা কেমন একটা অস্বস্তিতে ফেলে দেয় অহনাকে।

কিছুক্ষণ পর ওরা উঠে নদীর পাড় ধরে হাঁটে। হাঁটতে হাঁটতে অহনা হঠাৎ দেখে রন পাশে নেই।
পেছনে তাকিয়ে দেখে একটু দূরে চুপচাপ দাড়িয়ে ওর দিকেই তাকিয়ে আছে ছেলেটা,পেছনে হাত দিয়ে।
ঘুরে পেছনে এসে একটু ধমক দিয়েই জিজ্ঞেস করে, ‘ওই, কি হইছে তোমার?’

রন কোন উত্তর দেয় না, অহনা রনের চোখের দিকে তাকি কেমন একটা বিষন্ন আলো দেখে।

হঠাৎ অহনাকে চমকে দিয়ে হাঁটু গেড়ে বসে পড়ে রন। পেছন থেকে হাত দুটোও সামনে আনে, হাতে ধরা একগুচ্ছ হলুদ গোলাপ।
সামনে এগিয়ে কেমন ঘোর লাগা গলায় বলতে থাকে রন,

“ফান করে হয়তো এই তিনটি শব্দ অনেকবার বলেছি, ফান গুলোর মধ্যে সত্যি কিছুই ছিল না। আজ সত্যি করে বলতে খুব ইচ্ছে করছে শব্দ তিনটিকে।
খুব ইচ্ছে করছে তোমার হাত ধরে রাতের জোত্স্না দেখতে,পূরণিমায় শালবনে খালি পায়ে হাটতে, আর হাত ধরে বৃষ্টিতে ভিজতে, তুমি শুধু আমার হাতটা ধর, ঠিক বৃষ্টি নামাবো আজ, বৃষ্টিবিলাস করব দুজন! ধরবে ?”

অহনা পুরো হতভম্ভ! এই ছেলেটাকে সত্যি সে অন্যরকম ভাবতে শুরু করেছিল, ভেবেছিল, ছেলেটা পারফেক্ট হিমুই।
নাহ, হিমুরা কখনো কারো হাত ধরতে চায় না।

অহনা আস্তে করে বলে, “তুমি তো জানোই আমার উত্তর কি, আমি আমার সবটুকুই বলেছি তোমাকে। আমার পক্ষে কখনোই সম্ভব নয় আরেকটা সম্পর্ক তৈরী বন্ধুত্ব থেকে। সেটা তুমিও বোঝ আমার মতোই…”

“………কেন ? সবাই তো ওই এক আকাশের মত না, কেউ কেউ তো আছেই অন্যরকম, আরেকজনের জন্য তুমি আমায় কেন ফেরাবে ?
আমার কি দোষ ?"

ঃ "তোমার কোন দোষ নেই। আর আমিও একসময় বিশ্বাস করা শুরু করেছিলাম সবাই একরকম না। পরিণামটা তো তোমার চোখের সামনে, একটা পাথর হয়ে যাওয়া মানুষ।
রন, তমি বন্ধু হিসেবে চমৎকার, তারপরো আমার আজ মনে হচ্ছে এখন বন্ধু হয়ে থাকাও হয়তো কষ্টকর হবে!"

ঃ "তুমি আমাকে বিশ্বাস করতে পারছো না!!"

ঃ "আমি প্রেমিক হিসেবে কোন ছেলেকেই হয়তো কখনো বিশ্বাস করতে পারবো না, তোমাকে বন্ধু হিসেবে বিশ্বাস করি, এই বিশ্বাসটুকু হারিয়ে যেতে দিও না।"

ঃ "অহনা, তুমি……… !"

