নিশাতের মেজাজ ভয়াবহ রকমের খারাপ। এই ছেলেটা এমন কেন?! নিশাতের বান্ধবীদের কাছে ওদের ডেটের কত গল্প শুনেছে ও। বয়ফ্রেন্ডরা হাত ধরেই থাকে যতক্ষণ কাছে থাকে, আড়াল পেলেই চুমু খেতে চায়, কেউ কেউ তো আরো বেশি কিছু। মেয়েরাই সাধারণত একটু বুঝিয়ে-সুঝিয়ে ঠান্ডা করে। আর রনিতের সাথে আজকে তৃতীয় দিনের মত দেখা করতে এসেছে, এখন পর্যন্ত ছেলেটা নিশাতের দিকে চোখ তুলে তাকাতেও পারছে না। আজ দুবার ওর হাতটা ধরেছে, দুবারই নিজে থেকে ধরেছে নিশাত। আর হাত ধরার পর রনিত এমন অসহায় মুখে বাইরের দিকে তাকায়, রাগও হয়, আবার হাসিও পেতে থাকে। অবশ্য এই লাজুক ছেলেটাকে এভাবে ভড়কে দিতে ওর ভালোই লাগে, তাই কাজগুলো আরো বেশি করে।
রনিতের সাথে পরিচয় ফেসবুকে, প্রায় বছর দেড়েক আগে। টুকটাক মেসেজিং-চ্যাটিং, তারপর ফোনে কথা বলা, কিভাবে যেন একটা সম্পর্ক গড়ে উঠলো। শুনতে যতটা সহজ মনে হয় ব্যাপারটা মোটেই এতটা সহজ ছিল না। অসংখ্যবার ঝামেলা পোহাতে হয়েছে, প্রায় ভেঙ্গে যায়, এমন অবস্থাও হয়েছে বেশ ক'বার। রনিতে মাথা অসম্ভব ঠান্ডা, ওর জন্যই আবার সব কিছু ঠিক হয়ে গেছে। তারপর এইতো পনেরো মাসের রিলেশনের পর প্রথম দেখা। দুজন দু'শহরে থাকে। নিশাতের সাথে দেখা করার জন্যই রনিত এসেছিল। আজকে সন্ধার ট্রেইনেই ফিরে যাবে অর্থাৎ এখনকার মত এটাই শেষ একসাথে সময় কাটানো। নিশাত অবশ্য কিছুটা হতাশ। যদিও কথা বলার সময়ই বুঝেছিল, রনিত বেশ লাজুক একটা ছেলে তবে এত বেশি লাজুক, এতটা নার্ভাস তা কখনো ভাবেনি নিশাত। আজকে ইচ্ছে করেই রিকশায় একটা কান্ড ঘটিয়েছে নিশাত। মুখ ঘোরাতে গিয়ে হঠাত করেই রনিতের গালে ঠোঁট ছুঁইয়ে দিয়েছিল নিশাত। রনিত অবশ্য বোঝেনি, এই হাঁদারামটার বোঝার কথাও না। অথচ এই ছেলেটাই গোলাপী ঠোঁটে চুমু নিয়ে কি অসাধারণ কবিতা লিখে। রনিতকে ভালো লাগার পেছনে ওর কবিতাগুলোর অবদান অনেক। তবে কি কবিতাগুলো অন্য কাউকে ভেবে লেখা! নাহলে রনিত তাকে এভাবে অবহেলা করছে কেন! ও কি সত্যিই লাজুক নাকি ইগনোর করতে চাইছে নিশাতকে। নিশাতের কাঁদতে ইচ্ছে করে খুব, ওর চোখের কোণে জল জমতে শুরু করেছে।
নিশাত নেমে গেল ওর হোস্টেলের সামনে। চলে যাবে রনিত এবার, তবু অভিমানী মেয়েটার অভিমান ভাঙছে না। শুষ্ক মুখে 'বাই' বলে গেটে দিকে এগুতেই মেসেজ টোনটা বেজে উঠলো নিশাতের ফোনের। বের করে দেখলো মেসেজটা,
''Can I get the divine touch of ur leaps, one more time?''
নিশাত আবার গিয়ে রিক্সায় উঠে রিক্সাওয়ালাকে বললো, 'মামা, স্টেশনে চলেন, হাঁদারামটাকে ট্রেইনে তুলে দিয়েই আসি।'
তাদের এই রিক্সাভ্রমণটুকুতে আমরা আর সঙ্গী নাইবা হলাম। হয়তো রনিত পেরেই যাবে এবার লাজুকতাটাকে হারাতে, কবিতার লাইন গুলোর সাথে নিজের মিল খুঁজে পাবে নিশাত।
ভালো থাকুক নিশাত-রনিতদের মত ভার্চুয়াল থেকে রিয়েল লাইফে জড়িয়ে যাওয়া সব যুগলেরা।