somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

টুকরো টুকরো ভালবাসা - ১০

৩১ শে আগস্ট, ২০০৮ বিকাল ৪:৪২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

নাম পরিবর্তনঃ 'মারুফডি' থেকে ‌'মুনতাসীর মারুফ' ,
টুকরো টুকরো ভালবাসা - ৯
১.
ছেলেটা সন্ধানীর প্রোগ্রামে যায়, রোটার‌্যাক্ট করে, হলে পলিটিক্যাল সিনিয়রদের সাথে মেলামেশাতেই সময় যায় বেশী। সিনিয়ররাও চোখে রাখে ওকে। কথা-বার্তায় বেশ পটু, এবং,কাজের। একে পলিটিক্সে জড়াতে পারলে ভালই হয়। ছাত্র ভাল হলেও এই সব ব্যস্ততা নিয়ে ছেলেটার আর পড়ার সময় বেশী থাকে না। তাই সব 'আইটেম' পরীক্ষার আগেই দেখা যায়,মেয়েটা পড়িয়ে দিচ্ছে তাকে- ক্লাসে বসেই, টিচার আসার আগে অথবা দুই ক্লাসের ফাঁকে ক্যান্টিনে। যাকে মেডিক্যালের ছাত্রছাত্রীদের ভাষায় বলা হয় -ডেমো দেয়া- ডেমোনস্ট্রেশনের সংক্ষেপ। এনাটমী, ফিজিওলজী, বায়োকেমিস্ট্রি -সব পরীক্ষাতেই। মেয়েটি নিজে যেমন পড়ুয়া,তেমনি পড়া বোঝানোও খুব ভাল। ডেমোতে কাজও হয় -সব আইটেমে উতরে যায় ছেলেটা।

২.
সন্ধ্যার সময় থেকে দুজনকে রিডিংরুমে দেখা যায়। ছেলেটি বইপত্র ব্যাগে গুছিয়ে হল থেকে চলে আসে কলেজ ভবনের চারতলায়, রিডিংরুমে। সময়মতো মেয়েটিও এসে পড়ে। পাশাপাশি দুটো টেবিলে বই খাতা নিয়ে পড়তে বসে। রাতের খাবারের সময় ফিরে আসে যে যার হলে। ফিসফাস গুঞ্জন ওঠে ব্যাচমেটদের মধ্যে। ওরা উড়িয়ে দেয়। ছেলেটি বন্ধুদেরকে বলে,দেখ আমি পড়ার সময়ই পাই না। তাই ও রিডিং পার্টনার হওয়ায় আমার লাভই হচ্ছে। মেয়েটি বলে,ওকে পড়াতে গিয়ে আমারও ভাল পড়া হচ্ছে। দুজনেই বলে,তারা শুধুই রিডিং পার্টনার। এতে অন্য কিছু মনে করার কোন কারণ নেই।

৩.
ছেলেটি বেশ ফিটফাট হয়ে রিডিং রুমে আসে। সন্ধ্যাবেলাতেও ভেজা চুলে মেয়েটিকে বের হতে দেখা যায়। ছেলেটি এখন এসেই রিডিংরুমে চলে যায় না। চত্বরে লেডিস হোস্টেলের সামনে মেয়েটির জন্য অপেক্ষা করে। মেয়েটি এলে দুজন একত্রে যায় রিডিং রুমে। রাতের খাওয়া খায় একসাথে -কলেজ ভবনের পাশেই হাসপাতালের ডক্টরস ক্যান্টিনে। লেকচার গ্যালারীতে তাদের পাশাপাশি বসতে দেখা যায়। একজন আগে এলে পাশের সিটটা ব্যাগ দিয়ে দখলে রাখে অপরজনের জন্য।

