আজকে যে বইটা আমি রিভিউ করার জন্যে চয়েজ করেছি সেটার নাম হল "ভালো ভালো গল্প"বইটা লিখেছেন আশাপূর্ণা ম্যা'ম। বইটার নাম বা বইয়ের লেখকের নামটা আপনারা কখনো শুনেন নাই কারন বইটা বর্তমান সময়ে লেখা হয় নাই। আমার হাতে এইমূহুর্তে যে বইটা আছে সেটা হল এই বইয়ের ২য় মূদ্রণবাংলা ১৩৭৪ সালে প্রকাশিত। অর্থাৎ বইটা আজ থেকে প্রায় অর্ধ শতাব্দীকাল পূর্বে প্রকাশিত হয়েছে। তাহলে এখন প্রশ্ন আসতে পারে এমন বস্তা পচা পুরোনো বই রিভিউ করার কি এমন দরকার পড়লো।
আমি আপনাকে একটা কথাই বলব, সেটা হচ্ছে ওল্ড ইজ গোল্ড। সত্যি করে বলছি বইটা হাতে পড়ার পরে প্রথম আমি যে গল্পটা পড়েছি তার শিরোনাম হল “লাভের অঙ্ক”। মাত্র ৬ পৃষ্ঠার এই গল্পটা পড়ে আমি এতোই চমতকৃত হয়েছি যে বাকি গল্প গুলোও গোগ্রাসে গেলা শুরু করলাম। আমি বলব না যে সব গুলো গল্পই এই রকম ছিল, কিন্তু বাকি গল্প গুলোর প্রত্যেকটা গল্পই ছিল আমাদের কোন না কোন ভালো চিন্তার খোরাক যোগায়। আমি একজন গোড়া মুসলিম হয়েও আশাপূর্ণা দেবীর এই বইটি সকলকে পড়তে সাজেস্ট করব এই কারনে যে এখানে যে বিষয় গুলো তুলে ধরা হয়েছে সে জিনিস গুলো আস্তে আস্তে আমাদের সমাজ থেকে উঠে যাচ্ছে। সমাজটা পচে যাওয়ার অনেক অনেক গুলো কারন রয়েছে তারই দু চারটা বিষয় গল্পের মাধ্যমে তুলে ধরা হয়েছে। তাই বলে এটা ভাবার কারন নেই এখানে কেবল শুধু নীতিকথার গল্পই দেয়া হয়েছে। মূলত ছেলে বুড়ো সকলের কাছেই যেন সুখপাঠ্য হয় এমন ভাবেই গল্প গুলো সংকলন করা হয়েছে। তবে বাংলাদেশ ৯০ মুসলিমদের দেশ হওয়ায় আমি গল্পের চরিত্র গুলো পরিবর্তন করে আমার ব্লগে পাবলিশ করে দিয়েছি। আর একটা বিষয় হল কলকাতার বাংলা ভাষা বাংলা দেশের মানুষ খাবে না, তাই কলকাতার ভাষার টান গুলো যতটা সম্ভব পরিবর্তন করে বাংলা দেশের বাংলা ভাষার উচ্চারন দিয়েছি। নিচের লিনক গুলো থেকে সরাসরি পড়তে ও ডাউনলোড করতে পারবেন।
যাই হোক প্যাচাল বাদ দিয়ে ভেতরে কি আছে সে ব্যাপারে আলোচনায় আসা যাক।
ভিতরে মোট ৯ টি গল্প রয়েছে। ১ম গল্প টির নাম নীল চোখ ফিরিশতা। কাহিনী তেমন কিছু না এক দূর সম্পর্কের মামা তার দূরসম্পর্কের ভাগিনা ও ভাগনীদের কাছে গল্প বলতে বসেছেন। রাতের বেলা মাছ মারার গল্প। তারপর কিভাবে তিনি সুন্দর বনে যান সেই আলোচনা। কিন্তু গল্প শেষে তিনি গোসল করতে গিয়ে গামছা নেবার জন্যে আবার ফিরে আসেন। কিন্তু তাদের কথা শুনে আর গোসল করলেন না। পরবর্তী ট্রেন ধরে ইজ্জত সম্মান হাতে নিয়ে সোজা বাড়ি ফিরে এলেন। কেন এমন হল জানতে পড়তে হবে শেষ পর্যন্ত। অনেকটা রম্য গল্পের মতই। গল্পটি পড়তে ক্লিক দেন।