আর কিছু বলতে পারে না রন, গলাটা বুজে আসে ওর,
চোখের কোণে জল জমতে শুরু করেছে।
হিমুর সবগুলো বৈশিষ্ট হারিয়ে যেতে বসেছে রনের কাছ থেকে আজ, একটু একটু করে সাধারণ মানুষ হয়ে উঠছে রন, যার চোখের জল অপেক্ষা করছে গড়িয়ে পড়ার।

অহনা সেই জল দেখে না, ও এক হেরে যাওয়া হিমুকে পেছনে রেখে এগিয়ে যায়, অস্তগামী সূর্যটাকে পেছনে রেখে, এগিয়ে যায় নতুন সূর্যদয়ের পথে।

রন অন্ধকারেই পড়ে থাকে। অবিশ্বাস্যভাবে রনের কথা সত্য প্রমাণিত করে শীতের রাতে নামে বৃষ্টি। রন বৃষ্টি নামাল ঠিকই, শুধু ওর হাতের ভেতর হাতটা থাকলো না।
কাঁপতে কাঁপতে বৃষ্টিতে ভিজতে থাকে রন, চোখের জল আর বোঝা যাচ্ছিল না।

~~~~~~~~~~~~®~~~~~~~~~~~~
~~~~~~~~~~~~®~~~~~~~~~~~~
~~~~~~~~~~~~®~~~~~~~~~~~~

গতকাল সারারাত ধরে বৃষ্টি হয়েছে মুষলধারে। শেষরাতে বৃষ্টিটা থেমেছিল। সকালে প্রাত:v্রমণে বের হওয়া কিছু মানুষ নদীর তীরে একটা ভেজা শরীর অচেতন অবস্থায় পায়। তাদেরই কয়েকজন ধরাধরি করে হাসপাতালে নিয়ে যায়।
ওয়ালেট থেকে ফোন নাম্বার বের করে বাসায় খবর দিলে ছেলেটির বাসার লোকেরা আসলে ডাক্তার জানায়, ক্রিটিকাল কন্ডিশন, সারারাত বৃষ্টিতে ভেজার ফলে ঠান্ডা মারাত্বক ভাবে বসে গেছে।
ডাক্তার হঠাত জিজ্ঞেস করলো, “আচ্ছা, সারারাত এভাবে ভিজলো কেন ? শরীরে কোন আঘাতের সাইন ছিল না, কেউ মেরে ফেলে রাখেনি, শিওর। ”
ছেলেটার বাসার লোকজনের উত্তর জানা নেই। তারা কিছুই জানেনা।

মহিলাটা কাঁদতে শুরু করেছে, সম্ভবত ছেলেটার মা।
মহিলার স্বামী তাকে শক্ত করে ধরে থাকলেও তাকে ভীষণ উদভ্রান্তের মত লাগছে। কী ঘটছে, কিছুই বুঝতে পারছেন না উনি। নিজেকে জীবনে প্রথমবারের মত খুব অসহায় মনে হচ্ছে তার।

~~~~~~~~®~~~~~~~~~
……… গল্পটা এখনো অসমাপ্ত। শেষটা লিখতে ইচ্ছে করছে না।
পৃথিবীতে কিছুই শেষ হয়না,আমার গল্প কেন শেষ হবে !?

আপনারা নিজেদের ইচ্ছে মত ভেবে নিন!
যারা আমার মত অসম্ভব সব কল্পনা করতে ভালবাসেন,তাদের জন্য……

…… অহনা খবর পেয়ে হাসপাতালে ছুটে এসেছে, অনবরত কেঁদে যাচ্ছে মেয়েটা, আর রনের একটা হাত খুব শক্ত করে ধরে রেখেছে। এই হাত ধরে তাকে জ্যোত্স্না দেখতে হবে, বৃষ্টিতে ভিজতে হবে, হবেই।
রন মেয়েটার মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে, মেয়েদের কান্না তার অসহ্য লাগে। তবে এখন এক অসম্ভব ভাললাগা তাকে ঘিরে রেখেছে। রন অহনার চোখ মুছিয়ে দেয়, বেডে শুয়েই সে কল্পনা করে, তারা দুজন জ্যোত্স্না রাতে শালবনে হাঁটছে।

জ্যোত্স্না আর বৃষ্টির একটা বন্ধুত্ব হবেই আজ রাতে, সেই বন্ধুত্ব দেখবে ওরা প্রানভরে।
……………………………………
আর যারা এটা পড়ে অলরেডি ভাবা শুরু করেছেন যে, হারামজাদা বাংলা মুভির কাহিনী বানাইছো নাকি!
তাদের জন্য ফিনিশিংটা এমন …………