৪.
সন্ধানীতে ছেলেটিকে আর দেখা যায়না,রোটার‌্যাক্টের কাজকর্মেও অনিয়মিত। সিনিয়ররা ডেকে এখন আর আগের মতো সাড়া পায় না। রিডিংরুমেও পরিবর্তন চোখে পড়ে। এক টেবিলেই দুজনের বইখাতা,চেয়ারদুটো পাশাপাশি লাগানো থাকে। কিন্তু রিডিংরুমের ভেতরের চেয়ে বাইরে,ছাদেই তাদের দেখা যায় বেশী। দুজনের চোখে-মুখে উচ্ছাস খেলা করে। কোন দিন বিকেলে লালবাগ কেল্লায়,ধানমন্ডি পার্কে,টিএসসিতেও তাদের দেখতে পায় অনেকে। বন্ধুবান্ধবীদের প্রশ্নের উত্তর আসে,আমরা দুজন দুজনের খুব ভাল বন্ধু; দুবন্ধু একসাথে ঘুরতে গেলে এতে অন্য রকম মানে খোঁজার কি আছে! ছেলে-মেয়েতে কি অন্য সম্পর্ক ছাড়া শুধু বন্ধুত্ব হতে পারে না? রাতে মেয়েটির হলে ফেরার সময় পেছাতে থাকে। কোন কোন দিন সবার পরে মেয়েটি হলে ঢোকে।

৫.
দু-একটা ক্লাস বাদ পড়তে থাকে -দুজনেরই। প্রক্সি পড়ে অ্যাটেনডেন্স শীটে। ক্লাসের সময়ে কলেজের পাশে অডিটরিয়ামের সিঁড়িতে বসে থাকতে দেখা যায় তাদের। একদিন হলে গুঞ্জন ছড়ায়,রাতে কলেজের ছাদে মেয়েটিকে ছেলেটির কাঁধে মাথা রেখে বসে থাকতে দেখা গেছে। আরেকজন নাকি তাদেরকে আরো ঘনিষ্ঠ অবস্থায় দেখেছে। প্রত্যক্ষদর্শীরা কিরা-কসম কাটলেও ওরা তা অস্বীকার করে। ছেলেটি বলে, দেখ কাকে না কাকে দেখেছে,আমাদের নাম দিচ্ছে। মেয়েটি তো রাগে ফেটে পড়ে,বলে -তোরা এত মিন মাইন্ডেড হতে পারিস আমি ভাবতেই পারছি না; কে কি বললো তা-ই বিশ্বাস করবি? রুমমেটদের সাথে কিছুদিন কথা বলাই বন্ধ করে দেয় সে। সিনিয়ররা তাদের দেখে-কথা শুনে মুচকি হাসে, তারাও তো এ ক্যাম্পাসে এ সময়টা পার করে এসেছে,তারা তো বুঝতে পারে কি ঘটে চলেছে।

৬.
প্রথম বর্ষের পরীক্ষা শেষে যে যার বাড়ি চলে যায়। এক মাস পর ক্লাস শুরু হয়। কিন্তু তাদেরকে আর আগের মতো এক সাথে লেকচার ক্লাসে পাশাপাশি বসতে দেখা যায় না। রিডিং রুমেও দুজনই অনুপস্থিত। কি কারণ? এখন তো আর পড়ার তেমন চাপ নেই -তাই যাই না-মেয়েটির উত্তর। ছেলেটি কি উত্তর দেয় তা তার বন্ধুরা ঠিক বুঝতে পারে না। ছেলেটিকে কিছুটা উদভ্রান্ত লাগে। পরিপাট্য আগের মতো নেই, চেহারা মলিন। দ্বিতীয় বর্ষের আইটেমও শুরু হয়। কিন্তু আগের মতো আর তাদের দেখা যায় না -না পড়তে,না ডেমো দিতে,না ঘুরে বেড়াতে। কয়েকটি আইটেম সময়মতো দেয়া হয় না ছেলেটার।