২য় গল্পটির শিরোনাম হচ্ছে, "লাভের অঙ্ক"। এখানে অতিশয় দরিদ্র একজন লোক একটি বড় অঙ্কের নোট ময়লার ভাগাড়ে খুজে পেল। তারপর সে অনেক পরিকল্পনা করল সেটা খরচ করার জন্য। অবশেষে..... লাভের অঙ্ক গল্পটি পড়ুন
৩য় গল্পটির শিরোনাম "কিচ্ছু না"। দুই ভাই বোন ছুটিতে মামা বাড়ি যাবে। সেখানে যাওয়ার পর কি করবে তার বিভিন্ন রকম পরিকল্পনা করল। কিন্তু বাস্তবতার কারনে কিভাবে তাদের স্বপ্ন ভাংলো তার একটা বর্ণনা রয়েছে গল্পটিতে। কিছু না গল্পটি পড়ুন
৪র্থ গল্পটি একেবারেই পিচ্চি একটি গল্প, নাম "জ্বালাতন"। ছোট্ট ছেলে সামিন। সারাদিন এতো বেশি জ্বালাতন করে যে সবাই শুধু তার মৃত্যু কামনা করে। কিন্তু একদিন তার জ্বর আসলো এবং মারা গেলো। তারপর কি হলো? 'জ্বালাতন' গল্পটি পড়ুন
৫ম গল্পটির শিরোনাম একখানি খাতা। বাসার কাজের লোকটি একদিন কাগজ ওয়ালাকে ডেকে সকল কাগজ বিক্রি করে দিচ্ছিল। তাই দেখে বাড়ির কর্তার একটু ঘেটে দেখতে ইচ্চে হল সে আসলে কোন কাগজগুলো বিক্রি করছে। এসময় সে একটু নস্টালজিয়ায় পড়ে গেলো। কাগজ সংক্রান্ত তার ছোটবেলার সংগ্রামের একটি ঘটনা বর্ণনা করে।
এক খানি খা্তা গল্পটি পড়ুন
৬ষ্ঠ্য গল্পটি অনেকটা রুপকথা স্টাইলের, শিরোনাম "সোনার শিকল"। কিন্তু এখানে কোন রুপকথা বর্ণনা করা হয় নি বরং জীবনের একটি চরম বাস্তবতাকেই তুলে ধরা হয়েছে। মূল দুই চরিত্র হল রাজপুত্র ও রাখালছেলে। রাজা মারা গেলে স্বাভাবিকভাবেই রাজপুত্র নতুন রাজা হন আর মন্ত্রি হিসেবে অনেক হেভিওয়েট প্রার্থী থাকা সত্ত্বেও সে রাখাল ছেলেকেই মন্ত্রি হিসেবে নিয়োগ দেয়।
সোনার শেকল গল্পটি পড়ুন।
৭ম গল্পটি একটি রম্য গল্প। শিরোনাম "সংকট মোচন"।বোন, বোনের জামাই ও ভাগ্নেকে নিয়ে নজরুলজয়ন্তী উদযাপন অনুষ্ঠান দেখতে গিয়ে ভাগ্নের দুষ্টুমির কারনে মামাকে পড়তে হয় নানা রকম বিপাকে। গল্পটি পড়তে
৮ম গল্পটির শিরোনাম "চোরের আবার ভুতের ভয়"। যদিও এটা কোন ভুতপ্রেতের গল্প নয়। গল্পে দুই চোর তাদের বর্তমান অবস্থা নিয়ে আলোচনা করছিল। এমন সময় অন্য এক চোরের পরামর্শের কথা স্মরন করে তারা পরিকল্পনা করে ওমুক বাড়িতে তারা চুরি করতে যাবে। অবশেষে সেখানে গিয়ে এমন এক ঘটনা দেখতে পায় যে তারা চুরি করা ছেড়ে দেয়। চোরের আবার ভুতের ভয়।
৯ম গল্পটি একেবারে সাদামাটা একটা গল্প যার শিরোনাম "ক্যামেরা"। টিটো নামক এক বালক তার দুলাভাইকে একেবারেই দেখতে পারে না। ছবি উঠানোকে কেন্দ্র করে সে দুলাভাইয়ের কাছে ভালোই অপমানিত হয়। সে পণ করে যেভাবেই হোক সে দুলাভাইকে এক হাত নিয়ে নিবে। গল্পটি পড়তে ক্লিক করুন।
আশাকরি সব গুলো গল্পই সুখপাঠ্য ও উপভোগ্য হবে। ভালো লাগলে শেয়ার করবেন, আশাকরি।
বইয়ের বাহিরে একটা ফ্রি গল্প মিসেস প্যাকলেটাইডের বাঘ
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই জানুয়ারি, ২০১৯ ভোর ৪:১৪