…………… বাস্তবের অহনারা ফিরে আসে না। রন হয়তো বেঁচে ফেরে ঘরে কিন্তু অহনারা বড্ড বেশি সাবধান, একবার হোঁচট খেয়ে তারা দ্বিতীয়বারের সুযোগ দেয়না, রাস্তায় তাকিয়েই হেঁটে যায়। কার হৃদয়ে কত ভালবাসা উপচে পড়ছে তা দেখার জন্য চোখ তোলে না। তারা রাস্তার দিকে তাকিয়ে এগিয়ে যায়, জীবনের পথে,
পেছনে পড়ে থাকে রনদের দীর্ঘশ্বাস!
হয়তো রনরাও ফেরে একসময় , জীবনের নিয়মেই ব্যাস্ত হয়ে পড়ে জীবন নিয়ে।
তবুও হঠাৎ মধ্যরাতের বৃষ্টিতে মেঘের ডাকে হঠাৎ ঘুম ভাঙে, মনের মধ্যে কি কিছু ঘটে যায় ?
চাপা পড়া কষ্টগুলো কি বেরিয়ে আসে কোন কবিতা হয়ে ?


এই রাত, এ রাতের আঁধার,
তারাদের নির্মোহ আলোয়
কষ্ট পোকাগুলো অলস পড়ে রয়,
ছুঁয়ে যায় মন, তবু ছুঁয়ে দাও না হাত
হয়তো ভেবেছ লাগবে, ভালোবাসার
নিষ্পাপ অভিশাপ
তাই ভাসোনি তুমি সরল ভালোবাসায়।

জোত্স্না, কাঁচ রং আলো বিকেল বেলা
গোধুলী রঙছবি চোখে করে না খেলা,
সোনালী রোদের উচ্ছসিত বিকেলগুলো
বিষন্ন একা পড়ে রয়,
তবু তোমার চোখে ভালোবাসার ছবি আঁকো না,
হয়তো ভেবেছ লাগবে, ভালোবাসার
নিষ্পাপ অভিশাপ,
তাই ভাসোনি তুমি সরল ভালোবাসায়।

রাতগুলো আজ অনেক বড়, আমি আঁধারে
আলো মোহে ছুটে ছুটে ক্লান্তি এসে ভর করে
যদি তোমার ঐ ডানায়, ফিরে এসো ফেলে যাওয়া আঁধারে,
তারাদের আলোয় রঙিন করে দেব আবার
ভাসিয়ে নিয়ে যাব দূরে, সরল ভালোবাসায়।

সাহিত্যের বিচারে হয়তো পৃথিবীর ফালতুতম কবিতাটি হয়তো লেখা হয়ে যায় , তবু সেই কবিতার প্রতিটি শব্দে জড়ানো থাকে পৃথিবীর বিশুদ্ধতম আবেগ !


.
.
উৎসর্গঃ গল্পের অহনাকে, মেয়েটার মানসিকতা খুব বেশি পছন্দের!

মেয়েটাকে কেন যেন খুব বেশি পছন্দ করি!
ঠিক প্রেমিকার মত পছন্দ করা না, বোন বা খুব ভালো বন্ধুর মতোও না, একজন মানুষ হিসেবে পছন্দ করি খুব।

একজন মানুষকে যতটুকু পছন্দ করা যায় ততটুকু কিংবা তার চেয়েও বেশি পছন্দ করি অথবা ভালোবাসি!

তবে সেই ভালোবাসার পায়ে কোন বোন/বন্ধু/প্রেমিকার মত সম্পর্কের শিকল পড়াতে চাই না।
কিছুটা ভালোবাসার উষ্ণ্ঞতা থাক না অসঙ্গায়িত!

যদিও এটা কখনো তাকে দেখানোর সাহস হবে না, তবুও অনেক শুভকামনা!

আর তোমাকে না জানিয়ে এটা লিখে ফেললাম, স্যরি!! :(
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা জুলাই, ২০১৩ রাত ১১:২৮
১০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমার প্রফেশনাল জীবনের ত্যাক্ত কথন :(

লিখেছেন সোহানী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সকাল ৯:৫৪



আমার প্রফেশনাল জীবন বরাবরেই ভয়াবহ চ্যালেন্জর ছিল। প্রায় প্রতিটা চাকরীতে আমি রীতিমত যুদ্ধ করে গেছি। আমার সেই প্রফেশনাল জীবন নিয়ে বেশ কিছু লিখাও লিখেছিলাম। অনেকদিন পর আবারো এমন কিছু নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×