৭.
প্রায়ই বিকেলে এক ছেলের সাথে লেডিস হোস্টেলের সামনে কলেজ চত্বরে বসে মেয়েটিকে গল্প করতে দেখা যায়। মেডিক্যালের কেউ চিনতে পারে না তাকে। বান্ধবীরা প্রশ্ন করলে বলে, 'বুয়েটের ফ্রেন্ড।'
-'এতদিন তো দেখিনি!'
-'এসেছিল,তোরা খেয়াল করিসনি হয়তো।'
বান্ধবীদের তা বিশ্বাস হয় না।
ক্লাসমেট ছেলেটির সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে মেয়েটি বলে, 'হ্যাঁ আমরা ভাল ফ্রেন্ড ছিলাম,এখনও ফ্রেন্ড আছি। কিন্তু তাই বলে আমার কি আর ফ্রেন্ড থাকতে পারে না? আর সবসময় ওর সাথেই পড়তে হবে এমন তো কোন কথা নেই।' কেউ বেশী কিছু জিজ্ঞাসা করলে সে রেগে যায়। তাই এখন আর কেউ এ প্রসংগই তোলে না তার সামনে।

৮.
জমে থাকা আইটেম পরীক্ষাগুলো দিতে শুরু করে ছেলেটি। ক্লাসের শেষে ঐ ব্যাচেরই আরেকটি মেয়েকে দেখা যায় তাকে পড়াগুলো বুঝিয়ে দিতে। আর ছেলেটাকে তার বন্ধুরা কিছু জিজ্ঞাসা করলে সে মুচকি হাসির মতো মুখভঙ্গি করে,কোন উত্তর দেয়না। নতুন মেয়েটির সাথে এখন তাকে মাঝেমধ্যে রিডিংরুমেও দেখা যায়।

টুকরো - ৮, টুকরো - ৭, টুকরো - ৬, টুকরো - ৫, টুকরো - ৪, টুকরো - ৩, টুকরো - ২, টুকরো - ১
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে আগস্ট, ২০০৮ বিকাল ৪:৪৯
৭টি মন্তব্য ৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বিসিএস-পরীক্ষার হলে দেরিঃ পক্ষ বনাম বিপক্ষ

লিখেছেন BM Khalid Hasan, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



বর্তমানের হট টপিক হলো, “১ মিনিট দেরি করে বিসিএস পরীক্ষার হলে ঢুকতে না পেরে পরীক্ষার্থীর স্বপ্ন ভঙ্গ।” প্রচন্ড কান্নারত অবস্থায় তাদের ছবি ও ভিডিও দেখা যাচ্ছে। কারণ সারাজীবন ধরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের কার কি করা উচিৎ আর কি করা উচিৎ না সেটাই আমারা জানি না।

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:২৮




আমাদের কার কি করা উচিৎ আর কি করা উচিৎ না সেটাই আমারা জানি না। আমাদের দেশে মানুষ জন্ম নেয়ার সাথেই একটি গাছ লাগানো উচিৎ । আর... ...বাকিটুকু পড়ুন

মানবতার কাজে বিশ্বাসে বড় ধাক্কা মিল্টন সমাদ্দার

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ২:১৭


মানুষ মানুষের জন্যে, যুগে যুগে মানুষ মাজুর হয়েছে, মানুষই পাশে দাঁড়িয়েছে। অনেকে কাজের ব্যস্ততায় এবং নিজের সময়ের সীমাবদ্ধতায় মানুষের পাশে দাঁড়াতে পারে না। তখন তারা সাহায্যের হাত বাড়ান আর্থিক ভাবে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

জব্বারের বলীখেলা ও বৈশাখী মেলা-২০২৪

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৩৭



ছবি সৌজন্য-https://www.tbsnews.net/bangla




ছবি- মঞ্চে তখন গান চলছে, মধু হই হই আরে বিষ খাওয়াইলা.......... চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী গান।

প্রতি বছরের মত এবার অনুষ্ঠিত হল জব্বারের বলীখেলা ও বৈশাখী মেলা-২০২৪। গত ২৪/০৪/২৪... ...বাকিটুকু পড়ুন

ডাক্তার ডেথঃ হ্যারল্ড শিপম্যান

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:০৪



উপরওয়ালার পরে আমরা আমাদের জীবনের ডাক্তারদের উপর ভরশা করি । যারা অবিশ্বাসী তারা তো এক নম্বরেই ডাক্তারের ভরশা করে । এটা ছাড়া অবশ্য আমাদের আর কোন উপায়ই থাকে না... ...বাকিটুকু পড়ুন

×